ধূসর অনুভূতি পর্ব-০৭

0
1300

#ধূসর_অনুভূতি
পর্ব:০৭
অনেক ক্ষন ধরে ঝিম মেরে বসে আছি আমরা তিনজন। ঝিনুক আপু বললো,ও কি তাহলে গাধা নয়?
পরী আপু বললো,আরে গাধাই।তবে,আমরা যতটা ভাবছি তার চেয়ে একটু কম। ঐদিন চিঠি না দিলে বুঝতেই পারতো না যে এই কাজ তোর।চিঠি দিয়ে বাড়াবাড়ি টা করছিস।
ঝিনুক আপু দীর্ঘশ্বাস ফেললো। পরী আপু বললো,ঐ স্কেচ ওর ঘরেই থাকুক।আমরা এমন একটা ভাব করবো যেন আমরা ওর ঘরে ঢুকিই নি।জানবো কি করে ও কি ছাতার মাথা আঁকছে।
ঝিনুক আপু বললো, হুম। একটু থেমে বললো, কিন্তু ছবিটা অনেক সুন্দর আঁকছে তাই না?
পরী আপু হেসে বললো, মনের মাধুরী মিশিয়ে এঁকেছে সুন্দর তো হবেই।
ঝিনুক আপু হাসতে লাগলো। বললো, চুপ থাক। বেশি ফালতু কথা বলবি না!
এরপর হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে বললো,কিরে যুথি কি হইছে?মেন্দি পাতার রুমে চিঠি পাওয়ার পর থেকেই দেখছি তুই কেমন মন মরা হয়ে আছিস..
আমি মৃদু হেসে বললাম ,কই না তো।মনমরা হইনি তো, ভীষণ অবাক হয়েছি।
ঝিনুক আপু বললো, আসলেই অবাক হওয়ার মতোই বিষয়।গাধাটা আমাদের সবাইকে চমকে দিলো।
কিছুক্ষণ পর আমরা ছাদ থেকে নেমে পরলাম।
বাসায় ফিরে দেখি মা পোলাও রাঁধছে।
আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম কারণ মায়ের মেজাজ সবসময়ই তেঁতে থাকে,মা হঠাৎ পোলাও করছো কেন?
মা আমাকে অবাক করে দিয়ে হাসলো।হেসে বললো,তিশি মনি আসবে তো তাই।
আমি অবাক হয়ে গেলাম।তিশিমনি মানেটা কি….
আপু বললো, তুই জানিস না? আমাদের মাতা তিশিকে ডাকে তিশিমণি আর তিশি তাকে ডাকে মামণি।
মা ঝিনুক আপুকে একটা ধমক দিলেন। বললেন,সর ভাগ তো…
তিশি আর মা বসে বসে খুব হাসাহাসি করে গল্প করছে।তিশি দেখছি আবার মায়ের সাথে পানও খাচ্ছে।
এমন সময় ভাইয়া বাসায় এলো।
ভাইয়া বিরক্ত হয়ে বলল,সেই মেয়ে আবার এসেছে?
আমি বললাম, আসবেই তো। তোমার বউ হয়েই ছাড়বে সে।
ভাইয়া দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এরপর,মায়ের রুমে ঢুকলো।
আমিও পিছুপিছু ঢুকলাম। ভাইয়ার চাহনি হঠাৎ বদলে গেল। সেইদিন অফিসে যেমন লাগছিল ঠিক তেমন লাগছে ভাইয়াকে আবার। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। ভাইয়া কি আবার সব ভুলে গেলো?
মাও আমার মতো ভয় পেয়ে গেল।
বললো, বাদশাহ তুই এখন এখান থেকে যা।
ভাইয়া বললো,কাকে যেতে বলছেন? এখানে তো কোনো রাজা-বাদশাহ দেখছি না।
মা চোখ বড়বড় করে বললো,যুথি ওকে নিয়ে যা এখান থেকে।
তিশি আবাক হয়ে বললো,উনার কি হয়েছে মামণি?
