#ধর্ষিতা_বউ #রাবেয়া_সুলতানা #৪৬ শেষ পর্ব ____প্রাপ্তি চোখ মুখ মুছে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে আয়ান তার সামনে বসে আছে।আয়ানকে দেখেই জড়িয়ে ধরে আয়ানের বুকে মুখ লুকিয়ে জোরে কাঁদতে কাঁদতে, আমি তোমাকে ঠকায়নি। তুমি তো আমার সবি জানো।আমি তো বিয়ের দিনই তোমাকে সব বলছি বলো।আমি কি তোমার কাছে কিছু লুকাইছি বলো? আয়ান কথা গুলো শুনে, কার জন্য কাঁদতেছো? কেনো তুমি ভয় পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছো?কাকে ভয় পেয়ে তুমি সবার আড়াল হয়ে গেলে। প্রাপ্তি -ও এইখানেও এসে গেছে।ও আমাকে কখনো সুখী হতে দিবেনা। তুমি জানোনা ও কতটা খারাপ ছেলে। ওর বাবার টাকা আছে বলেই যা ইচ্ছা তাই করে বেড়ায়। আমার জন্য এখন তোমাদেরও অসম্মান হবে। আয়ান-প্রাপ্তি! ও আয়ান কে জানেনা আয়ান তার প্রাপ্তির জন্য কি না করতে পারে।এর শেষ আমি আজকেই করে ছাড়বো।প্রাপ্তি তুমি কেনো এতো ভয় পাচ্ছো?এই ভয়কে জয় করেই তোমাকে সোসাইটিতে থাকতে হবে । তুমি যত ভয় পেয়ে পিছনে যাবে।তারা তত তোমাকে ভয় দেখিয়ে সামনে এগিয়ে আসবে। নিজেকে শক্ত করে তাদের সামনে এগিয়ে যাও দেখবে তারা তোমাকে ভয় পেয়ে পিছনে যাবে । তোমাকে আমি কতবার বলবো আমি সারাজীবন থাকবোনা তোমাকে আলগে রাখার জন্য। নিজেকে শক্ত করে পরিস্থিতি সামলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করো।তোমাকে দেখিয়ে দিতে হবে এই সমাজের লোক গুলোকে যাদের ভয়ে নিজেকে আড়ালে রাখতে চাইছো।কথা গুলো প্রাপ্তিকে বলে আয়ান প্রাপ্তি কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে,নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে প্রাপ্তি অজ্ঞান হয়ে আছে। আয়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে প্রাপ্তিকে খাটের উপরে উঠিয়ে শুইয়ে দিলো।আসিফ আর অভ্র এসে প্রাপ্তিকে দেখে, আসিফ -আয়ান, ওকে তো ডাক্তার দেখাতে হবে। কিন্তু এতো গেস্ট বাড়িতে, হসপিটালে নিবে কি করে? আয়ান -এই নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবেনা ভাইয়া! নিচে ডাক্তার আংকেল আসছেনা ওনাকে ডেকে আনলেই হবে।কিন্তু আপনারা সায়মন কে কোথায় রেখেছেন? অভ্র -চিন্তা করিস না! ছাদের চিলেকোঠার ঘরটাতে রেখে তালা মেরে এসেছি।গেস্টরা চলে যাক তারপর ওর ব্যবস্থা করবো। আয়ান -তাহলে তোমার প্রাপ্তির পাশে বসো আমি আংকেলকে ডেকে আনছি। আয়ান নিচে এসে দাঁড়াতেই আবিদ চৌধুরী আয়ানকে দেখে কি ব্যাপার আয়ান তুমি আর প্রাপ্তি কোথায় গেছো? প্রাপ্তি কই ওকে ডাকো।তোমাদের জন্য পার্টি আর তোমরাই দূরে সরে থাকতেছো। আয়ান -আব্বু ও আসছে।আকাশের কাছে গিয়ে আয়ান বললো ভাইয়া আমি এইদিক টা সামলিয়ে নিচ্ছি তুই ডাক্তার আংকেল কে নিয়ে আমার রুমে যা।প্রাপ্তি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আকাশ -মানে? কি হয়েছে ওর? আয়ান -তুই উপরে গেলেই বুঝতে পারবি।