ধূসর রঙে আকাশ পর্ব- ২৫

0
960

#ধূসর_রঙে_আকাশ
#পর্ব_২৫
লিখা: Sidratul Muntaz

সাইকেল ভাঙা নিয়ে বাসায় কম ঝামেলা হয়নি। রিম্মিরা মধ্যবিত্ত পরিবার। একটা সাইকেল ভেঙে যাওয়া তাদের কাছে বিরাট ব্যাপার। তনিমা এই নিয়ে রিম্মিকে অনেক কথা শুনিয়েছেন। দু-চারটা চড়ও মেরেছেন। চড় থাপ্পড় মারার কারণ মূলত সাইকেল ভাঙা নয়। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হওয়া। সাইকেল ভাঙায় কারো তেমন ক্ষতি নেই। রিম্মিকেই কষ্ট করে হেটে হেটে স্কুলে যেতে হবে। অথবা পাবলিক যান ভাড়া করতে হবে৷ এতে রিম্মির তেমন কষ্ট নেই। কষ্ট শুধু এক জায়গাতেই৷ তার পছন্দের সাইকেলটা ভেঙে গেছে। সাইকেলটা রিম্মির সুখ-দুঃখের সঙ্গী ছিল। এখন আর সাইকেল নিয়ে বের হতে পারবে না। সাইক্লিং করাও হবেনা। এই ভেবে রিম্মির কান্না পেয়ে যায়। মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে সে ভাঙা সাইকেলটা জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদে। কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে যায়। জ্বরও আসে। পরদিন রিম্মি স্কুলে যেতে পারেনা। জ্বর নিয়ে শুয়ে থাকার জন্য মায়ের কাছে অগত্যা বকাও খায়। তখন সে নীলিমা’র ছবি বুকে জড়িয়ে লুকিয়ে কাঁদে। নীলিমা রিম্মির আপন মা। ছোট থাকতে মারা গিয়েছিলেন। সেই থেকে রিম্মি সৎমায়ের কাছে মানুষ হচ্ছে। অন্তরা তার আপন বোন না। মুনও না৷ কিন্তু রিম্মি মুনকে খুব ভালোবাসে। তনিমার সাথে বিয়ের পর যখন অন্তরার বয়স দুইবছর, রিম্মির বাবা তরিকুল ইসলাম লুকিয়ে লুকিয়ে আরেকটা বিয়ে করেন। সেই ঘরের মেয়ে রিম্মি। রিম্মির যখন সাতবছর বয়স তখন তার মা মারা যায়। তারপর তরিকুল ইসলাম রিম্মিকে তনিমার কাছে নিয়ে আসে। তনিমা’র কাছে রিম্মি চোখের বালি। এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। মৃত সতীনের কন্যাকে সানন্দে মেনে নিয়ে সংসার করতে পারে এমন উদারমনা কি কেউ আছে? যদি থাকেও, তনিমা সেই দলের অন্তর্ভুক্ত নয়। একই কারণে অন্তরাও রিম্মিকে পছন্দ করেনা। যতদিন তরিকুল ইসলাম বেঁচে ছিলেন, রিম্মিকে তিনি আগলে রেখেছেন। অন্যমেয়েদের তুলনায় রিম্মিকেই বেশি ভালোবাসতেন। উনি মরে যাওয়ার পর রিম্মির কপাল আরও পুড়েছে। মেয়েটা একদম একা হয়ে গেছে। আপাতত তার আপন বলতে কেউ নেই। তবে মুনকে রিম্মি আপন বোনের মতো ভালোবাসে। মুনও তাই। রিম্মি ছাড়া কারও কোলে যেতে চায়না। অন্তরাকে মুন দু’চোখে দেখতে পারেনা। অন্তরা খুব ফরসা হলেও চেহারায় মাধুর্য্য একদমই নেই। অন্যদিকে রিম্মির গায়ের রঙ কালো হলেও সে অসম্ভব সুন্দর একটি মেয়ে। হরিণ চোখের ভিতর নীল মণি। সাথে লাল চুল। মুখের মধ্যে গুচ্ছ গুচ্ছ মায়া। মানুষ ওর দিকে একবার তাকালে মুগ্ধ হয়ে যায়। এই মেয়েটা যদি ফরসা হতো তাহলে দুনিয়ার সেরা সুন্দরী হতো। কিন্তু শ্যামলা রঙেও তাকে খারাপ লাগে না। বরং মনে হয়, এই রঙটা শুধু ওর জন্যই পারফেক্ট।