বাদশাহ ভাইয়া বললো,এই যে খুঁকি তুমি সব কিছু তে এতো নাক গলাও কেন?নাক গলাতে গলাতে একদিন দেখবা তোমার নাক গায়েব হয়ে গেছে বুঝছো?যাও বাসায় গিয়ে বই নিয়ে বসো।সামনে এসএসসি না?পরে তো ১১ বিষয়ের মধ্যে ১০ টাতেই ফেইল করবা।
তিশি উঠে দাঁড়িয়ে পরলো।
মা বললো,তিশি ওর কথায় কিছু মনে করো না।ও মজা করছে।
বাদশাহ ভাইয়া বললো,না মজা করছি না তো।এই খুঁকি তোমার কি মনে হয় আমি মজা করছি?
আমি বললাম, ভাইয়া চলো।
ভাইয়া বললো, আপনি কে ইয়ং লেডি?একটু পরিচয় বলুন।অপিরিচিত মানুষের সাথে কোথাও গেলে আমার মা বকবে।
তিশি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে রইলো। এরপর ছুটে বেরিয়ে চলে গেল।মা পিছু পিছু গেলো।
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া হাসছে স্বাভাবিক মানুষের মতো।
আমি বললাম, ভাইয়া তার মানে তুমি এতক্ষণ অভিনয় করেছো?
ভাইয়া হেসে বললো,বড় ঝামেলা থেকে মুক্তির শর্টকাট টেকনিক।তোরা তো বলিস আমি নাকি হঠাৎ হঠাৎ সব ভুলে যাই। আমার তো সেসব মনে থাকে না।তাই,আজ সজ্ঞানে সব ভুলে গিয়ে দেখলাম কেমন লাগে।
ভাইয়া নিজের রুমে চলে গেল।
মা ফিরে এল একটু পর ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে।
আমি বললাম,কি হয়েছে মা?
মা বললো,তিশি সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে বাদশাহ বদ্ধ পাগল।এর জন্যই নাকি বাদশার বউ পালিয়ে গেছে।
মায়ের করুণ মুখটা দেখে আমার মায়াই হলো।
মা বললো, বাদশাহ কই?
আমি বললাম, ঘুমিয়ে পড়েছে।
-ঘুমিয়ে পড়েছে না?এত বড় প্যাঁচ লাগিয়ে নাক ডাকছে হারামজাদা।
আমি বললাম, তোমার ছেলে অসুস্থ সেই চিন্তা না করে তুমি কি বলছো এইসব?
মা চোখের পানি ফেলতে লাগলেন।
কিছুক্ষণ এর মধ্যেই ইশু ভাবী আমাদের বাসায় এলেন।
বললেন,আন্টি আপনি মন খারাপ কইরেন না। একবার তো আমাকে বলতে পারতেন বাদশাহ ভাইয়ের সমস্যার কথা।তাহলে,এতো বড় ঝামেলা হতো না।যাকগে তিশি গেছে যাক।এর চেয়েও ভালো মেয়ে আমার হাতে আছে।আর শোনেন বাদশাহ ভাইকে ঘরে লুকিয়ে না রেখে পাবনা পাঠিয়ে দেন। আমার পরিচিত একজন ডাক্তার আছে পাবনা মেন্টাল হসপিটালে। পাগল হওয়াটা দোষের কিছু না।
মা চিৎকার করে বললো,যাও তো তুমি। বেরিয়ে যাও।
রাত্রে বেলা আমি আপুকে জিজ্ঞেস করলাম,আপু মেহেদী ভাইয়াকে কি তুমিও ভালোবাসো?
আপু আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো।বললো,তুই এতো করুন গলায় কথা বলছিস কেন?
আমি বললাম,তাই নাকি? খেয়াল করি নি তো!
বলেই হাসলাম।আপু বললো,ঐ হাবলাকে ভালোবাসার জন্য কি আমার দায় পরেছে?
– না তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে…….
– আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে?
– তুমি উনাকে একটু হলেও পছন্দ করো।
-ছাই করি।দেখ না আমি ওর কেমন বারোটা বাজাই।কি করি শুধু দেখ…
আমি বললাম,আপু আবার?
– তো?তুই কি মনে করেছিস আমি একবার ব্যর্থ হয়েছি দেখে থেমে যাবো। একবার না পারিলে শত বার চেষ্টা করিতে হয় জানিস না?

……..
…….
ফারহান হাসি হাসি মুখ করে ঘরে ঢুকলো।বললো,শুনছো মালিহা খবর শুনছো?
