#ধূসর_অনুভূতি
পর্ব:০৪
ভাইয়া আজ অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়িই ফিরলো।তিশি তখনো যায় নি। ভাইয়া তিশির ব্যাপারে কিছুই জানেনা।মা ভাইয়াকে না জানিয়েই বিয়ে-শাদির মতো বড় ব্যাপার নিয়ে ভাবছে। মায়ের স্বভাব এমন বিচিত্র টাইপেরই। ভাইয়া আসার কিছুক্ষন পর মা বললো,যা তো বাদশাহ তিশিকে একটু দিয়ে আয়।একা একা ওর যাওয়া ঠিক হবে না।রাস্তা-ঘাট ভালো না।
ভাইয়া সহজ মনেই রাজি হলো। ভাইয়া হয়তো ভেবেছে এই মেয়ে আমাদের কারো বান্ধবী হবে। মায়ের ধারণা তিশির মতো বুঝদার, ভালো,লক্ষ্মী মেয়ে এই জগত সংসারে একটিও নেই। ভাইয়া যদি ওর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে তাহলেই ভাইয়ার ওকে মনে ধরে যাবে।তিশি খুব লাজুক ভঙ্গিতে ভাইয়ার সাথে যেতে রাজি হলো। ভাইয়া বললেন,কি ব্যাপার খুঁকি? তুমি এতো লজ্জা পাচ্ছো কেন?এসো।
মা বিরক্ত হয়ে বললো,ওকে খুঁকি বলছিস কেন?
ভাইয়া খানিকটা অবাক হলেও আর কথা বাড়ালো না।চলে গেল তিশিকে নিয়ে।মা আমার দিকে ফিরে বললো,দেখলি গাধাটার কান্ড? দুইদিন পর যার সাথে বিয়ে হবে তাকে বলছে খুঁকি….
আমি সাহস করে বলেই ফেললাম,মা ভাইয়া বিয়ে করতে রাজি হবে না কখনোই।
মা আমার দিকে শীতল চোখে তাকালো।বললো,রাজি হবে না?
আমি নাসূচক মাথা নাড়লাম।
মা বললো,জানতে পারি কি কারণে?
আমি মাথা নিচু করে রইলাম। ভাইয়া আর মালিহা ভাবীর পরিচয় সেই কলেজ লাইফ থেকেই। তখন থেকেই ভাইয়া ভাবীকে ভালোবাসতো একতরফা ভাবে।পরে অবশ্য ভাবী জানতে পেরেছিলো। তারপর,তিন বছর প্রণয়ের পরে চার বছরের সংসার।এতো দ্রুতই কি ভোলা যায়? মাকে এই জিনিস বুঝাবে কে?
মা বললেন,ঐ জারজের বাচ্চার জন্য আমার ছেলে সারাজীবন কাঁদবে নাকি?
আমি বললাম,আমি জানি তুমি এখন গালাগালি শুরু করবা।প্লিজ এটা করোনা।ভাবী যদি খারাপও হয় তুমিতো ভালো তাহলে কেন একজন খারাপ মানুষের জন্য মুখ খারাপ করবে?
মা বললেন,আচ্ছা গালি দিবো না। খুব সম্মান করবো মহারানীকে।
মা একা একাই বলতে লাগলো,কত বলছিলাম বাদশাহ রে এমন আধুনিক,অহংকারী মেয়ে বিয়ে করার দরকার নাই।এর সাথে তুই মানায় নিতে পারবি না। সারাক্ষন বাপের সহায়-সম্পত্তি নিয়ে বড়াই করে তোরে জ্বালিয়ে মারবে।কে শোনে কার কথা? তখন তো মায়ের কথা বিষের মতো লাগে।যত মধু সব ঐ ডাইনীর কথায়। এখন তো হারে হারে বুঝলি।
মা চোখের পানি মুছলেন। চিন্তা করছিস,মেয়ে মানুষ এমন হয়?তিন বছরের বাচ্চা ফালায় যায়গা?এ কেমন মেয়ে?আরে এরে কি আমি স্বাধে ডাইনী বলি?