আমিই যেতাম কিন্তু আব্বু আমাকে না দেখলে সমস্যা করতে পারে । জামিল সাহেব ছেলেকে না দেখতে পেয়ে, সায়মন কোথায় গেলো আবার, এই ছেলে আমার মানসম্মান নিয়ে আবার জানি টানাটানি না করে। আবিদ চৌধুরী -কিরে কিছু ভাবছিস নাকি? জামিল সাহেব -সায়মন কোথায় গেলো? ওকে দেখছি না তাই ভাবছি। আবিদ চৌধুরী -কোথায় আর যাবে দেখ কোথাও এনজয় করছে। প্রাপ্তিকে ডাক্তার দেখে ভয়ের কিছু নেই।চোখে মুখে একটু পানি ছিটকে দাও ঠিক হয়ে যাবে।। ডাক্তার প্রাপ্তিকে দেখে নিচে নেমে এসে আয়ানকে গম্ভীর হয়ে থাকতে দেখে, আয়ান চিন্তা করোনা উপরে গিয়ে দেখ প্রাপ্তির হয়তো জ্ঞান ফিরেছে।আয়ান মুচকি হেঁসে সিঁড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখে আসিফ প্রাপ্তিকে নিয়ে নিচে নামছে।আয়ান কাছে গিয়ে ভাইয়া ওকে নামিয়ে আনলেন কেনো? আসিফ – কি করবো জ্ঞান ফেরার পর থেকে তোমাকে খুঁজচ্ছে কিছুতেই স্থির থাকছেনা। তাই ভাবলাম সবার সামনে থাকলে ভালোই থাকবে।প্রাপ্তি আয়ানের দিকে অসহায় ভাবে মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে।। আয়ান আর কিছু না বলে প্রাপ্তিকে নিজের চোখে চোখেই রাখলো।রেশীর বিয়ে তারিখ ফাইনাল করে পার্টি শেষ করলো।আয়ান প্রাপ্তিকে রুমে নিয়ে, যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।আমি অভ্রর সাথে কথা বলে আসছি।পাশের রুমে অভ্রর কাছে এসে আচ্ছা অভ্র জামিল সাহেব ছেলের খোঁজ না করেই চলে গেলো কিন্তু কেনো? আসিফ এসে দরজায় দাঁড়িয়ে আমি বলছি।ছেলের খোঁজ করেছে।পরে ভেবেছে ছেলে ওনাকে না বলেই চলে গেছে। আয়ান -ভালোই” ছেলেকে কাল থেকে আর কষ্ট করে খুঁজতে হবেনা।প্রতিদিন জেলে গিয়ে দেখা করে আসতে পারবে।এতো সহজে ওকে হাতে পাবো এইটা আমি ভাবতেই পারিনি।ওকে এতোটা কঠোর শান্তির ব্যবস্থা করবো যেন কোনো ছেলে ওর কথা মনে হলে মেয়েদের দিকে তাকাতে হাজার বার ভাববে।। আসিফ আয়ানের কথা গুলো শুনে আয়ানকে এসে জড়িয়ে ধরে তোমার ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবোনা। প্রতিটি প্রাপ্তি যেন তোমার মতো একজন আয়ান পায় তাহলে এই সমাজের মেয়েদের আর কোনো অবহেলা হবেনা। আয়ান আসিফের কথা শুনে মুচকি হেঁসে ভাইয়া আমিতো প্রাপ্তির জীবনে অনেক পরে এসেছি। আপনিই তো আগে ওকে সামলিয়েছেন।আপনার মতো ভাই পাশে থাকলে সব বোনই হাজার টা কষ্ট সহ্য করে নিতে পারবে।(অভ্রর দিকে তাকিয়ে) আমার পাশে থাকার জন্য তোকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোটো করবো না।তবে তোর মতো এইরকম বন্ধু সারাজীবন আমার পাশে চাই। অভ্র একটু মজা করে সাবধানে কথা বল এখন আমি তোর ছোটো বোনের স্বামী বলেই হাঁসা শুরু করলো। আয়ান রুমে এসে দেখে প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে এসে একপাশ হয়ে শুয়ে আছে।আয়ান এসে পাশে শুয়ে জড়িয়ে ধরে প্রাপ্তির কাঁধে নিজের মুখটা গুজে দিয়ে, আমার লক্ষ্মী বউটা কি আমার আরও কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরবে?প্রাপ্তি চুপ হয়ে আছে চোখ বন্ধ করে। আয়ান -আমি জানি আমার পাগলি এখনো ঘুমায়নি।কারণ আমি আমার পাগলি নিশ্বাসের শব্দ শুনেই বুজে গেছি। প্রাপ্তি আয়ানের স্পর্শ পেয়ে নিশ্বাসের শব্দ ভারী হয়ে আসছে।তবুও ইচ্ছে করে চুপ করে আছে। আয়ান প্রাপ্তির মুখের উপরে আসা চুল গুলো সরিয়ে দিতে দিতে আবার বললো, আমি কি ঘুমিয়ে যাবো? ঠিক আছে আমার পাগলি যখন ঠিক করেছে সে আমাকে ভালোবাসবেনা তাহলে ওকে আমি ঘুমিয়ে পড়ছি। আয়ান প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে অন্য দিকে ফিরে শুতে যাবে তখনি প্রাপ্তি আয়ানের দিকে ফিরে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে আয়ানের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে নিলো। আয়ান ও প্রাপ্তিকে আরও শক্ত করে ধরে আস্তে আস্তে প্রাপ্তির ভালোবাসায় নিজেকে হারাতে লাগলো।। আয়ান খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।এইদিকে প্রাপ্তি মা হতে চলছে অন্য দিকে দুইটা অফিসের দায়িত্ব সামলাতে হয়।আবিদ চৌধুরী নিজের ব্যবসায়ীক সব দায়িত্ব ছেলেদের কাঁধে দিয়ে অবসর সময় কাটাচ্ছেন।যে অফিসে এমডি হিসেবে জয়েন করেছিলো সেখানেই কাজ করতে হচ্ছে।যতই কাজ থাকুক না কেনো মন পড়ে থাকে তার পাগলির কাছেই।অফিস শেষ করে এসে আবার তার পাগলির যত্ন আতি শুরু হয়।সারাটা বাড়ির সবাই প্রাপ্তিকে নিয়েই মেতে থাকে।চৌধুরী বাড়ির নতুন অতিথি আসছে। এইভাবেই চলছে প্রাপ্তি আর আয়ানের সংসার। কয়েক মাস পর প্রাপ্তির ডেলিভারি সময় হয়ে গেছে।আয়ান অফিসে যাবেনা বলে ড্রইংরুমে বসে সুমির সাথে বসে বকবক করছে।প্রাপ্তি আস্তে আস্তে নিচে নেমে এসে, কি ব্যাপার তুমি অফিসে যাবেনা? আয়ান-না আজ যাবো না।তোমাকে নিয়ে হসপিটাল যাবো । প্রাপ্তি সোফায় বসতে বসতে প্লিজ আমি একদম ঠিক আছি।তুমি অফিসে যাও কিছু হলে বাবা আর ভাবী তো আছেই।ওরা তোমাকে ফোন দিবে।আর কাল থেকে তোমার লম্বা ছুটি নিয়ে নিবে অফিস থেকে। সুমি-আয়ান! আজ যাও।কাল থেকে আর যেতে হবেনা। তোমার ভাইয়া সব সামলে নিবে। আয়ানের ইচ্ছা করছেনা যেতে কিন্তু প্রাপ্তির কোথায় উঠে গিয়ে অফিসে গেলো।অফিসে গিয়ে একটু পর পর ফোন দিয়ে প্রাপ্তির খবর নিচ্ছে। বিকেল থেকে অবস্থা বেশি ভালো না।প্রচন্ড ব্যাথা উঠেছে প্রাপ্তির।সুমি আর আবিদ চৌধুরী তাড়াতাড়ি করে হসপিটালে নিয়ে গেলো। সবাই অনেক চিন্তার মাঝেও অনেক খুশি তাদের পরিবারে নতুন সদস্য আসছে।আকাশ আর আয়ানকে খবর দেওয়া হয়েছে।অভ্র আর রেশীও আসছে প্রাপ্তিকে দেখার জন্য । আকাশ হসপিটালে এসেই সুমি! সুমি! প্রাপ্তির এখন কি অবস্থা?সব কিছু ঠিক আছে? সুমি -একদম ঠিক আছে।