#ধর্মের_দেয়াল (সিজন-২)
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৫
.
.
– রুপ কে দেখে ভয় এবং আনন্দ ২ টাই বেড়ে গেল।
– ও আমার দিকে তিক্ষ্ম চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
– আমি কাছে যাব এমন সময় কতগুলা স্টুডেন্ট আসতে দেখে ওনার সামনে চট করে কলম ফেলে দিলাম। শুধু তাকে থামানোর জন্য।
– কলম তোলার নাম করে একদম ওনার কাছে গিয়ে বললাম বউ কে সবার সামনে এভাবে দেখতে নেই। আমার বুঝি লজ্জা লাগেনা…….. বলেই জলদি চলে আসলাম।
.
– রুপ কি বলবে নাফিসার কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। এই মেয়ে জিবনে শুধরানোর নয় বলে নিচে নামতে লাগল।
.
.
.
– আমি হলরুমে এসে একটা জায়গা দেখে বসে পড়লাম।
– অনেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে হয়ত দেখতে গর্জিয়াস লাগছে এই জন্য।
.
.
– রোজকে দেখে আমি ওর কাছে গিয়ে জিঙ্গাসা করলাম রুপম কেমন আছে।
– রোজ আমার দিকে তাকিয়ে খেকিয়ে বলে উঠল মরার ব্যবস্থা করে এসেছিস এখন শুধু মরার অপেক্ষায়।
– আমি কিছু না বলে আমার সিটে বসে পড়লাম।
– আকাশ এসে বলল হেই তোমাকে হেব্বি লাগছে।
– আমি শুধু মুচকি হাসলাম।
– ও আরও কিছু কথা বলে চলে গেল।
– মাথায় অনেক টেনশন। একদিকে রুপম, নিজের সংসার, স্বামী অন্য দিকে আজ রাত অবদি নিজেকে যেকোন মূল্য সেভ রাখতে হবে। আমি কার সাহায্য নিব ভেবেই যাচ্ছি।
.
– খাতা দিয়ে গেল। সব ফরমালিটি পুরুন করতে ঘন্টা পড়ে গেল। প্রশ্ন পত্র দিলে লিখতে শুরু করলাম।
– একটু পর রুপ এসে গার্ড দিচ্ছে। ও আমার দিকে একবারও তাকিয়ে দেখলনা পর্যন্ত।
– হতাশ হয়ে চুপ করে বসে আছি। লিখতে মন চাচ্ছেনা।
– আমি যে লেখা বাদ দিয়ে বসে আছি এটা মনে হয় রুপ পর্যবেক্ষণ করেছে তাই আমার সিটের পাশ দিয়ে কয়েকবার যাওয়া আশা করল।
– কি লিখব। পড়লে তো কিছু লিখব। পড়া বাদ দিয়ে রুপের সাথে শুধু ফাজলামি করেছি।
-কি লিখব ভেবে একটা পত্র লিখতে মন চাইল। যেহেতু এটা রুপের সাবজেক্ট তাই লিখলে ও পড়তে পারবে খাতা কাটার সময়।
– প্রেম পত্র লিখতে শুরু করলাম।
.
.
” সুখের নীড়ে সুখ পাখি তুমি, মনের
আহ্ববানে মুগ্ধ তোমার সঙ্গী
পাখিটিও। আমায় হতাশ করো না
প্লিজ। যানো, খুব ভয় হয় তোমাকে
পেয়ে হারানো। আমি তোমাকে
হারাতে চাইনা। তোমাকে
ভালবাসি,….. ভিষন ভালবাসি। তুমি
আমাকে ভুলে যাবেনা তো। তুমি কতটুকু
জানো আমি জানি না। তবে যতটুকু
জানো, তার চেয়ে অনেক বেশি
ভালবাসি তোমায়। আমাকে ভুলে
যেওনা সোনা….. I Love You RUP
.
.
.
-লিখে বসে আছি। আর লিখতে মন
চাচ্ছেনা।
– স্যার আমি খাতা জমা দিব বলে
রুপের দিকে তাকালাম।
– রুপ ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকাল।
সাথে সব স্টুডেন্ট গুলোও।
– রুপ কাছে এসে বলল আপনি কি
নিশ্চিত যে পেপার এখনই জমা দিবেন?
-yes sir…. বলে জমা দিয়ে আসতে
লাগলাম।
.
.
.
– মিস নাফিসা stop…..