আমি কি বলবো খুঁজে পেলাম না।
মা বললেন, আমার ছেলের আমি আবার বিয়ে দিবোই। এইবার ও অনেক সুখে থাকবে।ওর সুখ দেখে আমার চোখ জুড়াবে।বিয়ে করতে চাইবো না মানে ,করতেই হবে।নয়তো আমি এই বাড়িতে আর থাকবো না।
আমি আর মা কথা বলছি এমন সময় কে যেন বেল বাজালো। দরজা খুলে দেখি মেহেদী ভাইয়া।আমি অবাক হয়ে বললাম, ভাইয়া আপনি এই সময়ে?
মা তৎক্ষণাৎ কে এসেছে বলতে বলতে চলে এলেন। এসেই ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। জিজ্ঞেস করলেন,কি দরকার?
মেহেদী ভাইয়া বললো,আসলে ঝিনুককে একটা জিনিস দিতে এসেছিলাম ।
মায়ের ভ্রু আরো কুঁচকে গেল।বললো, কি জিনিস? আমার হাতে দেও।
মেহেদী ভাইয়া তার আঁকা ছবিটা মায়ের হাতে দিলো।মুখে বললো,ওকে বলবেন পরে আমি সময় নিয়ে আরো সুন্দর করে এঁকে দিবো।
মেহেদী ভাইয়া চলে গেলেন।মা তখনো হতবম্ভ হয়ে রইলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,কি চক্কর চলতেছে? এখন কি বলবি এমনি এমনিই ছবি এঁকে দেয়।
আমি বললাম,আমাকে বলছো কেন?আপুর ছবি আপুকে বইলো।
মনে মনে আপুর জন্য দুঃখ হতে লাগলো।আজ, আপুর কপালে দুঃখ আছে।
আপু ফিরলো সন্ধ্যায়।মা গিয়ে হামলে পড়লো আপুর উপর।যা মুখে আসে তাই বলতে লাগলো।
ঝিনুক আপু বললো, চুপ করো মা। তোমার এমন অসংলগ্ন কথাবার্তার জন্যেই মালিহা ভাবী চলে গেছে। কোনদিন দেখবা আমিও চলে গেছি।
মা নিমিষেই চুপ হয়ে গেল। তবে, তার চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে।
– আমার জন্য চলে গেছে?আমি ওকে বলছি ঘরে স্বামী রেখে পরপুরুষের সাথে ভাগতে?আর,তুই কই যাবি?ছাদে থাকা চাল-চুলোহীন ছেলের সাথে যাবি?
– উফ মা আমার ছবি এঁকে দিছে কি এমনি এমনি নাকি?আমি টাকা দিছি তাই দিছে। সে একজন পার্টটাইম চিত্রশিল্পী। টাকার বিনিময়ে মানুষের ছবি আঁকে।এই সামান্য বিষয়টাকে তুমি এতো বড় বানাচ্ছো কেন?যদি অন্য কোনো ব্যাপার থাকতো তাহলে কি সে তোমার হাতে ছবি দিতো?
মা বললেন,এই কথা বাদ দে। একটু আগে কি বললি আমার জন্য মালিহা ডাইনী চলে গেছে?
– না মা, তোমার জন্য যায়নি। তার চরিত্র খারাপ এর জন্যই গেছে। কিন্তু, তোমার কথা শুনতে মেয়ে হয়েও আমারই কষ্ট হয় তাহলে বুঝো ভাবীর কেমন লাগতো?
-ভাবী বলছিস কাকে?
– মোটকথা,তুমি কথায় কথায় গালাগালি একটু কম করবা। তোমার গালাগালি শুনে তিতলি অনেক ভয় পায়।আর, তোমার আদরের তিশি যদি তোমার এই রূপ দেখে তাহলে বিয়ের নামও নিবে না।
– তোর থেকে আমার জ্ঞান শুনতে হবে?যে ভালো তার সাথে আমি ভালো ব্যবহারই করি।
মা আর আপুর ঠান্ডা যুদ্ধ চলেই যাচ্ছে।
আমি আর সেসবে কান দিচ্ছি না। তিতলির সাথে খেলছি।
অনেক ক্ষন পর আপু রুমে আসলো।বললো,দেখলি যুথি গাধাটার কান্ড দেখলি? আমার ছবি এনে মায়ের হাতে দিলো?ওর গাধামি জন্মের মতো ছুটাবো আমি।
আমি বললাম,কি করবা আপু?
