ধর্ষণের_মিথ্যা_অপবাদ
✍লেখক✍কালো ভূত
#MD_Fahim_Ahmed
Page: All Story Link
🌺১ম পর্ব
❣
❣
জেলখানার একটি ছোট্ট রুমে গুটিশুটি হয়ে দেয়ালে কি যেনো আঁকছে আর আনমনে কিছু একটা ভেবেই যাচ্ছে,আমাদের এই গল্পের নায়ক রাসেল,কয়েদি নাম্বার ৪২০,আপনেরা হয়তো ভাবতাছেন গল্পের প্রথমেই নায়ক জেলে কেনো,
তার উত্তরে আমি বলব আপনেরা একটু অপেক্ষা করেন সব কিছু জানতে পারবেন,
এইদিকে এই জেলের সুপার আদনান সাহেব গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলেছে রাসেলের রুমের দিকে,
তার মুখে একটা খুসির ছাপ আবার কোনো কিছুর প্রতি চিন্তার ছাপ স্পষ্ট বোঝাই যাচ্ছে,
আদনান:-রাসেল এই রাসেল এইভাবে বসে বসে কি চিন্তা করোস হুম আর দেয়ালে ঐ মেয়ের ছবি কেনো এঁকেছো শুনি,
রাসেল এই জেলে এক বছর হলো আছে,
ওর দুই বছরের শাস্তি হয়েছে,
তখন থেকেই এই জেলার সাহেব রাসেল কে খুব ভালোবাসে,
জানিনা কেনো,তবে ওর ভালো কোনো গুণে হয়তো মুগ্ধ হয়েছে,
রাসেল:- আসসালামুয়ালাইকুম,
স্যার আপনে কখন আসলেন,
আনমনা হয়েই কথাটি জিগ্গেস করলো যেনো সে টেরই পাইনি জেলার কখন এসেছে,
আদনান:- ওয়ালাইকুমাসালাম,
আরে আমি এসেছি মাত্রই খুব বেশি সময় হয়নি,
তোমার জন্য একটা খুশির সংবাদ আছে,
জেলার সাহেব খুবই খুশি মনে বলল,
কিন্তু খুশির কথা শুনে রাসেলের মুখে কোনো হাসি খুশির ছিটা ফোটাও নেই যা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে,
রাসেল:-স্যার আমার জিবনটাই বেদনাই ভড়া কোনদিন সুখের ছোঁয়া পেয়েছি কিনা সন্দেহ আছে,আর আপনে বলছেন আমার জন্য খুসির খবর আছে,
আদনান:-হ্যা আছে,
আমি কি তোমাকে মিথ্যা বলতে পারি বলো,
তোমার ব্যবহার দেখে সবাই খুসি হয়,
বিজয় দিবস উপলক্ষে তোর একটি বছর আগেই জেল থেকে ছাড়ার আদেশ দিয়েছে,
তুমি যেদিন থেকে এই জেলে আছো সেদিন থেকেই বুঝতে পেরেছি তুমি আর যাই করোনা কেনো কাউকে ধর্ষণ করতে পারোনা,
রাসেল:-স্যার আপনের এই কথাটা শুনে আমার হাসা উচিৎ নাকি কান্না করাটাই ঠিক সেইটা বুঝতে পারছিনা,
তবে স্যার কথাই আছেনা,
যদি থাকে নসিবে আপনা আপনি আসিবে,
আমার কাছেও এসেছিল, তবে সুখ নই মিথ্যের চাদরে আবরিত কষ্ট,
কথা গুলো বলছে আর হাতের আঙ্গুল দিয়ে চোখের পানি মুছতেছে,
সবার চোখ তার দিকেই, এযেনো এক ভিন দেশি এলিয়েন,
আদনান:-রাসেল তোমার এখানে আসার মূল কারণ টা কি আমি সেইটা অনেক জানার চেষ্টা করেছি,যদিও লেখা আছে তুমি ধর্ষণের আসামি,
কিন্তু আমার বিশ্বাস হয়না তুমি একজন দর্শক,
রাসেল:-স্যার ধর্ষক হয়ে কেউ জন্মাইনা এই সমাজের উচ্চপদস্থ মানুষেরাই আমাদের মতো মানুষদের ধর্ষক বানিয়ে দেই,
