ধর্মের_দেয়াল (সিজন-২)পর্বঃ ৪

0
817

#ধর্মের_দেয়াল (সিজন-২)
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৪

.

-নাফিসা চলে যাওয়ার পর রুপ ধপ করে বসে পড়ল।
২ চোখ দিয়ে অঝড়ে জল পড়েই যাচ্ছিলো। জানে না সে এই মেয়েটিকে ছাড়া কেমন করে কাটাবে।
– ২ জনের মধ্য বিচ্ছেদ আজ হয়েই গেল।
– রুপ বলল বিস্বাস ঘাতকের জন্য কোন চোখের পানি নয়। নিষ্ঠুর প্রকৃতি মেয়ের জন্য আর কোন আফসুস নয় বলেই উঠে পড়ল।
.
.
.
– আমি বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাটছি। সূর্য মাথার উপর প্রচুর তাপ দিচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে তবুও হেটে চললাম। কোথায় যাব কি করব ভেবে পারছিনা।
– আজগড়কে কয়েকবার স্মরন করলাম কিন্তু ওর কোন রেসপন্স নেই।
.
.
.
– একটি গাছের নিচে গিয়ে বসে পড়লাম। চোখ দিয়ে আর পানি পড়ছেনা। কিন্তু প্রচুর ব্যাথা করছে।

.
.
.
– কিছুক্ষন বসে থাকতেই এক দমকা বাতাস আমার শরীর দিয়ে বেয়ে গেল।
– সামনে দেখি কাইফ দাড়িয়ে আছে।
– কাইফ তুমি এখানে?
– সেই তো বাসা থেকে বের করেই দিল তোমাকে!
– রুপ কেমন ভালবাসে যে তোমার একটা কথাও শুনতে চাইল না। কিন্তু দেখ আমায় এত আঘাত, লাঞ্চনা, অপমান সহ্য করেও তোমার পাশেই এসে দাড়ায় প্রতিবার যা গত ১৪ বছর ধরে একই কাজ করছি।
– তার বিনিময়ে আমি কি পেয়েছি! কিছুই না।

– আমি জানি ও সত্যই বলছে কিন্তু করার কিছু নাই।
– আমার চুপ করা দেখে আমার পাশে এসে বসে আবার বলল আমি কি তোমার বন্ধু হতে পারি। কোন দিন তোমার বিস্বাসের অমর্যাদা করব না।

.
.
.
– আমি বললাম ভাগ্য বোঝ! আমি কোথায় ছিলাম আর কোথায় এখন এসেছি। আমার সব শেষ। খড়কুটোর মত যা আকড়ে ধরি সেটাই ভেসে যায়।
.
.
– এখন কি করবা ভেবে দেখেছো কি?
– না…. আমার একটা উপকার করবে?
– একটা নয় হাজারটা পাড়লে নিজের কলিজাও দিয়ে দিব।
– আমি একটু হেসে বললাম না না এত্ত বড় কিছু চাই না। আমার একটা থাকার জায়গার দরকার।
– কাইফ আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে হেসে বলল তোমার থাকার জায়গা দরকার আর এটা এই অধম কে বলছো?
– হুম
– তুমি ইচ্ছা করলে তো নিজের শক্তি ব্যবহার করতে পারো নাফিসা।
– পারি কিন্তু যে শক্তি ব্যবহার করে আমায় ঘর ছাড়া করেছে সেটা আপাতত ব্যবহার করতে চাচ্ছিনা।

.
.
.
– আসলে আমি আমার শক্তির কিছু তেমন ব্যবহার করতে জানিনা সেটা ওকে বলা যাবেনা। বিস্বাস নেই ওকে।
– আমার বাসায় যাবে! আমার পুরো পরিবার আছে। কথা দিচ্ছি কোন সমস্যা হবে না।
– না যাবো না অন্য ব্যবস্থা করে দিতে পারলে বল।
– ওকে ব্যাপার না।
.
.

