#ধর্ষিতা_বউ
#রাবেয়া_সুলতানা
#২
___আয়েশা বেগম – ওয়ালাইকুম সালাম।আমি ভালোই আছি।তবে তোর বাবা অসুস্থ।
আয়ান -মা! বাবার কি হয়েছে?
আয়েশা বেগম – বুকের ব্যাথাটা বেড়েছে,তোর কি ইচ্ছে করেনা আমাদের কে দেখার? তোর বাবা, আমি, তোর বড় ভাই,ভাবী, তোর বোনেরা সবাই তোকে কতো ভালোবাসে।তোর কি ইচ্ছে করেনা সবার কাছে থাকার?
কথা গুলো শুনে আয়ান দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বললো, মা! আমারো ইচ্ছে করে সবার সাথে থাকতে।আমিও সবাইকে ভালোবাসি। তোমাদের ছেড়ে থাকতে আমারো কষ্ট হয় মা।কিন্তু কি করবো বলো ওই মেয়েটা কে ছেড়ে আমি কোথাও যেতে পারবোনা।ভালোবাসি আমি ওকে। আমি যদি ওকে ছেড়েদি ও নিশ্চিত সুইসাইড করবে।বাবাও ওকে নিবে না আর আমার বাড়ীতেও যাওয়া হবেনা।
আয়েশা বেগম – তোরা বাপ ছেলে যা ভালো বুঝিস কর। কিন্তু এর মাঝে তোর এই মায়ের ভালোবাসা টা কবর দিয়ে দিস না।যদি পারিস একবার এসে এই মায়ের সাথে দেখা করে যাস।আজ তাহলে রাখী।
আয়ান ফোন রেখেই দেখে প্রাপ্তি ডাইনিং টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ দুটো টলমটল করছে।আজ তার কারনেই আয়ান তার পরিবারের থেকে আলাদা।
আয়ান এগিয়ে এসে বললো, কি? কান্না করবা নাকি?
প্রাপ্তি ছোট্র একটা নিশ্বাস ছেড়ে,
প্রাপ্তি -রেশী! খাবার গুলো নিয়ে আসো।আর তুমিও খেয়ে পেলো রাত অনেক হয়েছে।
আয়ান আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেতে বসলো।প্রাপ্তিও বসতে বসতে বললো,
একটা কথা বলবো যদি কিছু মনে না করেন?
আয়ান -(প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)তুমি কথা বলবে এইটা আমার জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। কি বলবে বলো?
প্রাপ্তি -আপনি কাল গিয়ে আপনার বাবা মা কে দেখে আসুন।আমার জন্য শুধু শুধু ওনাদের কষ্ট দেন কেন? আমি আর পারছি না।কথা গুলো বলেই প্রাপ্তি কান্নায় ভেঙে পড়লো।
প্রাপ্তির কান্না দেখে আয়ান বললো এইখানে নিজেকে দোষ দিচ্ছো কেন।তুমি তো কিছু করোনি।ওনাদের যদি আমার প্রতি ভালোবাসায় থাকতো তাহলে আর তোমাকে নিয়ে আমার বাড়ী ছাড়তে হতোনা।(প্রাপ্তির চোখের পানি মুছে দিতে দিতে) প্লিজ কান্না করোনা।আমি তো তোমাকে প্রেম করে বিয়ে করিনি। বিয়েটা তো ওনারাই করিয়ে ছিলো তাহলে এখন মেনে নিতে পারচ্ছেনা কেন?
প্রাপ্তি -ওনারা মেনে নিবে কি করে আমি যে,,,,,,,,,,
আয়ান প্রাপ্তিকে থামিয়ে একদম চুপ আর কোনো কথা নয়।চুপচাপ খেয়ে রুমে আসো।
প্রাপ্তি আয়ানের সাথে কথা না বললেও মাঝে মাঝে বাড়ী যাওয়া নিয়ে কথা বলেই।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আয়ান ড্রইংরুমে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি টেবিলের উপর নাস্তা দিয়ে রেখেছে।রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখে প্রাপ্তি চুলায় রান্না বসিয়েছে।
আয়ান – প্রাপ্তি! তুমি নাস্তা করেছো? আর এতো সকাল রান্না করছো কেন?
রেশী -প্রাপ্তি কিছু বলছেনা দেখে,ভাইয়া ভাবী তো এখনো কিছু খায় নাই।
আয়ান -না খেয়ে রান্না করার কারণ কি?
রেশী -ভাবী বলছিলো রান্না করে বাহিরে যাবে।আপনি খেয়ে নিন।
আয়ান রান্না ঘরে ঢুকে প্রাপ্তির হাত ধরে টেনে ডাইনিং টেবিলের সামনে এনে চেয়ারে বসিয়ে বাহিরে যাবে আমাকে বললেইতো হতো।রান্না করার দরকার নেই বাহিরেই খেয়ে নিবো।সাথে রেশীকেও নিয়ে নাও।আর এখন নাস্তাটা করে নাও।
প্রাপ্তি -আপনি অফিসে যাবেননা?