আদনান:-রাসেল তোমার তো কালকে শাস্তি শেষ,
তাহলে তোমার জেলে আসার কাহিনি টা কি আমাদের বলবে,প্লিজ🙏🙏🙏
ঐখানে থাকা আরো কয়েদিরাও সাথে পুলিশ সহ অন্য অন্যরাও শুনতে ইচ্ছুক,
যেনো রাসেলের কাহিনি না শুনলে কারো পেটের ভাত হজম হবেইনা,
রাসেল:-আমি আমার জিবনের সব কিছুই খুলে বলব তবে এখন না রাতে,
এখন তো আমাদের সবার কাজ করার সময়,আমি চাইনা আমার গল্প শোনার জন্য সবার কাজের ক্ষতি হোক,
আদনান:-আচ্ছা তাহলে রাতেই শুনবো,
এটাই ফাইনাল আবার কথা কিন্তু ঘুরিয়ে ফেলিস না,
রাসেল:-স্যার এইটুকু বিশ্বাস রাখতে পারেন আর যাই করি মিথ্যা বলে কারো সাথে ঠকবাজি করিনা,
এরপর সবাই চলে গেলো,
রাতে এসে গল্পটা শুনবে বলে
রাসেল আবারও আনমনা হয়ে বসে রইল
চলেন অনেক তো বক বক করলাম এখন একটু রাসেলের পরিচয়টা জেনে আসি,
কি বলেন আপনেরা,
এই গল্পের নায়কের পুরো নাম সোহান আফরিন রাসেল, সবাই রাসেল বলেই ডাকে,
তার বাবা এইদেশের নামকরা বিজনেস ম্যান রায়হান চৌধুরী,
অর্থের কোনো কমতি নেই তাদের,
মা জজকোর্টের জজ,
কোনো ভাই নেই আছে শুধু ছোট্ট একটা বোন,
ততোটাও ছোট না যতটা আপনেরা ভাবতেছেন,
নাম জাকিয়া ইয়াসমিন জুঁই,
পাকিস্তানের একটি নাম করা মাদ্রাসাতে পড়ে,
এইটুকুই এখনকার মতো পরিচয় বাকি সব গল্পের সাথে থাকেন জানতে পারবেন,
রাসেল:-আমার জীবন কেন এমন হলো কতটা সুন্দর ছিলো যখন বাবা মা বোনের ভালোবাসা ছিলো, কিন্তু আফসোস আমার সাথে কেউ নেই এখন আমি যে একেবারেই একা হয়ে গেছি,
এইসব কিছু ভাবতেছে তখনই পিছন থেকে এক কয়েদি ৪২১ রফিক বলে ওঠে,
রফিক:-রাসেল কি এতো ভাবতেছো হুম চলো কাজ করতে হবে নাহলে জেলার সাহেব সবাইকে বকা দিবে,
রাসেল:-হুম ভাই চলেন,
আমিও আপনাদের জন্যই অপেক্ষা করতেছি,
রফিক:-হুম চলো,
দুইজন ধিরে ধিরে কাজের জায়গায় গিয়ে তাদের কাজ করতে থাকে,
কাজ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে যায়,তখন রাসেল সহ সবাই ফ্রেস হয়ে আবার সেই জেলে ফিরে আসে,কিছুক্ষণ পরে জেলার সাহেবের আদেশে রাসেল কে কিছু ভালো খাবার দিয়ে যায়,
পুলিশ:-এই নাও তোমার খাবার আর তারাতাড়ি খেয়ে নাও,
খাবার ছিলো আগের দিনের তুলনায় অনেক টাই ভালো তাই রাসেলের একটু ভাবনা চলে আসে,
আজকে হঠাৎ ভালো খাবার কেনো,
তাও আবার বিরিয়ানী,তাই সে পুলিশ কে জিগ্গেস করে,
রাসেল:-স্যার আজকে হঠাৎ আমার জন্য এতো ভালো খাবার কেনো,
আপনাদের মনে হয় ভুল হচ্ছে,
এই খাবার গুলো হয়তো অন্য কারো,
অনেক টাই অবাক হয়ে কথাটা বলল,
পুলিশ:-আরে না ভুল কি করে হবে,
আদনান স্যার তোমার জন্য এই খাবার পাঠিয়েছে,
বুঝেছো, এখন খেয়ে নাও,
বলেই সেই পুলিশ চলে যায়,