– রোজ বসে কাঁদছে ওর রুমে। আজ কয়েকদিন হলো আজগড়ের কোন খোজ পাচ্ছেনা। আচ্ছা ও আর নাফিসা মিলে আমাদের ভাইবোনের সাথে গেম খেলছে নাতো। কিন্তু ওদের কি লাভ। উফফফফ্ শিট কিছু ভাবতে পারছিনা। কি ভাল কি খারাপ কিছুই বুঝতে পারছিনা।
.
.
.
– রুপমের অবস্থা খারাপ হয়েই যাচ্ছে যত সময় যাচ্ছে। বেচেঁ থাকার আশা দিন দিন ক্ষীন্ হয়ে আসছে। বাসার সবাই এক কান্নায় আছে। ছোট বাচ্চাটার দেহ প্রান হীন অবস্থার মত পরে আছে।
.
.
.
– মিনা সবার সামনে ডুকরে কেঁদে উঠে বলল সর্বনাশী আমার সব কিছু কেড়ে নিয়ে আজ বাসা থেকে নেমেছে।
পর কোন দিন আপন হয়না।


– কথা গুলো যতই শুনছে ততই রুপের মাথায় রক্ত চড় চড় করে উঠে যাচ্ছে। নাফিসা এটা কি করে পারল এমন কাজ করতে? আমি ওকে চিনতে ভুল করেছি যার মাসুল পুরো পরিবার আর রুপম কে ভুগতে হচ্ছে।
.
.
.
– কাইফ আমাকে একটা বাসায় আনল। সুন্দর ছোট একটা বাসা। বাসায় একটা আন্টি থাকে শুধু।
– কাইফ আমাকে দেখিয়ে দিয়ে চলে গেল।
.
.
– আমি খাটে বসে ভাবছিলাম কাল কোথায় ছিলাম আজ কোথায় আমি। চোখ বেয়ে পানি বেয়ে যাচ্ছে।



– এমন সময় আন্টিটা এসে দরজায় নক করল।
– আমি চট করে চোখ মুছে ফেললাম।
– উনি এসে বলল মালকিন এই পোষাক
গুলো মালিক আপনার জন্য এনেছে।
– what সে আমায় মালকিন কেন বলছে?
– আপনি কি বললেন?
– উনি বেশ থতমত হয়ে গেলেন এবং
বললেন বৃদ্ধ হয়ে গেছি মা তাই কি না
কি মুখ দিয়ে বের হইছে কিছু মনে
করনা।
.
.
.
– আমার বেশ সন্দেহ হলো ওনাকে কিন্তু
কিছু বুঝতে দিলাম না।
– আন্টি শুধু কাপড় দিলে হবে!
খাবারতো দিতে হবে। কখন থেকে
খালি পেটে আছি বেশ খুদা লাগছে
তো।
– উনি বেশ খুশি হয়ে বললেন আচ্ছা
আমি এখনই আনছি বলে বাহিরে চলে
গেল।
– একটু পর আমি তাকে অনুসরন করে
রান্না ঘরে গিয়ে দেখলাম এক যুবতি
মেয়ে যে এক নিমিষেই কাজ করে যাচ্ছে।
– আমার আর বুঝতে বাকি রইলনা আমি
কতবড় ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছি।
.
.
.
– আমি জলদি রুমে এসে পোশাক নিয়ে
ওয়াস রুমে ঢুকে পড়লাম।
.
.
.
– বৃদ্ধা মহিলা এসে নাফিসাকে রুমে
দেখতে না পেয়ে বিচলিত হয়ে
গিয়ে হাকডাক শুরু করে দিল।
– আমি কিছুক্ষন পর ওয়াসরুম থেকে বের
হয়ে দেখি উনি দাড়িয়ে খাবার
নিয়ে।
– বাহ্ আন্টি এত্ত জলদি খাবার নিয়ে
আসলেন?
– উনি শুধু মুচকি হেসে চলে গেলেন।
– পেটে প্রচুর খুদাও লেগেছে কিন্তু কি
করব এগুলো খাওয়া কি ঠিক হবে।
– কিছু না ভেবেই বিসমিল্লাহ্ বলে
খেতে লাগলাম।
– বাহ্ দারুন রান্না তো করেছে।
.
.
.
– খাওয়া শেষে একটু পরে উনি এসে সব
নিয়ে গেলেন।
– আমি শুধু ওনাকে বললাম আমার ঘুম
পাইছে বলে শুয়ে পড়লাম।



