ধর্মের_দেয়াল (সিজন-২)পর্বঃ১৬

0
657

#ধর্মের_দেয়াল (সিজন-২)
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ১৬

– নাফিসা একদম বাহিরের দরজা খুলেও বের হয়ে যায় রাস্তায়। ৩ টা রাক্ষস টাইপের জ্বীন নাফিসাকে অনেকটা কাছে এনেছে। একজন বলল আজ তোকে কে রক্ষা করবে। তোর মাংস রক্ত সব খাব। আমাদের চোখের সামনে টিচার কে মেরেছিস। আজ আর তোর রক্ষা নাই।
– এমন সময় ওদের পিছনে আলিক্স এসে দাড়াল। সবগুলোর মাথায় টোকা দিয়ে বলল কিরে কাকে মারবি?
– ওদের কোন খেয়াল নেই যে ওদের পিছনে যম দাড়িয়ে আছে। ওরা নাফিসাকে খাওয়ার জন্য অপেক্ষায় মত্ত।




– কিরে কথা কানে যায়না বলে আলিক্স ওদের ৩ জনকে চড় বসিয়ে দেয়।
– কেরে আমাদের মারে বলে পিছন ফিরতেই আলিক্সকে দেখতেই ওরা থরথর করে কাঁপতে লাগে। মাই লড আপনি!
– তোরা ওকে খাবি! বলেই একজনের গলা ধরে আলিক্স ছুড়ে মারে। বাকি ২ জন এসে আলিক্সের পা চিপে ধরে বলে ক্ষমা করে দিন আমাদের।
– ক্ষমা! বলেই আলিক্সের চোখ থেকে আগুনের গোলক এসে ওদের ৩ জনকে ঝলসে দেয়।




– আলিক্স নাফিসাকে নিয়ে সোজা সাগরের মধ্য দাড়িয়ে গেল।
– আমি চোখ খুলে দেখলাম আমি সাগরের উপর দাড়িয়ে আছি আর সামনে টিচার।
– টিচার আমায় এখানে এনেছেন কেন? আমিতো ঘুমাচ্ছিলাম তাহলে আপনি কেন এনেছেন?
– আগে বলল তুমি প্রাসাদ থেকে কেন চলে এলে?
– হুম ওখানে থেকে আপনার বউ জেনিফার হাতে মরার জন্য থাকতাম।
– মানে?
– নাফিসা সব খুলে বলল। সব শুনে আলিক্স চুপ করে গেল। ওকে নাফিসা তুমি এখানেই থাক প্রতি রাতে তোমাকে কিছু শিখাবো এখানে এনে।
– টিচার কিছু টাকা ধার দিবেন?
– নাফিসার কথা শুনে আলিক্স চুপ করে বলল টাকা তুমি নিজে উপার্জন করবা। সব পরিস্থিতি তে কাজ শিখতে হবে কোন মায়া প্রয়োগ করবা না। যদি কর তাহলে সব মায়া বিদ্যা তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিব বুঝলে?
– ঠোট ফুলিয়ে বললাম ওকে। আপনি খুব নিষ্ঠুর টিচার। আমাকে এখন ফেরত পাঠান বলতেই নাফিসা নিজের রুমে আগের মত ঘুমিয়ে পড়ল।




– সকালে রাফসান নিজের জন্য আর ওর মেয়ের জন্য নাস্তা বানাতে লাগতেই অলিভিয়া এসে বলল মি. রাফসান আপনার হসপিটালে কোন কাজ দেওয়া যাবে আমাকে?
– হুম যাবেতো। কয়েকজন লাগবে এমনিতেই।
– অলিভিয়া খুশি হয়ে বলল তাহলে আমাদের ৩ জনকেই দিন।
– তোমাকে আর মার্ককে দেওয়া যাবে কিন্তু তোমাদের ঐ পাগল বন্ধু নাফিসাকে দেওয়া যাবেনা। ওর যে মাথার প্রবলেম কি করতে কি করবে শেষে ওর জস্য সবাইকে বিপদে পড়তে হবে।
– অলিভিয়া একটু মন খারাপ করে বলল ওকে।
– অলিভিয়া নাফিসাকে আমার মেয়ের জন্য রাখলে কেমন হয়! রান্না করতে পারে ও?
– বাচ্চা সামলাতে পারবে কিন্তু রান্না ওকে দ্বারা সম্ভব নয়।
– ওকে। কাল তুমি আর মার্ক আমার সাথে যেও।
– ওকে রাফসান বলে অলিভিয়া চলে গেল।