ডাক্তারা প্রাপ্তিকে নিয়ে গেছে আর আমাদের অপেক্ষা করতে বলেছে । আয়ান কোথায় ও এখনো এলোনা? আকাশ -ও আসছে! চিন্তা করোনা। প্রাপ্তির প্রচন্ড ব্যাথা কিন্তু আয়ানের জন্য মন কেনন করছে । তার চোখ দুটো বার বার আয়ানকে খুঁজছে। একটু পর সিস্টার এসে প্রাপ্তির বাবুকে সুমির কোলে দিয়ে গেছে। আবিদ চৌধুরী -সিস্টার আমার মেয়ে কেমন আছে? সিস্টার -ওনি সুস্থ আছেন।কিন্তু ওনি ওনার হ্যাজবেন্ডকে খুঁজছেন। আবিদ চৌধুরী মনে মনে ভাবছে সত্যি তো আয়ান এখনো এলো না কেনো।সবাই নতুন বেবি কে নিয়ে খুব খুশি। সবাই কোলে নিবে বলে কাড়াকাড়ি করছে। এইদিকে প্রাপ্তির বাবা মা আসিফরাও চলে এসেছে।আবিদ চৌধুরী চিন্তিত হয়ে আয়ানের অফিসে ফোন দিয়ে জেনেছে আয়ান ফোন পাওয়ার পরেই অফিস থেকে বের হয়ে গেছে।আবিদ চৌধুরী আকাশকে ডেকে এনে, আকাশ! আয়ান অফিস থেকে অনেক আগেই বের হয়েছে।প্রাপ্তির এই অবস্থায় আয়ান কোথাও যাবেও না।কিন্তু আয়ান তো এখনো এলোনা। আকাশ -আব্বু সত্যিই আয়ান তাহলে কোথায়? এইদিকে প্রাপ্তি তো আয়ানকে খুঁজছে। হঠাৎই অভ্রর ফোন বাজতেই দেখে তাদের অফিসের কলিং সাইদ ফোন দিয়েছে।অভ্র ফোন রিসিভ করে, হ্যাঁ সাইদ কিছু বলবে? সাইদ -স্যার আপনি কোথায়? অভ্র -আমি হসপিটাল তোমদের আয়ান স্যারের বেবি হচ্ছে আমি সেইখানেই। কিন্তু কেনো কিছু বলবে? কথাটা শুনে সাইদ চুপ করে খানিকক্ষণ পরে বললো, স্যার! আয়ান স্যারের গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে।অফিস থেকে একটু দূরেই। কিন্তু অনেকে বলাবলি করছে গাড়িতে যিনি ড্রাইভিং করছিলেন তিনি নাকি বেঁচে নাই। সাইদের কথাটা শুনে চেঁচিয়ে, হোয়াট! কি বলছ তুমি কথাটা বলেই ফোন টা হাত থেকে পড়ে গেলো। আসিফ ফোন পড়ে যেতে দেখে কি হয়েছে অভ্র? অভ্র কথাটা বলতে যাবে তখনি দেখে আয়ান দৌড়ে এসে, প্রাপ্তি কোথায়? অভ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে আয়া,,,,,,ন!দৌড়ে এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে তুই ঠিক আছিস তো? আয়ান – আমি একদম ঠিক আছি। আবিদ চৌধুরী -তাহলে তুই এতক্ষণ কোথায় ছিলি? আয়ান -আব্বু আর বলোনা।আমার গাড়ি টা কে বা কারা নিয়ে গেছে। তাই থানায় গিয়ে কিছু কাজ ছিলো সেই গুলো করে আসলাম।আর আমি জানি তোমারা সবাই প্রাপ্তির পাশে আছো।অভ্র বুজে গেছে গাড়ি যারা নিয়েছে তারাই এক্সিডেন্ট করেছে। অরণী বেবি নিয়ে এসে আয়ান ভাইয়া! আপনার মেয়েকে কোলে নিবেননা।আপনার ঘরেযে পরী এসেছে। আয়ান বেবির কপালে চুমু দিয়ে আমি আগে আমার বড় পরীকে দেখে আসি।আয়ান প্রাপ্তির কেবিনে ঢুকেই প্রাপ্তির পাশে এসে বসেছে।আমার পরীর আম্মু কেমন আছে? প্রাপ্তি চোখ খুলে আয়ানকে দেখতে পেয়ে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।আয়ান প্রাপ্তির চোখের পানি মুছে সরি পাগলি লেট করার জন্য। প্রাপ্তি আয়ানের হাতটা গালের সাথে শক্ত করে ধরে, আমি ভাবেছিলাম তোমাকে হয়তো আমার আর দেখা হবেনা। আয়ান প্রাপ্তির মুখে আঙুল দিয়ে ধুর পাগলি আমি তোমাকে ছেড়ে মরে গিয়ে শান্তি পাবোনা।কথাটা বলে প্রাপ্তির ঠোঁটে একটা চুমু দিয়ে I love u পরীর আম্মু । সমাপ্ত