#ধর্ষিতা_বউ
#রাবেয়া_সুলতানা
#২৯
___আয়ান দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই সবাই দাঁড়িয়ে পড়লো।আবিদ চৌধুরী আয়ান কে দেখেই চোখ বড় বড় করে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে ও এই খানে কি করছে ওকে দেখে সবাই এই ভাবে দাঁড়িয়ে গেলো কেনো?
আয়ান সবাইকে বসতে বলে নিজের চেয়ারের পাশে দাঁড়ালো।কিভাবে বসবে সে এই চেয়ারে? যেইখানে পাশের চেয়ারটায় তার বাবা বসে আছে।
আয়ান -আপনারা সবাই কেমন আছেন?
পাশের একজন বললো, স্যার আমরা তো ভালোই আছি।কিন্তু আপনাকে দেখে অবাক হয়েছি।
অভ্র এসে, স্যার আসবো?
আয়ান -ইয়েস! অভ্রর কাছ থেকে ফাইল নিয়ে বললো, আপনি কেনো অবাক হলেন বললেন না তো?
লোকটা -আপনাকে দেখেই!এতো অল্প বয়সে এতো দূর এইটা কি ভাবা যায়?
আয়ান -(মুচকি হেঁসে) আসলে আমার আব্বু বিখ্যাত বিজনেসম্যান! আমি যদি ওনার ছেলে হয়ে পিছিয়ে থাকি তাহলে তো আমার আব্বু কে অসম্মান করা হলো।এইবার আমরা কাজের কথায় আসি?
কথাটা শুনে অভ্র অবাক হয়ে আয়ানকে দেখছে, সে এতো দিন যা অনুমান করেছে তা দেখছি সত্যিই হলো।
আবিদ চৌধুরীর রাগে চোখ গুলো লাল হয়ে আছে।গম্ভীর হয়ে টেবিলের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। আজ নিজের ছেলের জ্ঞান মুলুক কথা শুনতে হচ্ছে।কেনো জানি খারাপও লাগছে না। আমার ছেলেটা হয়তো আমাকে দেখানোর জন্যই এতো দূর পাড়ি দিয়েছে।
আয়ানকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখে,
অভ্র-স্যার আপনি বসছেন না কেনো? বসে কথা বলুন।
আয়ান -অভ্র তুমি ভালো করেই জানো আমি সব জায়গায় বসিনা।এইখানে সবাই আমার মুরুব্বী আমি ওনাদের ছেলের মতো আমি এইখানে বসলে ওনাদের অসম্মান করা হবে।
আবিদ চৌধুরী বুজে গেছে আয়ান যে তাকেই শুনানোর জন্য কথা গুলো বলেছে।
আয়ান প্রেজেন্টেশন দেখে আবিদ চৌধুরী মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে ছেলের দিকে।
এমন সময় আয়ানের ফোন বাজতেই আয়ান বিব্রতবোধ নিয়ে সরি বলে ফোনটা পকেট থেকে বের করে দেখে প্রাপ্তির নাম্বার।প্রাপ্তি আমাকে কখনোই আর ফোন দেয়নি আজ এমন সময় দিলো কল টা রিসিভ না করলে হয়তো ওর মন খারাপ হয়ে যাবে, তাই একটু সরে গিয়ে কলটা রিসিভ করে, বাবু আমি মিটিং এ আছি,আর মিটিং শেষ করেই তোমাকে ফোন দিচ্ছি,প্লিজ রাগ করোনা।
প্রাপ্তি -ওকে!