– রাফসান হসপিটালে গেল অলিভিয়ার কাছে ওর মেয়েকে রেখে।
– অলিভিয়া পিচ্চিকে নিয়ে এসে নাফিসাকে বার বার ডাকতে লাগল। কিন্তু ওঠার নাম নেই। শেষে গ্লাসের পানি মুখে ঢেলে দিতেই ধরপড়িয়ে ওঠে নাফিসা।
– ঐ শাঁকচুন্নি গন্ডারের মা আমায় পানি দিলি ক্যান বলেই আবার সুয়ে পড়ল।
– ঐ ওঠ বলেই অলিভিয়া ওকে টান দিয়ে ওঠাল।
– উমমমম এরকম করিস কেন রে। আমাকে তোরা দেখতেই পারিস না শুধু জ্বালাস।
– হুম তোর জন্য একটা কাজ ঠিক করে রেখেছি। ভাল টাকা দিবে।
– কি কাজ!
– এই বাচ্চার দেখাশুনা। পারবিতো?
– পারবনা মানে! সব পারব বলে বাবুটাকে কোলে নিয়ে মার্কের রুমে দৌড় দিলাম। মার্ক… মার্ক দেখ আমি একটা কাজ পেয়েছি বলে ওকে ঝাকাতে লাগলাম।
– ভালতো….. তোহ কি কাজ পেলি?
– এই বাবুটাকে দেখাশুনা করা।
– তাই! বলেই বাচ্চাকে আমার কাছ থেকে ও নিয়ে বলল nice baby….. টেনশন নিস না তোরও এরকম baby হবে বলেই বাবুটাকে ও উপরের দিকে ছুড়ে দিল। এটা দেখে আমার জিবনটা মনে হয় বের হয়ে যাবে। ঐ কি করিস বলতেই মার্ক ওর লেজ দিয়ে বাবুটাকে ধরে ফেলে। এভাবে বার বার করে ফলে বাবুটিও বার বার খিল খিল করে হেসে উঠল।
– এভাবে বাচ্চাকে আদর করতে পারবিতো নাফিসা!
– ঢের পারবো আর তুইতো আছিস।
– ও বা আমি কাল থেকে কেউ থাকবনা কাল থেকে। কাল থেকে আমরা কাজে বেরুবো। মানুষের মাঝে থাকতে হলে আমাদের ও ওদের মত কাজ করতে হবে।




– আমি একা বাসায় থাকবো?
– আন্টি তাছাড়া বাবুটা আছেতো তাই কিসের চিন্তা বলেই অলিভিয়া আমাকে আর মার্ককে ইশারা করল খেতে যাওয়ার জন্য।
– খাবার খেয়ে বাচ্চাকে নিয়ে মার্কের কাছে গিয়ে বললাম মার্ক একটু চুলটা বেধে দিবি?
– পারবোনা বলে উঠে গেল।
– হারামি, কুত্তা তোদের ছেড়ে একদিন স্যতি ছেড়ে চলে যাব সেদিন বুঝবি হুম।
– এবার মার্ক কাছে এসে বলল বস এখানে বেধে দিচ্ছি বলে চুলে হাত দিতেই হাতে কারেন্ট শর্ক খেয়ে মার্ক দেয়ালে আছড়ে পরে গেল।
– অলিভিয়া ও রুম থেকে দৌড়ে এসে দেখে মার্ক পড়ে গঙ্গাচ্ছে। নাফিসা কি করছিস ওর সাথে বলেই নাফিসার দিকে তাকিয়ে জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে একটু সরে যায় অলিভিয়া।
– নাফিসার চুল থেকে অসংখ্য ছোট ছোট সাপ বের হতে লাগল এবং সব একটা বড় সাপ হয়ে মার্ক কে ধাওয়া করল।
– মার্ক ওখানে সুয়েই সাপে পরিনিত হয়েই বিশাল সাপের আকার ধারন করে।
– আমি এটা দেখে নিজেই ভয়ে আধমরার মত অবস্থায়। অলিভিয়া কোন হুস না পেয়ে রাফসানের মেয়েকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ঐ সাপের দিকে ধাক্কা মেরে বলে জলদি নিজেকে কন্টোল কর না হলে মার্ক আজ শেষ।
– আমিও কোন দিশা না পেয়ে সাপের কাছে যেতেই সাপটি ঠান্ডা বাতাশের ঝাপটা দিয়ে সাপটি আমার ভিতর ডুকে যায়। আর কিছু মনে নেই।
– মার্ক ওকে ধর ও স্নেসলেস হয়ে পরে গেল তো। মার্ক ঐ অবস্থায় বলল পারবনা। তোর জানের মায়া না থাকলে তুই গিয়ে ধর। মানুষের ভাল করতে নেই দেখছিস। আমায় মারার জন্য কেমনে ধাওয়া করল
মনে হয় কত জন্মের শত্রু আমি ওর। ওভাবেই ও পরে থাক এমনি পরে উঠবেনি বলেই ও পাশের রুমে চলে গেল।




