গল্প —- ধর্ষিতা_বউ
লেখক — মাহমুদ
পর্ব — ৯
******************************************
সকাল সকাল প্রাপ্তি ঘুম থেকে জেগে উঠে ফোন টা হাতে নিয়েই দেখে ওই অচেনা নাম্বার টা থেকে ৬৮ টা মিসকল উঠে আছে আর ৫ টা মেসেজ।
প্রাপ্তি মেসেজ গুলো ওপেন করলো।ও মেসেজ গুলো পড়ে বুঝলো সেগুলো মোনার মেসেজ।যেখানে লেখা ছিলো
*প্লিজ প্রাপ্তি ফোন টা ধরো
*”দোহাই লাগে আল্লাহ্র,প্লিজ প্রাপ্তি তুমি কোথাও যেও না সায়ানের সাথে”
*সায়ান এখনো রিয়াকে চায়।ও তোমাকে কখনোই ভালোবাসে নি।সব ওর প্ল্যান।
*আমি তোনাকে বোন ডেকেছি তাই কখনোই তোমার ক্ষতি চাইনা।
৫ নাম্বার মেসেজ টা ওপেন করে দেখলো মোটামুটি অনেক বড় একটা মেসেজ।আর প্রথম গুলো পড়েই ওর মন মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে।তাই পরের মেসেজ টা আর পড়ে নি প্রাপ্তি। মেসেজ ৪ টা পড়েই সকাল সকালেই প্রপ্তির মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে।ওর পুরো মুডটাই নষ্ট হয়ে গেছে।মনে মনে ভাবছিলো -এই মোনা আপুকে আমি নতুন করে জীবন দিয়েছি আজ আমার সংসার ভাঙার জন্য?ওকে আমি এতো শ্রদ্ধা আর সন্মান করতাম।কিন্তু ওর এসব কর্মকান্ড ওর প্রতি আমার সব স্নেহ মমতা আর বিশ্বাস শেষ করে দিয়েছে।
প্রাপ্তি মন খারাপ করে ড্রইং রুমে বসে আছে।সকাল ৭ টা বাজে।সায়ান ঘুম থেকে উঠে দেখে প্রাপ্তি এমন মনমরা হয়ে বসে আছে।তারপর সায়ান এসে প্রাপ্তির পাশে ঘেঁষে বসলো।পেছন থেকে প্রাপ্তির কাধে হাত রেখে বলল
-কিরে রেডি হচ্ছিস না কেনো।এখানে মনমরা হয়ে বসে আছিস কেন?
-না তেমন কিছু না।
-তাহলে কেমন কিছু?
-আচ্ছা মোনা আপুর কাহিনিটা কি বলেন তো?
-মানে?
-মানে ভার্সিটি লাইফে মোনার সাথে আপনার সম্পর্কটা ঠিক কেমন ছিলো?
-আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম।মানে আমাদের ফুল একটা সার্কেল ছিলো ৫ জনের।সেখানে আমরা তিনটা ছেলে আর ২ টা মেয়ে ছিলো।একটা ওই অসভ্য রিয়া আরেকটা মোনা।
-ওহহহ।মোনা আপু কি আপনাকে কোনোভাবে পছন্দ করতো?
-হয়তো।
-বুঝেছি এইবার।এই জন্যই এসব করছে।
-কি বুঝেছো,কি করেছে?
-না কিছু না।চলেন রেডি হয়ে নেই।
-হুমম ম্যাম চলেন।
তারপর প্রাপ্তি রুমে গিয়ে শাওয়ার নিলো।তারপর শাড়ি পরছিলো শাড়ি পরা শুরু করার কিছুক্ষন পরে সায়ান রুমে আসলো।সায়ানকে দেখেই প্রাপ্তি শাড়ি আচল টেনে শরীর ঢেকে নিলো। সায়ান এসে দেখে প্রাপ্তি পুরো শাড়ীটাকে ওর শরীরে পেঁচিয়ে রেখেছে।এই অবস্থা দেখেই সায়ান হাসতে হাসতে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে।প্রাপ্তির ভীষণ লজ্জা লাগছিলো পুরো লাল টমেটোর মতো হয়ে গেছিলো সে।তারপর সায়ান হাসি থামিয়ে বলল
-এ কি অবস্থা করে রেখেছিস তুই?একবার আয়নার সামনে গিয়ে দেখ।সেদিন বাড়ি যাওয়ার সময় তো ঠিকমতোই শাড়ি পরেছিস।আজকে কি হলো!
-জানিনা।মনে হয় সিল্কের শাড়ি বলে পরতে কষ্ট হচ্ছে।
-আচ্ছা দে আমি পরিয়ে দিচ্ছি।
কথাটা শুনেই প্রাপ্তি আরো লাল হয়ে গেলো লজ্জায়।তারপর বলল
-আপনি পরাতে পারেন?
