#ধর্ষিতা_বউ
#রাবেয়া_সুলতানা
#৩
___ দরজা খুলার সাথে সাথেই প্রাপ্তি তার মাকে জড়িয়ে ধরলো।নিলিমা বেগম মেয়েকে কপালে অনেক গুলো চুমু দিয়ে কাঁদোকাঁদো হয়ে বললো কতো দিন হয়েছে তোকে দেখিনা।
মা মেয়ের এমন দৃশ দেখে আয়ানের মুখে হাঁসির ঝলক ফুটে উঠলো।
আসিফ ভিতরের রুম থেকে এসে আম্মু! এইবার তো প্রাপ্তিকে ভিতরে আসতে দাও।সব কিছু কি দরজায় দাঁড়িয়েই শেষ করে ফেলবে?
(আয়ান এগিয়ে এসে আসিফের সাথে কোলাকোলি করলো।)কেমন আছো আয়ান?
আয়ান -জ্বী ভালো।
এমন সময় অরণী আর তার হ্যাজবেন্ড সিয়াম দরজায় দাঁড়িয়ে,
অরনী -আসতে পারি?
কথাটা শুনে সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে,
প্রাপ্তি -অরণী!!!!!! আম্মু অরণী আসবে আমায় বলোনি তো?
নিলিমা বেগম -আমার কি দোষ, অরণী আমায় মানা করেছে তোকে সারপ্রাইজ দিবে বলে।
অরণী ভিতরে এসে, কেমন আছিস আপু?
প্রাপ্তি আয়ানের দিকে তাকিয়ে অনেক ভালো আছিরে।সিয়াম তুমি কেমন আছো?
সিয়াম- এইতো ভালো।আপনি তো আয়ান ভাইয়াকে পেয়ে আমাদের সবাইকে ভুলেই গেছেন।
কথাটা শুনে আয়ান মনে মনে তাচ্ছিল্য একটা হাঁসি দিয়ে, ও যদি আমাকে পেয়ে ওর অতীত ভুলে যেতো তাহলে আমার মতো ভাগ্যেবাণ কেউ ছিলো না।যাইহোক
তবে আজকের মতো খুশী আমি প্রাপ্তিকে কখনোই দেখিনি।সবার সাথে কতো সুন্দর করে কথা বলছে।আর আমার কাছে আসলে মনে হয় বোবা একটা মেয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
নিলিমা বেগম -বাবা তোমরা ফ্রেশ হয়ে এসে বসো আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।
আয়ান -আম্মু আপনি আমার জন্য এতো ব্যস্ত হবেন না।আমাকে এই বাড়ীর একজন ভেবেই ভালোবাসবেন।আপনি যদি বাড়তি আপ্যায়ন করেন এতে আমার অনেক খারাপ লাগবে এইভেবে আপনি আমাকে নিজের ছেলে মনে করেন না।
আয়ানের কথা গুলো শুনে নিলিমা বেগম আয়ানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো, তোমার মতো ছেলের মা হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।যাও বাবা ফ্রেশ হয়ে আসো।পরে কথা বলবো। এই প্রাপ্তি, যা আয়ানকে রুমে নিয়ে যা।অরণী তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তাড়াতাড়ি যা।রেশী! তুমি (একটা রুম দেখিয়ে)ওই রুমে যাও।ওইখানে তুমি থাকবে।
আয়ান প্রাপ্তির রুমে এসে অবাক হয়ে সব কিছু দেখছে।রুমটা অনেক সুন্দর করে সাজানো। সব কিছু প্রাপ্তির পছন্দমতই।এর আগেও আয়ান এই বাড়ীতে দুইবার এসেছিলো তখন সবকিছু ঝামেলার মাঝেই কাটিয়েছিলো।
প্রাপ্তি ব্যাগ থেকে জামা কাপড় গুলো বের করে ড্রয়ারে রাখতে রাখতে বললো আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।আম্মু একটু পর আবার ডাকাডাকি শুরু করবে।
আয়ান -এতো জামা কাড়প নিয়ে আসলে থাকবে কতো দিন এইখানে?
