গল্প —- ধর্ষিতা বউ
লেখক —– মাহমুদ
পার্ট —- ১২
****************************************
১১ এর পর
প্রাপ্তি সুস্থ হওয়ার পরে তার মায়ের সাথে বাসায় ফিরে যায়।ওর বাবা সব জানার পরে ওকে অনেক প্রেসার দিচ্ছিলো বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলার জন্য।কিন্তু প্রাপ্তি কোনো ভাবেই তার বাচ্চার কোনো ক্ষতি হতে দিবেনা।প্রাপ্তির বাবাও কোনোভাবে মানছে না।তিনি প্রাপ্তিকে বলল,
-দেখ প্রাপ্তি আমি একজন ব্যবসায়ী ব্যক্তি।সমাজে আমার মান সন্মান আছে।তোর কারনে আমি সেটা হারাতে চাইনা।
-নিজের মেয়ের জীবন থেকে মান সন্মান বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে তোমার?
-দেখ মা,আমি একজন ব্যবসায়ী লোক।রোজ রোজ অনেকের সাথে আমার উঠা বসা।ওরা যখন জানতে চাইবে এই বাচ্চার বাবা কে,মেয়ে বাপের বাড়িতে এতোদিন কেনো থাকছে তখন আমি কি উত্তর দিবো বল?
-সেটা তুমি আমার উপরে ছেড়ে দাও বাবা।আমি হ্যান্ডেল করতে পারবো এই নিকৃষ্ট সমাজ আর সমাজের মানুষকে।
প্রাপ্তির বাবাকে ও অনেকভাবে বোঝালো।তারপর তিনি আর কথা বাড়ালেন না।এডমিশনের সময় প্রায় কাছাকাছি এসে পড়েছে।আর ১ মাস বাকী।তূর্যের সাহায্য নিয়ে প্রাপ্তি একটা প্রাইভেট ভার্সিটি তে এডমিশন নিলো।এবার ওর স্বপ্ন পূরণের পালা।ও উকিল হতে চেয়েছিলো।তাই law নিয়ে পড়াশুনো করছে বর্তমানে।
একদিন প্রাপ্তির শ্বাশুড়ি তাকে কল দিলো।বলল,
-আমার ছেলেটাকে আমি তোর হাতে দিয়ে এসেছি রে মা।আমার বিশ্বাস ছিলো তুই ওকে মানুষ করে তুলতে পারবি।কিন্তু তুই ওকে ছেড়ে চলে গেলি?
-মা আপনাকে কে বলেছে আমি ওকে ছেড়ে চলে এসেছি?
-সায়ান আমাকে ফোন দিয়েছিলো ও বলেছে।
-বাহ!!আমি অবাক হচ্ছি আপনার ছেলের কথা শুনে।আপনি কি জানেন আপনার ছেলে আমার সাথে কি করেছে?
-আমি জানি ও তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করে,অন্য মেদের নিয়ে পড়ে থাকে,নেশা করে।কিন্তু তার সমাধান তো আমি দিয়ে এসেছি তোকে।
-হ্যাঁ মা আপনি সমাধান দিয়েছেন আমাকে।কিন্তু আপনার সমধান অনুযায়ী কাজ আমি শুধু সামান্য কিছুদিন করতে পেরেছি তার বেশি না।আপনি কি জানেন আপনার ছেলে আমাকে খুন করতে চেয়েছিলো?
-খুন!!!!কি সব বলছিস তুই?
-হ্যাঁ মা খুন।ও আমার সাথে মিথ্যে প্রেমের অভিনয় করে আমাকে যত্ন করে খুন করতে চেয়েছিলো।শুনবেন সে কি করেছে?
তিনি প্রাপ্তির কাছে ঘটনা জানতে চাইলো বিস্তারিতভাবে।প্রাপ্তি সবকিছু তাকে খুলে বলল।কথাগুলো বলতে বলতে একটা পর্যায়ে প্রাপ্তির গলা আটকে এসেছে।ও ডুকরে কেঁদে উঠলো।সায়ানের মা আর নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারলেন না।বললেন
-তোর বাচ্চা হবে?মানে আমাদের বংশের প্রথম প্রদীপ আসবে?