এইদিকে রাসেল আর কিছু চিন্তা না করে অনেক দিন পরে বিরিয়ানী পাইছে লোভ সামলাতে না পেরে খেয়ে নেই,
এইদিকে একজন পুলিশ রাফি আদনান সাহেব কে বলতেছে,
রাফি:-স্যার রাত তো প্রায় হয়েই এসেছে,
এখন চলেন কয়েদি ৪২০ রাসেলের থেকে ওর দর্শনের কাহিনী শুনে আসি,
আদনান:-ওহ ভালো কথা মনে করেছো আমার তো সেই কথা মনেই ছিলো না,
চলো তারাতাড়ি যায় আমার যে ওর কাহিনী শুনতে আর তর সইছে না,
তারপর আদনান সাহেব সহ আরও কিছু লোক রাসেলের রুমের দিকে আসে,
আদনান:-রাসেল তোমার কথা মতো আমরা সবাই কিন্তু রাতেই এসেছি,এখন আর মানা করলে শুনব না,
রাসেল:-আরে স্যার আপনেরা এতো কষ্ট করে আসলেন আর আমি বলবনা এইটা কি হয় বলেন,
রাফি:-হুম সেইটা ঠিক বলেছো,
এখন তাহলে বলতে শুরু করো,কোনো কিছু না ভেবেই,
আদনান:-হ্যা রাসেল বলতে শুরু করো আমার যে আর তোমার কাহিনী শোনার জন্য তর সইছেনা,
রাসেল:-স্যার আমার জিবনের কাহিনী শুনতে হলে আপনাদের অনেক সময় কষ্ট করে শুনতে হবে,
কেননা গল্পটা প্রথম থেকেই বলতে হবে না হলে কিছুই বুঝতে পারবেন না,
আদনান:-আরে যতই সময় লাগুক আর কষ্ট হোক না কেনো আমরা তোমার খল্প প্রথম থেকেই শুনব বলো,
রাসেল:-আচ্ছা তাহলে শুনেন,
দিনটা ছিলো ২০১৯সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শনিবার,
আমি ঘুমিয়ে আছি,
আরামে চারিপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেই দিকে আমার কোনো খেয়াল নেই,
আম্মু:-এই ছেলে কে নিয়ে আমি একটু ও পারিনা,
কতো করে বলি সকালে ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা কর,
কিন্তু কে শোনে কার কথা,
আজকে ওর কলেজে প্রথম দিন তাও ঘুম থেকে উঠছে না,
নবাব পরে পরে ঘুমাচ্ছে,
এই রাসেল ওঠনা আর কতো ঘুমাবি,
রাসেল:-আম্মু যাওতো আর একটু ঘুমাতে দাও,
মাত্র না ঘুমালাম,
আম্মু:-দেখছো ছেলের কথা সারারাত ঘুমানোর পরে এখন বলতেছে মাত্র ঘুমিয়েছে,
এই তুই ঘুমাবি ঠিক আছে ঘুমা,
ঐদিকে প্রথম দিনেই কলেজ মিস কর,
আমি গেলাম,
বলেই মিস রেহানা বেগম মানে রাসেলের আম্মু দরজার কাছে যেতে নিছে অমনি,
রাসেল:-কি
আজকে আমার কলেজের প্রথম দিন আর তুমি এখন ডাকতাছো,
আম্মু:-হ এখন তো সব দোষ আমারই হবে,
দুইবার ডেকে গেছি,
এখন তারাতাড়ি ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নিচে আই তোর বাবা অপেক্ষা করতেছে,
রাসেল:-হুম আম্মু তুমি যাও আমি এই দুই মিনিটে ওয়াশ রুমে যাচ্ছি আর পাঁচ মিনিটে তোমার কাছে আসতাছি,
বলেই রাসেল দৌড়ে ওয়াশ রুমে ডুকে যায়,
আর রেহানা বেগম হাসতে হাসতে,
আম্মু:-পাগল ছেলে একটা,
বলেই রাসেলের রুম থেকে নিচে চলে আসে,
তখন রাসেলের বাবা রায়হান চৌধুরী জিগ্গেস করে,