কথা শেষ করে আয়ান তার কাজে মন দিলো,নাহ্ আব্বুকে দেখে এইভাবে দুর্বল হলে আমায় চলবেনা।আমাকে শক্ত হতে হবে।সবকিছু শেষ করে আয়ান আবিদ চৌধুরীর সাথে ডিল টা ফাইনাল করে নিলো।এমন ভাবে তাদের মধ্যে কথা চলতে থাকে মনে হচ্ছে আজই তাদের বিজনেসের কাজে প্রথম দেখা। আয়ান কাজ শেষ করে রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে এলো।
অভ্র এসে আমি বললাম না তুই ছাড়া এইরকম প্রেজেন্টেশন কেউ দিতে পারেনা।আবিদ চৌধুরী খুশি হয়েই ডিলটা করে নিলো।
আয়ান চুপচাপ বসেই আছে মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। মাথায় একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আজ আমার নিজের বাবার সাথেই বিজনেসের সম্পর্ক।
অভ্র আয়ানকে চুপ থাকতে দেখে কিরে আমি একাই বকবক করে যাচ্ছি আর তুই চুপ করে এতো কিভাবছিস? তুই তখন মিটিং এ একটা কথা বললি,তোর বাবা নাকি বিজনেসম্যান। অবশ্য আমি আগেই বুজেছিলাম তুই আমার কাছে অনেক কিছু লুকাচ্ছিস।
আয়ান -অভ্র তুই ঠিকি বলেছিস! সত্যি কখনো লুকানো যায়না,সেটা যে কোনো সময় সামনে চলে আসে।জানিস অভ্র আজ আমি কার সাথে প্রজেক্ট এর ডিল করেছি?
অভ্র -(হাঁসি দিয়ে) কেনো জানবো না, আবিদ চৌধুরীর সাথে।
আয়ান -এর বাহিরেও ওনার সাথে আমার একটা পরিচয় আছে আর সেটা হলো ওনিই আমার বাবা!
অভ্র বিস্মিত কন্ঠে, মানে?তোর বাবা!
আমি তো কিছুই বুজতে পারছিনা।তোদের দুজনকে দেখে তো তা মনে হলো না।এমন ভাবে ছিলি মনে হলো তোদের আজকেই প্রথম দেখা।
আয়ান -সে অনেক কথা সময় করে তোকে একদিন বলবো।আচ্ছা আমি তাহলে এখন আসি, তুই রাতে কিন্তু বাসায় আসবি।
সে কখন আমি ফোন দিলাম মিটিং এ আছে বলে যে রেখে দিলো তার কোনো খবর নেই।বাসায় যে দিয়ে গেলো একটা বার ফোন দিয়ে খবর নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলোনা।আগেই ভালো ছিলো কথা বলতাম না,ফোনও দেওয়া লাগতো না।জামা কাপড় গুছাইতে গুছাইতে বিড়বিড় করছে প্রাপ্তি।
আয়ান এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কি হয়েছে আমার লক্ষ্মী বউয়ের।আমার উপর কি তার রাগ হয়েছে।
প্রাপ্তি -(আয়ানকে দেখে অবাক হয়ে,)তুমি এই সময় বাসায় চলে এলে? শরীর খারাপ নাকি? দেখি সামনে আসো।
আয়ান -(প্রাপ্তিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)এতক্ষণ আমাকে বকা দেওয়া হচ্ছে, এখন আবার ভালোবাসাও দেখানো হচ্ছে।
প্রাপ্তি -আমার যা খুশি তাই করবো তাতে তোমার কি।আমার হ্যাজবেন্ডকে আমি মারবো, আদর করবো, (হাতে একটা চিমটি কেটে)চিমটি কাটবো তাতে আয়ান চৌধুরী কি?
আয়ান- ওহ্ ব্যথা পেলাম তো,(প্রাপ্তিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে)আচ্ছা তুমি সত্যি আমাকে মারবে? ওকে তাহলে শুরু করো।
প্রাপ্তি আয়ানকে ছাড়িয়ে ফাজলামো করা হচ্ছে আমার সাথে? এখন যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো।আয়ানের হাতে তোয়ালে টা ধরিয়ে দিয়ে প্রাপ্তি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
আয়ান ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার টেবিলে বসতে বসতে রেশী কোথায়?