সাইকেল ভাঙার শোক রিম্মি দুইদিনেও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সাইকেলটা বাবার স্মৃতি ছিল৷ স্মৃতি এইভাবে নষ্ট হয়ে গেল? এমনভাবে সাইকেলটা ভেঙেছে যে এটা ঠিক করানোরও কোনো উপায় নেই। আজকে রিম্মির স্কুলে যেতে ইচ্ছে করছে না। সে কালও যায়নি। আজ না গেলে মায়ের কাছে কঠিন বকা খেতে হবে। তনিমা যদি রিম্মির আপন মা হতো তাহলে ওর মনের ক্ষতের গভীরতা বুঝতো। কিন্তু তনিমা রিম্মির আপন মা নয়৷ সমস্যাটা এখানেই। রিম্মি বাধ্য হয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হয়। কিন্তু সে আজ স্কুলে যাবে না। রিম্মি ঠিক করেছে আশেপাশের এলাকা এমনি ঘুরাঘুরি করবে। তারপর বাসায় ফিরে যাবে। মা ভাববে রিম্মি স্কুলে ছিল। ওদের স্কুল ইউনিফর্ম সাদা শার্টের সাথে চেক মিনি স্কার্ট। আর লম্বা দুই বেণী। রিম্মি মনমরা হয়ে গোলাপী ব্যাগ কাধে রাস্তায় হাঁটছে। সে এখন আছে মেলবোর্নের সবচেয়ে বিখ্যাত কিংস পার্কে। এখানে সাদা কবুতর উড়াউড়ি করছে মানুষ ওদের খাবার খাওয়াচ্ছে। রিম্মি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পার্কে বসল। জায়গাটা অসম্ভব সুন্দর। এ জায়গায় আসলে যে কারো মন ভালো হওয়ার কথা৷ রিম্মির মন ভালো হচ্ছে না। আশেপাশেই অনেক ল্যাম্বোরগিণি কার। রিম্মির ইচ্ছে করছে সব কয়টা ল্যাম্বোরগিণির কাঁচ হকিং স্টিক দিয়ে ভেঙে ফেলতে। আর ওই অদ্ভুত মানুষটা, যে রিম্মির সাইকেল ভেঙেছিল রিম্মি তার হাতের বাহু ভেঙে দিবে। মাথা ফাটিয়ে দিবে। তবেই না শান্তি! একটা ছেলে শিষ বাজাতে বাজাতে রিম্মির পাশে বসলো। কাধ দিয়ে রিম্মির কাধে ধাক্কা মারলো। ভ্রু নাচিয়ে বলল,
” স্কুল নেই?”
রিম্মি বিরক্তি নিয়ে বিপরীত দিকে তাকালো। এই মুহুর্তে সাহিলের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। ছেলেটা ওকে সবসময় বিরক্ত করে। প্রায় তিনবছর ধরে রিম্মির পেছনে পড়ে আছে। হাজারবার হাজার রকম ভাবে প্রপোজ করেছে৷ রিম্মি কখনো পাত্তা দেয়না। সাহিলের পুরো নাম সাহিল চ্যাটার্জী। সে বাঙালী হলেও হিন্দু। রিম্মিরা মুসলিম। এই ছেলের সাথে রিম্মির যায় না। কিন্তু সাহিলের মতে যায়। সে নাকি রিম্মির জন্য মুসলিম হতেও প্রস্তুত। এ ধরণের পাগলামীর কোনো মানে হয়? সাহিল রিম্মির উত্তর না পেয়ে আবার প্রশ্ন করল,
” মনখারাপ নাকি?”