মালিহা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,কিসের খবর?
ফারহান হাসিটাকে আরো বিস্তৃত করে বললো, তোমার প্রাণপতি বাদশাহ সাহেব আবার বিবাহ করছেন এই কয়েকদিনের মধ্যেই খবর পেলাম।হা…হা।
মালিহার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।সে বললো,এই খবর আমাকে শোনাচ্ছো কেন তুমি?যাও গিয়ে ফ্রেশ হও।
– তোমাকে শোনাবো না তো কাকে শোনাবো? তুমি তো বাদশার কথা ভেবে সারাক্ষন অশ্রুবিসর্জন করো।হাহা।
মালিহার বিরক্ত লাগছে খুব।সে উঠে চলে যেতে চাইলো।
ফারহান বললো,পাত্রীটা কে শুনে যাও।পাত্রীর বয়স সবে ষোলো। একদম কচি মেয়ে। বাদশার ই তো সময় এখন হাহা…
-ফারহান তুমি মদ খেয়ে এসছো?
– না তো খাইনি তো।পান করেছি।হা…হা….
মালিহা দ্রুত পায়ে হেঁটে অন্য রুমে চলে গেল।দরজা আটকে কাঁদলো কিছু ক্ষন।তার কোনো কিছুই শান্তি লাগছে না।বুকের মধ্যে সাগরসম কষ্ট।
পরদিন শুক্রবার ছিল।মালিহা ঘুম থেকে উঠে দেখে ফারহান নেই।ও তো এতো সকালে কখনো ঘুম থেকে ওঠে না…
মালিহা ড্রইং রুমে এসে দেখে ফারহান কোথাও যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে আছে।
মালিহা বললো, কোথায় যাচ্ছো ফারহান?
ফারহান বললো, বাড়িতে যাচ্ছি। বাবা অসুস্থ।
মালিহা বললো,আমি কি এই অপরিচিত জায়গায় একা থাকবো?আমাকেও তোমার সাথে নিয়ে চলো…
ফারহান মালিহার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকালো। বললো,মালিহা তোমার একেকটা কথা শুনলে আমার গা জ্বলে যায়। আমার বাবা অসুস্থ হয়েছে তো তোমার জন্যেই।এখন আবার তোমাকেই যদি সাথে নিয়ে যাই তাহলে তো কথাই নেই।
– আমার জন্য অসুস্থ হয়েছে মানে?
– এই যে আমি অবিবাহিত হয়ে বিবাহিত এক মেয়ের সাথে পালিয়ে গেলাম।এই খবর কি কোনো বাবা-মা সহ্য করতে পারে?বাবা আমার জন্য মেয়ে পছন্দ করে রেখেছিলেন।মেয়ে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে ছিলো।নাম সারাহ। আমার দুঃসম্পর্কের ফুপুর মেয়ে। বাবার মনের সমস্ত ইচ্ছায় আমি জল ঢেলে দিয়েছি।বাবাকে সবাই অপমান করছে ,তার ছেলে আরেক জনের বউ নিয়ে পালিয়ে গেছে।এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বাবা অসুস্থ হয়ে গেছে। আমার নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে মালিহা। আমার বাবা খুব কষ্ট করে আমাকে আর আমার ছোট ভাইকে পড়াশোনা করিয়েছে।দিনে কৃষিকাজ করেছে,রাতে নাইট গার্ডের চাকরি করেছে। আমাদের কথা ভেবে তিনি নিজের সব আনন্দ বিসর্জন দিয়েছে।আর, আমি বাবার রক্ত পানি করা টাকায় বড় হয়ে নিজের সুখের কথা ভেবে বাবার মনে কষ্ট দিয়েছি… বাবা স্ট্রোক করেছে।যদি মারা যায় আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা।
মালিহা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।সে চাইলেই জবাব দিতে পারে কড়া ভাষায়।কারণ, ভালোবাসার কথাটা সর্বপ্রথম ফারহান ই বলেছে,সে নয়।ক্ষতি ফারহানের চেয়েও তার বেশি হয়েছে। এখন ফারহান তার ঘাড়েই দোষ দিচ্ছে। কিন্তু,মালিহা কিছুই বলতে পারলো না।
ফারহান কাঁদছে।মালিহা বললো,যাও চিন্তা করো না।বাবার কিছুই হবে না।
ফারহান চলে গেলো। পিছন ফিরে তাকালো না।
মালিহার কেন জানি মনে হলো ফারহান আর ফিরবে না।যত সুখ স্বপ্ন নিয়ে ফারহান এর হাত ধরেছিল সে তার কিছু ই বাস্তবিকই হয় নি।
নরকের মতো মনে হতো যেই বাড়িটাকে ,ছেড়ে আসার পর সেখানেই মনটা পরে ছিল মালিহার।খালি তিতলির কথা মনে পরে কান্না পাচ্ছিল।তিতলিকে যে এতো ভালোবাসে আগে কখনোই বুঝতে পারেনি। তখন মনে হচ্ছিল তিতলির জন্য জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডেও সে হাসিমুখে থাকতে পারবে। ফারহানকে বলেছিল,তিতলি কে কবে আনবে আমাদের কাছে?
