ধর্ষিতা বউ পর্ব-৮

0
4717

গল্প —- ধর্ষিতা_বউ
লেখক —– মাহমুদ
পর্ব — ৮
********************************
৭ এর পর

মোনা চলে যাওয়ার পর মোনার কথাগুলো প্রাপ্তিকে খুব ভাবাচ্ছিলো।এতো খোজার পরেও তো কিছু পেলাম না ওর বিরুদ্ধে।সাত পাঁচ না ভেবে প্রাপ্তি নিজেকে শান্ত করলো!আগের মতোই নিজের কাজের দিকে মনযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলো।কিন্তু তারপরেও একটা পিছুটান রয়েই যাচ্ছে মোনার কথাগুলোর প্রতি।
দুপুরের নামাজ পড়ার পরে প্রার্থনা করলো, “সায়ান যদি আমার সাথে অভিনয় করে থাকে তাহলে সেটা বোঝার অন্তত একটা উপায় আমাকে দেখাও আল্লাহ্‌,তুমি ওকে হেদায়েত দান করে তোমার পথে পরিচালনা করো খোদা”
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে প্রতিদিনের মতো ঘুমিয়ে ছিলো।তারপর বিকালে উঠে টিভি দেখলো কিছুক্ষন।সায়ান ফিরে আসার পরে ফ্রেশ হয়ে নিলো নাস্তা করে নিলো।তারপর দুইজনে বসে একসাথে টিভি দেখছে ড্রইং রুমে।প্রাপ্তি আবারো সায়ানের দিকে তাকিয়ে ওকে যাচার বাছাই করছিলো।ওকে পড়ার চেষ্টা করছিলো।কিন্তু কোনো কিছুই পাচ্ছিলো না সন্দেহজনক।এখন তো রাতেও সায়ান ঘুমিয়ে পড়ে।আগের মতো মেয়েদের সাথে কথা বলেনা রাত জেগে,মদ সিগারেট খায়না।
ব্যাস!!!আর না।অনেক সন্দেহ করেছি ওকে।আমি কোনো কিছুই খুঁজে পেলাম না ওর বিরুদ্ধে।শুধু শুধু ওর প্রতি সন্দেহ বাড়াচ্ছি।
প্রাপ্তি ভাবা বন্ধ করে দিলো সায়ানকে নিয়ে।তারপর আগের মতোই যাচ্ছে তাদের দিন।
সায়ান আর এখন প্রাপ্তিকে আগের মতো জোর করে না তার শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য।রাতে দুইজনে একসাথে ঘুমায়।প্রাপ্তির সাথে খারাপ ভাবে কথাও বলেনা। এইতো বেশ ভালো আছে প্রাপ্তি।
একদিন প্রাপ্তির মায়ের কাছে কল দিয়ে কথা বলছিলো,
-কেমন আছো মা?
-ভালো আছি।তুই কেমন আছিস?
-আমিও অনেক ভালো আছি মা।
-জামাই ঠিকমতো তোর যত্ন নেয় তো?
-হ্যাঁ মা।ও আমার অনেক কেয়ার করে এখন।অনেক ভালোবাসে আমাকে।আগের মতো নেই একদম।ও এক নতুন সায়ান এখন মা।দোয়া করো আমাদের জন্য।
প্রাপ্তি অনেক খুশি এখন।সায়ানও রীতিমতো প্রাপ্তির কেয়ার করে,প্রাপ্তির সব ইচ্ছা পূরন করে,সব ভালোভাবেই যাচ্ছে তাদের।
একদিন মোনা ফোন দিলো সারাকে।
-হ্যালো সারা।
-হুম বলছি।বলো কি বলবে।আমি বিজি আছি।
-এভাবে ইগনোর করছো কেনো প্রাপ্তি?
-না একটু কাজ আছে।তাই। যা বলার তাড়াতাড়ি বলো
-প্রাপ্তি আমি কখনোই তোমার খারাপ চাইনা রে বোন।বোন ডেকেছি তোমাকে।কিভাবে আমি আমার বোনের ক্ষতি চাইবো বলো??
-আচ্ছা কি বলার জন্য কল দিয়েছো সেটা বলো।
-সায়ান হয়তো ইতোমধ্যে তোমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে বলতে পারে।তুমি যাবা না ওর সাথে প্লিজ প্রাপ্তি।
-কেনো যাবো না।আমার হাজব্যান্ড আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে সেটাও কি তুমি সহ্য করতে পারবা না?
