গল্প —– ধর্ষিতা_বউ
৬ষ্ঠ পর্ব
লেখক —– মাহমুদ
*****************************************
প্রাপ্তি এক পা এক পা করে এগুচ্ছে আর ওর ভয়টা ততই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।আগে তো কখনো এমন মনে হয়নি।হয়তো কালকের চেঞ্জ দেখে আবার আগের মতো হয়ে যাওয়ার কারনেই এমন লাগছে।
প্রাপ্তি রুমে ঢুকে দেখে সায়ান খাটের এক পাশে শুয়ে আছে।প্রাপ্তিকে আসতে দেখে বলল,
-ওপাশে শুয়ে পড়।
প্রাপ্তি শুয়ে পড়লো!কিছুক্ষন দুজনেই চুপ করে শুয়ে ছিলো দুই দিকে ফিরে।তারপর সায়ান প্রাপ্তির দিকে ফিরে বলল,
-প্রাপ্তি….ঘুমিয়ে গেলি?
-না এখনো ঘুমাইনি।
-ওহ আচ্ছা।আচ্ছা শুন আজ থেকে তুই এখানে ঘুমাবি।আমার সাথে।
-আচ্ছা। ঠিক আছে।
-এইদিকে ফিরে তাকাবি একটু?
প্রাপ্তি শোয়া থেকে উঠে বসলো সায়ানের দিকে ফিরে।সায়ানও উঠে বসলো।দুইজন পাশাপাশি একটু দুরত্ব বজায় রেখে বসলো।সায়ান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে দেখে ওর বাম গালে সায়ানের চড়ের দাগটা স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে।ওর খুব খারাপ লাগছিলো তাই প্রাপ্তিকে বলল,
-তুই খুব ব্যথা পেয়েছিস তাইনা প্রাপ্তি?
-কিসের ব্যথা?
-এইযে থাপ্পড় দিলাম!
-নাহ।এই ব্যথা আমার মনের ব্যথা থেকে কিছুই না।অতি নগণ্য তুচ্ছ এটা।
-মানে?
-মানে কিছু না।অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পড়ুন।
-না আমি ঘুমাবো না আজকে।
-কেনো?কি করবেন তাহলে?
-তোমার সাথে কথা বলবো।
সায়ানের মুখে হঠাৎ “তুমি” শব্দটা শুনে প্রাপ্তির শরীর শিউরে উঠে।বলে,
-“তুমি”??
-আরে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।
-ওহ
-তুই কি আমার উপরে অনেক রেগে আছিস প্রাপ্তি?
-রাগের কিছু নাই।অন্য মেয়েদের সাথে আপনার যৌন সম্পর্ক মেনে নিয়েছি,রাতারাতি মেয়েদের সাথে প্রেমালাপ মেনে নিয়েছি কোনো উত্তর করিনি।আর এটা তো সামান্য একটা থাপ্পড়।
-প্রাপ্তি এইভাবে বলছিস কেনো?
-হ্যাঁ সত্যি কথাটা তেতো লাগাটা স্বাভাবিক।
-দেখ প্রাপ্তি আমি জানি আমি মেয়েদের নেশায় ডুবে থাকতাম।কিন্তু সেদিন রিয়া আমার সাথে যা করলো তারপর থেকে আমি আর ওসব কিছু চিন্তাও করিনা বিশ্বাস কর।
-কি করেছে রিয়া? যে এত সহজে সায়ান চৌধুরী মেয়েদের নেশা ছেড়ে দিলো।এমন কি হয়েছিলো একটা রাতের ব্যবধানে?
-সেদিন রাতে তুই যখন রয়ার ড্রেস নিয়ে গিয়েছিলি তার কিছুক্ষন পর রিয়া ঘুমিয়ে পড়েছিলো। আমি পাশে বসে ড্রিঙ্ক করছিলাম।কিছুক্ষন পরে দেখি রিয়ার ফোন এ একটা মেসেজ আসে। ওর ফোন এর লক আমার জানা ছিলো।মেসেজ টা পড়ে আমার মাথার রক্ত গরম হয়ে গিয়েছিলো।
-কি লেখা ছিলো মেসেজ এ?