রিম্মি হালকাভাবে বলল,
” হু।”
” কি হয়েছে?”
” অসুস্থ, জ্বর।”
” তাহলে বেরিয়েছিস কেন? বাসায় যা, শুয়ে থাক। রেস্ট কর।”
” বাসায় থাকলে রেস্ট করা হবে না। মা আমায় শুয়ে থাকতে দিবে? একশোটা খোটা মেরে কান ঝালাপালা করে ফেলবে। কাপড় ধোঁয়া, বাসন মাজা,ঘর মোছার মতো অসহ্য কাজগুলো করাবে। জ্বরের মধ্যে এসব করলে নাকি জ্বর ভালো হয়ে যায়। মাইনাসে মাইনাসে কাটাকাটি। ”
সাহিল হেসে বলল,” আজিব মা! এইসব কথা শুধু তোর মায়ের মুখেই শুনি। উনি কোন দেশ থেকে ডাক্তারী নিয়ে পিএইচডি করেছিল জিজ্ঞেস করিস তো।”
রিম্মি উত্তর দিল না। সাহিল রাগ দমিয়ে শক্তগলায় বললো,
” মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তোকে ওই জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসি।”
রিম্মি এবার মৃদু হাসলো। সাহিলের দিকে তাকিয়ে বললো,
” কিভাবে বের করবি?”
” কিভাবে আবার? বিয়ে করে..”
রিম্মি কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। সাহিল কথা ঘুরিয়ে বললো,
” তোর বিয়ে না তো। আন্টির বিয়ের কথা বলছিলাম। আন্টিকে একটা বিয়ে করিয়ে দিলেই তোর উপর অত্যাচার বন্ধ হয়ে যাবে।”
” তাই? তো মাকে দুইবাচ্চাসহ কে বিয়ে করবে?তোর বাবা?”
” হ্যা। ভালো বলেছিস তো। আমার বাবা যদি তোর মাকে বিয়ে করতে পারে তাহলে আমি কেন..”
রিম্মি মুখে আঙুল ঠেকিয়ে বললো,” চুপ। বাকিটা উচ্চারণ করলে আমি এখনি এখান থেকে উঠে যাবো।”
” তুই দিন দিন বহুত নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছিস।”
” অন্তরা আপু একটা ব্রিটিশের সাথে প্রেম করছে। ছেলের নাম ডার্ক। এই নিয়ে মায়ের আক্ষেপের শেষ নেই। উঠতে বসতে আপুকে থ্রেট দেয়। ওদের সম্পর্ক বেশিদূর আগাবে না। এসব দেখে আমি আগেই শতর্ক হয়ে গেছি। জীবনে আর যাই করি, কখনো ভিন্ন ধর্মী কারো সাথে সম্পর্কে জড়াবো না।”
সাহিল চুপ করে রইল। রিম্মি মুখে যাই বলুক, সাহিলের ধারণা রিম্মি মনে মনে তাকে নিশ্চয়ই পছন্দ করে। আর করবে নাইবা কেন? সে কি দেখতে কম সুন্দর? সাহিল বললো,
” তুই কি এখানেই বসে থাকবি?”
” আর কি করবো? স্কুলে যেতে ইচ্ছে করছে না।”
” আমার বাসায় চল।”
” গেলে?”
” একসাথে মুভি দেখবো৷ তুইও রেস্ট করতে পারবি। মা বাসায় আছে। তোকে দেখলে খুশিও হবে।”
রিম্মি উঠে দাড়াতে দাড়াতে বললো,” চল।”
সাহিলের মনে খুশির স্রোত বয়ে গেল। রিম্মি রাজি হবে সে ভাবেনি। হৃষ্টচিত্তে উঠে দাড়াতে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেল সাহিল। ” আউ” শব্দ করে কুকিয়ে উঠলো ব্যথায়। রিম্মি এতোক্ষণে খেয়াল করলো সাহিলের পায়ে ব্যান্ডেজ। অবাক হয়ে বললো,
” পায়ে কি হয়েছে?”