-সহ্য করার ব্যাপার না প্রাপ্তি।ব্যাপারটা তোমার জীবন মরনের।বিশ্বাস করো আমি তোমার কোনো ক্ষতি চাইনা।
-ব্যাস আপু আমি রাখছি।আমার হাতে সময় নেই এখন।আল্লাহ্‌ হাফেয।
-প্রাপ্তি আমার কথাটা…
প্রাপ্তি ফোন কেটে দিলো।
সন্ধ্যায় সায়ান বাসায় এসে প্রতিদিনের মতো ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলো!তারপর দুইজন মিলে টিভি দেখছিলো।প্রাপ্তি সায়ানের পাশে বসে ছিলো সোফায়।পাশে বসে সায়ানের কাধে মাথা রাখলো।সায়ানও প্রাপ্তির মাথার উপরে ওর মাথা রেখে পেছন থেকে প্রাপ্তির কাধে হাত রাখলো।তারপর সায়ান বলল,
-কিরে পাগলী কি হয়েছে?
-আপনি সেদিন বলেছিলেন আমাকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাবেন।সময়টা বুঝি এখনো আসে নি?
-হুমম সব প্ল্যানিং শেষ আগামী শুক্রবার আমার অফিস নেই।সেদিন আমরা দিয়াবাড়ি যাবো।
-ওয়াও দিয়াবাড়ি!!!!
-হ্যাঁ দিয়াবাড়ি।অনেক বড় জায়গা।অনেক সুন্দর।খোলামেলা।
-হ্যাঁ আমি জানি।ইয়ে!!আর ২ দিন পরেই আমরা যাবো।
প্রাপ্তির খুশির সীমা নেই।খুশিতে আত্নহারা হয়ে ও সায়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে।তারপর হঠাৎ করেই ছেড়ে দিলো।লজ্জায় লাল হয়ে গেছে প্রাপ্তি।তারপর এক দৌড়ে রুমে চলে গেলো।
পরদিন বিকালে মোনা আবার প্রাপ্তিকে কল দিলো।প্রাপ্তি কেটে দিচ্ছিলো বারবার।মোনা অনেকবার কল দিলো প্রাপ্তিকে। কিন্তু প্রতিবারই প্রাপ্তি কেটে দিচ্ছিলো।তারপর মোনার কল দেওয়া অফ হয়ে গেলো। কিছুক্ষন পরে প্রাপ্তির ফোন এ একটা মেসেজ আসছে মোনার।মেসেজ টা ওপেন করে প্রাপ্তি। লেখা ছিলো “Prapti please pick up the call…it’s urgent.”
তারপর মোনা আবার কল দিলো প্রাপ্তিকে।প্রাপ্তি রিসিভ করেই বলল,
-আপু তোমার প্রব্লেম কি বলবে আমাকে?তুমি কি চাও না আমি ভালো থাকি?তুমি কি আমার সংসারটা ধংস করে দিতে চাচ্ছো?
-রিলাক্স প্রাপ্তি।এতো উত্তেজিত হচ্ছো কেনো?আমি তোমাকে কল দিয়েছি আবারও সতর্ক করার জন্য যে সায়ানের সাথে তুমি কোথাও বের হবে না।
-তোমার এসব ফালতু চিন্তাভাবনা বাদ দাও আপু। আমি কালকেই যাচ্ছি ওর সাথে লং ড্রাইভে।দিয়াবাড়ি যাবো আমরা কালকে সকালে।সারাদিন ঘুরবো।
-না প্রাপ্তি প্লিজ।আমি তোমাকে দুটো হাত জোর করে বলছি তুমি যেও না প্লিজ প্রাপ্তি।
-রাখছি।
প্রাপ্তি ফোন রেখে দিলো।তারপর মোনার নাম্বার টা ব্লক লিস্টে ফেলে দিলো।প্রতিদিনের মতো সায়ান বাসায় ফিরলো,নাস্তা খেলো তারপর দুজনে মিলে টিভি দেখতে বসলো।টিভি দেখতে দেখতে এক পর্যায়ে প্রাপ্তি বলল,
-আচ্ছা শুনুন…
-হুম জানপাখি বলো।
প্রাপ্তি সায়ানের মুখে এই কথাটা শুনে প্রাপ্তি লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।তারপর সায়ান বলল,
-একি এত লাল হয়ে গেলি কেনো?
-না না কিছু না।
-আরে বল বল।
-না কিছুনা বললাম তো!
-আচ্ছা কি বলতে চেয়েছিলি সেটা বল তাহলে।
-আচ্ছা কালকে আমি কি পরবো?
-কি পরবি মানে?এটাও বলে দিতে হবে তোকে?