আব্বু:-কৈ তোমার আদরের বাদর ছেলে,
আম্মু:-এই শোনো আমার ছেলের নামে বাজে কথা বলবেনা,
বলে দিলাম,
আব্বু:-আমিতো মজা করে বলছি রাগ করো কেনো,
আম্মু:-মজা করে বলো আর যেভাবেই বলো,
আমার ছেলেকে নিয়ে বলবেনা,
আব্বু:-আচ্ছা ঠিক আছে এখন বলো রাসেল কি ঘুম থেকে উঠেছে,
তখনই সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে,
রাসেল:-কি বেপার মিস্টার বাবা,
আমাকে নিয়ে কি কথা হচ্ছে শুনি,
আব্বু:-এইতো এসেগেছে,
আমার সোনার চান, তা বাবা এইভাবে ঘুমালে কি তোমার কলেজে যাওয়া হবে,
রাসেল:-বাবা আমি কি ইচ্ছা করে ঘুম থেকে উঠিনি নাকি,
আমি তো সপ্নে দেখতেছিলাম তুমি পাশের বাসার,,,,,,
আর কিছুই বলতে পারলো না রাসেল,
কারণ ওর বাবা ওর মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরেছে,
আব্বু:-এই আমাকে কি মাইর খাওয়াবি নাকি,
হুম,
কানে কানে বলল,
রাসেল:-তাহলে আমার সাথে লাগতে আসো কেনো বাবা,জানোনা আমার জজ আম্মু আমার দলে,
আম্মু:-এই কি ফুসুর ফুসুর করছিস আর তুই এইসব কি পোশাক পরেছিস হুম,
যাক এতো সময় পরে হলেও সবার চোখ রাসেলের পোশাকের উপরে পরলো,
আসলে রাসেল খুবই সাধারণ পোশাক পরেছে,
আব্বু:-আরে আমি তো ওর পোশাক খেয়াল করিনি,
তা বাবা এই পোশাক কেন পরেছিস আমার কি কাপড় কেনার টাকা নাই নাকি,
রাসেল:-বাবা সেটা না আসলে আমি চাইনা সবাই জানুক আমি ধনী ঘরের সন্তান,
আমি চাই সাধারণ ভাবে চলে গরিবদের কষ্ট টা বুঝতে,
আম্মু:-কিন্তু বাবা,
রাসেল:-আম্মু কোনো কিন্তু না,
তখন কেউ আর কোনো কথা বললনা কারণ সবাই জানে রাসেল বলেছে তো ও ঐটা পরিবর্তন করবেনা,
তারপর রাসেল সবার সাথে বসে নাস্তা করে,
কলেজে যাওয়ার জন্য বের হয়,
রাসেল:-এই রিকশাওয়ালা মামা এই কলেজে যাবে নাকি,
রিকশাওয়ালা:-হ মামা যামু উঠে বসেন,
তারপর রাসেল রিকশায় উঠে বসে আর রিকশা তার আপন গতিতে ছুটে চলে কলেজের দিকে,
কিছু সময় পরে কলেজে পৌঁছে যায়,
রিকশা থেকে নেমে,পঞ্চাশ টাকা একটা নোট দিয়ে বলল,
রাসেল:-মামা এই নাও তোমার টাকা,
রিকশাওয়ালা:-মামা আমার কাছে তো ভাংতি নেই,
রাসেল:-মামা তুমি রেখে দাও আর কিছু কিনে খেও,
রিকশাওয়ালা:-মামা আপনার মতো মানুষ এখন আছে, বিশ টাকার ভাড়া পঞ্চাশ টাকা দিলেন যেখানে সবাই বিশ টাকা দিতেই কতো বাহানা করে,
রাসেল:-মামা সবাই যদি এক হতো তাহলে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকা কষ্ট কর হয়ে যেতো,
তাই ভালো মন্দ মিলেই এই পৃথিবী টিকে আছে, আচ্ছা মামা থাকো আমি এখন যায়,
❣❣❣❣❣❣❣❣❣❣❣❣❣❣❣❣❣❣❣❣❣❣❣❣❣
।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।
।।।।।।।।।।
।।।।।
💝……….চলবে……..