– রুপ ঘুমিয়ে আছে এমন সময় লুসি ওর রুমে এসে গায়ে হাত বুলিয়ে দেয় বার বার।
– রুপ চট করে উঠে বসে দেখে লুসি। লুসি তুমি এখানে! আর আমাকে টার্চ কর কোন সাহসে।
– আমিই তো করব। অন্য কেউ করলে তাকে আমি আস্ত রাখব নাকি!
– ফাজলামির একটা সীমা আছে। সর এখান থেকে বলে রুপ বেড ছেড়ে উঠতেই লুসি ওকে জড়িয়ে ধরে বলে এমন কর কেন! আমার মত তোমাকে কেউ ভালবাসবেনা। আমার মত সুন্দরী মেয়ে কোথায় পাবা?
– লুসি তুমি পোশাক ছাড়া আমার আশপাশে চলাফিরা করলেও এই রুপ তোমার দিকে ভুলেও তাকাবেনা বুঝছো বলে লুসিকে সরিয়ে দিয়ে উঠে গেল। এখুনি তুমি রুম থেকে বের হও
রুমে আর আসবানা কখনও you understand!
-সেটা তো সুনতে পারবনা তবে এখনকার মত চলে যাচ্ছি বলেই লুসি বের হয়ে যায়।
– আচ্ছা মছিবতে পড়লাম তো। দারাও তোমার এ রুমে আসা বের করছি বলে রুপ মন্ত্র পড়ে ওর রুম বন্ধ করে দিল। দেখি এবার এই রেখা ভেদ করে কেমনে আমার রুমে আসে।




– অলিভিয়া বাবুটাকে নিচে নামিয়ে দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ওর ও বেশ ভয় লাগছে। কখন কি হতে কি হয়। নাফিসার এই রুপ আগে কখনও দেখেনি। দেখে মনে হচ্ছে ও সাধারন কোন মেয়ে না। সবার মাঝে ছদ্দ বেশে আছে। এমন সময় পিচ্চিটা হামাগুড়ি দিয়ে নাফিসার কাছে গিয়ে ওর গালে বার বার হাত দিচ্ছে আর কাঁদছে। অলিভিয়া কোন কিছু না ভেবে নাফিসাকে ঝাকাতেই নাফিসা চোখ মেলে বলল সাপটা কি এখনও আছেরে!
– না নেই বলে বাবুকে নিয়ে উঠে পড়ল। এই শোন বাসার সব কাজ করবি আর বাচ্চাটি কে দেখাশুনা করবি আমি আর মার্ক বাহিরে গেলাম বলেই চলে গেল অলিভিয়া।