– দেখ না কি করি।এমন শাস্তি দিবো যে ও জন্মের মতো মনে রাখবে।
…….
ঝিনুক আপু আর তার সঙ্গী পরী আপু মিলে প্ল্যান করেছে তারা মেহেদী ভাইয়াকে ভূতের ভয় দেখাবে।আমি অনেক বার বুঝেয়েছি যে এমন করা টা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। কিন্তু,কে শোনে কার কথা।তারা এই বিষয় নিয়ে খুবই মজা পাচ্ছে।
যথারীতি এরপর দিন পরী আপু পরিক্ষার পড়া পড়বে আপুর সাথে এই বাহানায় কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে আমাদের বাসায় চলে এলো। তার ব্যাগে যদিও বইয়ের বদলে আছে সাদা শাড়ি।রাতে একটা সাদা শাড়ি পরে ভূত সাজার প্রক্রিয়া শুরু করে দিলো ঝিনুক আপু। মুখের মধ্যে লিপস্টিক দিয়ে রক্ত বানানো হলো,কাজল দিয়ে চোখ এর নিচটা কালো কুচকুচে করা হলো। এরপর দরজা বন্ধ করে শুধু বাসার সবার ঘুমানোর অপেক্ষা।
আমার মনে মনে খুব চিন্তা হচ্ছিল কি যে হবে!
সত্যিই রাত ১২:৪৫ এ আমরা তিনজন ছাদে গেলাম। প্ল্যান হলো, আমি দরজায় আর পরী আপু জানালায় টোকা দিতে থাকবো। মেহেদী ভাইয়া তখন ঘর থেকে বের হবে।আর, তখনই সাদা শাড়ি পরা, চুল ছাড়া ঝিনুক আপু কে দেখবে।আপু যদিও হাতে একটা মোমবাতি নিয়ে এসেছে। কিন্তু,সেটার আর দরকার পরবে না।কারণ,আকাশে যথেষ্ট চাঁদের আলো আছে।
প্ল্যান মোতাবেক কাজ শুরু হলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও দরজায় নক করতে লাগলাম।
মেহেদী ভাইয়া মনে হয় জেগেই ছিলো। জিজ্ঞেস করতে লাগলো, কে…কে….
ওদিকে পরী আপু জানালায় নক করছে।এক পর্যায়ে ভাইয়া দরজা খুললো।আমি তখন দরজার আড়ালে চলে গেছি।আর, ঝিনুক আপু দরজা বরাবর ছাদের শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে আছে।
মেহেদী ভাইয়া প্রথম দেখাতেই ভয়ে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো। এরপর কাঁপতে লাগলো থরথর করে। দরজার আড়াল থেকে আমি তার দুয়া পড়ার শব্দ পাচ্ছি। ঝিনুক আপুকে মোটেও ভূতের মতো লাগছে না।হাস্যকর জোকারের মতো লাগছে।ভূতের মতো ধীর পায়ে না হেঁটে আপু জোরে জোরে হেঁটে সামনে আসছে।পরী আপু আড়াল থেকে ঝুমঝুমি বাজাচ্ছে।সেই আওয়াজও হাস্যকর। কিন্তু, মেহেদী ভাইয়া প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেছে।অতি মাত্রায় ভয় পেয়ে জমে গেছে পুরোই।তাই, নড়াচড়াও করছে না। ঝিনুক আপু খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে একটু ভারী গলায় বললো,এই মেহেদী আজকেই তোর শেষ দিন।