ফারহান খুব রেগে গিয়েছিল। ফারহানের দোষ দিয়ে লাভ নেই। ফারহানের সাথে মন খুলে কথা বলতেও মালিহার ভালো লাগতো না।কিভাবে লাগবে;তার তো পিছুটান রয়ে গেছে। ফারহান সারাক্ষন রাগারাগী করতো। গালাগালি করতো কুৎসিত ভাবে।বলতো, বাদশার জন্য এতো টান হলে ওখানেই থাকতি।আর মেয়ের জন্য এতো দরদ হইলে পালাইছিস কেন?তুই যদি এতোই ভালো মেয়ে হতিস তাহলে পালিয়ে আসতি না। এখন আমি কেন তোর মেয়েকে পালবো? দুইদিন পর তো বলবি তিতলির সাথে বাদশাহ কেও নিয়ে আসতে এই বাড়িতে।
মালিহা চোখের পানি মোছে। কিছু মানুষের জন্মই হয় বোধহয় কষ্ট পেতে। আচ্ছা, তার জীবনটা তো এমন হওয়ার কথা ছিল না। বাবা-মা যথেষ্ট ধনী ছিল।না চাইতেই সব ইচ্ছা পূরণ করে দিতো বাবা।কত আদরে মা রেখেছেন,চুলার কাছেও যেতে দেননি। বলতেন, আমার মেয়ের হাত পুড়ে যাবে। খুব ফীল করতো মালিহার কষ্ট মা।
মালিহার বুকটা যে এখন পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে মা কি ফীল করে না?
আচ্ছা, ফারহান কি সেই সারাহ নামের তার কাজিনকে বিয়ে করবে? ফারহানের বাবা নিশ্চয়ই মৃত্যুশয্যায় শুয়ে বলবে মালিহাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য।
আর বাদশা?সে কি সত্যিই ষোলো বছরের একটা মেয়ে কে বিয়ে করছে? বিচিত্র কিছু নয়। করতেই পারে।
তিতলি কি সেই মেয়েটিকেই মা ডাকবে? বাদশাহ আর তার পরিবার কি বলবে ,তিতলি তোর মা ডাইনী ছিল। তোর মায়ের কথা মনেও আনিস না। কষ্ট পাস না।
একসময় তিতলি তাকে ভুলে যাবে?তিতলি সত্যিই ভাববে তার মা একটা ডাইনী?
মালিহা আর ভাবতে পারে না।
চিৎকার করে বলে,আল্লাহ তুমি আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দাও।আর,কিছুই আমি চাইনা।
মালিহা অনেক ক্ষন কান্নাকাটি করে।
এরপর, কাঁপা কাঁপা হাতে তার মায়ের নম্বরে ডায়াল করে।
দুইবার রিং হওয়ার পর মা ফোন উঠায়। জিজ্ঞেস করে,কে?