– বাসায় আমি আর রাফসানের মেয়ে নাফিসা। ধ্যাত কেন আমার নামের সাথে মিল হয়ে গেল। নিজের নাম নিজেকেই ডাকতে হয়। এবার নিজের যাাদু বিদ্যা কাজে লাগিয়ে বাসার সব কাজ এক নিমিষেই শেষ। দিন কাটছে না। বাসা ওয়ালা আন্টির কাছে যেতেই দেখি দরজা বন্ধ মানে উনিও নেই। আমি আর পিচ্চিটা।
– রাফসানের রুমে গিয়ে বাবুকে রেখে ওর বুক সেলফ্ এ হাত দিয়ে কিছু বই ঘাটাঘাটি করছিলাম। হঠাৎ চোখ পড়ল একটা জায়গায় দেখলাম ২ টা ছবি। একটা তে রাফসান ওর বেবি আর একটা মেয়ে খুব হাসিখুশি তে। আর একটা মেয়ে রাফসানের সামনে দাড়িয়ে কাঁদতে আর রাফসান মুচকি হেসে ওকে জড়িয়ে ধরে একটা সেলফি উঠাইছে।
এই ২ টা মেয়ে কে! আলাদা আলাদা। বাচ্চার সাথে যেটা আছে সেটা ওর ওয়াইফ হবে কিন্তু এই মেয়েটা কে? নানা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক করতে লাগল।




– সন্ধা গড়িয়ে গেল তবুও ওরা কেউ আসলো না। কি ব্যাপার ওদের আসতে এত্ত দেরি হচ্ছে কেন বলে আমি বাবুকে নিয়ে শুয়ে পড়লাম দেন ঘুম।



– রাত ১২ টার দিকে রাফসান রুমে এসে দেখে নাফিসা ওর মেয়েকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। একটা মুচকি হাসি দিয়ে ফ্রেস হয়ে খাবার বের করল। বাহির থেকে এসেছে বেশ রাত হয়েছে বলে।
– অলিভিয়া রাফসানেরর রুমে এসে দেখল নাফিসা ঘুমিয়ে আছে। ওকে ডাকতেই রাফসান নিষেধ করল। ও ঘুমাচ্ছে ওকে ঘুমাতে দাও। হয়ত সারা দিন অনেক কাজ করেছে।
– মার্ক এসে বলল ও কাজ করবে! ওরে আমি হারে হারে চিনি। বজ্জাত একটা মেয়ে আজ তো আমায় প্রায় মেরেই ফেলছিল। ওকে আপনার কাছে প্লিজ কয়েকদিন রেখে দেন তানাহলে আমার আর রক্ষা নেই।
– মার্ক চুপ করবি! ওর সাথে না লাগলে তোর হয়না বলে মার্কে টেনে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
– এদের কথা বেশ আজব লাগল রাফসানের। কিছু না বলে খাবার খেয়ে সোফায় সুয়ে পড়ল।
– রাতে কারো কান্নার শব্দ পেয়ে রাফসানের ঘুম ভেঙ্গে যায়। লাইট জ্বালিয়ে দেখে নাফিসা বির বির করছে আর ফুফিয়ে কাঁদছে। রাফসান কাছে এগিয়ে গিয়ে ওকে ডাক দেয়। কিন্তু কোন সাড়া শব্দ নেই। শেষে ওর মেয়েটা ঘুম থেকে জেগে গিয়ে কান্না করতে থাকে।


– রাফসানের নাজেহাল অবস্থা ২ জনকে সামলাতে। অনেক চেষ্টায় মেয়েকে থামাতে পাড়লেও নাফিসাকে থামানো যাচ্ছেনা। এবার নাফিসা কে ঝাকাতেই নাফিসা চোখ খোলে আর ওর চোখে কয়েকটা রঙ্গের আলো ঝলকানি দিয়ে ওঠে। রাফসান দেখে অবাক হয়ে যায়। নাফিসা ওঠে বসে আছে কিন্তু কোন সেন্স নেই। রাফসান এবার সহ্য না করতে পেরে নাফিসাকে জোড়ে ঝাকাতে লাগল। এবার ওর সেন্স ফেরত আসে এবং বেড থেকে উঠে পড়ে।
– এবার রাফসার রেগে গিয়ে ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে এই তুমি কে! তুমি কোন স্বাধারন মানুষ না বলতেই একটা ঘ্রান পায় রাফসান। ঠিক নাফিসার ঘ্রানের মত। রাফসান আর ঠিক থাকতে পারেনা না। নাফিসার চুলের মধ্য মুখ গুজিয়ে ওকে বুঝার চেষ্টা করে খুব কাছ থেকে। বার বার কিন্তু প্রতি বারই ব্যার্থ হচ্ছে। মন বলছে এ ওর নাফিসা কিন্তু চেহারা বলছে না এটা না।
– রাফসান ক্লান্ত হয়ে নাফিসাকে জিঙ্গাসা করে নাফিসা সত্য করে বলতো তুমি কে! তোমার বাবা-মা কে। কোথায় থেকে আসছো প্লিজ বলোনা। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
– আমি জানিনা রাফসান তোমার মত আমিও প্রতিদিন প্রতিরাতে কষ্ট পাই কিন্তু জবাব পাইনা বলে নাফিসা রুম থেকে বের হয়ে আসে।
– রাফসানের মন চাচ্ছিল ওকে এখানেই থেমে দিয়ে বুকে জড়িয়ে নেয় কিন্তু চেহারা অন্য কিছু বলে।




