#ধর্ষিতা_বউ
#রাবেয়া_সুলতানা
#৩৪
___প্রাপ্তিদের সবাই নীরাদের বাড়িতে পৌঁছালো।গাড়ি থেকে নেমে মেয়েরা সবাই বাসার ভিতরে ঢুকে গেলো।নীরাকে আগেই সাজিয়ে রাখা হয়েছে।নীরার মা আস্তে আস্তে সবার সাথে পরিচিত হচ্ছে।প্রাপ্তি নীরার রুমে আসতেই নীরা সালাম দিয়ে জড়িয়ে ধরে, আপু কেমন আছেন?
প্রাপ্তি -আমি তো ভালো।তোমার অবস্থা কী?
অরণী এসে, বাহ্ বড় ননদ কে পেয়ে আমার একটু খবরও নিলো না।আমি কিন্তু রাগ করতেছি।নীরা মুচকি হেঁসে না আপু আমি তো জিজ্ঞাস করতে ছিলাম বড় আপুকে এর আগেই তো আপনি চলে আসলেন।
অরণী -হুম আমাকে আর বুজাতে হবে না।তবে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।আর ক্রেডিট টা কিন্তু আয়ান ভাইয়ার।
প্রাপ্তি-চুপ করতো।নীরা! আসো তোমাকে সুমির সামনে এনে ইনি হচ্ছে তোমার আয়ান ভাইয়ার বড় ভাবী, ইনি বড় আপু ঝিনুক।এই হচ্ছে রেশী তোমার আরেকটা ছোটো বোন।প্রাপ্তি নীরাকে অনেকের সাথেই পরিচয় করিয়ে দিলো।
আয়ান ভিতরে এসে রেশীকে দেখতে পেয়ে, রেশী তোর ভাবী কোথায়?
রেশী -ভাইয়া ভাবীতো নীরা আপুর রুমে আছে।
আয়ান নীরার দরজার সামনে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি সবার সাথেই কথা বলছে।আমি কি ভিতরে আসতে পারি?
অরণী দরজার দিকে তাকিয়ে কেনো আসতে চাইছো তা তো বুজি।নীরাকে দেখতে এসে নিজের মানুষকে দেখে যাওয়ার আরকি।
আয়ান ভিতরে ঢুকে অরণী তুমি বলো নিজের মানুষকে না দেখলে কাকে দেখবো।তবে আমি সত্যিই নীরাকে দেখতে আসছি।নীরাদের ফ্যামিলির অনেকেই এবং তার কাজিনরা জিজ্ঞাস করতে লাগলো ইনি কে?নীরা তার কাজিনদের বিড়বিড় করে বললো,ওই যে বড় আপু দাঁড়িয়ে আছে ওনার হ্যাজবেন্ড।
নীরার কাজিন অবাক হয়ে কি বলিস দেখে তো মনে হচ্ছে এখনো বিয়েই করেনি।দেখলে তো যে কোনো মেয়েই ক্রাশ খাবে।
নীরা -তুই একটু চুপ কর।আপু শুনলে না তোর বারো টা বাজাবে।
আয়ান -নীরাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে কি বলো প্রাপ্তি।আসিফ ভাইয়া তো আজ চোখ ফিরাতেই পারবে না।কথাটা বলে শেষ করতেই আকাশ, নিহাদ আরো কয়েক জন মুরব্বি নীরার রুমে এসেছে বিয়ে পড়ানোর জন্য।
বিয়ে পড়িয়ে শেষ করে সবাই বাহিরে চলে গেলো।নিহাদ আয়ানকে প্রাপ্তির সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, ভাই! তুই একটা জিনিশ। বউকে তোর চোখের আড়াল হতেই দিবিনা।বউয়ের গন্ধ শুঁকে ঠিকি জায়গা মতো চলে এসেছিস।যাই আমার বউটা কোথায় একটু খুঁজে দেখি।বলেই নিহাদ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
বিয়ের সব আয়োজন শেষ করে আসিফদের বাড়িতে ফিরার ফালা।নীরাকে বাসা থেকে বের হতেই প্রাপ্তি দাঁড়িয়ে গেলো।
আসিফ প্রাপ্তিকে দাঁড়াতে দেখে, প্রাপ্তি! দাঁড়িয়ে পড়লি কেনো? আয়ানের জন্য নাকি? আয়ান তো একটু আগেই বাহিরে গেলো।
প্রাপ্তি- ভাইয়া! আমার ফোনটা মনে হয় নীরার রুমে রেখে আসছি। তোমরা এগিয়ে যাও আমি আসছি।
প্রাপ্তি নীরার রুমে গিয়ে ফোনটা নিয়ে আসতেই একটা ছেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে ফোনটা নিচে পড়ে গেলো।ছেলেটার মুখ দেখার আগেই ছেলেটা সরি বলে নিচের দিক থেকে ফোনটা নিয়ে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তির হাতে দিতেই প্রাপ্তি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে একটা চিৎকার দিয়ে হাঁপাতে শুরু করলো।আসিফ এগিয়ে এসে প্রাপ্তিকে ধরে, প্রাপ্তি! কি হয়েছে তোর? এই রকম চিৎকার দিয়েছিস কেনো। কেউ আয়ান কে ডাকো তো।
ছেলেটা ভয়ে পেয়ে কিছু না বলেই এইখান থেকে সরে গেলো।আসিফ প্রাপ্তির অবস্থা দেখে ছেলেটার দিকে খেয়াল করেনি।আয়ান এসে প্রাপ্তিকে নিজের কাছে নিয়ে ভাইয়া প্রাপ্তির কি হয়েছে?
