গল্প —– ধর্ষিতা বউ
লেখক —- মাহমুদ
পর্ব —– ১১
***************************************
প্রাপ্তির কথাগুলো শুনেই তূর্যের মাথায় রক্ত চড়া দিয়ে উঠে।ও পারছিলো সেই মুহুর্তেই সায়ানের কাছে গিয়ে ইচ্চামতো পিটিয়ে আসতে।কথাগুলো বলতে বলতে প্রাপ্তির চোখে পানি টলমল করছিলো।শুধু চোখ ভেদ করে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে বাকী ছিলো।মোনা প্রাপ্তিকে বলল
-আমি তোমাকে যে মেসেজ গুলো দিসি সেগুলো তুমি দেখো নি সব?
-লাস্ট মেসেজ তা দেখিনি।প্রথম ৪ টা দেখেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।
-ওই লাস্ট মেসেজ টা-ই বেশি ইম্পরট্যান্ট ছিলো আর তুমি সেটাই দেখো নি?
-কি ছিলো ওটাতে?
-ওএট আমি তোমার ব্যাগ থেকে ফোন নিয়ে আসছি।
মোনা প্রাপ্তির ব্যাগ থেকে ফোন এনে প্রাপ্তির হাতে দিলো।প্রাপ্তি সে মেসেজ টা ওপেন করে দেখে ওখানে একটা এমএমএস ছিলো।একটা স্ক্রীনশট।যেখানে সায়ান স্পষ্ট ভাবে লিখে ছিলো উত্তরা থেকে ফেরার আগে ও প্রাপ্তিকে খুন করবে আর রিয়াকে নিয়ে নতুন ভাবে সংসার শুরু করবে।মেসেজ টা পড়ে প্রাপ্তি খুব অনুতপ্ত বোধ করছিলো।ভাবছিলো,
মোনা আমাকে এতো করে বলল,এতো বার আমাকে বুঝালো আম্র আমি ওকে ইগনোরই করে গেলাম। একটা বারও ওর কথাগুলো মন দিয়ে ভেবে দেখিনি যে একটা মানুষ সত্যি এতো সহজে হঠাৎ করে চেঞ্জ হতে পারেনা।ও আমার ভালোই চাইছিলো আর আমি ওর কথা কোনো মূল্য তো দিলামই না উল্টা ওকে যা তা বলে অপমান করেছি।
মোনার ডাকে প্রাপ্তি তার ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আসলো।তারপর মোনার কাছে ক্ষমা চাইলো দুও হাত জোড় করে।মোনা বলল,
-ক্ষমা চাইতে হবেনা।আমি জানি তুমি সায়ানকে মন থেকে স্বামীর মর্যাদা দিয়েছ, তাকে প্রাণ উজাড় করে ভালোবেসেছো।তাই ওকে সন্দেহ করতে পারোনি।
-হ্যাঁ ঠিকই বলেছো আপু। ওকে আমি খুব বেশি-ই ভালোবাসি।
-বাসি মানে?এখনো?
প্রাপ্তি কিছু না বলে মাথা নিচু করে বসে আছে।মোনা আবার বলল
-বাহ প্রাপ্তি বাহ। যে তোমাকে খুন করতে চাইলো তাকে তুমি এখনো ভালোবাসো!!যে তোমার অনাগত সন্তানকে পিতার স্নেহ,ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করে দিলো এখনো তাকেই ভালোবাসো তুমি?তুমি সত্যি খুব মহান।
কথাটা বলেই মোনা কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।
প্রাপ্তি চুপ করে বসে আছে।তূর্য বলল
-প্রাপ্তি তোকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।যে কোনো মূল্যে হোক তুই সফলতা অর্জন করে দেখিয়ে দিবি সায়ানকে।
-কিন্তু আমি কি করতে পারবো বল?তুই তো জানিস আমার বাবা কেমন!!তার কাছে আমার কথার কোনো মূল্যই থাকবেনা।আচ্ছা মোনা আপুকে ডেকে আন তো প্লিজ।বাসায় কি কিছু জানে কেউ?
তূর্য মোনাকে ডেকে আনলো।মোনা প্রাপ্তির দিকে তাকাচ্ছেই না।প্রাপ্তি জিজ্ঞেস করলো
-বাসায় কি জানিয়েছো আপু?
