গল্প —- ধর্ষিতা_বউ
পর্ব — ১০
লেখক —– মাহমুদ
*************************************
প্রাপ্তির সম্পূর্ণ মাথার একপাশ ফেটে রক্ত ঝরছে।পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে।সায়ান প্রাপ্তিকে বলল
-তোর মতো মেয়েরা আমার সংসার করার যোগ্য না।আনস্মার্ট,ক্ষ্যাত।তোর এতোটা বিশ্বাস আমি অর্জন করেছি শুধুমাত্র তোকে সুন্দর আর শান্তশিষ্ট ভাবে মারার জন্য।ব্যাস আমার কাজ হয়ে গেলো।বোকা মেয়ে এতো সহজেই বিশ্বাস করে বসলি!!ভালো থাকিস।
কথাটা বলেই রিয়া আর সায়ান চলে গেলো।প্রাপ্তি চোখে আর কিছুই দেখতে পাচ্ছিলো না।এক পর্যায়ে চোখ বন্ধ হয়ে গেলো।ঠিক সন্ধ্যা ৭ টায় মোনা আসলো সেখানে।পাগলের মতো চারদিকে খুজলো প্রাপ্তিকে। এত বড় একটা জায়গায় এই সন্ধ্যায়,কোথায় পাবে প্রাপ্তিকে।খুজতে খুজতে সেই ফুচকা দোকানের পাশে গিয়ে দাড়ালো মোনা।তারপর লোকটাকে প্রাপ্তির শারীরিক গঠনের বর্ণনা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো।লোকটা বলল
-ওনার লগে একজন পুরুষ আসিলেন।মনে অয় ওনার জামাই। ওনারা আমার দোকান থেইক্কা ফুসকা খাইয়া ওইদিকে গেসে দেকসি।(হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিলো)
তারপর মোনা ফুচকাওয়ালার নির্দেশনা অনুযায়ী সেদিকে গেলো।অনেক খুজলো।এদিকে পুরো জায়গাটা অন্ধকার হয়ে পড়েছে।হালকা কুয়াশায় কিছুই স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছিলো না।মোনা পাগলের মতো এদিকে ওদিকের খুজছিলো প্রাপ্তিকে।হঠাৎ করেই কিসের সাথে যেনো ধাক্কা লেগে মোনা উপচে পড়ে গেলো।তারপর উঠে দাঁড়ালো। তাকিয়ে দেখে প্রাপ্তি উবু হয়ে মাটিতে পড়ে আছে।মোনা অস্থির হয়ে গেলো প্রাপ্তির এই অবস্থা দেখে।মোনা প্রাপ্তির পালস চেক করলো।নাহ এখনো চলছে তবে খুব দূর্বল।আশে পাশে কেউ নেই।মোনা কি করবে কিচ্ছু বুঝে উঠতে পারছিলো না।তারপর সেই ফুচকাওয়ালার কাছে গেলো।বলল,
-মামা একটু সাহায্য করবেন?খুব বিপদে আছি।একটা সিএনজি এনে দিন দয়ে করে।
লোকটা সাথে সাথেই বাইরে গেলো সিএনজির জন্য।মোনা প্রাপ্তির কাছে ফিরে গেলো।কিছুক্ষন পরেই লোকটা একটা সিএনজি নিয়ে আসলো। তারপর ওনার সাহায্যেই প্রাপ্তিকে সিএনজিতে উঠিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলো।প্রাপ্তির বাম হাতের কিছু অংশ থেঁতলে গেছে।মাথার একটা অংশ ফেটে গেছে।ডাক্তার প্রাপ্তিকে ওটি তে নিয়ে গেলো।মোনা বাইরে বসে অপেক্ষা করছিলো।প্রায় ১ ঘন্টা পর ডাক্তার বেরিয়ে আসলো।জিজ্ঞেস করলো
-পেশেন্ট আপনার কি হয়??
-আমার বোন হয়।
-আপনি আমার সাথে কেবিনে আসুন।
মোনা ডাক্তারের পেছনে তার কেবিনে গেলো।ডাক্তার বলল
-কিভাবে হলো ওনার এই অবস্থা?
-একটা কার এক্সিডেন্ট।
-কার এক্সিডেন্ট! ওনার মাথায় অনেক আঘাত পেয়েছেন।কিছু ইটের কণা ঢুকে গেছে।আমরা সেগুলো ওয়াশ করে ফেলেছি।She is out of danger now…
-thank you so much doctor.
