গল্প —– ধর্ষিতা_বউ
পর্ব —- ৫
লেখক —- মাহমুদ
**********************************************
সায়ান প্রায় দেড় ঘন্টার মতো প্রাপ্তিকে খুজে বেড়ালো।কিন্তু কোথাও পেলো না।ফোন দিয়েই যাচ্ছিল তাও বারবার বন্ধ বলে যাচ্ছে।হঠাৎ করেই শফিক কল দিলো।বলল -ভাইজান ভাবি এই ১০ মিনিট আগেই বাসায় আইসে।
সায়ান ফোন রেখে বাসায় আসলো।বাসায় ঢুকে দেখে প্রাপ্তি রান্না ঘরে তরকারি গরম করছে।তখন রাত ৮ টা বাজে।সায়ান সেখানে গিয়ে প্রাপ্তিকে নিজের দিকে ঘুরিয়েই প্রাপ্তির গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো।বলল,
-কোথায় ছিলি তুই এত সময়??কার কাছে গিয়েছিলি?
প্রাপ্তি চুপ করে গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে ছিলো।কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলো না।সায়ান আবার বলল,
-কি হয়েছে?কথা কি কানে যায়না তোর??আমি কিছু জানতে চেয়েছি?কোথায় ছিলি তুই এত সময়?কার সাথে ছিলি?সত্যি করে বল নাহলে আজকেই আমি তোকে মেরে ফেলবো।কোন প্রেমিকের সাথে ছিলি বল?
-ছিঃ।আপনার মানসিকতা এতটাই নোংরা!!আমার ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে।
-হ্যাঁ আমার মানসিকতা নোংরা।বল তুই কোথায় ছিলি?
প্রাপ্তি রাগে ফোপাচ্ছিলো।সায়ান আবার বলল,
-তুই আমার প্রশ্নের উত্তর দিবি নাকি আমি আরো মারবো তোকে।
-আস্তে কথা বলুন।
-আস্তে কেনো বলবো?তোর কথা শুনতে হবে নাকি আমাকে?
পেছন থেকে কে যেনো বলে উঠলো,
-কিরে প্রাপ্তি কি হয়েছে?
সায়ান পেছনে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে।সায়ান মেয়েটাকে চিনতে পেরেই বলে উঠলো
-মোনা!!!!তুই এখানে??
-হ্যাঁ কিন্তু তুই এখানে কি করিস?(মোনা)
-আমার বাড়িতে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করিস আমি এখানে কি করি!
-মানে এটা তোর বাড়ি?তার মানে প্রাপ্তি তোর ওয়াইফ?ওহ মাই গড!!(মোনা)
-হ্যাঁ।
প্রাপ্তি অবাক হয়ে গেলো ওদের কথা বলা দেখে।বুঝতে পারলো ওরা খুব কাছে বা পরিচিত ককেউ।প্রাপ্তি মোনা কে জিজ্ঞেস করলো
-আপু তুমি ওকে কিভাবে চিনো?
-আরে চিনবো না!!ভার্সিটির কতো মেয়ের সাথে যে এই ছেলে প্রেমের অভিনয় করেছে।কত মেয়েকে কাঁদিয়েছে ।ওকে তো সবাই এক নামেই চিনে প্রেমিক পুরুষ।
-কি বলো!!
-হ্যাঁ।ঠিকই বলেছি।আজকে রাতটা যেহেতু আছি সো সব গল্প তোমাকে শুনাবো।তিনজন মিলে গল্প করবো।
সায়ান মোনাকে জিজ্ঞেস করলো
-কিন্তু তুই প্রাপ্তিকে কিভাবে চিনিস?
-ওকে আবার না চেনার? কলেজ এর বিএনসিসি ক্যাম্পে ওর সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো।খুব ভালো মনের একটা মেয়ে প্রাপ্তি।আর এতো বেশি পরিমানে হেল্পফুল যে কি বলবো।তোর তো ভাগ্য ভালো যে ওর মতো একটা মেয়ে পেয়েছিস।সেদিন মোনা না থাকলে হয়তো এখন আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম না।ওর উসিলায় আমি আজকে বেচে আছি।
-কি বলিস না বলিস?
-হ্যাঁ রে দোস্ত।সেদিন ক্যাম্পে ও আমাকে অনেক বড় একটা এক্সিডেন্ট এর হাত থেকে রক্ষা করেছিলো।কেউ এগিয়ে আসে নি জানিস।ও গেছিলো নিজের লাইফ রিস্কে রেখে আমাকে বাঁচাতে। সেদিন থেকে ও আমার ছোট বোন।ওর উসিলায় আমি আজ জীবিত।
-আপু তুমি হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। খাবার রেডি।
হঠাৎ করেই মোনার চোখ পড়লো প্রাপ্তির গালে।
-তোমার গালে কি হয়েছে প্রাপ্তি?লাল হয়ে আছে কেনো?
