গল্প —- ধর্ষিতা বউ
পর্ব —- ১৮
লেখক —- মাহমুদ
@@@@@@@@@@@@@@@@
১৭ এর পর
সায়ান আর রিয়াকে দেখে প্রাপ্তি অনেকটাই অবাক হলো।সায়ানও প্রাপ্তিকে দেখে অবাক হলো খুব।বলল
-তুই এখানে?কি অবস্থা এখন তোমার?
-ও আমার ছেলের বউ।আপনি কি করে চিনেন ওকে?(তূর্যর মা)
-আসলে আমি সায়ান চৌধুরী। মানে প্তাপ্তি…..(আমতা আমতা করে)
-বাকীটা না হয় আমি বলি!(প্রাপ্তি)
তারপর প্রাপ্তি উঠে দাঁড়ায়।যদিও ওর শ্বাশুড়ি বাধা দেয়।
“ইনি হচ্ছেন সায়ান চৌধুরী। যার সাথে পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে হয়েছিলো। জানেন মা আমি ওনার বউ না!আমি ওনার ধর্ষিতা বউ ছিলাম।রক্ষিতা ছিলাম ওর ঘরে।যে কিনা নিয়মিত আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার উপর ধর্ষণ চালাতো।শুধু মাত্র তার বিছানার সঙ্গী ছিলাম আমি।আমাকে দিয়ে হয়তো তার তৃপ্তি মিটতো না তাই অন্য মেয়েদেরকে বাসায় এনে তার যৌন তৃপ্তি মেটাতো।এইযে পাশের মেয়েটা দেখছেন মা,এটা সেই মেয়ে যার সাথে আমার স্বামী সায়ান চৌধুরী আমার সামনে রাত কাটিয়েছিলো।আসলে স্বামী না এখন তো সে আমার প্রাক্তন স্বামী।”
সায়ান বলে উঠলো
-প্রাপ্তি প্লিজ চুপ করো।এখানে অনে মানুষ আছে।
-ওহহহ সন্মানে লাগছে বুঝি?আপনার সন্মান আছে?
এর মধ্যে প্রাপ্তির শ্বাশুড়ি ওদেরকে থামতে বলল।তারপর তুসিকে ডাক দিলো। তুসি আসার পর বলল
-অন্য যে পেশেন্ট গুলো আছে ওদেরকে গিয়ে বল আগামীকাল আসার জন্য।আজকে কিছু সমস্যা আছে।
তারপর তুসি তাদেরকে বলে আবার ড্রইং রুমে আসলো।মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
প্রাপ্তির শ্বাশুড়ি মা বলছেন,
-মা রে আগে যা হয়েছে ভুলে যা।তুই তোর জীবনে এগিয়ে গেছিস আর তোর অনাগত বাচ্চাও তার বাবা পেয়ে গেছে। আর কি লাগবে তোর?এসব মানুষকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে নিজের জীবনের সুন্দর মুহুর্তগুলোকে নষ্ট হতে দিস না।
এরই মধ্যে তূর্য প্রাপ্তির বাবা মা আর ভাইকে নিয়ে বাসায় আসে। প্রাপ্তির বাবা মা সায়ানকে দেখেই রেগে যায়। প্রাপ্তির বাবা চিৎকার করে বলে উঠে
-তুই এখানে কি করছিস?একবার আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করে স্বাধ মিটে নি তোর?এখন আবার এসেছিস কেনো ওর এখানে।
তূর্যর শরীরের রক্ত টগবগিয়ে উঠছে।পারছে না এখানেই সায়ানকে মেরে ফেলতে।তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখলো।
তারপর প্রাপ্তি কিছুটা তিরষ্কার স্বরে বলল,
“সেদিন তো খুব বলছিলেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন,রিয়া আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে।আপনি আপনার ভুল বুঝতে পেরেছেন।আমি বিয়ে করতে বললাম আপনাকে তখন কি বলেছিলেন মনে আছে?অথচ দেখুন আজ আপনি সেই রিয়াকেই বিয়ে করেছেন।শুধু তা-ই না আপনার স্ত্রী আজ প্রেগন্যান্ট। এতো নাটক এতো অভিনয় কিভাবে করতে পারেন??”
-আমার কথাটা তো শুনবে??আমাকে একটু বলার সুযোগ দাও সবাই!