-আমাকে thanks দিতে হবেনা।দিলে সৃষ্টিকর্তা কে দিন।ওনার লাক খুব ভালো ছিলো তাই এতো বড় একটা এক্সিডেন্ট হওয়ার পরেও ওনার বাচ্চার কোনো ক্ষতি হয়নি।
-মানে?বাচ্চা???কার বাচ্চা?
-আপনার পেশেন্ট এর।কেনো আপনি জানেন না ওনি প্রেগন্যান্ট?
-ওনার প্রেগন্যান্সির ৭ম সপ্তাহ চলছে এখন।
-আল্লাহ্র দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া।
-ওনার জন্য এ নেগেটিভ ব্লাড লাগবে এক ব্যাগ যে করেই হোক যোগাড় করে আনুন কালকের মধ্যে।নাহলে রক্তশূন্যতায় ভুগবে ওনার গর্ভের সন্তান।আর মারা যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে।
-আচ্ছা আমি যে করেই হোক যোগাড় করে আনবো।ওর জ্ঞান ফিরবে কখন?
-ওনার মাথার আঘাত টা খুব ক্রিটিকাল।তাই আমরা মেডিসিন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রেখেছি।এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না কখন জ্ঞান ফিরবে তবে She is out of danger..so don’t worry..
-thank you so much doctor..
তারপর মোনা বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংক এ যোগাযোগ করলো কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না এ নেগেটিভ ব্লাড।ফেসবুক এ বিভিন্ন গ্রুপ এ পোস্ট করেছে।তাও পেলো না।যদিও পাচ্ছে সে ক্ষেত্রে লোকেশন সমস্যা হচ্ছিলো।
পরদিন সকালে মোনা ডাক্তারের কাছে জানালো
-আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কোথাও ব্লাড পাইনি।কি করবো বুঝতে পারছিনা।
-আপনার রোগীর রক্ত যোগাড় হয়ে গেছে।আর আমরা অলরেডি রক্ত দিয়েও দিয়েছি ওনাকে।সো চিন্তার কোনো কারন নেই আর।
-কখন,কে দিলো?
-একজন ভদ্রলোক এসেছিলেন।উত্তরাতেই থাকেন।ওনি একটা শেয়ার পোস্ট দেখেছেন রক্তের প্রয়োজন। তাই গতকাল রাতেই এসে দিয়ে গেছেন।আপনি তখন রক্তের খোঁজে বাইরে ছিলেন রক্ত দিয়ে ওনি আপনার সাথে দেখা করার জন্য অনেক্ষন ওএট করেছিলেন কিন্তু জরুরি কাজ পড়ে যাওয়ার কারনে চলে যান।
-ওনার অ্যাড্রেস,ফোন নাম্বার কিছু আছে?
-না উনি কিছুই দিয়ে যান নি।তবে উমি বলেছেন উনি আসবেন আবার রোগীকে দেখার জন্য।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
বলে মোনা প্তাপ্তির কাছে গিয়ে ওর পাশে বসে চেয়ার নিয়ে।প্রাপ্তির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবছিলো,”এতবার করে বললাম তবুও তুমি আমার কথা শুনলে না!!আমি তো তোমার খারাপ চাইনি।কেনো যে শুনলে যা আমার কথাগুলো!”
কিছুক্ষন পরে মোনা খেয়াল করলো প্রাপ্তি কথা বলছে।ওর মুখে মাস্ক লাগানো ছিলো।ও সায়ানের নাম নিচ্ছিলো বারবার।মোনা প্রাপ্তির একটা হাত ওর হাতে নিয়ে চেপে ধরলো,ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।প্রাপ্তি চোখ খুলে দেখে মোনা ওর পাশে বসে আছে ওর হাত নিয়ে।তারপর ও অন্য হাত দিয়ে অক্সিজেন মাস্ক সরালো মুখ থেকে।কিছু একটা বলত্র চাচ্ছিলো,বলছিলোও।কিন্তু স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো না।মোনা বুঝতে পারেনি ওর কথা।তারপর ডাক্তার এসে ওকে চেক করে গেলো।সব ঠিক আছে।শরীরের দূর্বলতা বেশি।কথা বলতে নিষেধ করেছে ডাক্তার।তারপর ডাক্তার চলে গেলো।বিকালে মোনা প্রাপ্তির বেডের পাশে বসে ওর বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে ছিলো।কিছুক্ষন পরেই নার্স এসে বলল
-একজন লোক এসেছে আপনাদের সাথে দেখা করার জন্য।ডাক্তারের চেম্বারে আছেন।
মোনা উঠে বসে। জিজ্ঞেস করলো
-কে এসেছে?