– এইরে কাজ সারছে। লেখাগুলো
আবার দেখে ফেলেনিতো এখনই।
– পিছন দিকে ফিরে তাকাতেই দেখি
রুপ রাগী লুক নিয়ে আমার দিকে
আসছে।
– এবার আমি ভিষন ভয় পেয়ে গেলাম।
ঐ লেখার কারনে আজ মনে হয়
মানসম্মান হারাতে হয়।
.
.
– আমার দিকে তাকান… এগুলো কি
লিখছেন বলেই হল ভর্তি স্টুডেন্ট এর
সামনে ঠাশশশ্ করে চড় বসিয়ে দিল।
.
.
– আমি লজ্জায় দুঃখে মাথা নিচু করে
রইলাম। সবাই লেখা বাদ দিয়ে
আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে হয়ত।
– চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি আমার
ওড়নার উপর পড়ছে। সেদিকে খেয়াল
নেই।
.
.
– মানুষ শিক্ষা শেষে ভাল চরিত্রের
অধিকারী হয় আপনার মত বেয়াদপ এবং
বেয়ারা কেউ হয়না।
– আপনার এই খাতা এখনই পিন্সিপাল
স্যার কে দেখাচ্ছি বলে হাত ধরে
টানতে টানতে নিয়ে গেল।
.
.
– পুরো ক্লাস দিয়ে মনে হয় সিডর বয়ে
গেল। একদম স্তব্ধতা নেমে গেছে
ক্লাসে। অন্য আর একটি স্যার ও ঘটনা
দেখে হতবাক। এমনি রুপ স্যার বলতে
তাদের কাছে জম ছাড়া কেউ নয়। তার
উপর নাফিসা তার হাতে পড়েছে
সেটা ভেবেই অনেকে শিউরে উঠল।
–
– রুমের বাহিরে বের হতেই ওকে বললাম
রুপ তুমি এটা করতে পারনা। আমার চোখ
বেয়ে পানি পড়ছে।
– আমি কি করতে পারি তুমি ভাবতেও
পারবেনা বলেই স্যারের রুমে নিয়ে
গেল।
.
.
.
– সোজা একদম স্যারের কাছে নিয়ে
গিয়ে হাত ছেড়ে দিল। সেখানে আরও
অনেক স্যার ছিল।
– আমি লজ্জায় অপমানে মাথা নিচু
করে ফুফিয়ে কেঁদেই যাচ্ছি।
.
.
– সোজা পিন্সিপাল কে খাতা
দেখিয়ে বলল এই মেয়ের কি শাস্তি
হওয়া উচিত আপনি বলেন। আমার তো
মনে হয় একে এখুনি ঘাড় ধরে বের করে
দেই ভার্সিটি থেকে।
.
.
– আমার মনে এতটা ঘৃনা চলে আসল রুপের
উপর বলার ভাষা নেই।
.
.
– মিস. নাফিসা এগুলো আপনি
লিখেছেন বলেই পিন্সিপাল আমার
দিকে তাকাল।
-……………….?????
– এই মেয়ে স্যার কি বলছে শুনতে পাও
না! কথাটি অন্য একটি স্যার বলে উঠল।
…………………..?
– আপনি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলছেন
। এটা কেমন ভাষা যে আপনি exam pepar
এ লিখছেন।
…………………..?
– এবার রুপকে পায় কে কয়েক দিনের
জমানো রাগ একসাথে আবার ঝাড়ল।
এবার স্যারদের সামনে একটা কষে চড়
মাড়ল।
–
–
–
– Mr. Rup stop and control your self.
-স্যার এটা আমার সম্মানের ব্যাপার।
আপনি বুঝতে পারছেন এতে আমার
সম্মানের দিক থেকে কতটা হেনেস্তা
হতে হবে এবং student রা জানতে
পারলে তাদের সামনে হাসির পাত্র
হতে হবে।
–
– আমি বুঝতে পারছি। তবে ওকে একটা
চান্স দেওয়া দরকার।
– রুপের এমন সময় কল আসে
excuse me স্যার বলেই বাহিরে চলে
আসল।
– রুপ তুমি কোথায়?
– Dad আমি ভার্সিটি তে। any problem!
-রুপমের অবস্থা খুবই খারাপ তুমি জলদি
বাসায় ব্যাক কর।
–
– কথাটি শুনে রুপের বুকের ভিতর ঝড়
বেয়ে গেল। আজ নাফিসার ভুলের জন্য
রুপমের এই অবস্থা। ওকে তো এর মাষুল
দিতেই হব। রাগটা যেন দ্বিগুণ হয়ে
গেল ওর উপর রুপের।
.
.
