ধর্ষিতা বউ পর্ব-১৩

0
835

#ধর্ষিতা_বউ
#রাবেয়া_সুলতানা

#১৩

___সকাল আট টা বাজে ছেলেটা এখনো ঘুম থেকে উঠিনি?কথায় আছে না যার বিয়ে তার খবর নেই,পাড়া পড়শির ঘুম নেই।আমার ছেলেটার ও হয়েছে তাই।আয়েশা বেগম কথা গুলো বলতে বলতে সুমির হাতে আয়ানের জন্য চায়ের কাপ টা দিয়ে, সুমি যাও তো! আয়ান টা কে ঘুম থেকে উঠিয়ে দাও।আর কতো ঘুমাবে?আমার আকাশটা আজ কয়েক দিন থেকে খাওয়াদাওয়া নেই ঘুম নেই শুধু ওর বিয়ে জন্য।
সুমি চায়ের কাপ টা হাতে নিয়ে মা! আপনি চিন্তা করবেননা তো, আর মাত্র দুইদিন পরে তো সবকিছু আবার ঠিক হয়ে যাবে।

ঝিনুক এসে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ভাবী তুমি এই খানে?

সুমি -কেনো? কিছু হয়েছে?

ঝিনুক -দেখনা রুমকি টা কি জেদ ধরেছে।মেয়েদের বাড়ীতে কি ড্রেস পরে যাবে সে নিয়ে বসে আছে।আর বলছে তুমি চয়েস না করে দিলে ও পরবে না।
তোমার এইদিকে কতো কাজ ওকে নিয়ে পড়ে থাকলে হবে?
সুমি -ঝিনুক তুমি যাও আমি আয়ানকে চা টা দিয়ে আসছি।আর মা! আপনি সিয়ামদের বাড়ীতে ফোন দিয়েছেন?

আয়েশা বেগম -না আজ আর দিই নি।কেনো?

সুমি -আপনি ওনাদের বলেদিন আমরা একসাথেই ওদের বাড়ীতে যাবো।তাহলে আর আসিফদের ও কষ্ট হবেনা।

আয়েশা বেগম- তুমি ঠিকি বলেছো।আমরা এক ছেলের বিয়ে নিয়ে কি জালায় আছি আর ওদের দুইটা বিয়ে।

সুমি আর কিছু না বলে আয়ানের রুমে চলে গেলো।
আয়ানের রুমে গিয়ে লাইট অন করে দেখে আয়ান গভীর ঘুমে ডুবে আছে।
হায়রে! মা ঠিকি বলেছে ওর বিয়ে ওরি খবর নাই।আর আমরা ওর বিয়ে নিয়ে জ্বালায় মরছি।(আয়ানকে ধাক্কিয়ে)আয়ান! আয়ান! তুমি কি উঠবা নাকি পানি এনে ঢালবো?

আয়ান-(ঘুম ঘুম চোখে)ভাবী! প্লিজ আরেকটু ঘুমাই না।

সুমি -আয়ান! এইবার মা এসে তোমাকে বকা দিবে।দিনের কয়টা বাজে একবার দেখেছো? এইদিকে কতো কাজ পড়ে আছে।তোমাকে নিয়ে পড়ে থাকলে হবে?
সুমির পেঁনপেঁনানি শুনে আয়ান উঠে বসলো।
এইতো গুড বয়।যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।কাল থেকে অবশ্য একটা জ্বালা আমার কমবে।

আয়ান আড়মোড় ভাঙতে ভাঙতে সুমির দিকে তাকিয়ে কি জ্বালা কমবে তোমার?

সুমি -সকালে এসে ঘুম থেকে উঠানো।কাল থেকে এই কাজ তোমার বউয়ের।

আয়ান বউ কথা টা শুনেই একটু লজ্জা পেয়ে, সুইট হার্ট কাল থেকে তোমার ডিউটি বাড়িয়ে দিলাম।এতোদিন তুমি শুধু আমায় ডাকতে কাল থেকে দুইজন কে ডাকবে। তুমি যতোক্ষণ না ডাকবে আমার তো সকাল হবে না।
সুমি -ফাজলামো করা হচ্ছে আমার সাথে? ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নাও।আমি নিহাদ আর রাহাত ভাইয়াকে ডেকে আনতেছি তোমাকে ভালো করে পানিতে চুবানোর জন্য।কথাটা বলেই সুমি হাঁসতে হাঁসতে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।

প্রাপ্তি আর অরণীকে গোসল করিয়ে সাজতে বসিয়ে দিলো।প্রাপ্তি অরণীকে সাজাতে বলে উঠে ড্রইংরুমে আসলো আসিফকে খুঁজার জন্য।

সামনে প্রাপ্তির মামাকে আসতে দেখে মামা! ভাইয়াকে দেখেছেন?
মামা -প্রাপ্তি তোমাকে এখনো সাজানো হয়নাই এইদিকে ছেলের বাড়ী থেকে লোকজন রওনা দিয়ে দিয়েছে । নিলিমা! কোথায় গেলো কাজের সময় তাকেও খুঁজে পাওয়া যায়না।

নিলিমা বেগম এসে কি হয়েছে ভাইয়া?কোনো কিছু লাগবে?