-জানিনা।তবে ওনার নাম বলছিলেন তূর্য রহমান।
মোনা চেম্বারে গিয়ে তার সাথে দেখা করলো।ডাক্তার জানালো
-ইনি হচ্ছেন তূর্য রহমান।আপনার বোনকে ইনি রক্ত দিয়েছিলেন গতকাল।
তারপর মোনা লোকটার দিকে তাকালো আর বলল
-আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।আমি বলে বোঝাতে পারবোনা যে আপনি কত বড় একটা উপকার করেছেন।
-its ok…আমাকে না বলে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানান যে আমি যথাসময়ে রক্তের পোস্ট টি দেখেছি।আর তার চেয়েও বড় সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে আমার বাসাও এখানে থেকে খুব কাছে যার কারনে আমি রক্ত দানে সক্ষম হয়েছি।
-আল্লাহর রহমতে আপনার উসিলায় আজ আমার বোন জীবিত।
-যাকে রক্ত দিলাম তাকেই তো দেখা হয়নি এখনো।তাহলে চলুন একবার ওনার সাথে দেখা করে আসি!তারপর বাসায় যাবো আমি।
তারপর মোনা আর তূর্য প্রাপ্তির কেবিনে গেলো।প্রাপ্তিকে দেখেই তূর্য নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।প্রাপ্তিও তূর্য কে দেখে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো।মোনা প্রাপ্তিকে বলল
-প্রাপ্তি ইনি তোমাকে রক্ত দিয়ে তোমার জীবন বাঁচিয়েছে।
প্রাপ্তি মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্ক টা সরিয়ে বলল,
-তূর্য তুই???
-হ্যাঁ প্রাপ্তি আমি।কিন্তু তোর এই অবস্থা কি করে হলো?
-সে অনেক কথা রে।দেখা যেহেতু হয়েছে তাহলে সবই জানতে পারবি।
ওদের কথাবার্তা শুনে মোনা বলল
-তোমরা চিনো একে অপরকে?
-হ্যাঁ আপু।ও আমার ছোট্ট বেলার বেস্ট ফ্রেন্ড।
-হুম আমরা একসাথে বড় হয়েছি ছোট বেলা থেকেই।আমি ওর দুই ক্লাস সিনিয়র ছিলাম।(তূর্য)
-ওহ আচ্ছা ভালোই হলো তাহলে।(মোনা)
-প্রাপ্তি তুই প্রেগন্যান্ট আর তোর এই এক্সিডেন্ট হলো!!তোর হাজব্যান্ড কোথায়?(তূর্য)
-প্রেগন্যান্ট!!!!
প্রাপ্তি মনে হচ্ছিলো যেনো আকাশ থেকে পড়লো!মোনা ওকে কিছুই জানায় নি।তারপর মোনা বলল
-হ্যাঁ প্রাপ্তি তুমি প্রেগন্যান্ট। তোমার প্রেগন্যান্সির ৭ম সপ্তাহ চলছে এটা।আল্লাহ্র রহমত ছিলো তাই বাচ্চার কোনো ক্ষতি হয়নি।বাচ্চা সেফ আছে
-সেফ??কি করবো আমি এই বাচ্চা দিয়ে?এটা তো আমার বৈধ সন্তান না।
-ছিঃ প্রাপ্তি কি বলছো এসব।তুমি মাথা ঠান্ডা করো প্রাপ্তি।তুমি মাথায় আঘাত পেয়েছো।
-কিভাবে ঠান্ডা করবো আমি মাথা?একজন জানোয়ার আমাকে প্রতিনিয়ত বৈধভাবে ধর্ষণ করতো যার ফলস্বরুপ এই সন্তান।এই সন্তানটা কি আদৌ পবিত্র সম্পর্কের চিহ্ন??
-কি বলছিস এসব প্রাপ্তি?শান্ত হ।তোর শরীর খারাপ করবে।এবার কি হয়েছে বলবি আমাকে?কি আবোল তাবোল বলে যাচ্ছিস বৈধভাবে ধর্ষণ, পবিত্র সম্পর্ক।একটু খুলে বলবি কি হয়েছে?(তূর্য)
তারপর প্রাপ্তি তূর্যকে সব কিছু খুলে বলল।কথাগুলো শুনেই তূর্যের মাথায় রক্ত চড়া দিয়ে উঠে।
পার্ট ১১ এর অপেক্ষায়…….