আয়ান -সমস্যা নেই অভ্রকে ফোন করে বলে দিলেই হবে।
প্রাপ্তি -চলুন না আমাদের বাসায় যাই।অনেক দিন হলো মাকে দেখিনা।আপনি যদি বলেন তাহলে মাকে ফোন দিয়ে বলবো আমরা যাচ্ছি।
আয়ান ভাবলো সারাদিন মনমরা হয়ে বাসায় বসে থাকার চেয়ে ঘুরে আসুক সেটাই ভালো হবে।
আয়ান -ঠিক আছে রেডি হয়ে নাও।আমি অভ্র কে ফোন দিয়ে বলছি।
প্রাপ্তি নাস্তা টা খেয়েই রেশীকে ডেকে চুলার আগুন নিভিয়ে রেডি হতে বললো। তাদের সাথে যাওয়ার জন্য।
আয়ান অভ্রকে ফোন দিয়ে সব বুজিয়ে দিলো।
কতো দিন পর প্রাপ্তি আয়ানের সাথে কোথাও বেরাতে যাচ্ছে।অবশ্য আয়ান প্রায়ই বলে,কিন্তু প্রাপ্তির যেতে ইচ্ছে করেনা।প্রাপ্তি চায় না তার জন্য আয়ান কে কেউ অন্য নজরে দেখুক।আয়ান অভ্রর সাথে কথা শেষ করে রুমে ঢুকে দেখে প্রাপ্তি রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আয়ানের ইচ্ছে করছে না চোখ সরাতে। তার বউ এতো সুন্দর এতো মায়াবী কিন্তু বিয়ে হয়েছে ২ বছর, আজও পর্যন্ত প্রাপ্তিকে ছুঁয়েও দেখনি।দেখবেই বা কি করে প্রাপ্তি কখনোই তার কাছে আসেনা।যা বলে দূর থেকেই বলে।
প্রাপ্তি আয়ানকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে, আপনি আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
আয়ান প্রাপ্তির কথায় চমকে উঠে, কিছু বলেছো আমাকে?
প্রাপ্তি -বলেছি আপনি এইভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন?
আয়ান একটু লজ্জা পেয়ে কিছুনা।আমি গাড়ী বের করছি তুমি আর রেশী আসো।
—কতো দিন পর মেয়েটা আসতেছে।তোমাদের তো উচিত মেয়েটা কে এগিয়ে নিয়ে আসার।আয়ান তো এখনো নতুন জামাই। যাওনা ওদের এগিয়ে গিয়ে নিয়ে আসো।কথা গুলো রান্নাঘর থেকে প্রাপ্তির মা নিলিমা বেগম প্রাপ্তির বাবাকে আর ভাইকে বলছে।
মায়ের বকা দেখে আসিফ(প্রাপ্তির বড় ভাই) বললো দেখেছো আব্বু? আম্মুর মেয়ে আসছে এখন আর আমাদের দিকে কোনো খেয়াল থাকবে না।পান থেকে চুন ঘষলেই বকা খেতে হবে।
ছেলের কথা শুনে প্রাপ্তির বাবা আজাদ চৌধুরী বললেন, তোর আম্মুকে এখন কিছু বলিস না।পরে আরো খেপে যাবে।তুই তোর মায়েকে একটু হেল্প কর আমি এগিয়ে গিয়ে দেখি প্রাপ্তিরা এসেছে কিনা।
আসিফ আজাদ সাহেব চলে যাওয়ার পর সামনের দরজাটা আটকিয়ে রান্নাঘরে মায়ের পাশে এসে বললো,আম্মু! অরণী (প্রাপ্তির ছোটো বোন)আসবে না?
নিলিমা বেগম -আসবে না!!! বড় বোন আসছে, না এসে পারে?যাইহোক ওরা আসার আগেই সব কাজ করে ফেলতে হবে। অনেক দিন পর আমার মেয়েরা আসতেছে জমিয়ে আড্ডা দিবো।তুই এককাজ কর প্রাপ্তির রুমটা ঠিক করে দিয়ে আয়।অবশ্য আমি ঠিক করেছি তুই দেখে আয় কিছু কমতি আছে কিনা।
আসিফ -ওহ্ঃ মা! তুমিও না, একটু শান্তিতে থাকতে দিবে না।
নিলিমা বেগম রান্নাবান্না শেষ করে ড্রইংরুমের ফ্যান চালিয়ে সোপায় গিয়ে হেলান দিয়ে বসে পড়লো।আর ভাবতে লাগলো বিয়ের পর এই নিয়ে আয়ান দুই বার আসছে এই বাড়ীতে।আসবেই বা কি করে, প্রথম বার এসে কতো নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে তাকে। বাসা থেকে বের হলেই গ্রামের লোকেরা প্রাপ্তিকে নিয়ে নানা কথা বলতো।ছেলেটা ভালো দেখেই সব কিছু মেনে নিয়েছে।অন্য কোনো ছেলে হলে মেয়েটা কে আমাদের বাড়ী রেখে কবেই চলে যেতো।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই কলিংবেলের শব্দ শুনে তাড়াহুড়ো করে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,