প্রাপ্তি -আপনি যেইদিন বলবেন সেইদিনি চলে যাবো।
আয়ান -আমি তো কালই চলে যাবো। তুমি দুইদিন থাকো তারপর না হয় আমি এসে নিয়ে যাবো।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি কিছু বললোনা।মনে কেন জানি ধাক্কা লাগলো।ওনাকে ছাড়া আমি এইখানে থাকবো কি করে? এইখানে এমনেতেই দম বন্ধ হয়ে আসে।আমি এসেছি শুনলে পাড়ার চাচী, জেঠী সবাই চলে আসবে আমাদের কথা শুনানোর জন্য।জানি এইগুলো শুনলে আয়ানের খারাপ লাগবে।কিন্তু মানুষের মুখতো আর বন্ধ করা যায়না।আমাদের সমাজের মানুষ গুলোই এই রকম।নিজের ঘরে কি হয়েছে সে নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই।কিন্তু অন্যের ঘরের দোষ কিভাবে বের করা যায় সেই নিয়েই বেশী চিন্তায় থাকে।
এই প্রাপ্তি ভাবছো টা কি? তোয়ালেটা দাওতো।
প্রাপ্তি -(চমকে উঠে)ওওওওও হ্যাঁ।
আয়ান -কি ওওও হ্যাঁ করছো? যেটা ভাবতেছো সেটা মাথা থেকে ঝেড়ে পেলো।জানি আমি, তোমার ভাবনাতে কি থাকতে পারে।
অরণী প্রাপ্তির রুমে এসে তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,কিরে আপু এখনো দাঁড়িয়ে আছিস। আম্মু নাস্তা নিয়ে বসে আছে,চল!
ভাইয়া আপনিও চলেন।
অরণী কে দেখে আয়ান অন্য দিকে ফিরে আছে।প্রাপ্তি ব্যাপারটা বুজে অরণীকে বললো তুই যা আমরা আসছি।অরণী ও আয়ানের ব্যাপারটা বুজতে পেরে চলে গেল।
প্রাপ্তি -ওর সাথে এইভাব না করলেও পারতেন।
আয়ান -কেন করবো না।ওর জন্যই তো এতো কিছু।কথা টা বলেই আয়ান ফ্রেশ হতে চলে গেলো।প্রাপ্তি আয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছে হয়তো তাই।
প্রাপ্তি এসে তার মাকে কাজে হেল্প করছে।অরণী পাশ থেকে বলে উঠলো,আচ্ছা আপু! আয়ান ভাইয়া আমার উপর এখনো রাগ তাই না?সেই দিনের সবকিছুর জন্য আমি দায়ী তাইনা?
প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে,দূর পাগলি,ও তো এইরকমভাবেই চুপচাপ থাকে।
অরণী কিছু বলতে যাবে তখনি দেখে,
আয়ান ফ্রেশ হয়ে সোপায় এসে বসেছে।সাথে সিয়াম ও।দুজনে এইখানে এসে ভালোভাবে মিশে গেছে।অবশ্য এর আগে সিয়াম আর আয়ান একসাথে হয়নি।সেইদিনে ঘটানার পর সিয়ামও এই বাড়ীতে আসেনি।প্রাপ্তির বাবা এসে প্রাপ্তির মাকে বলতে লাগলো তোমার মেয়েকে এগিয়ে আনতে গেছি আর তারা আমার আগেই চলে এসেছে।
নিলিমা বেগম -তুমি হয়তো আড্ডা দিতে বসে গেছো তাই আমার মেয়েকে খুঁজে পাওনি।কথাটা শুনে সবাই হাঁসতে শুরু করলো।আয়ান এগিয়ে এসে প্রাপ্তির বাবাকে সালাম করে জড়িয়ে ধরলো।আজাদ সাহেব আয়ান জড়িয়ে ধরতেই কেমন আছো বাবা?