-না।আমার কাছে আন্টির নাম্বার নাই।(অন্য দিকে তাকিয়ে)
-ভালো হয়েছে জানাও নি কিছু।
-না জানিয়ে কি হবে?এক সময় তো জানবেই তারা!(তূর্য)
-নাম্বার টা দাও আমি কল দিচ্ছি।(মোনা)
প্রাপ্তি ওর ফোন থেকে মায়ের নাম্বার টা বের করে দিলো। তারপর মোনা কল দিলো।সব জানালো যে প্রাপ্তির এক্সিডেন্ট হয়েছে।সে এখন হসপিটালে আছে।
তূর্য ডাক্তারকে বলে প্রাপ্তিকে তার বাসায় নিয়ে যেতে চাইলো।প্রাপ্তি কিছুতেই রাজি হচ্ছিলো না।তূর্য বলল
-এমন করছিস কেনো মোনা?
-আমি যাবো না কোথাও।আমি বাসায় যাবো।
-কেনো আমি কি জঙ্গলে থাকি নাকি?
-আরে আমি সেটা বলছি নাকি?(ভ্রু কুচকে)
-আমি কোনো কথা শুনবো না।বাসায় গেলে তোর যত্নটা বেশি হবে।মা আছে।বোন আছে।তোর খেয়াল রাখবে তারা।আজকে রাতটা আমি এখানেই থাকবো তারপর আগামীকাল সকালে আমরা বাসায় যাবো আর তুই সেখানেই থাকবি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত।
তারপর ডাক্তারকে বলে অনেক জোর করে প্রাপ্তিকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলো।পরদিন সকালে প্রাপ্তির মা এসে ওকে দেখে একেবারে ভেঙে পড়েছে।তূর্য বলল,
-আন্টি আমরা একটু পরেই বাসায় যাবো।আপনি একেবারেই ভেঙে পড়বেন না।আর যা কথা বলার বাসায় গিয়েই বলবেন।একটু পরেই ডাক্তার রিলিজ স্লিপ দিয়ে যাবে।
-বাবা তুমি সেই ছোট থেকে সবকিছুতেই আমার প্রাপ্তির খেয়াল রেখে আসছো আজও এই মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করলে তুমি।
-আরে না আন্টি।আমি বেশি কিছু করিনি।ধন্যবাদ দিলে মোনাকে দিন।ও যদি প্রাপ্তিকে নিয়ে মেডিকেলে সময়মতো না আসতো তাহলে ও হয়তো বেচে থাকতো না।
তারপর মোনার সাথে প্রাপ্তির মা কথা বললেন।ওকে ধন্যবাদ জানালেন।
তারপর কিছুক্ষন পর প্রাপ্তির রিলিজ স্লিপ দিয়ে গেলো।তারপর তারা সবাই বাসায় গেলো।তূর্য আগে থেকেই তার বোন তুসি কে রেখেছিলো রুম রেডি করে রাখতে যেনো প্রাপ্তিকে এনেই রেস্টে দিতে পারে।
বাসায় যাওয়ার পরে প্রাপ্তিকে রুমে নিয়ে গেলো তূর্য। ওকে ধরে বিছেনায় শুইয়ে দিলো।খুব যত্ন করে মাথার নিচে নরম বালিশ দিলো।তূর্যের মা প্রাপ্তিকে দেখে অনেক খুশি হয়েছিলো।কারন ছোট বেলা থেকেই তারা একসাথে বড় হয়েছে।অনেক আদুরি ছিলো প্রাপ্তি ওনার কাছে।
তারপর সবাই ফ্রেশ হয়ে নিলো।তূর্য নিজ হাতে প্রাপ্তিকে খাইয়ে দিলো সকালের নাস্তা।
তারপর ওর মা,মোনা আর তূর্য সহ বাকী সবাই নাস্তা শেষে ড্রইং রুমে বসলো।সবাই জানতে চাইলো কি হয়েছে।মোনা সব খুলে বলল।সব শুনে প্রাপ্তির মা অনেকটাই ভেঙে পড়লেন।চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি।তূর্যের মাও অনেক বেশি পরিমানে রেগে গিয়েছিলেন এসব শুনে।তূর্য সবাইকে একটা কথাই বলল যে তারা কেউ যেনো প্রাপ্তিকে এসব নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস না করে।কারন এতে ওর মানসিক চাপ বাড়তে পারে।তাই কেউ আর প্রাপ্তিকে গিয়ে কিছু প্রশ্ন করে নি।
প্রাপ্তির মা দুপুরে চলে যেতে চাইলো প্রাপ্তিকে নিয়ে।কিন্তু তূর্য প্রাপ্তিকে এই অবস্থায় যেতে দিতে চাচ্ছিলো না। তাই আন্টিকে বুঝিয়ে বলল।আন্টিও বেশি কিছু বলেনি।কারন তিনি খুব ভালো করেই জানেন তার মেয়ে এখানে কতটা সুরক্ষিত।তাই তিনিও রয়ে গেলেন।মোনার বাসা থেকে বার বার কল দিচ্ছিলো তাই মোনা বিকালেই চলে গেলো
প্রাপ্তির মায়ের মন কিছুতেই মানছে না।তাই তিনি সন্ধ্যার পরে প্রাপ্তির কাছে গেলো।ওকে বলল
-মা,সায়ান তোকে ভালোবাসে না।ও তোর সাথে প্রতারনা করেছে।আর এই বাচ্চাটা!!এটা হচ্ছে সায়ানের বংশধর।বড় হয়ে সায়ানের মতোই কাজ করবে,তুই শুধু শুধু এই বাচ্চাটাকে গর্ভে ধারন করে জন্ম দিবি,লালল পালন করে মানুষ করে তুলবি আর বড় হয়ে সায়ানের মতো প্রতারনা ছাড়া আর কিছুই দিবে না।
-মা তুমি কি বলতে চাচ্ছো?