-না মা।এই বাচ্চা আমার।আর কারো না।আমি এই বাচ্চাটা কে কারো অংশীদার হতে দিবোনা।
বলেই প্রাপ্তি ফোন কেটে দিলো।সায়ানের মা সেদিনই ঢাকা ফিরে এলো।রাতে এসে দেখে সায়ান আর রিয়া একসাথে ডিনার করছিলো।এসব দেখে তিনি নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলেন না।সায়ানের কাছে গিয়েই ওকে একটা থাপ্পড় দিয়ে বসে।তারপর মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে।তারপর তিনি বললেন
-আমার ছেলেটা তার জীবনটাকে নষ্ট করেছে এটা জানতাম কিন্তু এতোটা নষ্ট হয়ে গেছে তা জানার ছিলো না আমার।
-মা কি যা-তা বলছো।আমি রিয়াকে ভালোবাসি।ওকেই আমি বিয়ে করবো এখন।প্রাপ্তির কোনো জায়গা নেই আমার জীবনে।
-তাহলে আগে বলিস নি কেনো?অন্তত আমার ভাইঝি এর জীবনটা তো এইভাবে নষ্ট হতো না।
-আগে আমাকে বলার সু্যোগ দিয়েছো একবারো?
-তুই জানিস সেদিন যদি প্রাপ্তি মারা যেতো তাহলে শুধু প্রাপ্তিই না সাথে আরো একজন মারা যেতো!!
-মানে?আর কে?
-তোর সন্তান।প্রাপ্তির গর্ভে তোর সন্তান আছে।সেদিন যদি প্রাপ্তির কিছু হয়ে যেতো তাহলে……
-কি বলছো মা?প্রাপ্তি ত আমাকে কখনো বলেনি যে ও প্রেগন্যান্ট।
-বলার সুযোগ দিয়েছিলি ওকে?
সায়ান আর কোনো কথা বলে নি।চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।সায়ানের মা রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
-তোমার কি একটুও লজ্জা হয়না একটা পর পুরুষের সাথে এইভাবে রাত কাটাতে,সারাদিন ঘুরে বেড়াতে?
-আমি কি জানতাম নাকি ও বিবাহিত!!
-জানতে না মানে?প্রাপ্তিকে খুন করার সময় তো ঠিকই ওর সাথে ছিলে ওকে সাহায্য করেছিলে।
-হ্যাঁ।কিন্তু আমি জানতাম ও আপনাদের বাসার কাজের মেয়ে।আমাদের সম্পর্কে ও সব জেনে গেছিলো তাই ওকে খুন করার জন্য বলেছি সায়ানকে।
-তার মানে সায়ানের মাথায় এই কু-বুদ্ধিটা তুমি দিয়েছিলে?কেমন বাবা মায়ের ঘরে জন্ম নিয়েছো তুমি?লজ্জা বলতে কিছু নেই তোমার?
-Whatever.. আগে জানলে কি ওর সাথে আমি রিলেশন রাখতাম নাকি!!আপনার ছেলেরই লজ্জা নেই যে ঘরে এতো সুন্দর বউ থাকতে অন্য মেয়ের সাথে রাত কাটিয়েছে।
কথাটা বলেই রিয়া তার ব্যাগ নিয়ে চলে যাচ্ছিলো।সায়ান দৌড়ে গেলো ওর পিছু নিয়ে।বাইরে গিয়ে ওর হাত ধরে বলল,
-কোথায় যাচ্ছো তুমি রিয়া?
-কোথায় আবার বাসায়!
-কখন আসবে আবার?
-আর কখনোই আসবো না।
-আমরা বিয়ে করবো বলেছিলাম আগামীকাল।
-Don’t be silly Shayan…I can’t marry you..
-মানে?কি বলতে চাচ্ছো তুমি?
-ইংলিশ বুঝ না??আমি তোমায় বিয়ে করতে পারবোনা।
-কেনো?
-কারন তুমি বিবাহিত।আর তুমি তোমার বিবাহিতা স্ত্রীকে এইভাবে জ্বালিয়েছো,অত্যাচার করেছো,রোজ রাতে ওকে ধর্ষণ করেছো,ওর যথেষ্ঠ যত্ন নাওনি,আমার সাথেও যে এমন করবে না তার কি নিশ্চয়তা সায়ান?