আয়ান -জ্বী ভালো।
সিয়ামের দিকে তাকিয়ে, তুমি কেমন আছো?
সিয়াম -জ্বী আমিও ভালো আছি।
আজাদ -নিলিমা! আজ আমার ঘরটা অনেক দিন পর পরিপূর্ণ হলো।আমার মেয়েরা দেখছি আল্লাহ্ রহমতে ভালোই আছে।
আয়ান -আব্বু আপনি বসেন।বসে কথা বলা যাবে।আসিফও এসে তাদের সাথে যোগ দিলো।
সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে বসে আড্ডা দিচ্ছে।আয়ানের ফোনে কল আসাতে আয়ানের মন ভারী হয়ে উঠলো।ফোন দিয়েছে তার বড় ভাই আকাশ। ফোন হাতে নিয়ে তাকিয়ে আছে আয়ান।প্রাপ্তি কিছুটা বুজতে পেরে, আপনার অফিসের কল আসছে মনে হয়।সমস্যা নেই আপনি রুমে গিয়ে কথা বলে আসুন।
আসিফ -হ্যাঁ আয়ান! জরুরী ফোন হবে কথা বলে আসো।আয়ান বুজেছে প্রাপ্তি ওকে এখান থেকে সরাতে চাইছে।মেয়েটা আমাকে কিভাবে যেন বুজে যায়।কিন্তু ভালোবাসতে চায় না। কথাটা ভাবতে ভাবতে আয়ান রুমে এসে ফোন রিসিভ করলো,
আকাশ -কিরে তোকে এতোক্ষণ ফোন দিচ্ছি ধরছিস না কেন?
আয়ান- একটু ব্যস্ত ছিলাম, কি বলবে বলো?
আকাশ -প্রাপ্তি কেমন আছে? প্রাপ্তিকে অনেক মিস করছি।তোর ভাবী বার বার বলছে তোদের বাসায় গিয়ে প্রাপ্তির সাথে কিছুটা সময় কাটাতে,অবশ্য এটা ওর একার ইচ্ছা নয়,আমারো বলতে পারিস।মেয়েটা সহজে সবাইকে আপন করে নেয়।
আয়ান- হুম ঠিক বলছিস।ভাইয়া তাহলে তুই কবে আসছিস বল? জানিস প্রাপ্তি শুনলে কতো খুশী হবে তুই জানিস?
আকাশ -একদিন সময় করে চলে আসবো।তোরা বাড়ীতে এসে একবার মাকে দেখে যা।মা সারা দিন তোর কথা বলে।তোকে অনেক মিস করে, তোর কথা বলতে গেলেই ফেল ফেল করে কেঁদে পেলে।তুই বাড়ীর ছোটো ছেলে,সবার অনেক আদরের।
আয়ান -ভাইয়া আমিও তোদের অনেক মিস করি।সবচেয়ে বেশী মিস করি তোর আর মায়ের ভালোবাসাটা।আমি কোনো অন্যায় করলেও তুই বাবার কাছে সব দোষ নিজের কাঁধে নিয়ে নিতি।কথা গুলো বলতে বলতে আয়ানের গলাটা ভারী হয়ে আসছে।মনে হচ্ছে এখুনি কেঁধে ফেলবে।
আয়ান আকাশের সাথে কথা শেষ করেই চোখ গুলো মুছতে মুছতে পিছনে ফিরে দেখে প্রাপ্তি দাঁড়িয়ে আছে।
প্রাপ্তি -কেন দিচ্ছেন নিজেকে এতো কষ্ট? নিজের পরিবারে কাছ থেকে আমাকে নিয়ে আলাদা থেকে কি বুজাতে চাইছেন আপনি? আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন? কেনো করছেন আমার জন্য এতো কিছু? এই সমাজ আমাকে ভালো চোখে দেখে না।আর কখনো দেখবেও না।কারণ আমি ধর্ষিতা মেয়ে,না না ভুল হয়েছে #ধর্ষিতা_বউ।আমার জন্য আপনাকে সবাই অন্য চোখে দেখে।যতো দিন আমি বাঁচবো এই পাপের বোঝা নিয়ে বাঁচতে হবে।কথা গুলো বলে কান্না করতে করতে ফ্লোরে বসে পড়লো প্রাপ্তি।