-না মানে কোন রঙের শাড়ি পরবো,চুল কিভাবে রাখবো,কি গয়না পরবো,চুড়ি মানে সব বলেন প্লিজ।
-আচ্ছা তুই রুমে যা,কি কি আছে বের কর আমি আসছি।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর প্রাপ্তি রুমে গিয়ে আলমারী থেকে সবগুলা শাড়ী,গয়না,বের করলো।তার কিছুক্ষন পরে সায়ান আসলো।এসে দেখে প্রাপ্তি পুরো বিছানায় ওর শাড়ি,গয়না দিয়ে ভরে রেখেছে।সায়ান এই অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে শেষ। প্রাপ্তি ভ্রু কুচকে বলল,
-এভাবে হাসছেন কেনো?
-তো হাসবো না?কি অবস্থা করে রেখেছিস তুই দেখ তো!!(হাসতে হাসতে বিছানায় লুটে পড়লো)
প্রাপ্তি মুগ্ধ দৃষ্টিতে সায়ানের এই প্রানখোলা হাসি দেখছে।বিয়ের ৭ মাসে এই প্রথম সায়ানকে এইভাবে হাসতে দেখছে প্রাপ্তি।তারপর প্রাপ্তি বলল,
-আপনি এমনভাবে হাসছেন মন্স হচ্ছে যেনো অনেক বড় একটা মিশনে সাক্সেস হয়েছেন।(একটু মুখ বাকিয়ে)
-নাহ সাক্সেস হইনি তবে হবো বুঝলি পাগলী??
-কি মিশন শুনি?
-সেটা না হয় সাক্সেস হওয়ার পরেই দেখলি।এখন তোর কালকের সব সিলেক্ট করে দিতে হবে তাই তো?
-হুমম…
-আচ্ছা এখানে তো অনেকগুলা শাড়ী।
-এই জন্যই তো সিলেকশন এ সমস্যা হচ্ছে।আপনি বলেন না কোনটা পরবো,কিভাবে রেডি হবো প্লিজ?
তারপর সায়ান একটা গোল্ডেন পাড় গাঢ় রঙের লাল শাড়ি প্রাপ্তির হাতে দিয়ে বলল,
-এই শাড়ীটা তোকে খুব মানাবে।এটা পরবি আর সাথে ম্যাচিং করে গোল্ডেন কালারের ঝুমকো,গোল্ডেন আর লাল কালারের চুড়ি পরবি।কপালে একটা স্টোনের টিপ পরবি,আর চুলগুলো খোলা রেখে সামনে এক গোছা চুল নিবি,এক পাশে সিথি করবি।আর গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক লাগাবি।চোখে গাঢ় করে কাজল দিবি।
ব্যাস আর কিচ্ছু লাগবেনা।এতেই য়োকে অসাধারন সুন্দর লাগবে।
সায়ানের মুখে এই কথাগুলো শুনবে বলে প্রাপ্তি কখনোই ভাবেনি।সায়ান এতো রোম্যান্টিক প্রাপ্তির তা জানাই ছিলোনা।কথাগুলো শুনে প্রাপ্তি সায়ানের দিকে এক দৃষ্টে চেয়েই আছে।ও একটা গভীরতায় মগ্ন হয়ে গেছিলো। তারপর সায়ান প্রাপ্তির কাধে হাত দিয়ে বলল,-এই কই হারিয়ে গেলি তুই?তোরটা তো আমি সিলেক্ট করে দিলাম এবার আমার গুলা কে সিলেক্ট করে দিবে?
-আচ্ছা দিচ্ছি।
তারপর প্রাপ্তি সায়ানের একটা খয়েরি রঙের একটা পাঞ্জাবী আর সাদা পায়জামা বের করে দিলো।
সায়ান বলল,
-পাঞ্জাবী পরবো??
-হুম কেনো?
-না মানে আনইজি লাগে খুব।তুই আমার জন্য শার্ট,প্যান্ট আর কোর্ট সিলেক্ট করে দে প্লিজ।
তারপর প্রাপ্তি সায়ানের জন্য একটা সাদা রঙের শার্ট,কালো প্যান্ট আর নেভি ব্লু কালারের কোর্ট বের করে দিলো।
সব গুছিয়ে নিলো প্রাপ্তি তারপর রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লো!
রাত প্রায় ১:২০ এর দিকে প্রাপ্তির ফোন এ একটা কল আসলো।অচেনা নাম্বার তাই প্রাপ্তি কল রিসিভ করে নি।সাইলেন্ট করে রেখে দিয়ে ঘুময়ে পড়েছিলো।

পার্ট ৯ এর অপেক্ষায়…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here