-নাফিসা বের হতেই ওকে আলিক্স টান দিয়ে সেই সাগরে নিয়ে যায়। নাফিসা তুমি ঐ ছেলেটার আসে পাশে আর যেওনা। ও বুঝতে পারবে যে তুমি মানুষ নও। আর প্রতি রাতে তোমার কি হয় যে তুমি কাঁদ। আমিও এটা নোটিশ করেছি।
– জানিনা টিচার আমার সাথে কি হয় বলে নাফিসা চুপ করে বসে পড়ে।


– সকালে রাফসান সোজা অলিভিয়াকে জিঙ্গাসা করে যে নাফিসা রাতে কাঁদে কেন! ওকে ডাক্তার দেখানো উচিত। ওর সাথে কি কিছু ঘটেছিল আগে?
– কই নাতো আমরা তো এমন কিছু দেখিনি।
– মার্ক এসে বলল রাফসান ও কাঁদে অলিভিয়া না দেখলেও আমি দেখেছি। একটা নিদিষ্ট সময়ে। খুব টেনশনে থাকি ওকে নিয়ে। রাফসান কে রুমে এনে বলে দেখ কি সুন্দর হয়ে ঘুমিয়ে আছে কিন্তু গভীর রাত হলেই এসব করে ও।
– রাফসান দেখল স্যতি খুব সুন্দর ভাবে নাফিসা ঘুমিয়ে আছে।



– এভাবে ৩ টা বছর কাটে ওদের। রাফসানের মেয়ের বয়স ৪ বছর ৮ মাস হয়ে গেছে। ওনেক বড় হয়ে গেছে
অলিভিয়া মা, নাফিসা মা, মার্ক বাবা, রাফসান বাবা এভাবেই ডাকে মেয়েটি সবাইকে। ওর ২ টা বাবা ২ মা। রাফসান ও নাফিসার প্রতি প্রচুর দুর্বল হয়ে যায় কিন্তু ওর থেকে নিজেকে বেশ দুরেই রাখে।
– একদিন রাফসান ওর মেয়েকে নাফিসা বলে ডাকতেই ২ নাফিসাই হাজির।
– এই আমিতো আমার মেয়েকে ডাকছি তুমি কেন?
– নাম যখন বদলাওনি তাহলে যা যা ওর সাথে করবে আমার সাথেও করতে হবে। কারন বাসাতে ২ টা নাফিসা।



– রাফসান একটু হেসে বলল আমার মেয়ে খাবার খাওয়াব তুমিও কি ওর খাবারে হামলা দিবে?
– হুম বলেই ২ জনেই রাফসানের কাছে বসে পড়ল।
– কি আর করা বেচারা ২ জনকেই খাওয়াই দিচ্ছে। খাওয়া শেষ হলে রাফসান বলল আমার মেয়েকে কিছুক্ষন পড় গোসল দিয়ে দিব তুমিও জয়েন্ট হতে পার বলেই একটা হাসি দিয়ে নাফিসার দিকে তাকালো।
– না না গোসলের দরকার নেই। আমি আর ও সেরে নিব তাই না লিটিল নাফিসা!
– হ্যাঁ বাবা আমি আর নাফিসা মা গোসল করে নিতে পারব।
– না না তা কিকরে হবে আমিতো আজ তোমাদের ২ জনকে গোসল করিয়েই ছাড়ব বলে আমাদের কাছে আসতেই আমারা ২ জনেই দৌড়। লিটিল নাফিসা গিয়ে মার্কের পিছনে দাড়িয়ে পড়ে আর আমাকে ধরা এত্ত সহজ না।
– ও মার্ক বাবা চলোনা তুমিও আমাদের সাথে গোসল করনা।
– মার্ক ছোট্ট নাফিসাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল না মা তুমি গোসল কর বলেই ওর কপালে একটা কিস করল।
– অলিভিয়া বলল বাবার কথা শুনতে হয় মা বলেই ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।
– ঐ শয়তানি ওরে এই উপদেশ কেন। আমাকেও কি রাফসান গোসল করিয়ে দিবে বলে অলিভিয়ার দিকে তেড়ে যেতেই রাফসান আমার হাত ধরে বলল তুমি আমাকে জ্বালাতে পার আর আমি পারিনা? বলেই সবাই হেসে উঠল।