মামা -প্রাপ্তিকে এখনো সাজানো হয়নি?এইদিকে দুই বাড়ীথেকেই ফোন দিয়েছে তারা আসতেছে।

নিলিমা বেগম -ওকে তো আমি সাজাতেই বসিয়ে দিয়ে এলাম।

প্রাপ্তি -আম্মু! মামা! সমস্যা নেই অরণীকে আগে সাজিয়ে নেক আমি পরে সাজলেও হবে।কিন্তু ভাইয়া কোথায়? ওর সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।

মামা-তুই যা মা! আমি আসিফ কে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ও হয়তো কোনো কাজে আটকে আছে।

নিলিমা বেগম -এখন চল তোর ভাইয়া আসতে আসতে সেজে নে।

আসিফ মামার মুখ থেকে প্রাপ্তি তাকে ডাকছে শুনে চিন্তায় পড়ে গেলো।প্রাপ্তি তাকে কেনো ডাকছে তার ভালো করেই জানা আছে।ওকে যে কিভাবে বুজাই! আচ্ছা গিয়ে দেখি কি বলে।প্রাপ্তি সেজে নিজের রুমেই বসে আছে আসিফের অপেক্ষায়।আসিফ ভিতরে আসতেই,কিরে ভাইয়া তোকে কতো বারা ডেকেছি আর তোর এখন আসার সময় হলো?

আসিফ প্রাপ্তির কথা ঘুরিয়ে, আমার বোনটাকে পুরো রাজকন্যার মতো লাগছে।
সিয়াম ব্যাটার চয়েস আছে বলতে হবে।তোর জন্য যতো গুলো শাড়ী গহনা পাঠিয়েছে সব গুলোই পরলে তোকে অনেক সুন্দর দেখায়।কিন্তু অরণী শ্বশুর বাড়ীর গুলো আমার কাছে তেমন ভালো লাগেনি।

প্রাপ্তি -(আসিফের দিকে রাগি ভাবে তাকিয়ে)তোকে আমি এইখানে এইগুলো বলার জন্য ডাকিনি।কে শাড়ী গহনা ভালো দিয়েছে আর কে খারাপ দিয়েছে।তোকে যে জন্য ডেকেছি তুই সেটা ভালো করেই জানিস।

আসিফ -প্রাপ্তি! তুই আমার লক্ষ্মী বোন। প্লিজ কোনো পাগলামো করিস না এখন।

প্রাপ্তি -(চেঁচিয়ে) পাগলামি! কোনটা কে তুই পাগলামি বলছিস ভাইয়া।তোরা কোনো কিছু না জানিয়ে একটা ছেলের কাছে আমাকে বিয়ে দিবি এইটা সে পরে জানতে পারলে আমাকে মেনে নিবে? কখনোই না! কোনো ছেলেই মেনে নিবে না।কারণ টা তুই ভালো করেই জানিস।আর আমার কাছে কেনো জানি মনে হচ্ছে বড় কোনো ঝড় আসতে যাচ্ছে। সব কিছু কেমন জানি গোলমাল লাগছে।

আসিফ কিছু বলতে যাবে তখনি আজাদ সাহেব এসে আসিফ তুই এইখানে তাড়াতাড়ি চল বর এসে গেছে।তোর জন্য সবাই বসে আছে।
আসিফ প্রাপ্তিকে খাটে বসিয়ে চুপ করে এইখানে বস আমি দেখছি তুই কোনো বাজে চিন্তা করবিনা।

আয়ান আর সিয়াম কে এনে স্টেজে বসিয়েছে। দুইজন দুজনার সাথে তেমন কথা নেই চুপচাপ হয়েই বসে আছে।সিয়াম অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থেকে তারপর তার বন্ধু রাফসান কে বললো বিয়ে পড়ার আগে আমি অরণীর সাথে কথা বলতে চাই তুই ব্যবস্থা কর প্লিজ।আয়ান নিহাদ রাহাত আকাশের সাথেই কথা বলে যাচ্ছে।

আকাশ -তোরা বস আমি ভিতরে গিয়ে দেখে আসি।ঝিনুক মিনু সুমি সবাই ভিতরে কি করছে আমি দেখে আসি।আয়ান সুমি কথায় ভাবছে ভাবী তো পারতো আমার সাথে এখন থাকার। ভাবীকে বলে না হয় ওকে একবার দেখার সুযোগ করে নিতাম।
রাফসান আসিফকে দেখতে পেয়ে আরে ভাইয়া আপনাকে অনেকক্ষণ হলো খুঁজছি।

আসিফ -কেনো কিছু লাগবে?