” ছোট্ট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে৷ তেমন কিছু না৷ তুই চল।”
” হাঁটতে পারবি?”
সাহিল এক হাতে কলার ঠিক করে আত্মবিশ্বাসের সাথে বললো,” না পারার কি আছে?”
রিম্মি আর সাহিলের বয়সের পার্থক্য দুই বছর। সাহিলের আঠারো। সে যে এলাকায় থাকে সেই এলাকার নাম লাকেম্বা। ওইখানে বেশিরভাগ বাঙালীদের বসবাস। সাহিল মেলবোর্নের একটা হোটেলে ওয়েটারের চাকরি করে। এভাবেই রিম্মির সাথে পরিচয় তারপর বন্ধুত্ব। ধীরে ধীরে ওরা এখন বেস্টফ্রেন্ড। ছেলে আর মেয়ে কখনো বেস্টফ্রেন্ড হতে পারেনা। এই কথা রিম্মি আগে বিশ্বাস করতো না। কিন্তু সাহিলের প্রপোজ্যাল পাওয়ার পর বিশ্বাস করে। আসলেই ছেলে-মেয়ের মধ্যে ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব সম্ভব না। সাহিলকে দেখতে অনেকটাই নীলাভ্রর মতো। বিশেষ করে ওর হাসিটা। নীলাভ্র যখন হঠাৎ হেসে উঠে, রিম্মির বুকে কাঁপন ধরে যায়। মনে হয় সাহিল হাসছে। প্রথম যেদিন নীলাভ্রকে রিম্মি দেখেছিল গাড়িতে বসে থাকতে। ও ভেবেছিল সাহিল। আমীর হয়তো সাহিলকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে৷ রিম্মিকে ধরে আনার জন্য৷ এসব ভেবে প্রথম প্রথম খুব ভয় পেয়েছিল রিম্মি। পরে অবশ্য নীলাভ্রর আসল পরিচয় জেনে ওর ভয় ঠিক হয়ে গেছে৷
সাহিলদের বাড়িটা তিনতলায়। সাদামাটা ফ্ল্যাট। ফ্লোরে সাদা টাইলস। বেডরুম দুইটা। একটা ডাইনিং স্পেস। কোনো ড্রয়িংরুম নেই। রান্নাঘর আর বাথরুম পাশাপাশি। মেইন ড্রয়িংরুমে একটা এডজাস্ট বাথরুম আছে। রিম্মি ঘরে ঢুকেই ভয়ে চুপসে গেল। বাসায় কেউ নেই৷ সারা বাড়ি থমথম করছে। সাহিল তো বলেছিল বাসায় মা আছে। অথচ রিম্মি দেখছে কেউ নেই। সে ক্ষেপে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” এসব কি সাহিল? তুই না বলেছিলি আন্টি বাসায় আছে? তাহলে আন্টি কই?”
সাহিল মাথা চুলকে বললো,” সরি রিম্মি। ভুলে গেছিলাম। মা আর বাবা তো গত সপ্তাহেই কলকাতা চলে গেছে। পূজোর ছুটি শেষ করে আসবে। আমি পরীক্ষার জন্য থেকে গেছি।”
রিম্মি রুদ্রমূর্তি ধারণ করে বললো,” আন্টি-আঙ্কেল কলকাতা চলে গেছে এই ব্যাপার তোর মনে ছিলনা? এইটা আমাকে বিশ্বাস করতে বলছিস?”
” বিশ্বাস না করার কি আছে? মানুষ ভুলে যেতে পারেনা? আমি কি শ্রীরাম কৃষ্ণ? যে আমার সব মনে থাকবে?”
