ধূসর অনুভূতি পর্ব-০৬

0
1300

#ধূসর_অনুভূতি
পর্ব:০৬
মালিহার একেকটা দিন ছিল বিভীষিকাময়।তার কষ্ট কেউই বুঝতো না। বাদশার মা খালি কথায় কথায় বলতো,আমার যখন বিয়ে হয়েছে তখন মাত্র ১৪ বছরের ছিলাম।সেই বয়স থেকে আজানের সময় উঠে মাটির চুলায় চার-পাঁচ আইটেম রান্না করতাম। শ্বশুর-শ্বাশুরি,জা,ননদ,দেবর নিয়ে কত বড় সংসার ছিলো।গরু, ছাগল,হাঁস,মুরগি, কবুতর কি ছিল না সেই সংসারে। আবার ধান ভানা, সিদ্ধ করা কতশত কাজ।নিঃশ্বাস ফেলার সময় পেতাম না।জীবনের বিশ-পঁচিশটা বছর এইভাবেই কাটাইছি।কই আমি তো কোনোদিন বিরক্ত হইনি এতো কাজ করার পরও। নিজের সংসার,আমিই তো করবো। কিন্তু, তোমার তো কোনো কাজ ই নাই।গ্যাসের চুলায় দুইটা ভাত রাঁনবা এইতো কাজ। এইটা করতে গিয়েই সারাদিন পাতিল বাইড়া-বাইড়ি করো। তোমার নাকি বিতৃষ্ণা লাগে সবকিছু।এতো বিতৃষ্ণা লাগলে বিয়ে করছো কেন?একটা এতিম ছেলে কে বিয়ে করতা,তাইলেই তো শ্বশুর-শ্বাশুরি,ননদের জ্বালা তোমাকে পোহাতে হতো না।
মালিহা কোনো প্রতিউত্তর করতো না।কি বলবে সে?সে কিছু বললে বাদশাহ উল্টা তাকেই ভুল বুঝবে।
বাদশাদের বাসায় প্রায়ই ফারহান আসতো। বাদশার জানে-জিগার দোস্ত।
সেই সুবাদেই মালিহার সাথে পরিচয়।
একদিন ফারহান একটা শাড়ি কিনে দেয় মালিহাকে।বলে,ভাবী দোকান এ এই শাড়িটা দেখেই আপনার কথা মনে পরলো।এই রঙটা আপনাকে খুব মানাবে। আপনি রাখলে আমি খুব খুশি হবো।
মালিহাকে এক প্রকার জোর করেই শাড়িটা ধরিয়ে দেয় বাদশাহ।মালিহা দেখে, আসলেই শাড়িটা খুব সুন্দর। বাদশাহর পছন্দ ভালো না।কেমন বয়স্ক মানুষের শাড়ি কিনে নিয়ে আসে।
প্রায়ই ফারহান ফোন করতো। খোঁজ খবর নিতো। একপ্রকার বন্ধুত্ব হয়ে যায় ফারহানের সাথে। ফারহান আর তার মন-মানসিকতা একদম সেইম। ফারহানের শখ হলো,সারা বাংলাদেশ ঘুরে দেখা।মালিহা অবাক হয়।তারও তো এই শখ।তার, পছন্দ-অপছন্দ সবই ফারহানের সাথে মিলে। তার সব দুঃখের কথাও সে ফারহানকে বলতো। ফারহান শুনে খুব বিচলিত হতো। অনেক সময় ঘুরতে নিয়ে যেতো।যতক্ষন বাড়ি থেকে বাইরে থাকতে পারতো ততক্ষনই শান্তি লাগতো।
সে বুঝতে পারতো।সে বিবাহিত; ফারহানের সাথে কথা বলা তার উচিত নয়। কিন্তু, তবুও মনের বিরুদ্ধে যেতে পারতো না।এক পর্যায়ে ফারহানের সাথে না চাইতেও একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। ফারহান প্রচন্ড কেয়ারিং ছিল।কত সহজেই ছোট ছোট ইচ্ছা গুলো পূরণ করে খুশি করতে পারতো তাকে। ফারহান বলতো,চলো আমরা দূরে কোথাও চলে যাই।তিতলিকে আমি নিজের মেয়ের মতোই দেখবো।
মালিহার একবার মনে হতো চলে যাওয়াই উচিত। পরক্ষনেই বাদশার জন্য মায়া লাগতো।একটা দোটানার মধ্যে ছিল সে। কিন্তু,বাদশাই সেই দোটানা দূর করে দেয়।
খুব সামান্য একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া করে বলে, বেরিয়ে যাও বাড়ি থেকে। তোমার মুখ দেখতে চাই না। তুমি আসার আগে তো এতো ঝামেলা হতো না বাসায়। তুমি আসার পর থেকেই খালি ঝগড়া-ঝাটি।
সেদিন এই কথাটা খুব গায়ে লেগেছিল মালিহার।হয়তো চলে যাওয়ার অপশন আছে বিধায়ই।সে মনস্থির করে ফেলে সে থাকবে না।তারা সবাই ভালো থাকুক,সেও এবার ভালো থাকতে চায়।
সারারাত বাদশাহ অন্য পাশে ফিরে শুয়ে থাকে।মালিহা রাগ ভাঙানোর চেষ্টাও করে না। পরদিনই সে চলে যায়।তিতলিকে ফেলে যেতে খারাপ লাগছিল। কিন্তু, ফারহান বলেছিল কিছু দিন পর তিতলিকে নিয়ে আসবো আমাদের কাছে!