-আরে কিছু না আপু।
-কিছু না মানে??আঙুলের দাগের মতো লাগছে।পুরো ৪ টা আঙুল বসে আছে মনে হচ্ছে যেনো।স্পষ্ট ভাবেই বোঝা যাচ্ছে।
-আরে আমার আঙুল এর দাগ।আর কি।মশা কামড় দিছিলো তাই চুলকাচ্ছিলাম।হয়তো এই জন্য দাগ পড়ে গেছে।
-ওহ আচ্ছা।
-হুম।এখন যাও ফ্রেশ হিয়ে আসো।আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।আপনিও ফ্রেশ হয়ে আসেন(সায়ানের দিকে তাকিয়ে)
সবাই রাতের খাবার খেয়ে নিলো।তারপর ড্রইং রকমে বসলো আড্ডা দিতে।মোনা ভারি মজার মানুষ।সায়ান বলল
-তো এখন কি করছিস তুই?বিয়ে শাদি করলি নাকি করবি না?
-আরে কি যে বলিস না।বিয়ে অলরেডি ঠিক হয়ে গেছে।আর ৫ মাস পরেই আমার ডাক্তারি কোর্স শেষ হলে বিয়ের ডেট ফাইনাল হবে।
-বাহ বেশ তো!তারমানে সেটেল হয়ে যাচ্ছিস।
-হ্যাঁ ইনশাআল্লাহ।
-তো হঠাৎ প্রাপ্তির কাছে কি মনে করে?
-আরে আর বলিস না।এখান থেকে আমরা অনে আগেই শিফট হয়ে গেছি রাজশাহী তে।
-রাজশাহী তে কেনো শিফট হইলি?
-শখে তো আর হইনি।ওইখানে বাবার জব ট্রান্সফার হয়েছে।আমি আজকেই ঢাকা আসছি।একটা কাজ ছিলো তাই দুই দিন থাকবো। খালামনির বাসায় যাওয়ার কথা ছিলো।গিয়ে দেখি তালা বাসায়।কল দিলাম খালামনিকে ফোন বন্ধ।আন্দাজে কই যাই এই সময়ে বল।প্রাপ্তির সাথে দেখা হওয়ার পর কতক্ষন রেস্টুরেন্ট এ আড্ডা দিলাম জোর করে নিয়ে গেছি।তোর চিন্তায় তো তোর বউ যেতেই চায়নি।
-হু।বুঝতে হবে মানুষটা কে।
-হ।তোর মতো ছেলেরাই লক্ষী বউ পায়।
-আমার মত ছেলেরা মানে।কি বলতে চাস তুই?দাড়া অনেকদিন তোকে ডোজ দেওয়া হয়না।
-এই একদম মারবি না আমকে।আমাকে মারলে কি তোর বউয়ের উপর থেকে উসুল করবো।
প্রাপ্তি এই কথা শুনে মনে মনে বলছে -আমাকে মারলেই বা কি।তাতে তো ওর কিছু আসবে যাবে না।ও তো আমাক। ভালোই বাসে না।
সায়ান বলল
-তুই ওকে মারতে পারবি?এতো আদরের বোন না বললি?
-আসলেই পারবোনা রে।
-তাইলে আমার মাইর খা।
-সায়ান ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।
প্রাপ্তি বলে উঠলো,
-এমন করছেন কেনো আপুর সাথে।
-হ্যাঁ প্রাপ্তি তুমিই আমাকে বাচাও ওই ফাজিলটার হাত থেকে।(মোনা)
-আচ্ছা যাহ তোরে মাফ কইরা দিলাম।আগে তো কম মাইর খাইতি না আমার হাতে।(সায়ান)
-হ এই জন্য আমার মাথায় মারবি তুই সবসময়!!হারামি।
দুইজনে অনেক গল্প করছিলো।প্রাপ্তি বসে বসে শুনছিলো। কিচ্ছুক্ষন পরে মোনা বলল
-প্রাপ্তি কিছু বলছো না যে?