– আমার যা ছিল সেটাও শেষ। সবার
সামনে এত্ত অপমান। স্যার আমাকে
বহিষ্কার করে দিন এই কথাটি
পিন্সিপালের মুখের উপর বলে বের
হয়ে আসলাম।
.
.
– নাফিসার ব্যবহারে পিন্সিপাল
কিছুটা হতবম্ভ হয়ে গেল।
– আর একটা sir হেসে বলে উঠল। Sir নারী
এমনই হয়। তার ভিতর সুন্দরী নারীরা একটু
বেশিই পাগলেটে হয়। যেটা
মেয়েটির ক্ষেত্রে হয়েছে।
.
.
-রুপ অফিস কক্ষে ফিরে এল।
– Sir আমার বাসায় প্রবলেম আমি চলে
যাচ্ছি বলেই রুপ বেরিয়ে আসল।
.
.
– আমি কলম ছুড়ে মারলাম এবং রাগে
ভার্সিটি থেকে বের হলাম। এমন সময়
রুপ আমায় হেচকা টান দিয়ে গলা
চিপে ধরে বলল আজ যদি রুপমের কিছু হয়
তোমাকে কখনও ক্ষমা করব না এবং এর
থেকেও তোমার জন্য বড় ধরনের শাস্তি
অপেক্ষায় আছে।
– আমার দম আটকে যাচ্ছে তবুও নিষ্প্রাণ
হয়ে চুপ করে আছি।
.
.
.
– কোথা থেকে কাইফ এসে রুপ কে
ধাক্কা দেয়।
– রুপ আমাকে ছেড়ে দিয়ে একটু দুরে
সরে যায়।
– নাফিসা তুমি ঠিক আছো?
– আমার মনে হয় পৃথিবী অন্ধকারে
আচ্ছন্ন হয়ে গেছে।
– আমার কথা যেন আটকে গেছে।
– অনেক কষ্টে বললাম প্লিজ একা
থাকতে দাও আমায়। রাতে বাসায়
এসো । কারন এটা বলার কারনে কাইফ
রাত অবদি কোন সন্দেহ করবেনা
আমাকে।
–
– রুপ আমার কথা গুলো শুনে আরও রেগে
গেল।
– এই তুমি এতটা নিচে নেমে গেছ এক
রাতের মধ্য। আমি কি তোমার কোন
অভাব রেখেছি! আমার কাছ থেকে
কি তুমি শারিরিক তৃপ্তি পাওনি যে,
অন্য পরুষের কাছে রাত কাটাতে চাচ্ছ!
তাও আবার কাইফ???
.
.
– রুপের সাথে কথা বলতেও আমার
রুচিতে বাঁধছে। তাই……আমি এই কষ্টেও
একটা ছোট্ট হাসি দিয়ে চলে আসলাম।
যাতে রুপ বুঝতে পারে তার কথায়
সম্মতি দিয়েছি। কারন আজ আর
হারাবার কোন ভয় নেই।
.
.
.
– রুপ অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছে।
– কাইফ এই সুযোগ টাই খুজছিল।
– জানিস রুপ তোর বউ না হেব্বি।
নাফিসাকে জড়িয়ে ধরতে সেই
লাগে। আমি নিজে কোনদিন
ভাবিনি ও নিজে এসে আমার কাছে
এভাবে ধরা দিবে বলেই কাইফ চলে
গেল।
-১৪ বছরের ফল যে এত্ত মিষ্টি জিবনেও
ভাবিনি রুপ। পিছন ফিরে কথাটি
আবার বলল কাইফ।
.
.
.
– আমি একটু গভীর জঙ্গলে ডুকে পড়লাম।
একটা অন্ধকার জায়গা বেছে নিয়ে
বসে পড়লাম। আমায় ভেঙ্গে পড়লে
হবেনা আমার অনেক কাজ।রুপমের কিছু
একটা করতে হবে।
– শুকরা জ্বীন কে আবার ডাকলাম। ও একটু
পর চলে আসল। আমি তাকে বললাম
আমার সাথে যে ছোট্ট বাচ্চাটি ছিল
হোস্টেলে সে আজ মৃত্যু পথে।
আপনিতো অনেক দিনের জ্বীন। আপনি
এর একটা সমধান করে দিতে পাবরেন
না বলে কাঁদতে লাগলাম।
-আম্মা কাঁদবেননা। আমি দেখছি কি
করা যায়। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন পর বলল
আম্মা আপনি বেশ বড় একটা কাজ
করেছেন সাপটাকে মেড়ে। ওকে
কোথায় মেরেছেন?