∆∆∆
আমি আর আপু অনেক দিন পর ছাদে উঠেছি আজকে। বাসায় আজ সকালে যা একটা ঘটনা ঘটলো তিশিকে নিয়ে।আজই ভাইয়া জানতে পেরেছে তিশির সাথে মা ভাইয়ার বিয়ের কথা ভাবছে।এতে, ভাইয়া খুব রাগ করেছে।বলেছে,এই মেয়েকে আমি নিজের ছোট বোনের মতো দেখেছি। তুমি ভাবলেও কিভাবে আমি একে বিয়ে করবো।এর এখন পড়াশোনার বয়স, খেলাধুলার বয়স।আর, তুমি চাইছো আমার সাথে বিয়ে দিতে?মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার?
মা ভাইয়ার উপর ভীষণ রাগ করেছে।বলেছে,ভাইয়া বিয়েতে রাজি না হওয়া পর্যন্ত সে জলস্পর্শ করবে না।মালিহা যদি বিয়ে করে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে তাহলে তার ছেলে কেন পারবে না?
সত্যি সত্যিই মা দুপুরে কিছুই খায়নি। ঝিনুক আপু বলেছে, দুপুরে খেয়ে নেও। ভাইয়া তো অফিসেই জানবে না।রাতে খাবার টেবিলে আইসো না। তাহলেই হলো।
মা আপুকে ধমকে বিদায় করেছেন। বলেছে,এই বাড়ি থেকে যেন বেরিয়ে যায়।আপু আমাকে গম্ভীর ভাবে বলল,চল বেরিয়ে যাই বাড়ি থেকে।
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,বাড়ি থেকে বেরিয়ে কই যাবা?
আপু বললো,ছাদে।
এরপর থেকে আমরা ছাদে এসে বসে আছি।
ছাদে অনেক গুলো নতুন ফুলের টব, মেহেদী ভাইয়া এনেছে।গোলাপি রঙের গোলাপ ফুল গাছ যেটা আগে ছিল না।বেশ কয়েকটা নয়নতারা গাছ, হলুদ-কমলা গাঁদা ফুল,কার্নেশন ফুল আরো কতগুলো গাছ যেগুলোর নাম জানি না।মরিচ গাছ, ধনেপাতা গাছও লাগিয়েছে অনেক গুলো।মা ছাদ থেকে মরিচ, ধনেপাতা নিয়ে যায়।এই একটা কারনে ইদানিং মেহেদী ভাইয়াকে মা একটু একটু পছন্দ করে। মেহেদী ভাইয়া বলেছে,সব তরকারি,ফলের গাছ সে ছাদে লাগিয়ে দিবে,যেন মা টাটকা জিনিস খেতে পারে।সে নাকি খুব ভালো গাছের যত্ন নিতে পারে।মা বলে, পারবেই তো।ও তো নিজেই একটা গাছ।ছেলেটা একেবারে বলদের হাড্ডি তবে ভালোই।
মেহেদী ভাইয়া এখন বাইরে গেছেন।হয়তো ক্লাসে আছেন।তার ঘরে তালা ঝুলানো আছে।
আপু বললো,ধুরর কিছু ভাল্লাগে না।
আমি বললাম, আসলেই।
আপু উৎসাহ নিয়ে বললো,আয় মেহেদী গাধাকে ভয় দেখাই।
আমি বললাম,প্লীজ আপু এমনটা করো না। বেচারা সহজ সরল মানুষ। কেন তুমি খামোখা উনার পিছনে লাগো?