-সেখানে লেখা ছিলো “সায়ান চৌধুরিকে যেভাবেই হোক তোমার বশে নিয়ে আসতে হবে পুরোপুরিভাবে।তারপর ওর সব সম্পদ হবে তোমার আর আমার।তার জন্য তোমাকে ওর বিছানায় যেতে হলেও যাও।আমার কোনো আপত্তি নেই।আমি ওইভাবেই তোমাকে মেনে নিবো”।কিন্তু আমি সকালে এসব ব্যাপারে ওকে কিছুই বলিনি।এমনকি বুঝতেও দেইনি যে আমি ওর উদ্দেশ্য টা জানি।
-তারমানে রিয়া আপনাকে শুধুমাত্র আপনার টাকার জন্য ভালোবাসে।
-হুমমমমমম…..
-ভালোই হলো সময় মতো জেনে গছেন।নাহলে অনেক দেরি হয়ে যেতো আর অনেক সমস্যা হতে পারতো।
-হুম।সেদিন যদি ও আমার বাসায় না আসতো তাহলে হয়তো আজো অজানা থাকতো বিষয়টা।অনেক বড় ঝামেলায় পড়ে যেতাম আমরা।
-যা হয় ভালোর জন্যই হয়।
-হ্যাঁ।ঠিকই বলেছিস।সেদিন আমার ভুলটা শুধু আমাকে অঘটনের হাত থেকেই বাচায় নি বরং এটাও শিক্ষা দিয়েছিলো যে আমার ঘরের বিয়ে করা স্ত্রী-ই আমার জন্য শ্রেষ্ঠ।
-তা কিভাবে?
-তুই হয়তো কখনো দেখিস নি আমি বিয়ের পর একদিনও তোর দিকে ঠিক করে তাকাইনি রাগে আর ঘৃণায়।যদিও তুই আমার মামাতো বোন ছিলি, কখনো তো সামনেই আসতি না ঠিক করে লজ্জায়।আর আমিও তেমন একটা যেতাম না নানু বাড়িতে।সেদিন যে রিয়া বলল “এতো সুন্দরী একটা মেয়ে ঘরে থাকতে তুমি ঠিক থাকতে পারো” তারপর তোকে ভালো করে দেখেছি।আজকে সকালে যখন তুই রেডি হয়েছিস বাড়ি যাওয়ার জন্য তখন তোকে খুব মায়াবী লাগছিলো।আমি কত বড় হতভাগা,তুই আমার মামাতো বোন ছিলি তাও তোকে কখনো ভালো করে দেখিনি।ঘরের বউ হয়ে এলি তাও তোকে মূল্য দেইনি।অন্য মেয়েদের নিয়ে ডুবে ছিলাম।জানিনা আমার ক্ষমা হবে কিনা।তুই আমাকে মাফ করে দিবি তো?
-চুপ করেন।আর এসব বলবেন না।আপনি মেয়েদের নেশা ছেড়ে দিয়েছেন এটাই আমার জন্য অনেক বড় একটা পাওয়া।
-কত অত্যাচার করেছি তোকে।আমাকে ক্ষমা করে দিস প্রাপ্তি।
-উফফ বলেছি না একবার এসব আর না বলতে!
-আচ্ছা বাবা আর বলবো না।
-হুম।এবার ঘুমানো যাক।সকালে উঠতে হবে তো।রাত অনেক হয়েছে।
-না আরেকটা কথা ছিলো।
-কি?
-তোর গালটা খুব ব্যথা করছে?একটু বরফ লাগাতে পারিস নি?
-না কিছু না।ঠিক হয়ে যাবে।
-একটু বস আমি মলম নিয়ে আসি।
সায়ান মলম এনে প্রাপ্তির গালে লাগিয়ে দিচ্ছে আর বলছে,
-জ্বলছে খুব?
-না খুব একটা না।
-থাক আমি বুঝতে পারছি।দেখেই বোঝা যাচ্ছে।অনেক জোরেই দিয়ে ফেলেছি থাপ্পড় টা।
-এবার ঘুমান।সকালে উঠতে হবে।
-আচ্ছা গুড নাইট।
-গুড নাইট।
দুইজন দুইদিকে ফিরে শুয়ে পড়লো!
