ধর্ষিতা বউ পর্ব-৩৬

0
678

#ধর্ষিতা_বউ
#রাবেয়া_সুলতানা

#৩৬

____নিহাদের কথা শুনে আয়ান অবাক হয়ে নিহাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে রেশীর দিকে তাকালো।

রেশী কিছু বলছেনা চুপ হয়ে নিছের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,আয়ান ভাইয়া কি আমায় ভুল বুজে দূরে ঠেলে দিবে? আমার সাথেই কেনো বার বার এইরকম হয়।নিহাদ ভাইয়ার সাথে আমাকে এইখানেই দেখা হতে হলো।এই পরিস্থিতি আমি কি ভাবে সামলিয়ে উঠবো?
আয়ান অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর,রেশী নিহাদ ভাইয়া কি বলছে? তোমরা কি আগে থেকেই দুজন দুজনকে চিনো?

রেশী কোনো কথা বলছে না।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।ঝিনুক নিহাদের দিকে তাকিয়ে, তুমি সরাসরি কথাটা কেনো বলছোনা?আচ্ছা অভ্রকে দেখছিনা ও কোথায়?
প্রাপ্তি এসে সবাইকে থমথমে থাকতে দেখে,কি হয়েছে সবাই এইভাবে আছো কেনো?
আয়ান -প্রাপ্তি! নিহাদ ভাইয়া রেশীর ব্যাপারে কিছু বলতে চাইছে।
অভ্র ফোনে কথা বলতে বলতে ড্রইংরুমে এসে সবাইকে দেখে, কি ব্যাপার সবাইকে কেমন যেনো দেখাচ্ছে। কি হয়েছে সবার?
ঝিনুক অভ্রর কথা শুনে,অভ্র তুমি যে তোমার ভাইয়া আর আমাকে না চিনার ভাণ করে থাকো সেই নিয়ে কথা বলছি।

আয়ান -কি বলছো এইসব আমি তো কিছুই বুজতেছিনা।প্লিজ তোমরা একটু বুজিয়ে বলবে সমস্যা টা কোন জায়গায়?

নিহাদ -অভ্র! সরি আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না।আসলে আয়ান! অভ্র হচ্ছে আমার কাজিন।আমার ছোটো কাকার ছেলে।আমার কাকা চাকরীর সূত্রে ঢাকায় থাকতো।আমাদের বাড়িতেও বেশী আসা যাওয়া করতো না।ইনফেক্ট আমার বিয়ের সময় কাকা আসতে পারিনি।পরে যখন কাকা আর কাকী আসার পর তোমাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম তখন অভ্র তাদের সাথে আসেনি।তাই তোমাদের সাথে অভ্র আর দেখা হয়নি।কিন্তু ঝিনুকের সাথে অভ্রর ভালো একটা রিলেশন।সেই অভ্র এইখানে আসার পর থেকে আমাদের না চিনার ভাণ করে আছে।
নিহাদের কথা গুলো জেনো সবার কাছে ঘোরের মতো লাগছে। সবাই শুধু নিহাদের কথা গুলোই শুনছে।
আয়ান নিরবতা ভেঙে নিহাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে অভ্রর দিকে তাকিয়ে, অভ্র! নিহাদ ভাইয়া কি বলছে?তুই কি সত্যি নিহাদ ভাইয়ার কাজিন? কিন্তু তুই তো কখনোই বলিসনি।

অভ্র-আয়ান আমি নিজেই জানতাম না নিহাদ ভাইয়া তোর বোনের জামাই।যেদিন আমি নিহাদ ভাইকে এই বাড়িতে দেখলাম সেই দিন তুই আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলি।আমি নিজেই অবাক হয়েছি নিহাদ ভাইয়াকে এইখানে দেখে।
কিন্তু আমি ভয়ে তোকে কিছু বলিনি।যদি তুই আমাকে ভুল বুজিস।

নিহাদ -হুম আমি তোর ব্যাপারটা বুজেছি।তাই আমিও তোকে কিছু বলিনি।

অভ্র নিহাদের কাজিন শুনে রেশী নিহাদের দিকে তাকিয়ে ভাবছে এই কি সেই ছেলে যার সাথে আমার বিয়ের হওয়ার কথা ছিলো।

আয়ান -আচ্ছা অভ্রর ব্যাপার টা না হয় বুজলাম কিন্তু রেশী কে কিভাবে চিনো? রেশী ও কি তোমার কাজিন হয় নাকি?

নিহাদ -(অট্র হাঁসি দিয়ে)আরে নাহ্। অভ্র এই কথাটা তুই বলবি না আমি বলবো।

অভ্র -ভাইয়া এইটা না হয় পরা বলা যাবে।থাকনা এখন এইসব কথা।

প্রাপ্তি -না! আমি এইটাও শুনতে চাই।নিহাদ ভাইয়া প্লিজ আপনি বলুন।

নিহাদ-রেশীর সাথে অভ্রর বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু রেশী বিয়ের দিন পালিয়ে যায়।কিন্তু কেনো সেইদিন রেশী পালিয়েছে এইটা সবার অজানা হয়ে রয়ে গেলো।
রেশী অভ্রর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।অভ্র রেশীর দিকে চোখ পড়তেই, সরি রেশী আসলে আমি এতো দিন চাইনি কথা গুলো কেউ জানুক।আর আমি এটাও জানি তুমি আমাকে চিনতে না।

আয়ান কিছু বলতে যাবে তখন আয়ানকে থামিয়ে আকাশ বললো,রেশী তুমি অভ্রকে বিয়েটা কেনো করলে না?
রেশী চুপ হয়ে নিছের দিকে তাকিয়ে আছে।প্রাপ্তি -(কড়া গলায়) রেশী! তুমি কথা বলছো না কেনো?প্লিজ তুমি আনসার দাও।