– আমাদের বাসায়।
– ছেলেটির জন্য কিছু করতে পারব। এটা
খুব সহজ কাজ আমার জন্য আম্মা বলেই
চলে গেল।
– আমি অনেকক্ষন যাবত বসে আছি ওনার
কোন আসার নাম নেই। অধর্য্য হয়ে
গেলাম। আমার হাতে সময় কম।
– দেড় ঘন্টা পর এসে হাজির হল।
– এত্ত দেরী কেন হল।
– আম্মা রুপের মা এর সাথে জড়িত।
আপনাকে শেষ করতে চেয়েছিল কিন্তু
নিজের ছেলের উপর সেটার প্রভাব
পড়েছে। ওখানে সাপটির অনেক
সাঙ্গপাঙ্গ আছে। অনেক কষ্টে সাপটির
দেহের পোড়া ছাই নিয়ে আসছি।
– ওকে যা করার জলদি করুন সময় নেই
হাতে।
– সেটা না হয় করলাম কিন্তু ঐ বাসায়
এই পথ্য পাঠিয়ে দেই কেমনে!
– ব্যাপার না আপনি কাজ করুন জলদি
আমি সব ব্যবস্থা করছি বলেই উঠে
আসলাম।
– আমি হোস্টেলে থাকা ভুত টুকনি ওর
বাচ্চা আর সম্টা কে ডাকতেই ওরা
হাজির। আম্মা কেমন আছেন আপনি?
এতদিন পর আমাদের মনে পড়ল! হুম বলে
কথা না বাড়িয়ে ওদের সব বুঝিয়ে
দিলাম কি করতে হবে।
..
.
– আবার শুকরা জ্বীনের কাছে চলে
আসলাম।
– উনি সব কাজ সেরে ফেলে বসে
আছেন।
– মারিয়ামের কি অবস্থা দাদু।
– আম্মা আজ রাত পার হলেই উনি ঠিক
হয়ে যাবে। আমি বুঝতেই পারছিনা
এত্ত শক্তিশালী পরীকে কাইফ বন্দী
করল কেমন করে।
– ওর কাছ থেকেই শুনে নিয়েন। আপনি
এগুলো ওদের দিয়ে দেন বলে সম্টা কে
দেখিয়ে দিলাম।
– আম্মা তা নাহয় দিলাম। কিন্তু আমার
ইদ্রিয় শক্তি বলছে আপনার কোন বিপদ
আজ। বুঝতে পারছিনা আর কিছু।
– উনি আমাকে একটা লকেট গলায়
পড়িয়ে দিলেন এবং বললেন এটা
আপনার কাছে যতক্ষন থাকবে আপনাকে
জ্বীন জাতির কেউ খুজে পাবেনা ।
সে যতই শক্তিশালী হক না কেন। এতে
আপনি কাইফ থেকে আপাতত সেফ।
কিন্তু সরাসরি আপনাকে দেখতে
পাবে। তাই তার আশপাশ যাবেন না।
–
–
–
– আমার সব দায়িত্ব শেষ করে রাস্তায়
নেমে পড়লাম। সেই আগের জিবনের
পথে। হাটছি আর রুপের কথা মনে করে
কেঁদেই চলছি।
“”” এই রাস্তা গুলো লাগে অচেনা–
আকাশটার সাথে নেই জানাশোনা–
আমি তোর প্রেমেতে অন্ধ, ছিল চোখ
কান সব বন্ধ– থেমে গেছে জিবনের
লেনাদেনা– সেই পুরোনো
রাস্তাটায় আজ একা হেটে যাই–
হচ্ছেনা হিসাবের বনিবনা– এখন
এমনি করে ভাল কেমনি করে থাকি–
তারচেয়ে ভাল ছিল তুই নিজ হাতে খুন
করে যেতি আমাকে..
.
.
– রুপের কথায় এতটা মগ্ন ছিলাম যে কখন
রাস্তায় মধ্য চলে আসছি বুঝতেই
পারিনি।
– এমন সময় পিছন থেকে এক ধাক্কায়
ছিটকে পড়ে গেলাম। অসহ্য যন্ত্রনাময়
ব্যাথায় কুকড়ে গেলাম। হাজারো
চোখ মেলানোর চেষ্টা করেও
পারলাম না…. নিস্তেজ হয়ে গেলাম।
.
.
– যে গল্পে যত বিরহ তত টাই রুমান্টিক
হয়ে ওঠে পরবর্তী তে।
চলবে…….
.