আসিফ -আয়ান আমিও তো বুজতে পারছিনা।একটা ছেলেকে দেখেই এইরকম করছে (ছেলেটা কে দেখতে না পেয়ে)আরে এই ছেলেটা কোথায় গেলো? এখানেই তো ছিলো।
আয়ান -ভাইয়া আপনার বাড়িতে যান।আমি ওকে নিয়ে হাসপাতাল যাচ্ছি।বলেই প্রাপ্তিকে কোলে তুলে নিলো।
আসিফ -চলো আমিও যাচ্ছি।
আয়ান -না ভাইয়া আপনারা যান আমি ওকে ডাক্তার দেখিয়েই চলে আসছি।বেশীকিছু হলে আপনাদের জানাবো।
অভ্র এসে, আয়ান! চল আমি ও তোদের সাথে যাচ্ছি। সাবাই বাড়ির দিকে রওনা হলো।আয়ান প্রাপ্তি আর অভ্র হাসপাতালের দিকে গেলো।
প্রাপ্তি কোনো কথা বলছেনা চোখ দিয়ে গাল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে।তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো কথা বলতে পারছেনা।
ডাক্তার প্রাপ্তিকে ভালো করে দেখে একটা ইনজেকশন দিয়ে আয়ানকে বললো,আপাদত ওনাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছি।এখন ঘুমিয়ে পড়লে ছয় ঘন্টা পর ঘুম ভাঙবে। এর মাঝে আপনারা বসে অপেক্ষা করুন।
আয়ান -কিন্তু আপনি বললেন না তো ওর কি থেকে এই প্রবলেম টা হয়েছে।
ডাক্তার বসতে বসতে আয়ান কে বললো,আপনার কথা শুনে যতোটুকু বুজলাম,ওনি এমন কিছু দেখেছে যা দেখে ওনি সহ্য করতে পারেননি।আর আপনি বলেছেন একটা ছেলেকে দেখার পর এই অবস্থা,এর থেকে আমার যতোটুকু ধারনা ওই ছেলের সাথে ওনার এমন কোনো কানেক্ট আছে তাই ওই ছেলেকে দেখে ওনার পুরোনো কিছু মনে পড়ে গেছে।তাই ওই আঘাতটা সহ্য করতে না পেরেই এই অবস্থা হয়েছে।
ডাক্তারের কথা শুনেই আয়ান চুপ করে আছে।হয়তো বুজার চেষ্টা করছে ওই ছেলেটা কে হতে পারে।
আয়ান অভ্রকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে নিজে হাসপাতালে বসে অপেক্ষা করছে আর ভাবছে ছেলেটা কে? এই ছেলের সাথে প্রাপ্তির কি এমন সম্পর্ক হতে পারে?নাকি এই ছেলে প্রাপ্তির সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার সাথে কোনো যোগ আছে?
আমার কোনো কিছুই মাথায় ধরছেনা।প্রাপ্তি ঘুম থেকে উঠুক তার পর না হয় দেখা যাবে।
ছয় ঘন্টা পর প্রাপ্তির ঘুম ভাঙল কিন্তু কোনো কথা বলছেনা।আয়ানও কিছু জিজ্ঞাস করেনি।হাসপাতাল থেকে প্রাপ্তিকে বাড়ি নিয়ে আসল আয়ান, কাউকে কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে গেলো প্রাপ্তি।সারাটা পথ আসতে আসতে চুপ হয়ে ছিলো।শুধু চোখের পানি গুলোই ঝরেছে।আয়ানও একটা কথাও জিজ্ঞাস করেনি।আয়ান ড্রইংরুমে সোফায় এসে বসলো।নীরাকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত।আয়ানকে এসে বসতে দেখে আসিফ এসে, আয়ান! ডাক্তার কি বলেছে? প্রাপ্তির হঠাৎ করে কি হয়েছে?আয়ান কপালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে আছে।
আস্তে আস্তে সবাই এসে আয়ানের চারপাশে জড়ো হলো কিন্তু আয়ান খেয়াল করিনি।সুমি আয়ানের কাঁধে হাত দিতেই আয়ান চমকে উঠে সুমির দিকে তাকালো।
সুমি-প্রাপ্তি দেখেছি কাউকে কিছু না বলেই রুমে চলে গেলো।কি হয়েছে ওর? আসিফও তোমায় জিজ্ঞাস করছে কোনো আনসার দিচ্ছো না।
আয়ান সুমির থেকে চোখ ফিরিয়ে দেখে সবাই জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আসিফ -কি হলো আয়ান,কথা বলছো না কেনো?