রিম্মি রাগে কিড়মিড় করে বললো,” এক মুহুর্তও এখানে থাকবো না আমি। গেলাম।”
রিম্মি কাধের ব্যাগ উঠিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। সাহিল দৌড়ে এসে রিম্মির পথ আটকায়। হাত ধরে মিনতির সুর বললো,” সরি রিম্মি। এজন্য চলে যাবি কেন? অন্তত আধঘন্টা থাক।”
রিম্মি চোয়াল শক্ত রেখেই বললো,” এক মুহুর্তও না।”
সাহিল হঠাৎ মাথায় হাত দিয়ে ‘ উঁহু’ টাইপ শব্দ করল। তারপর দূর্বল ভঙ্গিতে সোফায় বসে পড়ল। রিম্মি কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ভয় নিয়ে সেও সোফায় বসলো। সাহিলের কাধে হাত রেখে বললো,
” দোস্ত কি হয়েছে?”
সাহিল রিম্মির ডানহাতটা ধরে নিজের গলায় বুকে মালিশ করতে করতে বললো,
” দেখ রিম্মি, আমার মনে হয় জ্বর চলে এসেছে। থার্মোমিটার ছাড়াই বোঝা যাচ্ছে। জ্বর একশো পাঁচ।”
” একশো পাঁচ আবার কারো জ্বর হয় নাকি? তাহলে তো তোর গাঁ-ই পুড়ে যেতো।”
” পুড়ছে তো। অনেক পুড়ছে। তুই বুঝতে পারছিস না? কতটা পুড়ছি আমি।”
রিম্মি ধমক দেওয়ার চেষ্টা করলো,” সাহিল!”
সাহিল রিম্মির ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে বললো,” শশশ।”
এটুকু বলেই রিম্মির পিঠ জড়িয়ে ধরলো সাহিল। রিম্মি চোখ বড় করে কাপা কাপা গলায় বললো,
” কি করছিস?”
রিম্মির মুখ চিমসে গেছে। গলা শুকিয়ে খা খা করছে। ভয় লাগছে ভীষণ। সাহিলের মতিগতি আন্দাজ করা যাচ্ছে না। সাহিল রিম্মির অত্যন্ত কাছে এসে আবেশী কণ্ঠে বললো,
” জানি তুইও আমাকে ভালোবাসিস। শুধু মুখে বলতে পারিস না। বলতে হবে না রিম্মি। তুই বলার আগেই আমি তোর মনের কথা বুঝি।”
রিম্মির ইচ্ছে করছিল সাহিলকে চড় দিতে। কিন্তু সেই সাহস হয়ে উঠলো না। এখন চড় দেওয়া মানে সাহিলকে রাগিয়ে দেওয়া। রেগে গেলে সাহিল ভয়ংকর হয়ে উঠবে। রিম্মির পক্ষে তখন পরিস্থিতি মোকাবিলা করা আরও কঠিন হবে। রিম্মি প্রথমে শান্ত ভঙ্গিতে সাহিলকে বুঝানোর চেষ্টা করলো,
” সাহিল শোন, তুই যেমন ভাবছিস তেমন কিছুই না। আমি যদি সত্যিই তোকে ভালোবাসতাম তাহলে এতোকিছুর পরোয়াই করতাম না। কিন্তু আমি তোকে ভালোবাসি না। আমাদের মধ্যে এসব কখনো সম্ভব না। মা জানলে আমাকে মেরেই ফেলবে। তুই যদি এমন করিস তাহলে আমাদের ফ্রেন্ডশীপটাও কিন্তু নষ্ট হবে। ভেবে দ্যাখ।”