প্রাপ্তি -ওর শরীরটা ভালো লাগছে না।তাই আগেই খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে দিলাম।হয়তো শুয়ে আছে।ভাবছি ভাইয়ার বিয়েটা শেষ হলে রেশীর বিয়ের জন্য ছেলে দেখবো।
আয়ান -(খেতে খেতে)রেশী যদি বলে ও বিয়ে করবেনা। ও ওর পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চায় তখন?
কথাটা শুনে প্রাপ্তি মন খারাপ করে হুম সেটাই, তবে একবার বলতে অসুবিধা কোথায়?
আয়ান -হুম!তোমাকে তো বলতে ভুলে গেছি।রাতে অভ্র আসবে।আমাদের সাথে খাওয়াদাওয়া করবে।
প্রাপ্তি -সমস্যা নেই।
আয়ান -রান্না করতে তোমার কষ্ট হবেনা? এক কাজ করলে কেমন হয় সব রান্না বাহিরের থেকে নিয়ে আসি?
প্রাপ্তি -কোনো দরকার নেই।আমিই পারবো।অভ্র আমার ভাইয়া মতো ভাইকে রান্না করে খাওয়াবো এতে কষ্ট কিসের?তুমি কোনো চিন্তা করো না আমি পারবো।
আয়ান -আমি জানি তুমি পারবে।কিন্তু তোমার তো কষ্ট হবে।
প্রাপ্তি -বললাম তো তুমি চিন্তা করোনা।আচ্ছা তোমাকে একটা কথা বললে রাগ করবা?
আয়ান -রাগ করবো কেন? কি বলবে বলো?
প্রাপ্তি -ভাইয়ার বিয়েতে তোমাদের বাড়ির সবাইকে ইনভাইট করলে কেমন হয়?
আয়ান -তুমি ভালো করেই জানো ওরা আসবেনা।
প্রাপ্তি -আকাশ ভাইয়া আর ভাবী তো আসতে পারে।প্লিজ বলোনা!
আয়ান -কি বলি বলো তো? তুমি আমার কাছে কোনো দিন কিছু চাওনি। এখন এমন একটা কথা বললে,,,, তবে চেষ্টা করে দেখতে পারি।
আবিদ চৌধুরী নিজের রুম অন্ধকার করে ইজিচেয়ারটায় বসে দুলছে।কেমন জানি নিজেকে আজ একা লাগছে।সবার মাঝে থেকেও চারপাশ টা কেমন খাঁ খাঁ করছে।আয়ান যখন এই বাড়িতে ছিলো যখনি বাসায় থাকতো হৈচৈ করে বাড়িটা মাতিয়ে রাখতো।অফিসে থাকলেও নিজের কাজ গুলো মন দিয়ে করতো।কখনো কোনো কিছু বলে দিতে হয়নি।আজ একটা মেয়ের জন্য আমার ছেলে আমাকে পর্যন্ত ত্যাগ করে দিলো।আমার সম্মানের কথা একটাবার চিন্তা করলো না।এইদুইটা বছর আমি হয়তো একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলাম সবাইকে ওর সাথে যোগাযোগ করতে না দিয়ে।সবাই হয়তো ভাবে আমার মনে কোনো মায়া নেই কারো প্রতি কোনো ভালোবাসা নেই।আমার মন পাথরের মতো। সত্যিই কি তাই?কথা গুলো ভাবতেই গলাটা কেমন জানি ভারী হয়ে আসছে।
আয়েশা বেগম রুমে ঢুকে অন্ধকার দেখে লাইটটা জ্বালিয়ে আবিদ চৌধুরীকে দেখে কি হয়েছে বাহিরের থেকে আসার পর থেকেই দেখছি মন খারাপ।কিছু হয়েছে?
আবিদ চৌধুরী চশমা টা মুছে পরতে পরতে দীর্ঘশ্বাস পেলে বললো নাহ কিছু না!
চলবে,,,,,,,