-আমি তোমাকে ভালোবাসি রিয়া।
-এনাফ।তোমার এসব ফালতু আর মিথ্যে ভালোবাসা দেখার সময় আমার নেই।যে অন্য কারো জন্য নিজের বিয়ে করা বউ কে খুন করতে পারে সে আমাকেও করতে পারে আরেকজনের জন্য।
বলেই রিয়া চলে গেলো।
সায়ানের মা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সব শুনছিলো।তারপর সায়ানকে ঘরে নিয়ে বুঝালো।
-বাবা এখনো সময় আছে প্রাপ্তির কাছে ক্ষমা চেয়ে নে।ওকে ফিরিয়ে আন।ও আমার ঘরের লক্ষী।ওর মতো আর কোনো মেয়ে তোকে ভালোবাসতে পারবেনা।
সায়ান কোন উত্তর না দিয়ে নিচের দিকে চুপ করে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এদিকে প্রাপ্তির নবজীবনের সূচনা শুরু।ভার্সিটি তে প্রথম দিনেই বেশ কয়েকজনের সাথে খুব ভালো পরিচয় হয় প্রাপ্তির।দুইজনের সাথে খুব ভালো ফ্রেন্ডশিপ হয়।জয়া আর আরিয়ান।ওদের সাথে ভালোই চলতে থাকে প্রাপ্তির দিনকাল।
রিয়ার সাথে এতো ঘটার পরে সায়ান একেবারেই ভেঙে পড়ে।ও বুঝে উঠতে পারছিলো না কি করবে।মায়ের কথাগুলো বারবার ওর কানে বাজে।ওকে তাড়া করে বেড়ায়।অবশেষে সায়ান সিদ্ধান্ত নিলো ওর ঘরের লক্ষীকে ও ফিরিয়ে আনবে যে কোনো কিছুর মূল্যে।কারন ও হয়তো বুঝে গেছে ওইটাই ওর ঘরে সোনার হরিন ছিলো।
বেশ কয়েকটা রাত সায়ানের চোখে ঘুম ছিলোনা।অবশেষে এই সিদ্ধান্তে আসলো।সেদিন রাতেই সায়ান প্রাপ্তিকে অনেক কল দিলো কিন্তু প্রাপ্তি একটা কলও রিসিভ করে নি।সায়ান অস্থির হয়ে পড়েছিলো।ও বুঝে উঠতে পারছিলো না কি করবে।প্রতিটা মুহুর্ত অস্থির লাগছিলো ওর।সকাল কখন হবে এই অপেক্ষায় সারাটা রাত আবারো নির্ঘুম রাত কাটায় সায়ান।পরদিন সকাল সকাল গাড়ি নিয়ে সায়ান প্রাপ্তিদের বাসায় গেলো ওকে ফিরিয়ে আনার জন্য।প্রাপ্তি জানালা দিয়ে সায়ানের গাড়ি দেখেই ছাদে চলে যায়।সায়ান কলিং বেল এ চাপ দেওয়ার পরে প্রাপ্তির ভাই দরজা খোলে।মা কে ডেকে বলে-মা সায়ান ভাইয়া এসেছে
সায়ান ভেতরে ঢুকলো।ডইং রুমে বসলো।প্রাপ্তির মা এসে ওকে বলল
-কেনো এসেছো তুমি এখানে?
-প্রাপ্তিকে নিতে এসেছি!
-প্রাপ্তিকে কোন অধিকারে নিতে এসেছো তুমি?
-ও আমার বিবাহিতা স্ত্রী মা।
-এই জন্য ওকে মেরে ফেলতে চেয়েছো তাইনা?আমার মেয়ে কোথাও যাবেনা।
-প্লিজ আপনি ওকে ডেকে দিন আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই।
-ও বাসায় নেই।
-কোথায় গেছে ও?
-ছাদে গেছে।
তারপর সায়ান ছাদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।যত উঠছে ততই ওর হার্টবিট বাড়ছে।নিজের কাছেই নিজেকে প্রশ্ন করছে কোন মুখ নিয়ে যাবে প্রাপ্তির সামনে।তারপর নিজে নিজেকে সামাল দিচ্ছিলো যে ও পারবে।ওকে পারতে হবে।ও বুঝে গিয়েছে প্রাপ্তিকে ছাড়া ওর চলবেনা।প্রাপ্তিই ওর সব এখন।ছাদে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি ছাদের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।বাতাসে ওর খোলা চুলগুলো উড়ছে এলোমেলো ভাবে।প্রাপ্তি সায়ানের উপস্থিতি বুঝতে পারলো।সায়ান অনেক সাহস যুগিয়ে প্রাপ্তির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
চলবে………