-কি বলবো!তোমাদের মাঝে।
-তাহলে শুনো।বলতে হবে না।সায়ানের কর্মকান্ড শুনাবো তোমাকে।
তারপর মোনা সায়ানকে বলল,
-কিরে বিয়ে করে তোর পুরনো অভ্যেস গুলো গেছে নাকি এখনো মেয়েদের নেশায় ডুবে থাকিস।
কথাটা প্রাপ্তির বুকে চিন করে উঠলো।মনে মনে ভাবতে লাগলো ওরা সবাই জানে সায়ান কেমন!!সায়ান নির্ভয়ে আর নির্দিধায় বলল
-হু বিয়ের পরেও ওসব ত্যাগ করতে পারিনি।কিন্তু ইদানিং ওসব ছেড়ে দিয়েছি।ঘরে এমন বউ রেখে অন্য মেয়েদেরকে নিয়ে মেতে থাকতাম।কিন্তু এখন আর থাকি না রে।
প্রাপ্তি অবাক হয়ে সায়ানের দিকে তাকিয়ে ছিলো।ও সায়ানের প্রতি খুব রেগে আছে।কথা বলছিলো না সায়ানের সাথে।মোনা বলল
-যাক তাহলে তো ভালোই।শুন ও অনেক ভালো একটা মেয়ে।ওকে আমি ২ বছর ধরে জানি।ওর মতো মেয়ে পাওয়া আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার দোস্ত।আর তুই ওর মত একটা মেয়ে পেয়েছিস।ওকে কখনো কষ্ট দিস না।ভালোবেসে আগলে রাখিস।
-হু রাখবো রাখবো!এখন আবার আগের মতো এতো জ্ঞান দেওয়া শুরু করিস না।
-ভালো কথা তো তোর কোনো কালেই ভালো লাগে নাই।এখনো লাগবে না।হারামি।
-মোনা এখন কিন্তু ঠিকই মাইর খাবি।
-হইছে চুপ থাক।
-আচ্ছা ঠিক আছে।রাতের ১১:৩০ বাজে আমার সকালে অফিস আছে।তোরা গল্প করতে থাক।আমি ঘুমাতে যাই।
-হ যা।আমি তোর সব কেলোর কীর্তি প্রাপ্তিকে শুনাবো।
-আচ্ছা শুনা।সমস্যা নাই।আমি গেলাম।
তারপর প্রাপ্তি আর মোনা আরো অনেক্ষন গল্প করলো।মোনা প্রাপ্তিকে বললো,
-সায়ান মেয়েদের কে নিয়ে ডুবে থাকলেও ওর মনটা খুব ভালো।
-হ্যাঁ আপু।
-ও তোমার সাথে ঠিকভাবে আচরন করে তো?
-হ্যাঁ।অনেক ভালোবাসে আমাকে।
-ওকে একটু ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখো।দেখবা ও আর অন্য কোনো মেয়েদের দিকে চোখ তুলেও তাকাবে না।তুমি তো আল্লাহ্র রহমতে কোনোদিক থেকে কম সুন্দর না।
-হ্যাঁ আপু।দোয়া করো যেনো ওকে আমার করে রাখতে পারি।
-অনেক রাত হয়ে গেছে প্রাপ্তি।এখন ঘুমাও।আমিও যাই ঘুমাতে।
প্রাপ্তি আগেই গেস্ট রুম গুছিয়ে রেখেছিলো মোনার জন্য।মোনা রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।আর প্রাপ্তি ড্রইং রুমে সোফায় শুয়ে পড়লো।
প্রায় ১:২৫/১:২৫ এর দিকে সায়ান ড্রইং রুমে আসলো। দেখে প্রাপ্তি গুটিসুটি হয়ে সোফায় ঘুমোচ্ছে।সায়ান প্রাপ্তর কাধে আলতো ভাবে হাত দিয়ে ডাক দিলো,
-প্রাপ্তি…এই প্রাপ্তি…প্রাপ্তি!
প্রাপ্তি টের পেয়েই এক লাফে উঠে গেলো!!অস্থির হয়ে বলে যাচ্ছে,
-কি হলো?কিছু লাগবে আপনার?অনেকবার ডেকেছেন তাইনা?মাফ করবেন আমি শুনতে পাইনি।আমি সত্যি সারাদিন ঘুমাই না।একটু আগেই….
সায়ান প্রাপ্তির মুখে আঙুল দিয়ে ওর মুখোমুখি হয়ে বসলো। বলল
-চুপ।একদম চুপ।আর একটি কথাও বলবি না।
প্রাপ্তি চুপ করে গেলো।সায়ান আবার বলল
-আজকে থেকে তুই আর এখানে ঘুমাবি না।আমার রুমে ঘুমাবি।তুই রুমে আয়।আমি যাচ্ছি।
বলেই সায়ান রুমের দিকে চলে গেলো।প্রাপ্তি সোফায় থাকা কুশন আর কাথা গুছিয়ে রুমের দিকে যাচ্ছিলো গুটি গুটি পায়ে। প্রাপ্তির ভীষণ ভয় করছিলো। ভাবছিলো,সায়ান এখন আবার ওকে বৈধভাবে ধর্ষণ করবে।কিন্তু আগের মতোই ওর কিছু করার থাকবে না।
পার্ট ৬ এর অপেক্ষায়………