সকালে সূর্যের আলো চোখে পড়ে প্রাপ্তির ঘুম ভাংলো।সায়ানের মুখে রোদ পড়ছিলো।তাই প্রাপ্তি উঠে পর্দা টেনে দিলো।তারপর হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা বানাতে গেলো।গিয়ে দেখে ড্রইং রুমে মোনা বসে বসে টিভি দেখছে।
-আপু তুমি কখন উঠলে?
-এইতো ১০/১৫ মিনিট আগেই।আমার অভ্যেস ঘুম থেকে উঠেই টিভি দেখা।নাহয় ফেইসবুকিং করা।
-ওহ আচ্ছা।তুমি টিভি দেখো তাহলে আমি নাস্তা বানাতে যাচ্ছি
প্রাপ্রি রান্না ঘরে গিয়ে নাস্তা বানিয়ে নিলো।নাস্তা বানানো শেষ করে সব টেবিলে দিলো।মোনা কে বলল,
-আপু তুমি নাস্তা করে নাও।
-কেনো?তোমরা করবে না?
-করবো।আরেকটু পরে।
-তাহলে একসাথেই করি।
-আচ্ছা আমি সায়ানকে ডেকে আনছি।
-ওকে যাও
প্রাপ্তি রুমে গেলো সায়ানকে ঘুম থেকে জাগাতে।গিয়ে দেখে সায়ান বিছানায় নেই।ওয়াশরুমের দিকে গিয়ে দেখে ভেতর থেকে আটকানো।সায়ান শাওয়ার নিচ্ছে।রুম থেকে বের হবে এমন সময় সায়ানের ফোন বেজে উঠলো।প্রাপ্তি ফোন হাতে নিয়ে দেখে “রিয়া” লেখা অনেক্ষন ফোন বেজেই যাচ্ছিলো।সায়ানও বের হচ্ছে না।প্রাপ্রি ভাবছিলো কি করবে!!তারপর প্রাপ্তি ফোন রিসিভ করবে এমন সময় কেটে গেলো।আর কল দেয়নি।সায়ান শাওয়ার থেকে বের হয়ে এসে দেখে প্রাপ্তি দাঁড়িয়ে আছে।ও পেছন থেকে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরলো!হঠাৎ করে এইভাবে স্পর্শ পেয়ে প্রাপ্তি চমকে উঠলো।তারপর সায়ান বলল
-আমার পাগলীটা কি করে?
-আরে কিছু না।ছাড়েন।আপু এসে পড়বে।অন্য কাউকে না।
-ইশ এতোদিন কোথায় ছিলো এতো প্রেম?
-সুপ্ত ছিলো।এখন বেরিয়ে এসেছে।
-হুমম।বুঝেছি।এখম কি এখানে দাঁড়িয়ে রোম্যান্স করতেই থাকবেন নাকি নাস্তা পানি খেয়ে অফিসে যাবেন?কয়টা বাজে দেখছেন?
-ধুর বাজুক।আজকে আমার বউকে একটু আদর করবো।
এই বলে সায়ান প্রাপ্তিকে ওর দিকে ঘুরিয়ে নিলো।তারপর ওর এক হাত প্রাপ্তির কোমরে আর এক হাত প্রাপ্তির গলার পেছন দিকে রাখলো।
এদিকে মোনা নিচে বসে ওদের অপেক্ষা করছিলো।একসাথে নাস্তা করবে বলে।
সায়ান প্রাপ্তিকে একদম কাছে নিয়ে আসলো।যেই প্রাপ্তির কপালে চুমো খাবে এমন সময় মোনা এসে পড়েছে।সাথে সাথে সায়ান প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিলো।মোনা খুব লজ্জা পেয়ে ওখান থেকে চলে গেলো।
তারপর প্রাপ্তির হাসি কে দেখে।ও হাসতে হাসতে খাটে বসে পড়লো।সায়ান বলে
-এতো হাসির কি আছে??
-হাসবো না!!খুব তো বলছিলেন আসলে আসুক, আমি আমার বউকে ধরছি।
বলেই হাসতে হাসতে শেষ।
তারপর যে-ই সায়ান আবার ওকে ধরবে তার আগেই প্রাপ্তি বেড থেকে উঠে চলে যেতে নিলো।যেতে যেতে দরজার সামনে গিয়ে বলল,
-তাড়াতাড়ি নিচে আসুন।
বলেই প্রাপ্তি চলে গেলো।
চলবে,,,,,,,,