– আমি দরজা বন্ধ করে পায়াচারী
করতে লাগলাম। আমি কি ভাবে ওর
ফাঁদে পা দিলাম! রুপ আমায় আগেই
সাবধান করে দিয়েছিল। কাউকে যেন
বিস্বাস না করি। এখন আমি কি করব?
– রুপ,আজগড় বা কেউ নেই। আর মনেও হয়না
কোন লাভ হবে কাউকে ডেকে।
.
.
.
– হঠাৎ একটা বুদ্ধ এসে গেল। যেই ভাবা
সেই কাজ। আমি দরজা খুলে ঐ
মহিলাকে ডাক দিলাম। উনি সাথে
সাথেই চলে আসল। আমার রুমের আশে
পাশেই ছিল মনে হয়।
– আমি বললাম কাইফের নাম্বার আছে
আপনার কাছে?
– হুম….. কেন?
– একটু কল দিন।
– উনি বেশ ভয়ে ভয়েই কল দিল।
– হ্যালো কাইফ!
-হুম বলো any problem!
– আরেহ না তুমি বিকেলে আসতে
পারবা?
– ও বেশ খুশি হয়ে বলল ওকে আসছি বলে
কেটে দিল।
.
.
.
– মহিলাটি বলল আমার দ্বারা কোন ভুল
হয়েছে! যদি হয়ে থাকে ক্ষমা করে
দিন।
– আরেহ কি বলছেন। আপনিতো অনেক
ভাল বলেই রুমে এসে বসে পড়লাম।
– আমি মনে মনে খুশিই হইলাম একবার
বাসা থেকে বের হতে পারলেই খেল
খতম।
– আমি দরজা বন্ধ করে শুকরা জ্বীন কে
আহ্ববান করলাম।
– উনি সাথে সাথেই হাজির।
– আম্মা আপনি এখানে কেন?
– আমি আটকা পড়ে গেছি এখান থেকে
কেমনে ছাড়া পাবো বলুন।
– আপনাকে নিজেই বের হতে হবে তাও
কাইফের ইচ্ছার মর্জিতে তাহলে
পারবেন। আপনিতো এখনও আপনার
শক্তির ব্যবহার জানেন না তাই এই এক
উপায়।
– ঠিক আছে তুমি এখন যাও।
.
.
– আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।


– কাইফ বিকেলে এসে নাফিসার রুমে
দেখল ও ঘুমিয়েছে।
– কাইফ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবল
নাফিসা এই মেয়ের ভিতর কি নেই তবুও
রুপ বেকুবের মত কেন যে ছেড়ে দিল ও
ভাল জানে। অবশ্যই আমার দিক থেকে
৬০% কাজ এগিয়েই দিছে।



-আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমি
দেখলাম কাইফ আমার সামনে দাড়িয়ে
আছে।
– আমি ঝট করে উঠে বসলাম।তুমি! কখন
আসলে?
– এইতো কিছুক্ষন আগে।
– কারো রুমে ঢুকতে গেলে নক করতে হয়
জানো না।
– স্যরি mam আর এমন ভুল হবে না।
– ওকে বস এখানে।
– একটা কথা ছিল আমারতো কাল
থেকে ইনর্কোস পরীক্ষা। যেহেতু
তোমার আশ্রয়ে আছি তাই তোমার
অনুমতি নিচ্ছি আর কি।
– ও বেশ খুশিই হল এবং বলল ওকে আমি
কি তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসব?
– না। সবাই দেখলে খারাপ ভাববে।
– ওকে।
– জানো আন্টিটা ভিষন ভাল। দারুন
রান্না করে আর খেয়াল ও রাখে
আমার।
– ও বলল ভাল তো। আমি এখন আসি।
– ওকে।
– কাইফ মহিলাটির সাথে কথা বলছে
আমি আড়াল থেকে শুনার চেষ্টা
করছি।
– তোমার ব্যবহারে সে খুব খুশি তাই
আমিও তোমার উপর খুব সন্তুষ্ট বলেই চলে
গেল।
– তার মানে মহিলাটি ওর হুকুমের
গোলাম।
.
.
.
– আমি রাতে মহিলাটিকে বললাম
আপনাদের বাসার সামনে একটি
বাগান দেখেছি, আমাকে নিয়ে
যাবেন সেখানে?
– উনি অনেকক্ষন চুপ থেকে বলল আচ্ছা
চলুন।
– আমি বাগানে বেঞ্চিতে বসে
আছি। আর উনি আমার পাশে দাড়িয়ে
আছে।
– ওনাকে কিভাবে সরানো যায়
সেটাই ভাবছি।
– আমি বললাম চা বানিয়ে আনতে
পারবেন?
– উনি বলল চলুন ভিতরে ওখানে
বানিয়ে দিচ্ছি।
– আমি খপ করে ওর হাত ধরে ফেলি এবং
বলি তুমি কি আমি সেটা ভালভাবেই
জানি। তুমি কি চাও আমি তোমার
বিষয়ে তোমার মালিককে নালিশ
করি!
– দেখলাম মহিলাটি ভয়ে থরথর করে
কাঁপছে আমার কথায়।
– আমি খুব কষ্টে আছি তাই ঝামেলা
চাইনা।
-যা বলছি তাই করুন আর হ্যাঁ যাদু বিদ্যা
দিয়ে একদম কাজ করবেন না। আমি
শান্তি চাই।
– আমার কথা শুনে বলল জ্বী মালকিন
যা বলছেন তাই হবে।
.
.
– আমি আবার শুকরা জ্বীকে ডাকলাম।
– উনি এসে হাজির হয়ে বলল আম্মা
এখানে আপনার খুব চেনা কাউরে বন্দী
করে রাখছে কাইফ। আমি এখানেই
ছিলাম। শুধু আপনার বের হওয়া
অপেক্ষায়
– কাকে বন্ধী করে রাখছে?
– দাড়ান বলে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন পর
বলল মারিয়াম।
– আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল।
– আমার জন্য সে আজ বিপদে।
– আম্মা কাদবেননা আমি সব ব্যবস্থা
করছি বলেই মন্ত্র পড়তে শুরু করল।
– কোথা জানি থেকে একটা শিপি
বন্ধ বোতল এসে হাজির হল।
– আম্মা আপনি থাকেন মহিলা হয়ত
আসছে। কাল রাত অবদি পর্যন্ত আপনি
সেইফ থাকবেন। তার পর ভাববেন কি
করা যাবে বলে বোতল নিয়ে উধাও
হয়ে গেল।
একটু পর উনি চা নিয়ে আসল।

– চায়ে চুমুক দিয়ে বললাম আপনি যেমন
চমৎকার আপনার চা টাও চমৎকার বলে
ওনাকে নিয়ে উঠে আসলাম বাসায়।
.
.
– আমি শুধু সকালের অপেক্ষায় আছি।
– কোন রকম রাত টা পার করলাম।
– আমি একটু সকাল সকালই রেডী হইতে
লাগলাম।
– মহিলাটি আমায় নাস্তা দিয়ে গেল।
– আমি মনে মনে বললাম নাফিসা
খেয়ে নে এই বাসায় এটাই শেষ
খাওয়া তোর।

– আমি বাসা থেকে বের হইলাম।
– yes আমি পেরেছি ফাঁদ থেকে মুক্ত
হতে। রাত অবদি সেভ করে নিজেকে
রাখতে পারলেই কেল্লা ফতে।
.
.
– ভার্সিটি থেকে বাসাটি দুরে ছিল
তাই আসতে একটু বেশি সময়ই লাগল।
– হলুদ একটা ড্রেস পড়েছি চুল খোলা
রেখেছি। দেখি নিজের চেহারা
দ্বারা আর একবার রুপের মন জয় করতে
পারি কিনা। আসার সময় আয়নাতে
নিজেকে বার বার দেখেছি বেশ নজর
কড়া লুক এসেছে।
.
.
– একটু পর পরীক্ষা শুরু হবে তাই
তাড়াহুরা করে জলদি উপরে সিড়ি
ভেঙ্গে উঠতে গিয়ে কার সাথে যেন
ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম।
-ভ্যাগ্গিস নিজেকে সামলে
নিয়েছিলাম তানাহলে একদম ৩ তলার
নিচে! উফ্ কি বাঁচাটাই না বাঁচলাম।
– এই কেরে আমায় ধাক্কা দিল। আমার
সাজগোজ নষ্ট হয়ে গেলতো বলেই
উপরে তাকিয়ে দেখি আর কারো
সাথে ধাক্কা খাইনি যার জন্য সাজ
গোজ তার সাথেই।
– সামনে রুপ দাড়িয়ে আছে….
চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here