আপু ষড়যন্ত্রীর মতো হেসে বলল,মজা লাগে তাই।যা একটা কলম আর খাতার পেইজ নিয়ে আয়।
আমি প্রথমে আনতে না চাইলেও আপুর জোরাজুরিতে নিয়ে আসলাম।
আপু বসে বসে মেহেদী ভাইয়াকে পত্র লিখছে।
বঁরাবঁর,
মেঁন্দি পাঁতাঁ
প্রিঁয়তঁম জঁনাবঁ,আঁমি তোঁমাকেঁ মনঁ-প্রাঁণ দিয়েঁ ভালোঁবাসিঁ। তোঁমার বধূঁ হতেঁ চাঁই। তুঁমি আঁর আঁমি মাঝঁরাঁতে তাঁলগাঁছে ঠ্যাঙঁ ঝুঁলিঁয়ে বসেঁ ভালোঁবাসারঁ কঁথা বলঁবো।তোঁমাকে আঁমি পুঁকুঁর থেঁকে কাঁচা মাছঁ ধঁরে নিঁজেরঁ হাঁতে খাঁইয়ে দিঁবো।তঁবে শুঁনে রাঁখো তুঁমি যঁদি কোঁনো বিঁবাহিতঁ মাঁনুষঁ কেঁ এঁই চিঠিঁখাস্তঁ দেঁখাও তাঁহলেঁ তোঁমাকেঁ আমিঁ চুঁবিয়ে মাঁরবোঁ।
বিঁনীতঁ নিঁবেদঁক,
ইতিঁ ডাঁকিনীঁ
আমি করুন মুখে বললাম,আপু এসব কি লিখছো? তোমার কি মাথায় সমস্যা আছে?
আপু হাসির চোটে কথা বলতে পারছে না।
আমি বললাম,এসব কি আবোল-তাবোল লিখেছো?
আপু বললো, মেহেদী ভাইয়া নাকি এটা পড়ে ভাববে ডাকিনী ভূতের পত্র।আর,ভূতেরা নাকি স্বরে কথা বলে,তাই এতো গুলো চন্দ্রবিন্দু দেয়া হয়েছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, বিবাহিত মানুষ কে এই চিঠির কথা বলা যাবে না এটা কেন লিখছো?
আপু বললো,যেন চিঠি পাওয়া মাত্রই ঐ হাবলা আমার মা,বাবা বা অন্য কোনো বড় মানুষকে দেখাতে না পারে।
আমি বললাম,আপু উনি ভার্সিটি তে পড়ে।এতোটাও হাবা ভেবো না যে এই হাস্যকর লেখা পড়ে ভাববে ভূত লিখেছে।পরে, আরেক ঝামেলা বাঁধবে।
আপু বললো, চুপ থাক।ওর বুদ্ধির দৌড় আমার জানা আছে।
আপু গিয়ে জানালা দিয়ে চিঠিটা ভাইয়ার ঘরে ফেললো।
এর কিছুক্ষণ এর মধ্যেই মেহেদী ভাইয়া চলে আসলো। আমাদের ছাদে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
এরপর,তালা খুলে ঘরে ঢুকে দরজা দিয়ে ফেললো।
আপু বললো,দেখছিস শালা কত খারাপ?মনে করছে আমরা তার ঘরে ঢুকবো এর জন্য দরজাটা দিয়ে ফেললো।
আপুর কথা শেষ না হতেই ভিতর থেকে মেহেদী ভাইয়ার চিৎকার শোনা গেলো।
খানিকক্ষণ এর মধ্যেই উনি উদ্ভ্রান্তের মতো বেরিয়ে এলেন।হাতে আপুর চিঠিটা। তিনি ভয়ার্ত চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
আপু ভালো মানুষ এর মতো জিজ্ঞেস করল,কি হয়েছে মেহেদী ভাই?
উনি আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন, তোমাদের কি বিয়ে হইছে?
আপু বললো,না না।কি বলেন এসব?
এরপর,চিঠিটা আপুর হাতে দেয়।বলে,দেখো আমাকে সে চিঠি দিছে।
আপু বললো, কে?
মেহেদী ভাইয়া বললো,ঐ যে ড দিয়ে যার নাম।যে আমাকে বিয়ে করতে চায়।
আপু চিঠিটা পড়ার ভাণ করলো।আপু বললো, দেখছেন আপনি ভূতেরও তন্দ্রাহরণ করে ফেলেছেন। এরপর একটু থেমে, চিন্তিত ভাবে তাকিয়ে বললো,তবে শুনেন এই চিঠি ভুলেও বিবাহিত কাউকে দেখাইয়েন না।বড় বিপদে পড়বেন।
মেহেদী ভাইয়া চিন্তিত হয়ে বললো,কি করবো আমি এখন বলোতো।
ঝিনুক আপু বললো, আপনি একটা কাজ করেন। আপনার রুমের চাবিটা খাটের উপর রেখে যাবেন।যেন ভূত আপনার রুমে আসতে পারে।
– এতে কি লাভ হবে?