– ও মার্ক বাবা আমাকে যেমন কোলে নিছো এমনি করে সবাই কোলে নাও না।
– মার্ক পিচ্চির কথা শুনে অবাক হয়ে বলল পারবোনা মা….. আর তাছাড়া ওদের যা ওজন! বিশেষ করে তোমার নাফিসা মায়ের। আমাকে তাহলে আর বেঁচে থাকতে হবেনা।
– মার্ক তুইও। এভাবেই আমাদের দিন কাটছিল। প্রতি রাতে আলিক্সের সাথে বিভিন্ন কৌশল শিখা আর দিনে সবাই মিলে হৈ হুল্লোর করা। প্রতি রবিবারে সবাই মিলে ঘুরে বেড়ানো। যাষ্ট ওয়াও।



– একদিন আমি আর অলিভিয়া একটি পার্টিতে এটেন্ড করে অনেক রাতে বাসায় ফিরে দেখি মার্ক ঘুমন্ত ছোট্ট নাফিসাকে নিয়ে বুকে নিয়ে বসে আছে আর রাফসান ফোনে কথা বলতে ব্যাস্ত।
– মার্ক কিছু হয়েছে! ( অলিভিয়া)
– মার্ক শুধু আমার দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করল। আমি দেখলাম মার্কের চোখ বেয়ে পানি পিচ্চিটার গালের উপর পড়ছে।
– মার্ক কি হয়েছে বলে আমি কাছে গেলাম।
– আমি আর আমার মেয়ে দেশে ফিরে যাচ্ছি নাফিসা। বাবার হার্ট এটাক্ট হয়েছে। কালই আমাদের ফ্লাইট।
– কথাটি শুনে আমার আর অলিভিয়ার বুকের ভিতর যেন দুমরে মুচরে গেল।
– রাফসান তুমি যাও ওকে এখানে রেখে যাও বলে অলিভিয়া পিচ্চিকে কোলে নিয়ে কপালে চুমু খেল।
– আমার কাছে সবসময় মেয়েটা থাকে তাহলে আমার কি হয়ে যাচ্ছে।
– অলিভিয়া পাগলামি করনা। ওর মা আছে। দেখ তাহলে ওর জন্ম দাত্রী মা কি অবস্থায় আছে ওকে ছাড়া।
– কেন আমদের কাছে ও বেশি সময় ধরে আছে আমাদের কি কোন অধিকার নেই?
– আছে কিন্তু ওর মা এবং ওর পরিবারের চেয়ে বেশি নয়। তাছাড়া বাবা খুব অসুস্থ বাবার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারবনা।