রেশী -(কাঁদোকাঁদো হয়ে) ভাবী! বিশ্বাস করো ওনি যে সেই ছেলে আমি জানতামই না।বিয়ের দিন সকালে আমার সৎ মা আর তার ভাই মিলে আমাকে ধমকিয়ে ছিলো, যে ছেলের সাথে আমাকে তারা বিয়ে দিচ্ছে ওই ছেলে নাকি ভালো না।আমার কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতেই নাকি ওই ছেলের কাছে আমাকে বিয়ে দিচ্ছে।
তখন আমাকে যখন সাজিয়ে রুমে নিয়ে আসলো তখন আমার কাজিন আমাকে বললো, রেশী তুই পালিয়ে যা, এই বিয়ে করলে তোর জীবন শেষ হয়ে যাবে।তোর এই মা তোর কখনোই ভালো চায়না।তুই যদি পালাতে চাস আমি তোকে হেল্প করবো।তাই সেইদিন ওর কথাতেই আমি পালিয়ে এসেছিলাম।প্রাপ্তি উঠে এসে রেশীকে জড়িয়ে ধরে প্লিজ তুই কান্না করিস না।নিহাদ ভাইয়া! এতে রেশীর ও কোনো দোষ দেখছিনা।
সুমি -আচ্ছা বুজলাম। তো নিহাদ ভাইয়া আপনি রেশীকে কোথায় দেখেছেন?

নিহাদ -রেশীকে যেদিন অভ্রর বাবা মা দেখতে গিয়েছিলো কাকা আমাকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে ছিলো।আর সে দিন অনেক প্রশ্ন আমি রেশীকে করেছিলাম।

আয়ান-ওকে! ওকে! এইবার সব বুজলাম।আমরা সবাই মিলে এখন আরেকটা বিয়েতে ইনজয় করতে পারি যদি সেটা অভ্র আর রেশী চায়।কি বলো সবাই।
কথাটা শুনে অভ্র অবাক হয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে, আয়ান তুই কি বলছিস?
বিয়ে!

আয়ান-হুম আমি ঠিকি বলছি।যদি তোরা চাস।

প্রাপ্তি -তুই কি বলিস রেশী? তুই রাজি তো?

রেশী -ভাবী তোমরা যা চাও এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।
সবাই খুশি হয়ে আলহামদুলিল্লাহ্‌ তাহলে তো আর কথায় নেই।

সিয়াম -যদি কথা গুলো আরো আগে হতো তাহলে তো দুটো বিয়ে একসাথেই দেওয়া যেতো।

আকাশ -কথাটা কিন্তু ঠিক বলছো।

আয়ান -এইদিকের সব কিছু মিটমাট হয়ে যাক।পরে এদের বিয়েটার আয়োজন শুরু করবো।

নিহাদ -যাক অভ্র সব কিছু তাহলে মিটমাট হয়ে গেছে।

আয়ানের ফোন আসতেই আয়ান উঠে চলে গেলো।
প্রাপ্তি রেশীকে ডেকে বললো, রেশী রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।ভাবী, আপু তোমরাও যাও।নীরাদের বাড়ি থেকে একটুপর মেহমান আসতে শুরু করবে।

সবাই রেডি হচ্ছে,আয়ান রুমে এসে প্রাপ্তিকে বসে থাকতে দেখে,কি হলো প্রাপ্তি তুমি বসে আছো কেনো?রেডি হবে না? ওইদিকের মেহমান আসতে শুরু করেছে।

প্রাপ্তি -(আস্তে করে)এইতো যাচ্ছি।তুমি রেডি হয়ে নাও।
আয়ান রেডি হয়ে ড্রেসিংটেবিলের সমনে চুল ঠিক করতে করতে প্রাপ্তি কেমন লাগছে আমায়?
প্রাপ্তি নিছের দিক থেকে মুখ উঠিয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।সেইদিন আয়ানের জন্য প্রাপ্তি এই শার্টটা নিয়েছিলো আয়ানকে সারপ্রাইজ দিবে বলে।কিন্তু আয়ানের গায়ে শার্টটা দেখে সে নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেলো। আয়ানকে অনেক সুন্দর লাগছে।প্রাপ্তি আস্তে আস্তে আয়ানের দিকে এগিয়ে গিয়ে তোমাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।

আয়ান-হ্যাঁ সুন্দর তো লাগতেই হবে শার্টটা যে আমার বউ পছন্দ করে আমার জন্য এনেছে।অবশ্য আজ নীরাদের বাড়ি থেকে অনেক মেয়ে আসতেছে তাদেরও তো পছন্দ হতে হবে তাই না?
কথাটা বলতেই প্রাপ্তি আয়ানকে নিজের কাছে টেনে এনে, যে মেয়ে তাকাবে না সে মেয়ে আগে জানতে হবে আয়ান চৌধুরী কার হ্যাজবেন্ড।আয়ান ও সুযোগ পেয়ে প্রাপ্তিকে কোমর ধরে আরো কাছে টেনে এনে, তাই! কিন্তু আমার বউকে ছাড়া যে আমি কাউকেই ভাবতেই পারবোনা।
সুমি এসে দরজায় দাঁড়িয়ে, এতো রোমান্টিকতা দেখে আমি ইমপ্রেস হয়ে গেছি।যদি আমার হাতে নোবেল প্রাইজ দেওয়ার দায়িত্ব থাকতো আমি তোমাদের নামটাই নিতাম।

আয়ান প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে, এই জন্যই তুমি সে দায়িত্বে নেই।তারাও বুজে কাকে কি দায়িত্ব দিবে।
প্রাপ্তি তাদের কথা শুনে মুখ টিপেটিপে হাঁসছে।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here