– আরে, মানুষরা যেমন সুন্দর জিনিস পছন্দ করে তেমন ভূতেরা অসুন্দর জিনিস পছন্দ করে। ধরেন,বিয়ের জন্য একটা মেয়ে দেখতে গিয়ে যদি দেখেন সেই মেয়ের ঘর অগোছালো ডাস্টবিনের মতো আপনি কি সেই মেয়েকে জীবনেও বিয়ে করবেন?
– আস্তাগফিরুল্লাহ না।
-তাইলে ভূতও যখন আপনার রুমে ঢুকে দেখবে আপনার রুম অনেক গোছানো তখন ভূতও বলবে আস্তাগফিরুল্লাহ কি রুচিশীল মানুষ।কি গোছানো, সুন্দর রুম ছিঃ ছিঃ ওয়াক থু।
এরপর আপনাকে আর সে পছন্দ করবে না।
মেহেদী ভাইয়া বললো, ধন্যবাদ ঝিনুক। তুমি অনেক বুদ্ধিমতী। কিন্তু, আমার ঘরে যদি কেউ ঢুকে?
– ওমা কে ঢুকবে?আমরা তো জীবনেও ঢুকবো না ।আর,অন্যকেউ তো জানবেও না যে আপনি চাবি জানালার কাছে খাটের উপর রেখে যান।

এরপর, ওহ তাইতো বলে মেহেদী ভাইয়া চলে গেল নিজের রুমে।
ঝিনুক আপু অনেক কষ্টে নিঃশব্দে হাসার চেষ্টা করছে।
আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ভার্সিটি তে পড়া ছেলে। এতোটাও বোকা না তাইনা যুথি?বলদামির উপর পিএইচডি করে রেখেছে এই ছেলে।
আমি আসলেই অবাক হলাম।একটা মানুষ এতোটাও বোকা হতে পারে। একবার ভাবলোও না ভূতের ঘরে ঢুকতে চাবি লাগবে কেন?
আমি আপুকে বললাম, আপু তুমি উনার ঘরের চাবি দিয়ে কি করবে?
– কি আর করবো…ওর ঘরটা একটু এক্সপ্লোর করবো।হি…হি।।
হঠাৎ এমন সময় মা ছাদে আসলো হন্তদন্ত হয়ে।বলতে লাগলো, ঝিনুক..যুথি বাদশার অফিস থেকে ফোন এসেছিল।ও অজ্ঞান হয়ে গেছে।
মা কাঁদতে লাগলো।আমরা দুইজন অবাক হয়ে গেলাম। মায়ের কান্নার শব্দে মেহেদী ভাইয়াও বের হয়ে এলো।
আমি,মা,আপু দ্রুত ভাইয়ার অফিসে গেলাম। সাথে মেহেদী ভাইয়াও গেল।
আমরা গিয়ে দেখি ভাইয়ার জ্ঞান ফিরেছে। একজন ডাক্তার ভাইয়াকে দেখছে। ভাইয়ার দৃষ্টি কেমন ঘোলাটে লাগছে।
মা কাঁদতে লাগলেন, বাদশাহ… বাদশাহ বলে।
আমি বললাম, ভাইয়া তোমার কি হইছে?
ভাইয়া বললো,কে আপনি?
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।মা চেঁচাতে লাগলেন।ডাইনী,শয়তানি পরপুরুষের সাথে পালায় গিয়ে খুব আনন্দে আছস। আমার ছেলের জীবন তছনছ করে। তোর উপর ঠাডা পরবো অসভ্যের বাচ্চা।
আমি মাকে অনেক কষ্টে থামালাম।সবাই মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।ডাক্তার বললো, উনার এখন পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম দরকার। উনি অনেক দিন ধরেই ঠিক মতো ঘুমায় না।স্ট্রেসের কারনে সাময়িক বিস্মরণ ঘটে থাকে।ঠিক মতো বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে।আমি কিছু ওষুধও লিখে দিচ্ছি। চিন্তার কারণ নেই।
ভাইয়া তখনো শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চাহনি দেখেই বোঝা যাচ্ছে আমাদের কাউকেই চিনতে পারছে না।আমরা ভাইয়াকে নিয়ে বাসায় ফিরলাম।
মেহেদী ভাইয়া গেলো ওষুধ কিনতে।
গাড়ির মধ্যেই ভাইয়া ঘুমিয়ে পরলো।
বাসার সামনে গাড়ি থামায় আমি ভাইয়াকে ডেকে তুললাম।
ভাইয়া বললো,কিরে যুথি আমি এখানে কেন?আর তোরা সবাই?