ভয়ে মেহেদী ভাইয়া আবার প্রচুর জোরে একটা চিৎকার করলো।এবং, এরপর যা করলো তার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না।সে ভূতের ভয়ে ভূতকেই জড়িয়ে ধরে ফেললো।বলতে লাগলো,প্লিজ আমাকে বাঁচান।
হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকতেও পারলাম না বেশি ক্ষন।কার যেন পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম।
আপু মেহেদী ভাইয়াকে বললো,ছাড় আমাকে ছাড়।
তবুও কাজ হচ্ছে না,সে কিছুতেই ছাড়ছে না।খালি বলছে,আমাকে বাঁচান। এরপর,ধাক্কা দিয়ে,খামচি দিয়ে,পা দিয়ে লাথি মেরে মেহেদী ভাইয়াকে সরিয়ে আপু দৌড়ে পানির ট্যাংকের পিছনে লুকালো। ততক্ষণে মেহেদী ভাইয়া অজ্ঞান হয়ে গেছে।আমরাও লুকিয়ে পরেছি। ঝিনুক আপু বললো,দেখছিস কত বড় মহা গাধা হলে কোনো মানুষ ভয় পেয়ে ভূতের কাছেই সাহায্য চাইতে পারে। ততক্ষণে, আমাদের পাশের বাসার আরমান আংকেল তার ছেলে কে নিয়ে ছাদে এসেছে।সম্ভবত মেহেদী ভাইয়ার বিকট চিৎকার শুনতে পেয়েছে।পরী আপু খুব আস্তে আস্তে বললো, তোর সাদা শাড়ি টা খোল।নয়তো আজকে ধরা খাবো।আপু প্লাজো আর একটা টি-শার্টের উপর দিয়ে শাড়িটা পেঁচিয়েছে।তাই,শাড়ি খুলে ফেলল। ততক্ষণে বাবা-মাও ছাদে এসেছে। আরমান আংকেল কল করে বাসার আরো অনেক কে আনিয়ে ফেলেছে।পরী আপু বললো,সবাই মেহেদী গাধাকে নিয়ে ব্যস্ত এই সুযোগে আমরাও ওদের পিছনে যেয়ে দাড়াই।সবাই ভাববে আমরাও চিৎকার শুনে এসেছি।আর, ঝিনুক তুই আমার পিছনে মাথা নিচু করে থাকবি যেন তোর মুখ কেউ না দেখে। এরপর,আস্তে নিচে নেমে যাবি। গিয়ে মুখ-টুখ ধুয়ে ফেলবি।
যেই বলা সেই কাজ।
আপু চলে গেল নিচে।মা একফাঁকে আমাকে জিজ্ঞেস করলো দরজা খোলা ছিল কেন?
আমি বললাম, চিৎকার শুনে আরমান আংকেল এর সাথে ছাদে এসেছি।।
মা আর কিছু জিজ্ঞাসা করলেন না।পানি ছিটিয়ে মেহেদী ভাইয়ার জ্ঞান ফিরানো হলো।সে জ্ঞান ফিরার পর থেকেই ভূত ভূত বলে চেঁচাচ্ছে।
তার এতো ভয় পাওয়া দেখে বাবা বললেন,আজকে এইখানে থাকতে হবে না। তুমি বরং বাসায় চলো। বাদশার রুমে থেকো আজ।
পরদিন সকালে কোথা থেকে বাবা একটা ওঝা ধরে নিয়ে আসলো।সে নাকি মহা-ক্ষমতাধর। পকেটে ভূত নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
আমার একটু ভয়ভয় করতে লাগলো।যদি সত্যি বুঝে ফেলে উনি যে আমরা করেছি এই কাজ।আপু বললো, চুপ থাক গাধা।তুই মুখ না খুললেই হয়,কেউ জানবে না।
ওঝা মেহেদী ভাইয়াকে পরিক্ষা-নিরিক্ষা করে বললো,ডাকিনী এসেছিল মেহেদী ভাইয়ার কাছে।
ডাকিনী না কি ভূতেদের মধ্যে অত্যন্ত শক্তিশালী নারী ভূতের জাত।
বাবা জিজ্ঞেস করল, কেন এসেছিল ওর কাছে?