সাহিল রিম্মির কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে রিম্মির ঠোঁটে কিস করলো। রাগে রিম্মির মস্তক ফেটে যাচ্ছিল।আকস্মিক চড় দিয়ে বসলো সাহিলকে। সাহিল হতভম্ব। রিম্মি যেই ভয়টা পেয়েছিল সেটাই হলো। সাহিল রেগে আরও ভয়ানক হয়ে উঠল। একহাতে রিম্মির গাল চেপে ধরে অন্যহাতে রিম্মির শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করল। রিম্মি ডাঙায় তোলা মাছটার মতো ছটফট শুরু করে৷ সাহিল ধৈর্য্য ধরতে না পেরে রিম্মির শার্ট টেনে ছিড়ে ফেললো। রিম্মি হু হু করে কেঁদে উঠে। সাহিলের উত্তেজনা তখন চরমে। এই অবস্থায় কলিংবেল বাজলো। সাহিল ঘুরে তাকায় দরজার দিকে। সুযোগ পেয়ে রিম্মি সাহিলকে সজোরে ধাক্কা মেরে বেডরুমে ঢুকে দরজা আটকে দিল। সাহিল দৌড়ে গিয়েও ওকে আটকাতে পারলো না। এই মুহুর্তে সবচেয়ে রাগ লাগছে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির উপর৷ এতো ভুল সময়ে কেউ আসে? আজকে রিম্মিকে কাবু করতে পারলেই সারাজীবনের জন্য পেয়ে যেতো। বাঙালী মেয়েদের কাছে সম্মান অনেক দামী। একবার ফিজিক্যাল রিলেশন হয়ে গেলে রিম্মি আর সাহিলকে ইগনোর করতে পারবে না। সর্বনাশা কলিংবেল বেজেই যাচ্ছে। সাহিল কুচকানো শার্ট ঠিক করতে করতে মেজাজ নিয়ে দরজা খুললো। তার ভ্রুতে গুরুতর ভাজ। যেই আসুক, চিবিয়ে খাবে। কিন্তু বাহিরে দাঁড়ানো মানুষটিকে দেখে শরীরের সমস্ত হাওয়া এক নিমেষে বেরিয়ে যায়। প্রাণপাখি ছটফট শুরু করে। সাহিল আতঙ্কে জড়োসড়ো হয়ে সালাম দিল,
” আসসালামু আলাইকুম, ভাই।”
হিন্দু হয়েও তাকে সালাম দিতে হচ্ছে। কারণ তার সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটি মুসলিম। আর সাহিল তার প্রতি যথেষ্ট অনুগত। আমীর চশমা খুলে বললো,
” শরীর ঠিকাছে তোমার? অনেকদিন ধরে আসছো না। তাই দেখতে এলাম।”
সাহিল কৃত্রিম উত্তেজনা নিয়ে বললো,” আপনি আমার বাসায় এসেছেন আমাকে দেখতে? আমার কত সৌভাগ্য ভাই! ভেতরে আসেন। আপনাকে যে কই বসতে দিবো। আমার বাসায় আপনাকে বসানোর উপযুক্ত জায়গাও নেই।”
আমীর হেসে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,” আরে এতো ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই। বাসা তো যথেষ্ট সুন্দর তোমার। আন্টি-আঙ্কেল কেউ নেই নাকি?”
আমীর আরাম করে সোফায় বসলো। সাহিল মাথা নিচু করে আমীরের সামনে দাড়িয়ে আনুগত্যের সুরে বললো,
” মা-বাবা পূজোর ছুটিতে দেশে গেছে ভাই।”
” ও আচ্ছা, তোমার তো আবার পূজো আছে। তুমি যাওনি?”
” আমার যে পরীক্ষা ভাই!”
” ওহ, না গিয়ে ভালোই করেছো। তোমাকে আমার দরকার আছে।”
” কি দরকার ভাই?”
সাহিল মনে মনে দোয়া করছে আমীর যেন তাড়াতাড়ি বিদায় হয়। এর আগে যদি রিম্মি ঘর থেকে বের হয়ে যায় আর আমীরকে সবকিছু বলে দেয় তাহলে আজকের দিন হয়তো সাহিলের জীবনের শেষ দিন হবে।

চলবে

( গত পর্বে আমীর রিম্মির বাসায় ত্রিশটা সাইকেল নিয়ে এসেছিল। কিন্তু সেটা তিনদিন পর। এই ঘটনা তিনদিনের আগে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here