#ধর্ষিতা_বউ
#রাবেয়া_সুলতানা
#২৭
___বিকেলবেলা প্রাপ্তি অরণী,আয়ান,সিয়াম,আসিফ রেডি হয়ে পাঁচ জনে মিলে আয়ানের বন্ধুর বোনকে দেখতে বের হয়েছে। আসিফ গাড়ী নিতে চেয়েছিলো কিন্তু আয়ান নিতে দেয়নি।
আয়ান -আমার গাড়ী থাকতে আপনারা অন্য গাড়ী নিবেন কেনো? আমরা সবাই একসাথেই যাবো।
আসিফ কাল রাতের কথা মনে করে আর কিছু বললোনা।রাতে একবার রাগ করেছে এখন আর রাগাতে চাই না।
সবাই মিলে মেয়েদের বাড়ীর সামনে নামলো।আয়ানের বন্ধু নিশান (মেয়ের ভাই)এসে তাদের কে এগিয়ে নিলো।
নিশানদের পরিবারে তার মা আর বোন নীরা (যাকে দেখতে আসছে)থাকে।নীরাকে দেখতে আসাতে তার কাকা আর কাকী শহরের থেকে এসেছে।নিশান আর নীরার কয়েকজন ফ্রেন্ড ও এসেছে।নিশান সবাইকে এনে ড্রইংরুমে বসিয়েছে।নিশানের মা তাদের সামনে এসে দাঁড়াতেই নিশান বললো,মা! এই হচ্ছে আয়ান আমার ফ্রেন্ড। প্রাপ্তি ওর ওয়াইফ, (অরণী কে দেখিয়ে)এই হচ্ছে আয়ানের শালি অরণী, অরণীর হ্যাজবেন্ড,আর নীরা জন্য যেই পাত্র এই হলো আসিফ।কথাটা বলতেই আসিফ সালাম দিলো।নিশানের মা সালাম টা নিয়ে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে, তোমার কথা অনেক শুনেছি নিশানের কাছ থেকে,নিশান তো দেখছি কম বলে ফেলছে তোমার ব্যাপারে।তুমি তো দেখতে এর ছেয়ে বেশি সুন্দর।
আয়ান বসে ফোন টিপতেছে আর বউয়ের প্রশংসা শুনে মুছকি মুছকি হাঁসছে।
অরণী আয়ানকে একটা চিমটি কেটে বউয়ের প্রশংসা শুনে খুব খুশি তাইনা?
আয়ান -কি করবো বলো আমার বউটা এতো বেশি সুন্দর যে কেউ প্রশংসা না করেই পারে না।
একটু পর নীরাকে তার কাজিন বিথী নিয়ে এসে সবাইকে সালাম দিয়ে ড্রইংরুমে আসলো।
প্রাপ্তি আর অরণী এগিয়ে গিয়ে নীরাকে নিয়ে এসে নিজেদের পাশে বসালো।
সিয়াম সবার দিকে তাকিয়ে বললো আমি আগে আমাদের ভবিষ্যৎ ভাবীকে একটা প্রশ্ন করি।
আয়ান -হুম করতেই পারো।
সিয়াম-(নীরার দিকে মুখ ফিরিয়ে) আমরা কিন্তু সবাই আপনাকে অনেক জ্বালাতন করবো আপনার কি এইগুলো সহ্য হবে?
(কথাটা শুনে নীরা হেঁসে দিলো।) আসিফ ভাইয়া! হাঁসি দেখে মনে হচ্ছে সহ্য হবে।
প্রাপ্তি -কিসে পড়ো?
নীরা -অনার্স ফাস্ট ইয়ার।
আয়ান -নিশান! এক কাজ কর ভাইয়া আর নীরা আলাদা ভাবে কথা বলুক। সেই ব্যবস্থাই কর।
নিশান -নীরা যাও আসিফ ভাইকে নিয়ে যা আয়ান ঠিকে বলেছে তোমেদের আলাদা ভাবে কথা বলা প্রয়োজন।
নীরা আর আসিফ ছাদে চলে গেলো কথা বলার জন্য।
অরণীকে চুপ থাকতে দেখে,
প্রাপ্তি-কিরে,,, পছন্দ হয়নি? এইভাবে আছিস কেনো?
অরণী -না,,,,হয়েছে।কিন্তু ভাইয়াকে কেমন চুপচাপ লাগলো না?
আয়ান -এখন দেখবা ঠিকি কথা বলবে।হয়তো আমাদের সামনে লজ্জাবোধ করছে।
প্রাপ্তি -হুম ঠিকি বলেছো।
চুপচাপ হয়ে দুজনেই দাঁড়িয়ে আছে।নীরাতো নিচের দিকে তাকিয়ে ভাবছে কেমন লোক একটা কথাও বলছেনা।ইচ্ছে করছে একটা তেলাপোকা ছেড়ে দিতে।কেনো যে কয়েকটা তেলাপোকা ধরে রাখলাম না!
নীরাই আগে কাশি দিয়ে গলাটা ঝেড়ে নিয়ে এহেম,,,আপনি কি রোবটের ছোটো ভাই?
আসিফ -মানে?
নীরা -আপনি কি কানেও কম শুনেন?
আসিফ-কি বলছেন এইসব?
নীরা -ঠিকি বলছি।একটা মেয়ে মানুষ আপনার সামনে একা দাঁড়িয়ে আছে আপনি কোনো কথাই বলছেন না।নাকি আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি?