তারপর তূর্য প্রাপ্তিকে ধরে সোফায় বসালো।বাকীদেরকেও বসতে বলল তারপর সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল -ওকে বলুন কি বলবেন।
“প্রাপ্তিকে আমি ডিভোর্স দিতাম না কখনোই। আমি যখন আমার ভুল বুঝতে পারি তখন আমি বারবার প্রাপ্তির কাছে ফিরে এসেছি ওকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য।রিয়া আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো।কিন্তু তার কিছুদিজ পরই জানতে পারলাম রিয়া প্রেগন্যান্ট।আম
ি বিশ্বাস করিনি প্রথমে।কারন রিয়ার সাথে বাসায় যেদিন আমার যৌনমিলন হয়েছিলো সেদিন আমার যথেষ্ঠ প্রোটেকশন ছিলো।তাই আমি কোনোভাবেই ওর কথা বিশ্বাস করিনি।তারপর রিয়াকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে ডিএনএ টেস্ট করাই।টেস্ট পজিটিভ ছিলো।আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না কিভাবে সম্ভব।তারপরে রিয়া আমাকে বলে যে ওর সাথে একদিন পার্টি তে গিয়েছিলাম।সেখানে অতিরিক্ত ড্রিঙ্ক করার কারনে হুশ ছিলো না।তারপর কি হয়েছিলো আমার কিচ্ছু মনে নেই।রিয়া আমাকে একটা ভিডিও ক্লিপ দেখায় সেটা দেখেই নিশ্চিত হই যে রিয়ার গর্ভে আমার সন্তান।এই অবস্থায় ওর ফ্যামিলি ওকে অনে বেশি প্রেসার দিচ্ছিলো। তাই আমি ওকে বয়ে করে ফেলি।আর না চাইতেও প্রাপ্তিকে ডিভোর্স দিয়ে দেই।প্রাপ্তি যেহেতু একজন ভালো জীবনসঙ্গী পেয়েছে তাই আমি আর ওর লাইফে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চাইনি।কিন্তু বিশ্বাস করো আজো আমার রাতে ঘুম হয় না তোমার সাথে যা করেছি তা মনে হলে।”
-ব্যাস অনেক বলেছেন। সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালোর জন্য করেন। আপনারা এখন আসতে পারেন। (প্রাপ্তি)
সবার সামনে এইভাবে বলার পর সায়ান আর কিছু না বলেই বেরিয়ে গেলো।তারপর রিয়া প্রাপ্তির কাছে এসে বলল
-পারলে আমাদের ক্ষমা করে দিও।এইটুকুই বলবো।আর আমাদের উপরে কোনো দাবী রেখো না প্লিজ।
বলেই রিয়াও চলে গেলো।
তারপর তূর্য প্রাপ্তিকে রুমে নয়ে শুইয়ে দিলো।বলল
-তোমাকে না কতবার বারন করেছি বার হবে না রুম থেকে?কিছু লাগলে তুসি কে বলতে।
-আমার আর ভালো লাগে না এইভাবে রুমে বন্দী হয়ে থাকতে।তাই একটু রুমের বাইরে গেছিলাম।
-আচ্ছা ঠিক আছে।তোমাকে নিয়ে কালকে সকালে লং ড্রাইভে যাবো।
-কি?????!মজা নিচ্ছো(মুখ বাকিয়ে)
কিছুক্ষন পরেই তুসি আর প্রাপ্তির ভাই আসলো রুমে।তুসির হাতে স্যুপ নুডলস ছিলো।এনে বলল
-ভাইয়া মা বলেছে ভাবীকে এটা খাইয়ে দিতে।আর তোকেও খেয়ে নিতে বলেছে।
-আচ্ছা খেয়ে নিবো।তুই যা।
-এমন করিস কেনো ভাইয়া?সারাদিন তো আমি-ই থাকি ভাবীর কাছে।
-হ্যাঁ যখন আমি থাকবো তখন থাকতে হবে না তোর!
-উফফ তুইও না।খুব খারাপ।
-যা আমি আর ভাবীর খেয়াল রাখবো না।দেখি তুই কতক্ষন থাকতে পারিস ভাবির কাছে।(মুখ বাকিয়ে)
কথাটা বলেই তুসি চলে যাচ্ছিলো।তখনই প্রাপ্তি ডাক দিলো
-তুসি প্রান্তকে(প্রাপ্তির ভাই) নিয়ে এখানে এসে বসো।
তারপর ওরা এসে দুইজন প্রাপ্তির পাশে বসলো।প্রাপ্তি ওর ভাইকে কাছে নিয়ে বসালো।বলল
-কিরে তুই তো আমায় ভুলেই গেছিস।একটু ফোন এ দিস না আমাকে।কই থাকিস সারাদিন?
-তুমি তো আম্মুর সাথে কথা বলেই ফোন রেখে দাও আমি কখন বলবো আর কথা।
-হু পাকনামী কথা এখনো বলিস!!তোর পড়ালেখার কি অবস্থা?
-এইতো ভালোই আছে।
-ঠিকমতো পড়াশুনো করিস কিন্তু।
-আচ্ছা আপু।
-হুম ম্যাডাম আপনার খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।খাবেন না?(তূর্য)
-হুম দাও খাইয়ে দাও।
তারপর তুসি আর প্রান্ত চলে গেলো বাইরে আর তূর্য প্রাপ্তিকে খাইয়ে দিলো,সাথে নিজেও খাচ্ছিলো একই চামচ দিয়ে একই বাটিতে।প্রাপ্তি বলল
-তুমি আমাকে তোমার এঁটো খাওয়াচ্ছো কেনো?
-এঁটো কই খাওয়ালাম?