– আমি কিছু না বলে বাহিরে চলে এলাম। মায়া জিনিসটা খুব কষ্টের। চিৎকার দিয়ে হাটু গেড়ে মাটিতে বসে কাঁদতে লাগলাম। ওকে ছাড়া কেমনে থাকব আমরা। এমন সময় আলিক্স এসে নাফিসাকে নিয়ে যায়।
– নাফিসা তোমাকে দুর্বল হওয়া মানায়। একটা মানুষের বাচ্চার জন্য এতটা কষ্ট কেন পাচ্ছ। যার জিনিস তার কাছে ফিরে যাবে। আমি চুপ করে শুনলাম।
– মার্ক আর অলিভিয়া নাফিসাকে খুজেই যাচ্ছে কিন্তু কোন খোজ পাচ্ছেনা।
– রাফসানও বেশ ভয় পেয়ে যায় মেয়েটা কোথায় গেল এত্ত রাতে।
– রাতে আর কারো ঘুম হলনা।
– সকালা নাফিসা বাসায় আসতেই মার্ক একটা ঠাশশশ্ করে থাপ্পড় মেরে বলল কোথায় ছিলি টেনশন হয়না?
– মায়া বাড়িয়ে লাভ মার্ক কেউতো কাছে থাকেনা বুঝিস না? বলেই রাফসানের দিকে তাকালাম।
– মার্ক আর অলিভিয়া যেতেই রাফসান এসে নাফিসাকে জড়িয়ে ধরে বলল আমাকে খোঁচা দিয়ে কথা না বললে হয়না?
– রাফসান ছাড়ো শেষ কালে ভালবাসা দেখাতে হবে।ভাল থাক বলেই ছাড়িয়ে নিতেই আবার আমাকে জোড়ে চেপে ধরে বলল আমার সাথে বাংলাদেশে যাবে?
– আমি চোখ বন্ধকরে দেশটি দেখতে চাইলাম কিন্তু চোখের সামনে কিছুতেই আসছেনা। মানে এই জায়গাটা আমার জন্য নিষিদ্ধ।
– না যাবনা। আমাকে ছেড়ে দাও বলে চলে আসলাম।
– রাফসান চুপ করে দাড়িয়ে রইল। মন চাচ্ছে ওকে নিয়ে যেতে কিন্তু সময়ের এবং বন্ধনের সামনে আবদ্ধ।



– সকালে রাফসান রেডী হয়ে রুম থেকে বের হতেই ওর মেয়ে অলিভিয়ার কাছে গিয়ে লুকিয়ে বলল বাবা আমি যাবনা। এটা আমার বাসা। অলিভিয়াকে বলল ও মা বলনা বাবাকে আমি যাবনা। অলিভিয়া কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। মেয়েটা আবার মার্কের কাছে যায় ওকেও একি কথা বলে কিন্তু মার্ক চুপ করে থাকে।
শেষে আমার কাছে এসে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগে মা বাবাকে বলনা আমাকে না নিয়ে যেতে আমি তোমাদের কাছে থাকব। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে আছি। রাফসান কঠোর হয়ে বলল নাফিসা আমাদের যেতে হবে মা। আসো এদিকে
কিন্তু মেয়েটা আমার গলা জড়িয়েই ধরে কাঁদছে। এটা দেখে মার্কের চোখ আগুনের মত লাল হয়ে গেল। অলিভিয়া চট করে ওর হাত ধরে পাশের রুমে চলে গেল।
– রাফসান জোর করেই মেয়েকে কোলে নিয়ে আমাকে উঠায়ে বলল ভাল থেক। পারলে বাংলাদেশে এসো। তোমার এবং ওদের জন্য আমার দরজা সব সময় খোলা থাকবে বলে আমার কপালে একটা কিস করে চলে গেল।
– মেয়েটা চোখের সামনে থেকে চলে গেল। আমি এবার দৌড়ে রাস্তায় বের হয়ে দেখি অনেক দুরে চলে গেছে ওদের গাড়ী। আমি কোন দিক কিছু না ভেবে জঙ্গলের দিকে দৌড়াতে লাগলাম। মার্ক ও অলিভিয়া কিছুটা আচ করতে পেয়ে ওরাও নাফিসার ফিছে দৌড়াতে লাগল।
– আমি একটা স্থানে এসে গিয়ে থেমে গেলাম এবং আমার চোখ নাক মুখ আগুলের লাভা বের হয়ে যাচ্ছে। একটা চিৎকার দিতেই সামনের সব গাছ গুলোতে আগুন ধরে যায়। দুর থেকে মার্ক আর অলিভিয়া এটা দেখে থমকে যায়। এই নাফিসাকে তারা কখনও দেখেনি।
– আলিক্স এসে নাফিসার কাছে যেতে চেষ্টা করে কিন্তু কিছুতেই যেতে পারেনা। এদিকে বহু গাছে আগুন ধরে গেছে। শেষে বাধ্য হয়ে আলবার্ট আর মুনিকাকে আহ্ববান করে আলিক্স। ওদের সকলের চেষ্টায় শেষে নাফিসাকে থামাতে পারে। নাফিসা আর কথা বলতে পারেনা মাটিতে পরে যায়।
– আলিক্স নাফিসাকে নিয়ে আলবার্টের প্রাসাধে নিয়ে যায়। মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে তার জন্য নিজেকে আর কন্টোল করতে পারেনি।
– মার্ক ও অলিভিয়া ওখানে দাড়িয়েই কাঁদছিল। মার্ক ওকেও নিয়ে গেলতো আমরা এখন ওকে কিভাবে পাব।
– জানিনা বলে সেখান থেকে মার্ক চলে আসে।
– এভাবে আরও কিছু দিন চলে যায়। নাফিসা চুপ করে থাকে শুধু। কিছু বলে না। আলিক্সের কাছে শুধু সব কাজ শিখে নেয়। মারিয়াম বার বার চিন্তা করে মেয়েটা ২ বার আঘাত পেল আমি কি তাকে সব বলে দিব! নাহ্ ওর সামনে বিশাল পরীক্ষা অপেক্ষা করছে।
তার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
– রাফসান দেশে ফিরে মার্ক আর অলিভিয়ার সাথে কথা বলে কিন্তু নাফিসাকে আর খুজে পায়নি। মার্ক বলল সেদিনের পর থেকে ওরাও আর নাফিসাকে খুজে পায়নি। ওর মেয়ে বার বার ওর নাফিসা মা বলে কেঁদেছে কিন্তু রাফসান এনে দিতে পারেনি। সুমি ওরা সবাই রাফসান এবং মেয়েকে পেয়ে অনেক খুশি কিন্তু রাফসানের বুকে জলন্ত আগুনের লাভা বার বার বিষ্ফরিত হতেই থাকে।