রাফসান -আসলে ভাইয়া কি বলবো সিয়াম চাচ্ছে আপনার বোনের সাথে আলাদা ভাবে কথা বলতে।
কথাটা শুনেই আসিফ থমকে গেলো।সিয়াম কি প্রাপ্তির ঘটনা টা জেনেই প্রাপ্তির সাথে কথা বলতে চাইছে?তাহলে তো ভালোই হলো দুজনে আলাদা ভাবে কথা বলুক।

রাফসান -ভাইয়া আপনি চুপ করে আছেন কেনো?
আসিফ -সিয়াম কে নিয়ে আসো আমি ব্যবস্থা করছি।আর শুনো এই ব্যাপারে কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।

রাফসান -না ভাইয়া কেউ কিছু জানবে না।

সুমি, ঝিনুক,মিনু অরণীর রুমে এসে অরণী কে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছে।তাদেরকে দেখে অরণী বসা থেকে দাঁড়িয়ে সালাম দিলো।সুমি অরণীর কাছে এসে মুছকি হাঁসি দিয়ে অরণী তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।কিন্তু তোমাকে কে সাজিয়েছে এই শাড়ী গহনা গুলো দিয়ে?
অরণী -জ্বী আপনারা নাকি কাল এইগুলো পাঠিয়েছেন।
ঝিনুক -কিহ্ আমরা এইগুলো,,,,,,,,
সুমি ঝিনুককে থামিয়ে হুম আমরাই তো পাঠালাম।(মিনুর আর ঝিনুককে চোখের ইশারা দিয়ে) বাহিরে আসো। আকাশ মনে হয় ডাকছে।

সুমি বাহিরে এসে মিনুর দিকে তাকিয়ে তুমি আর রাহাত ভাইয়া যে কাল শাড়ী গহনা গুলা নিয়ে আসছো এইগুলো কার কাছে দিছো।

মিনু -ভাবী! প্যাকেট গুলো মেয়ের মায়ের হাতেই দিয়েছিলাম।কিন্তু তখন সিয়ামদের বাড়ী থেকে লোক এসেছিলো আমার মনে হয় এই গুলো পাল্টা পাল্টি হয়ে গেছে।

সুমি -হুম তাই মনে হচ্ছে। শুনো এখন কেউ কিছু বলার দরকার নেই। পরে সব আমরা আসিফ কে বুজিয়ে বলা যাবে।

আসিফ সিয়াম কে প্রাপ্তির রুমের সামনে দাঁড় করিয়ে প্রাপ্তিকে একা রেখে সবাইকে বাহিরে যেতে বললো।

প্রাপ্তি -কি হয়েছে ভাইয়া?

আসিফ -তুই আমাকে তখন যেই প্রশ্ন গুলো করেছিস সেই গুলোর আনসার সাথে করে নিয়ে এসেছি।তুই বস সিয়াম বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে তোর সাথে কথা বলবে বলে।আমি আসছি!
সিয়াম ভিতরে এসে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে প্রাপ্তির পাশে এসে বসলো।কি! ম্যাডাম কেমন সারপ্রাইজ দিলাম? ম্যাডাম আমার দিকে ফিরেন। আমি এইদিকে ওই দিকে তাকিয়ে কোনো লাভ নেই।(কথা গুলো শুনে প্রাপ্তি ভাবছে ওনি এইভাবে কথা বলছে কেনো মনে হচ্ছে ওনি আমাকে আগে থেকেই চিনেন।)
তুমি কি ভেবেছিলে ফোন অফ করে রেখে একসাথে বউয়ের সাজে আমার কাছে আসবে? আমি ভেবেছিলাম বাবা মাকে পাঠিয়েছি বিয়ে ঠিক করার জন্য সেই খুশিতে সারপ্রাইজ হয়ে তুমি আমাকে ফোন দিবে তানা উল্টো ফোন অফ করেই রাখলে?
আচ্ছা এই শাড়ী টা তুমি পরলে কেনো। তোমার পছন্দমতই শাড়ী আমি তোমার জন্য পাঠিয়েছি আর তুমি সেই শাড়ী না পরে অন্য শাড়ী পরে আছো।এই অরণী কথা বলছো না কেনো।
কথাটা গুলো শুনে প্রাপ্তি নিস্তব্ধতায় কান্না করেই যাচ্ছে।আর ভাবতে লাগলো অরণী আমার বোন হয়ে সব জেনেও আমার সাথে এইরকম করতে পারলো?
সিয়াম বিরক্তিকর ভাব নিয়ে প্রাপ্তির কাঁধে হাত দিয়ে এই অরণী এইদিকে ফিরে কিছু বলো প্লিজ।কথা বলেই প্রাপ্তিকে নিজের দিকে ফিরালো সিয়াম।
প্রাপ্তিকে দেখেই সিয়াম চোখ বড় বড় করে চেঁচিয়ে, আপনি কে?

চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here