-এইযে একই বাটি থেকে তুমিও খাচ্ছো আমাকেও খাওয়াচ্ছো।
-আহা কি যে বলো না।স্বামী-স্ত্রী এক প্লেটে খাওয়া ভালো।
-এএহ এক প্লেটে খাওয়া ভালো।আমি খাবো না।তুমি-ই খাও।
-পাগলী বউ আমার স্বামী-স্ত্রী এক প্লেটে খাওয়া সুন্নত।আর এইভাবে খেলে স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা গভীর হয়।
-বাব্বাহ সাহেব দেখি হাদিসও জানে খুব।
-না।হাদিস তেমন জানিনা।তবে এই কথাটা মায়ের থেকে শুনেছিলাম একবার।
-ওহহ আচ্ছা।আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে খাইয়ে দাও জলদি।বাবুর ক্ষুধা পেয়েছে খুব।সাথে বাবুর আম্মুরও।দাও দাও খাইয়ে দাও।
-হুম হা করো দিচ্ছি আমার বাবুর আম্মুটা!
ওরা খাওয়া শেষ করে নিলো।তার কিছুক্ষন পরেই প্রাপ্তির বাবা মা ওর রুমে আসলো।
-দেখো না মা,আমাকে এই বেড থেকে নামতেই দেয়না।ভালো লাগেনা সারাদিন এখানে বন্দী হয়ে পড়ে থাকতে।
-তোর আর তো বাচ্চার ভালোর জন্য-ই তো করে।
-হু সারাদিনে খালি মা সকালে আর বিকালে এসে একটু হাটতে দেয়।তাও নিজে ধরে রাখে।আমি কি হাটতে পারি না নাকি?
-থাক ন্যাকামো করিস না।তোর ভালোর জন্য করে সব কিছু।অঘটন ঘটতে সময় লাগেনা।
-তুই অনেক কষ্ট করেছিস তোর জীবনে।ভাগ্যক্রমে এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছিস এখন।আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্য করেন।(প্রাপ্তির বাবা ওর মাথায় হাত রেখে)
-আচ্ছা মা আমরা এখন আসি।খেয়াল রাখিস নিজের।
-আজকে থাকো না মা!!
-হ্যাঁ মা আজকে থাকুন।কালকে না হয় আমি ড্রপ করে দিবো।(তূর্য)
-না বাবা।আমরা গাড়ি নিয়েই এসেছি।আর তাছাড়াও প্রান্তর এক্সাম আছে কালকে।
-ওহ আচ্ছা।
তারপর তারা বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
রাতে তূর্য খাবার নিয়ে আসলো প্রাপ্তির জন্য।তারপর প্রাপ্তির পাশে বসে প্লেটে খাবার নিলো।তারপর তূর্য নিজেও খেলো আবার প্রাপ্তিকেও খাইয়ে দিলো।
একদিন মাঝ রাতে প্রাপ্তি অনেক জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে।ঘুম চোখে আড়মোড়া দিয়ে তূর্য লাফিয়ে উঠে
-কি হয়েছে প্রাপ্তি??কোনো সমস্যা??
-দেখো পেটে হাত দিয়ে।
এই বলে প্রাপ্তি তূর্যের হাত ওর পেটের উপরে নয়ে রাখলো।বলল
-কিছু ফিল করছো?
-হ্যাঁ।
-কি বলো তো?
-বাবু নড়ছে।
-হ্যাঁ।আজকে একটু বেশি নড়াচড়া করছে।
-কষ্ট হচ্ছে?
-একটু।বেশি না।বাবুর নখ গজিয়েছে।এমনভাবে খোঁচা দেয় মাঝে মাঝে খুব লাগে।
-চিন্তা করো না লক্ষীসোনা।আর কয়টা দিন বাকী আছে ডেলিভারি হতে।আল্লাহ্ ভরসা।
তূর্য কখনো প্রাপ্তিকে নিজ থেকে স্পর্শ করেনি।নরমালি প্রাপ্তিকে শোয়া থেকে উঠতে,বা বসা থেকে শুতে সাহায্য করতো।আর খাইয়ে দিতো।হাটাচলার সময় একটু ধরতো।এই পর্যন্তই।প্রাপ্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে ও কখনোই প্রাপ্তিকে স্পর্শ করবেনা এক বিছানায় ঘুমাও ও খুব গুটিসুটি হয়ে ঘুমায়। প্রাপ্তির যেনো কোনো প্রকার কষ্ট না হয়।
এইভাবেই বাকী কয়টা দিন কেটে যায়।
৯ মাস ১৯ দিন চলছে প্রাপ্তির ইদানিং ওর শরীরের অবস্থা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেছে। তাই ওকে মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।
মেডিকেল ভর্তির ৩ দিন পর অর্থাৎ ৯ মাস ২২ দিনের দিন প্রাপ্তি একটা ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়।অসাধারন মায়ামাখা ছেলেটার চোখে মুখে।
দুইদিন পরেই প্রাপ্তিকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হলো।প্রাপ্তি এখন অনেকটাই সুস্থ।
শেষ পার্ট এর অপেক্ষায়…..