ওঝা বললো,ওকে পছন্দ করছে।বিয়ে করতে চায়। অনেক ভূত ই মানুষের প্রেমে পরে জীবন অতিষ্ঠ করে দেয়,বিয়ে করার জন্য।
ঝিনুক আপু আর আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
বাবা বললো,এর হাত থেকে বাঁচতে কি করতে হবে?
ওঝা বললো,ঘর বন্ধ করতে হবে।আর, তাবিজ পরতে হবে।আমি সব ই দিবো। মূল্য মাত্র ৫ হাজার।
মেহেদী ভাইয়া তখন বললো,না না লাগবে না।আমি মনে হয় ভুল দেখেছি।
ওঝা বললো,আরে কি বলো তুমি? কিসের ভুল?এখনো তোমার আশেপাশে ঐ ডাকিনীর অস্তিত্ব টের পাচ্ছি আমি।ও তোমার জীবন নরক করে দিবে। তোমার এতো বড় ক্ষতি আমি হতে দিতে পারি না। তুমি আমার ছেলের সমান।যাও,টাকা দরকার পরলে একটু কম রাখবো।
বাবা বললো,টাকা নিয়ে চিন্তা করবেন না।ওর সাথে যেন আর এমন না হয় সেই ব্যবস্থা করুন।
– করবো তো বটেই।তবে ডাকিনী খুব বেশি শক্তিশালী।এটাই চিন্তার বিষয়। এখন তুমি একটু দূরে যাও বাবা।
মেহেদী ভাইয়া উঠে এসে আমাদের পাশে দাঁড়ালেন। করুন ভাবে বলতে লাগলেন,কি হয়ে গেল না? আমার জন্য তোমাদের অনেক বিপদে পরতে হলো।
আপু বললো, শোনেন এইসব ভূত-টুত কিছুই না।সব আপনার চোখের ভুল।ওঝা টা হলো মিথ্যুক। আপনি বাবাকে বলে একে বিদায় করান।৫ হাজার কি কম টাকা?
মেহেদী ভাইয়া বললো, আমিও তাই ভাবছিলাম চোখের ভুল, মনের কল্পনা। কিন্তু, ভূতটা ধাক্কা দিলো,খামচি দিলো।তার নখের দাগ আমার গায়ে এখনও আছে।তাহলে চোখের ভুল হয় কেমনে?তবে,ওঝা স্যার যে মিথ্যুক সেটা আমিও বুঝতে পারছি।ওঝা স্যার বারবার বলছে,ডাকিনী অনেক শক্তিশালী। কিন্তু,এটা মিথ্যা। মোটেই শক্তিশালী না। আমার হাত থেকেই ছুটতে পারছিলো না। আমার মনে হয় দূর্বল ভূত,৫০ টাকার তাবিজ হলেই একে তাড়ানো যাবে।উনি মিথ্যা বলে ৫০০০ নিতে চাইছে।
আমি অবাক হয়ে বললাম,ওঝা স্যার বলছেন কেন?
মেহেদী ভাইয়া বললো,উনি বললেন উনি কামাখ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূত-পেত্নী বিষয়ে পড়াশোনা করে এসেছেন।উনি অন্যান্য অশিক্ষিত ওঝাদের মত নয় তাই স্যার বলছি।
আমি কিছুই বললাম না।
আপু একটু চুপ থেকে বললো,আপনি ছাগল দেখছেন?
মেহেদী ভাইয়া বললো,জ্বি দেখেছি।
আপু এরপর বললো,রামছাগল দেখছেন কোনোদিন?
মেহেদী ভাইয়া নাসূচক মাথা নাড়লো।সে দেখেনি।
আপু বললো,আয়নার সামনে যেয়ে দাঁড়ান।রামছাগল দেখতে পাবেন।
আমি মনে মনে ভাবছি, আমার সহজ-সরল বাবা এতো গুলো টাকা খামোখা এই ফ্রডটাকে দিচ্ছে। কিন্তু,সত্যিটা আমরা জেনেও বলতে পারছি না।একেই বোধহয় বলে,পরের জন্য গর্ত করলে নিজেই সেই গর্তে পরতে হয়।
.
লেখক-শাপলা