– নাফিসা সম্পূর্ন ভাবে প্রস্তুতি নিতে ৭ বছর লেগে যায়। এই সাত বছরে অনেক কিছুর সম্মুক্ষীন হতে হয়েছে। আলবার্ট সহ সবাই খুব খুশি নাফিসার সাফল্যতে। নাফিসা আবার মার্ক আর অলিভিয়াকে খুজতে বের হয় প্রায় ৩ বছর পর। লন্ডনের একটি নির্জন রাস্তা বসে বিরবির করে কিছু পড়তেই মার্ক সামনে এসে হাজির হয়।
– নাফিসা এত দিন কই ছিলি! তোকে কত খুজছি জানিস?
– হুম আগামী মাসে আমার একটা ব্যাবিলনে প্রতিযোগিতা আছে তোরা আসবি তো?
– মার্ক চুপ করে থেকে বলে নাফিসা কি বলিস ওটা তোর জন্য রিক্স হয়ে যাবেরে। এমন কাজ করিস না। কত দিন পর তোকে পেলাম।
– অলিভিয়ার কাছে আমাকে নিয়ে চল মার্ক বলেই রাস্তায় হাটতে লাগলাম। কতদিন পর এই শহরে আসলাম। ইচ্ছা করেই হাটছি। এমন সময় চাপা আর্তনাদ শুনতে পেলাম এবং সাথে গুন্জনের শব্দ। এত রাতে এধরনের শব্দ। নিশ্চয় খারাপ কিছু বলে চারদিকে খুজতে লাগলাম। আমি আর মার্ক ২ জনেই খুজছি এমন সময় ঝোপের আড়ালে কিছু নড়তে দেখলাম। দেরী না করে সেখানে গিয়ে দেখলাম একটা দুধের শিশুকে ৫ টা শক্তিশালী জ্বীর ধরে আছে আর শিশুটির দেহ থেকে আলোকরশ্মী বের হচ্ছিল সেগুলো ৫ জ্বীন শোষন করছিল।
– এই বাচ্চাটিকে তো মেরে ফেলে দিচ্ছে বলেই সেখানে দৌড়ে যেতেই ওদের শোষন করা রশ্মিজাল গুলো আমার দেহে সাথে সাথেই সব প্রবশ করল।
– জ্বীন গুলো রেগে শিশুটি কে ছুড়ে ফেলে দিয়ে আমার দিকে তাকালো। কিন্তু আমি মায়া বলে বাচ্চাটি কে আমার কাছে নিয়ে আসি।
– তোর এত্ত সাহস আমাদের কাজে বাঁধা দিস বলে ৫ টা জ্বীন আমার চারপাশে হাজির হল।
চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here