আসিফ -আরে না কি বলেন।আপনাকে পছন্দ না করার উপায় আছে?অবশ্যই পছন্দ হয়েছে।
নীরা একটু রাগি ভাব নিয়ে, উপায় নাই মানে? আমার কি নাক একটা বেশি নাকি তাই আমাকে তোর পছন্দ হয়েছে।
আসিফ -আপনি আমাকে তুইতোকারি করছেন কেনো।সোজা বললেই তো হয় আপনি এই বিয়েতে রাজি না।
নীরা -তুই বলবো নাতো কি বলবো।আমিতো তোর ৬০ বছরের বড় তাই তুই আমাকে আপনি করে বলছিস। যতক্ষণ না আমাকে তুমি করে ডাকবি ততক্ষণ আমি তুই ডাকবো।
আসিফ ঘাবড়ে গিয়ে ওকে ওকে আমি তুমি করেই ডাকছি।আচ্ছা তুমি কি সবসময় এইভাবেই কথা বলো।
নীরা -না মাঝে মাঝে।তবে সবার সাথে করিনা শুধু আপনার সাথেই করবো।(কথাটা বলেই নীরা ফিক করে হেঁসে দিলো)
আসিফ -তার মানে এই বিয়েতে তুমি রাজি। তাহলে সোজাসুজি ভাবে তোমাকে কয়েকটা কথা বলি।তুমি কি পারবে আমার পরিবারের সবাইকে নিজের পরিবার বলে ভাবতে?পারবে আমার দুই বোনকে নিজের বোন ভাবতে? আমার পৃথিবী একদিকে আর আমার বোনরা আরেক দিকে।যদি তুমি এইসব সহ্য করতে পারো তাহলে বিয়েতে আমার কোনো অমত নেই।ও হ্যাঁ তুমি এই কথা ভেবো না তোমার কোনো অযত্ন হবে, বা তোমাকে আমি ভালোবাসবো না, এইসব কখনো ভেবো না।তোমার সবকিছুই আমার দায়িত্ব। আর আমার পরিবারের দায়িত্ব তোমার।এইবার তুমি ভাবো আমাকে কি তুমি বিয়ে করবে নাকি করবেনা।যদি তোমার সময় লাগে তাও দিলাম।
কথা গুলো বলেই আসিফ হাঁটতে শুরু করলো নিচে আসবে বলে।
নীরা আসিফ একটু হাঁটতেই বললো, দাঁড়ান!
আসিফ দাঁড়িয়ে পিছনে ফিরে তাকালো।
নীরা -আপনি আমাকে সময় দিয়েছিলেন না? কোনো সময়ের দরকার নেই আমি এখনি আনসারটা দিয়ে দিচ্ছি।
আসিফ -(নীরার দিকে এগিয়ে গিয়ে)জানি তুমি কি বলবে! তুমি এই বিয়েতে রাজিনা তাই তো? ওকে আমি নিচে গিয়ে বলে দিচ্ছি।সমস্যা নেই তোমার কোনো দোষ দিবোনা। আমি নিচে গিয়ে সব কিছু ম্যানেজ করে নিবো।
নীরা -রাখেন তো আপনার বকবক। আমি আপনাকে বিয়ে করছি বুজছেন?আমি আমার লাইফে এমন একজনকেই ছেয়েছি।যার মনে শুধু ভালোবাসা থাকবে। থাকবেনা কোনো অহংকার।আমি আপনাকে দেখে বুজেছি, যে মানুষটা পরিবারকে এতো ভালোবাসতে পারে সে মানুষের কখনোই মনে কোনো হিংসা থাকতে পারেনা।আমার আপনার মতো এইরকম একজন মানুষের দরকার।যে আমাকে অনেক ভালোবাসবে।
নীরার কথা গুলো শুনে আসিফ মুছকি হেঁসে মাথা নাড়িয়ে নিচে নেমে এলো।
আসিফকে আসতে দেখে আয়ান দাঁড়িয়ে,ভাইয়া আপনার কি পছন্দ হয়েছে?আমরা কি সামনে এগিয়ে যাবো?
আসিফ – সমস্যা নেই এগুতে পারো।
কথাটা শুনে সবাই আলহামদুলিল্লাহ্ বলে একজন আরেকজন মিষ্টি খাওয়াতে লাগলো।আয়ান এসে প্রাপ্তির কানের কাছে মুখ নিয়ে মহারাণী বিয়ে হবে একটা বাসরঘর হবে দুইটা।কথাটা শুনে প্রাপ্তি ভ্রু কুঁচকে আয়ানের দিকে তাকিয়ে, দেখা যাবে।
আয়ান -আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা।আমি যেটা বলবো সেটাই।
অরণী -এই তোমরা আবার কি ফিসফিস করছো? দুজনে মিষ্টি খাও।
আয়ান -আচ্ছা তাহলে আমরা কাজের কথায় আসি।আমাদের সবার মেয়ে পছন্দ হয়েছে।এখন বিয়ের ডেট তো ফাইনাল করতে হবে।আমরা তো দেখেই গেলাম।বাবা এবং মুরুব্বিরা এসে বিয়ের ডেট ফাইনাল করে যাবে।কি বলেন সবাই(নীরাদের সবার দিকে তাকিয়ে)
নীরার মা- আলহামদুলিল্লাহ্! তোমরা যা ভালো মনে করো।
নিশান -আয়ান আমি কিন্তু একা সব সামলেতে পারবোনা।তুই ওই দিকের কাজ সেরে সময় পেলে আমাকেও একটু সময় দিস।
আয়ান -চিন্তা করিস না।বিয়ে ফাইনাল হলেই অভ্রকে তোর জন্য পাঠিয়ে দিবো।
চলবে,,,,,