ভাইয়া একদম স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছিলো।
যেন কিছুই ঘটেনি।
ভাইয়া কে অফিস থেকে বেশকিছু দিন ছুটি দেয়া হলো।
তবে, বাসায় ফিরার পর থেকে ভাইয়া একদমই স্বাভাবিক।
এইভাবে দুইদিন কাটলো কোন সমস্যা ই হলো না।
তাই,আমরা চিন্তামুক্ত হলাম।
………
ভাইয়াকে নিয়ে চিন্তিত থাকার কারণে দুইদিন ঝিনুক আপু কোনো কান্ড ঘটায় নি। কিন্তু,আজকে বিকালেই আবার বলছে ,এই যুথি হাবাটাকে যে বলছিলাম চাবি রেখে যেতে।আয় তো দেখি ও চাবি রাখছে কি না…
আমি বললাম,কি দরকার আপু।বাদ দাও তো।
কিন্তু,আপু বাদ দিলো না। আমাকে আর পরী আপু কে নিয়ে ছাদে এলো। মেহেদী ভাইয়া এখন বাসায় নেই।অবশ্য,আমারও একটু একটু মন চাইছিল উনার ঘরটা দেখতে।
সত্যি সত্যিই উনি জানালার কাছে চাবি রেখে গেছেন।
আপুর চোখ উত্তেজনায় চকচক করে উঠলো। পরী আপু কে পাহাড়ায় রেখে আমরা দুইজন মেহেদী ভাইয়ার রুমে ঢুকলাম।কি সুন্দর ছিমছাম, গোছানো রুম। দেখলেই কেমন আপন আপন লাগে,শান্তি লাগে। ছেলেদের এতো গোছানো হতে আমি আগে দেখিনি।মা প্রায়ই বলে, মেহেদীর পা ধুয়ে পানি খাইতে পারছ না।তোরা মেয়ে হয়েও এতো অগোছালো কিসের জন্য?
যাইহোক, ঝিনুক আপু মেহেদী ভাইয়ার রং গুলো দেখছিলো।কত ধরনের রং উনার! আমি
দেখলাম, উনি একটা নতুন আয়নাও লাগিয়েছে রুমে।কি সুন্দর ডিজাইন করা কাঠের আয়না।
হঠাৎ আয়নার পাশে থাকা টেবিলে চোখ পরলো। দেখলাম একটা ছেড়া পৃষ্ঠা বই দিয়ে চাপা দিয়ে রাখা আছে।খানিকটা বেরিয়ে আছে।মনে হচ্ছিল যেন চিঠি।
আমি আপুকে ডেকে দেখালাম।আপু সেই পেইজটা হাতে নিয়ে পড়তে লাগলো।আমিও আপুর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে লাগলাম।
লেখাগুলো পড়ে আমরা দুইজনেই অবাক। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। পেইজটাতে লেখা ছিল:
“প্রিয়:ডাকিনী
শোনো,আমিও তোমাকে ভালোবাসি।আমি জানি তুমি আমার রুমে আসবা। তাই তোমাকে খুশি করতে তোমার একটা স্কেচ বানিয়েছি। টেবিলের ড্রয়ার টা খুলে দেখো পছন্দ হয় কি না…পছন্দ না হলে আবার আমাকে পানিতে ডুবিয়ে মেরে ফেলো না কেমন..আমি মরে গেলে তুমি কার সাথে তালগাছে ঠ্যাঙ ঝুলিয়ে বসে গল্প করবা বলো….
ইতি তোমার,মেন্দি পাতা”
ঝিনুক আপু আমার দিকে তাকালো, আমিও আপুর দিকে তাকালাম। আমাদের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল।আপু বললো,কেইসটা কি বলতো।
আমি বললাম, জানি না আপু।ড্রয়ারটা খুলে দেখছি।
টেবিলের ড্রয়ার খুলে মেহেদী ভাইয়ার আঁকা ডাকিনীর স্কেচ টা আমি হাতে নিলাম। আমার হাত রীতিমতো কাঁপতে লাগলো।কারণ স্কেচটা ঝিনুক আপুর….
ঝিনুক আপু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।
আমি বললাম, তোমার ছবি এঁকেছে।
.
লেখক- শাপলা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here