মালিহা নিজেকে সামলাতে পারে না। বাঁধভাঙা কান্না থামতেই চায় না।
মালিহার মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,কেন আমাকে ফোন করেছিস? লজ্জা করে না তোর?কি দোষ করেছিলাম আমি আর তোর বাবা?তোকে জন্ম দিয়েছি এটাই সবচেয়ে বড় দোষ? তোর বাবা কতটা সৎ মানুষ তার দিকে চোখ তোলার সাহস কোনোদিন কেউ পায়নি।আজ, তোর কর্মকান্ডের জন্য সবাই আঙুল তুলছে আমাদের দিকে।বলছে,কি শিক্ষা দিয়েছেন মেয়েকে,মেয়ে এতো বড় চরিত্রহীন হলো কিভাবে?যেদিন তুই বাদশাহ কে বিয়ে করতে চেয়েছিলি সেদিনও আমি মানা করেছিলাম তুই শুনিস নি।কত ভালো পাত্র হাতছাড়া করেছি।সবাই সেদিনও কথা শুনিয়েছিলো,কেন একটা বেকার ছেলের সাথে মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছি।তবুও, তোর কথা ভেবে সব হজম করেছি।স্বামী-সংসার,সন্তান সব হয়েছে। এরপর তুই এমন একটা কাজ কিভাবে করলি?এতো বড় একটা পাপ কাজ করার আগে তো মাকে ফোন করিস নি… তাহলে আজ করেছিস কেন? আমার কোনো মেয়ে নেই মালিহা।আশা করি,এতো ক্ষন যা বলেছি তার সারমর্ম বুঝেছিস।আমাকে আর ফোন করবি না।
মালিহা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে,মা…. কোনো মানুষ যখন অসহনীয় কষ্টের মধ্য দিয়ে যায় তখন সবার আগে তার যে মানুষটার কথা মনে পরে সে হলো মা।কারণ,সে জানে তার দুঃখের সময়, বিপদের সময় সুসময়ের সঙ্গীরা কেউ পাশে দাড়াবে না শুধু মা ছাড়া।
মা বললেন,হ্যাঁ কিন্তু যে বারবার নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনে তার পাশে মায়েরও দাঁড়ানো উচিৎ না।
ফোন রেখে মালিহা সারারাত কাঁদলো।
ভোরের দিকে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
দেখতে দেখতে চারদিন হয়ে গেল। ফারহান ফিরে এলো না।কোনো ফোনকল-ও করেনি।মালিহাও করেনি।কি দরকার যে আসতে চায় না তাকে বিরক্ত করেই। ফারহান হয়তো বুঝতে পেরেছে আবেগের বসে সে অনেক বড় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মালিহা অনেক সময় নিয়ে গোসল করলো।তারপর, বারান্দায় বসে রইলো।কি করতে চায় সে?সে কি নিজেকে শেষ করে দিতে চায়?
নাহ!এতো অসীম সাহসী তো সে নয়। হঠাৎ কলিং বেল বেজে ওঠে।
মালিহা দরজা খুলে দেখে ফারহান দাঁড়িয়ে আছে।
মালিহা কেমন অনুভূতি শূন্য হয়ে যায়। তার কি খুশি হওয়া উচিত ছিল না ফারহানকে দেখে?
ফারহানের চোখ টকটকে লাল।
মালিহা বললো, তুমি মদ খেয়েছো? চোখ এতো লাল কেন?
মালিহা প্রস্তুত হয়েই ছিল ফারহানের ধমক শোনার জন্য। কিন্তু, ফারহান ধমক দিলো না।
খুব নিচু গলায় বললো, আমার বাবা মারা গেছে মালিহা।
ফারহান মালিহাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে থাকে।
মালিহা যন্ত্রের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।
ফারহান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, বাদশাহ মনে হয় অভিশাপ দিয়েছে তাই না?
মালিহা ভাবলেশহীন ভাবে বলে,না ফারহান বাদশাহ অভিশাপ দেয়ার মতো ছেলেই না।ও কারো খারাপ চায় না,কাউকে ও অভিশাপ দেয় না।
ফারহান হঠাৎ হিংস্র হয়ে ওঠে।মালিহার গালে সজোরে একটা থাপ্পর দেয়। চেঁচিয়ে বলে, বাদশার মতো ভালো মানুষ দুনিয়ায় নাই তাই না? তাইলে বাদশাহকে ছেড়ে আসছিস কেন? সারাক্ষন কেন ওর গুনগান করে আমাকে কষ্ট দিস?কেন?
মালিহা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো,তার চোখে পানি আসছে না…..
.
লেখক-শাপলা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here