-পারিনা।তবে এখন পারবো।
-না না আমি নিজেই পরে নিবো।আপনি বাইরে যান।
-ওরে বাবা কি লজ্জা।আমার লাল টুকটুকে বউটার।পুরো লাল টমেটো হয়ে গেছিস দেখি।
সায়ানের মুখে বউ শব্দটা কেনো জানি প্রাপ্তির বুকে গিয়ে লাগলো।মনে মনে বলছিলো -আমি আপনার বউ নাকি ধর্ষিতা বউ!!নাহ আমি আপনার বউ।আপনি তো এখন আমাকে ভালোবাসেন।আমার যত্ন নেন।সব কিছু খেয়াল রাখেন।আমি এখন আপনারই বউ।
কথাগুলো মনে মনে ভেবেই প্রাপ্তি মুচকী হেসে দিলো।তারপর সায়ান বলল
-কিরে কি চিন্তা করছিস তুই?দেরি হয়ে যাবে তো পরে।সারাদিন ঘুরে আসতে পারবো না তাহলে।
-না না কিছুনা।
-আচ্ছা দাড়া আমি তোকে পরিয়ে দিতে না পারলেও তোর কুচি গুলো আর আচলটা ধরে দিচ্ছি।
এই বলে সায়ান প্রাপ্তির সামনে এসে দাঁড়ালো।প্রাপ্তি উপর থেকে কুচিগুলো করে নিলো আর সায়ান সেগুলো হাত ধরে ভাজ ঠিক করে দিলো।তারপর সায়ান কুচিগুলো প্রাপ্তির হাত থেকে নিয়ে শাড়ির ভাজে ঢুকিয়ে দিলো।প্রাপ্তির পুরোটা শরীর শিহরন দিয়ে উঠলো।শরীরটা মনে হয় যেনো কেপে উঠলো ওর।সায়ান বলল -এবার আচল ঠিক কর।তারপর প্রাপ্তি আচল ঠিক করছিলো। সায়ানের সাহায্যে প্রাপ্তির শাড়ি পরা শেষ হলো।তারপর সায়ান বলল তুই বেডে বস আমি তোকে সাজিয়ে দিচ্ছি।তারপর সায়ান প্রাপ্তির সবগুলো জিনিসপত্র গুছিয়ে এনে হাতের কাছে রাখলো।তারপর একটা ছোট্ট টুল এনে প্রাপ্তির সামনে বসলো।অনেক যত্ন করে সায়ান প্রাপ্তির চোখে কাজল লাগিয়ে দিলো।ওর ঠোঁটে গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক লেপটে দিলো।ওর ঝুমকোর বক্স থেকে গোল্ডেন কালারের ঝুমকো নিয়ে কানে পরিয়ে দিলো,গোল্ডেন আর লাল রঙের রেশমি চুড়িগুলো খুব যত্নসহকারে একের পর এক সাজিয়ে ওর হাতে পরিয়ে দিলো।কপালে ছোট্ট একটা পাথরের টিপ পরিয়ে দিলো।তারপর টুল থেকে উঠে দাঁড়ালো। প্রাপ্তি কে বেড থে উঠিয়ে টুলে বসালো। তারপর ওর চুলে চিরুনি দিয়ে অনেক যত্নসহকারে চুলগুলো আচড়ে দিলো।ডান পাশে সিঁতি দিয়ে চুলগুলো আচড়ে দিলো।আর বাম পাশে পেছনের চুলগুলোর এক গোছা চুল সামনে এনে আচড়ে দিলো।তারপর বলল,
-ব্যাস আর কিচ্ছু লাগবে না।এইভাবেই তোমাকে দারুন লাগছে।এবার তুই একটু বস আমি এক্ষুনি রেডি হয়ে আসছি।
প্রাপ্তি উঠে একবার নিজেকে আয়নায় দেখলো।আসলেই ওকে অসাধারন লাগছে।সায়ান ওকে এতো ভালোবেসে ফেলবে সেটা ও কখনো কল্পনাও করতে পারেনি।এতো সুন্দর করে ওকে সাজিয়ে গুছিয়ে দিলো।এর থেকে বেশি আর কি লাগে।তারপর মোনার কথা মনে পড়তেই ভাবছিলো,”আপু এতোটা খারাপ।ছিঃ!!!আমার সুখ আপুর সহ্য হচ্ছিলো না!বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পরেও এখন আমারদের সংসার ভাঙতে চাচ্ছে!ঘৃণা হচ্ছে আমার এখন ওর প্রতি।ছিঃ!আল্লাহ্ তুমি আপুকে হেদায়েত দিও। ”
সায়ান রেডি হয়ে আসলো। তারপর সকাল ৯ টায় দুইজনেই একসাথে বেরিয়ে গেলো।এদিকে মোনা প্রাপ্তিকে বারবার কল দিয়েই যাচ্ছিলো।কিন্তু প্তাপ্তি ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে।
শুক্রবার।রাস্তায়ও কিছুটা জ্যাম।দিয়াবাড়ি পৌঁছাতে ১১:৩০ বেজে গেলো।হালকা হালকা হিমশীতল বাতাস কি দারুন মনরোম দৃশ্য চারপাশের!!প্রাপ্তি গাড়ি থেকে নেমেই জায়গাটার খোলামেলা চারপাশের পরিবেশ দেখতে লাগলো ছুটে গেলো চারিদিকে। কি শান্তি।কি অপূর্ব দৃশ্য।অনেক্ষন দুইজনে হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়ালো।এখানে পাশের একটা রেস্টুরেন্ট থেকে দুইজনেই লাঞ্চ করে আসলো।তারপর প্রায় বিকেল গড়িয়ে এলো।এমন সময় প্রাপ্তি দেখলো পাশেই একটা লোক আইস্ক্রিম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।প্রাপ্তি সাহানকে বলল
-আমি আইস্ক্রিম খাবো!