আয়ানও প্রাপ্তির সামনে বসে পড়লো,আস্তে আস্তে হাত দুটো নিয়ে প্রাপ্তির দুগাল ধরে, পাগলি কথাকার।এতো গুলো প্রশ্ন কেউ একসাথে করে?নিজেকে এতো ছোটো ভাবো কেনো? ধর্ষিতারা কখনো পাপি হয় না।পাপী তো তারা যারা তোমাকে জোর করে ধর্ষন করেছে।এই সমাজের কোনো দোষ নেই, দোষ এই সমাজের মানুষ গুলোর।তারাই সমাজকে প্রতি নিয়তো নষ্ট করছে।তোমার মতো হাজারো প্রাপ্তি আছে যারো কারো সার্পোট পায় না।তোমার সাথে আমরা সবাই আছি। কেউ থাকুক আর না থাকুক আমি তোমার পাশে থাকবো।কেনো জানো তোমাকে ভালোবাসি বলে।তোমার মতোই একটা মেয়ে আমার জীবনে খুব প্রয়োজন। জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না।কিন্তু একদিন না একদিন তো ভালোবাসবেই।আয়ানের কথা গুলো শুনে প্রাপ্তির ইচ্ছে করছে তাকে একবার জড়িয়ে ধরে বলতে আমিও আপনাকে ভালোবাসি।কিন্তু কেন জানি ভয় কাজ করে।
আয়ান প্রাপ্তিকে দাড় করিয়ে, আমি জানি তোমার মন এখন কি বলছে।
প্রাপ্তি -(কাঁদো কাঁদো গলায়)কি বলছে?
আয়ান -কাজে করে দেখাই, প্রাপ্তি কিছু বলার আগেই প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরলো।আয়ানের বুকে মাথা রেখে প্রাপ্তি যেনো নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।এই প্রথম আয়ানের বুকে সে মাথা রেখেছে।এই বুকে এতোটা শান্তি আছে তার জানা ছিলো না।মনে হচ্ছে পৃথিবীর কথাও গেলে সে এতো সুখ খুঁজে পাবেনা।মনে হচ্ছে আয়ানের বুকের হৃদয়েরস্পন্দন গুলো শুধু আমায় ডাকছে।
অনেকক্ষণ এইভাবে থাকার পরে আয়ান আস্তে করে প্রাপ্তিকে ডাক দিলো।এই প্রাপ্তি! কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি? কিছু বলছো না কেনো?
প্রাপ্তি-(আয়ানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,) ওহ্ঃ কথা বলবেন না।কথা বললে ডিস্টার্ব হবে আমার।
আয়ান- এতো দিন কাছে না এসে আমাকে কষ্ট দিয়েছো কেন?
প্রাপ্তি -আমি কি জানতাম এইবুকে এতো শান্তি লুকিয়ে আছে?আর আপনার কাছে গেলেই আমার ভয় লাগতো।আপনি তো সবি জানেন।নতুন করে আমি কি বলবো বলেন?
আয়ান -আমি জানতাম দেখেই তো তোমাকে কাছে টানতাম না।ভাবতাম যেইদিন তুমি নিজের ইচ্ছায় কাছে আসবে সেইদিন তোমাকে কাছে টেনে নিবো।যাইহোক ওইসব কিছু ভুলে যাও।শুধু ভাববে আমি তোমার সব।
চলবে,,,,,