আয়ান ভাবছে এইখানে কিছু বলা যাবেনা।সবার সামনে এইভাবে কিছু বললে আমার প্রাপ্তিকেই ছোটো করা হবে।(আসিফের দিকে তাকিয়ে)ভাইয়া!মায়ের রুমে চলুন। আপনার সাথে আমি আলাদা ভাবে কথা বলতে চাই।
আসিফ -ঠিক আছে চলো।
আসিফ আর আয়ান নিলিমা বেগমের রুমে এসে বসলো।
আয়ান অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে, ভাইয়া! আজ প্রাপ্তি যে ছেলেকে দেখে চিৎকার দিয়েছিলো আপনি ছেলেটাকে দেখেছেন?
আসিফ -প্রাপ্তির অবস্থা দেখে তখন তো খেয়াল করিনি।কিন্তু পরে দেখি ছেলেটা ওইখানে নেই।কিন্ত আয়ান! কেনো ওই ছেলেকে খুঁজতেছো?
আয়ান- ওই ছেলেকে প্রাপ্তি মনে হয় ছিনে।ওই ছেলের সাথে প্রাপ্তির এমন কোনো যোগ আছে যা দেখে প্রাপ্তির সহ্য হয়নি। আমার মনে হয় প্রাপ্তির সাথে যে ঘটনা ঘটেছিলো ওই ছেলের ওই ঘনার সাথে কোনো না কোনো যোগ আছে।আপনি এখন এই ব্যাপারে কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।আমি খবর নিয়ে দেখছি।
বলেই আয়ান রুম থেকে বেরিয়ে এলো প্রাপ্তির কাছে যাবে বলে।প্রাপ্তি রুমে গিয়ে দেখে পুরোটা রুম অন্ধকার হয়ে আছে।আয়ান লাইট ধরিয়ে দেখে প্রাপ্তি এক কোনায় গুটিসুটি মেরে বসে আছে।
আয়ানকে লাইট ধরাতে দেখে প্রাপ্তি চোখমুখ কুঁচকে আয়ানের দিকে তাকালো।
আয়ান এসে প্রাপ্তির পাশে বসলো।প্রাপ্তির এক হাতকে নিজের হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে শক্ত করে ধরে,আমি তোমাকে জিজ্ঞাস করবো না ছেলেটা কে? বলবোনা ছেলেটাকে দেখে তুমি কেনো চিৎকার দিয়েছো।শুধু এইটুকু বলবো ছেলেটাকে কি শাস্তি হলে তুমি খুশি হবে?কথাটা শুনে প্রাপ্তি নিজের টলমল করা দুটো চোখ নিয়ে আয়ানের চোখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
সারাটা পৃথিবী এক দিকে আর আমার কাছে তুমি আরেক দিকে।প্রাপ্তি তোমার অতীত তোমার সামনে আসবেই তাই বলে তুমি ভেঙে পড়বে? তুমি যতো ভেঙে পড়বে এই সমজের লোক গুলো তোমাকে দেখে মজা নিবে।কেউ তোমার ভালো চাইতে আসবে না। তারা চাইবে না তুমি এই সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁছো ।এই সমাজের সব লোক তোমাকে এক চোখে দেখবেনা।নিজের মনকে শক্ত করে এই সমাজে বাঁছতে শিখো।আমি তোমার পাশে আছি আর সারাজীবন থাকবোও। তোমার প্রতি আমার কখনো কোনো ভালবাসার কমতি হবেনা।কথা গুলো বলেই আয়ানের চোখে পানি টলমল করছে।কিন্তু প্রাপ্তির সামনে এই চোখের পানি গুলো আমায় যে লুকাতে হবে,তাই উঠে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। প্রাপ্তি হঠাৎ করে এসে আয়ানকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো তুমিই আমার জীবনের একমাত্র মানুষ যে আমাকে নিস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে।
চলবে,,,,