-কি?একটু পরে ঠান্ডার মাত্রা বেড়ে যাবে আর তুই আইস্ক্রিম খাবি?মাথা খারাপ নাকি তোর।
-পড়লে পড়ুক ঠান্ডা।আমি খাবো খাবো খাবো।প্লিজ আমাকে এনেদিন।প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
-আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।দাড়া আমি নিয়ে আসছি।
এই বলে সায়ান আইস্ক্রিম নিয়ে আসলো প্রাপ্তির জন্য।ওর হাতে দিলো।প্রাপ্তি বলল,
-সে-কি আপনি খাবেন না?
-আমি তোর মতো গাধা না যে খাবো।যত্তসব পাগল।
-হু আপনারই তো বউ।
-এএহ আমার বউ।
-তাহলে কি অন্য কারো বউ নাকি আমি?(মুখ বাকিয়ে)
-আরে না না মজা করছিলাম।আমারই বউ তুই।
-হু
আইস্ক্রিম শেষ না হতেই ফুচকার স্টল বসলো পাশেই।প্রাপ্তি আইস্ক্রিম হাতে নিয়েই সায়ানকে উত্তেজিতভাবে বলছে,
-এই ওইদিকে তাকিয়ে দেখেন কি??
-কি আবার ফুচকা!
-চলেন চলেন চলেন।
-মানে তুই এখন আবার ফুচকা খাবি?
-হ্যাঁ কেনো?
-মানে তোর পেটে কি ভালো খাবার যায়না নাকি?
-এটা অনেক ভালো খাবার।আমার অনেক প্রিয় এখন চলেন তো।
তারপর দুইজনে গেলো সেখানে।প্রাপ্তি অস্থির হয়ে ফুচকা খাচ্ছিলো।খাওয়া শেষে তারা হাটতে লাগলো।সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।জায়গাটা সম্পূর্ণ খালি নির্জন হয়ে পড়েছে।সায়ান প্রাপ্তিকে বলল
-তুই এখানে একটু দাড়া আমি গাড়িটা নিয়ে আসছি এক্ষুনি।
-আমিও একসাথেই আসি?
-না না।অনেকটাই হেটেছিস আজকে।অনেক টায়ার্ড লাগছে তোকে।তুই দাঁড়া আমি আসছি।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
সায়ান গাড়ি আনতে চলে গেলো।সারাদিনে প্রাপ্তি একবারও ফোন টা বের করেনি।একটু ফোন টা বের করে দেখলো সেই নাম্বার টা থেকে ৮৭ টা মিসড কল।প্রাপ্তি খুব বিরক্ত হয়ে ওর ফোন টা অফ করে দিলো।ফোন টা ব্যাগে রেখেই পেছন ঘুরে দেখে সায়ান গাড়ি নয়ে আসছে।একটু এগিয়ে যেতেই সায়ানের গাড়িটা প্রাপ্তিকে ভীষণ ভাবে একটা ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো।ধাক্কা খেয়ে প্রাপ্তি মাথায় আঘাত পেলো খুব জোরে।সন্ধ্যার হালকা অন্ধকারে ও পুরো পৃথিবীটাকে ঝাপসা দেখছিলো।সায়ানের গাড়ির দিকে ওই ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখে গাড়িটি কিছুটা দূরে থেমে আছে।আর সেখান থেকে দুইজন মানুষ বেরিয়ে এসেছে।তারা যতই কাছে আসছিলো ত্ততই যেনো প্রাপ্তির চোখ আরো ঝাপসা হয়ে আসছিলো।ওরা কাছে আসার পরে প্রাপ্রি দেখলো সায়ান আর রিয়া।
পার্ট ১০ এর অপেক্ষায়