-আমি বলতে চাচ্ছি যে বাচ্চা টাকে নষ্ট করে ফেল।ওর দুনিয়ায় আসার কোনো দরকার নেই।ও তোকে ওর বাবার মতো কষ্ট ছাড়া আর কিছুই দিবেনা রে মা।আমার কথাগুলো একটু ভেবে দেখ।
-ছিঃ মা!এসব তুমি কি বলছো।তুমি কি পারবে তোমার অনাগত সন্তানকে এই সুন্দর পৃথিবীর আলো থেকে বঞ্চিত করতে?
-না পারবোনা।কোনো মা-ই পারবে না।কিন্তু তোর…
-তাহলে আমাকে কিভাবে এই কথাটা বললে তুমি মা?আমার প্রথম সন্তান এটা।আমার এই অনাগত সন্তানকে আমি পৃথিবীর আলো দেখার আগেই হত্যা করবো?
-কিন্তু আমাদের সমাজ কি বলবে?বাচ্চাটা যখন একটু বড় হবে তখন ওকে কেউ জিজ্ঞেস করলে ও কি উত্তর দিবে সমাজের মানুষের কাছে?
-সমাজ???কিসের সমাজ মা?যে সমাজ থেকে আমরা মেয়েরা অত্যাচার,অবহেলা ছাড়া আর কিছুই পাইনা সেই সমাজকে ভয় পেতে বলছো তুমি?কেনো মা?
-তুই বুঝতে পারছিস না। তোর পুরো ভবিষ্যৎ পড়ে আছে।পুরোটা জীবন এখনো বাকী তোর কিভাবে তোকে জেনেশুনে আগুনের মুখে ঠেলে দিবো?এই সন্তানটা থাকলে তুই কিছুতেই আগে বাড়তে পারবিনা।
-মা..কালকে অনেক চিন্তা করেছি আমি কথাগুলো।আর ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি পড়াশুনো করবো।নিজের পায়ে দাঁড়াবো। আমার স্বপ্ন পূরণ করবো আমি।আর এই সন্তানটাই আমার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ।ওকে ঘিরেই এখন থেকে আমার জীবনের পথচলা শুরু।আমি ওকে সায়ান চৌধুরির মতো মোটেই হতে দিবোনা।এখন আমার জীবনের লক্ষ্য একটাই সায়ান চৌধুরিকে বুঝিয়ে দেওয়া যে সে কি হারিয়েছে।আমি ওকে কোনো আইন আদালতের কাছে গিয়ে শাস্তি দিবোনা মা।ওকে আমি তিলে তিলে শেষ করে দিবো।প্রতিটা মুহুর্ত আমি ওকে গুটে গুটে মারতে চাই।যন্ত্রণা যেনো ওর পিছু না ছাড়ে কোনোভাবেই।
তূর্য এসে প্রাপ্তিকে বাহবা দিতে লাগলো।বলল
-শাবাশ প্রাপ্তি।আমি তোর এই রুপটাই দেখতে চাচ্ছিলাম।
-তূর্য তুই?
-হ্যাঁ।আন্টিকে রুমে আসতে দেখেই আমি বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম।
-আমার সেই ছোট্ট প্রাপ্তিটা এতো বড় হয়ে গেলো?(প্রাপ্তির মা)
-হ্যাঁ মা।পরিস্থিতি মানুষকে সব শিখিয়ে দেয়।
-আন্টি আপনি চিন্তা করবেন না।আমি সবসময় আছি ওর পাশে।
চলবে……….