ধূসর রঙে আকাশ পর্ব-৪

0
1881

#ধূসর_রঙে_আকাশ
#পর্ব_৪
লিখা: Sidratul Muntaz

তোহা চোখ খুলে তাকাতেই নিস্তব্ধ রুমে নিজেকে আবিষ্কার করল৷ মাথার উপর সবুজ ফ্যান শা শা শব্দে ঘুরছে। তোহা চোখ বন্ধ করে আবার তাকায়। এইবার বুঝতে পারলো এটা কোন জায়গা। কলেজের সিকরুম৷ অসুস্থ হলে মেয়েদের এখানে এনে শুয়িয়ে রাখা হয়। বিশাল একটা খাট আর খাটের পাশে কাঠের টেবিল ছাড়া পুরো রুমে অন্য কিছু নেই। টেবিলের উপর ঠান্ডা পানির বোতল। তোহা আস্তে-ধীরে শোয়া থেকে উঠে বসল। ঠান্ডা পানির বোতলে চুমুক দিয়ে জ্ঞান হারানোর আগের স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করতে লাগল। যখনি মনে পড়ল,মিতুর ধাক্কায় সে চীফ গেস্টের বুকে লুটিয়ে পড়েছিল তখনি বিস্ময়ে গলায় পানি আটকে যায়। মুখ ফুড়ে কয়েক ফোটা জল ছিটকে পড়ে। তোহা খুব কষ্টে ঢোক গিলে শ্বাস নিল। আশেপাশে সতর্ক চোখে তাকালো। একা রুমে বসে থাকতে ভয় লাগছে। সবাই কই?অডিটোরিয়ামে কি একবার যাবে সে? যদি এখনো শাহ সেখানে উপস্থিত থাকে? তোহার হার্টবিট ফাস্ট হয়ে গেল। বোতলের মুখ দ্রুত লাগিয়ে মনে মনে বলল,
” না বাবা, কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। এখানেই বসে থাকি চুপচাপ।”
তোহা গুটিশুটি মেরে বসল। ভয়ে হাত-পা থরথর করছে। হঠাৎ কোথ থেকে চাপাস্বর ভেসে এলো। তোহার ভ্রু কুচকে গেল। কান খাড়া হয়ে এলো। মস্তিষ্ক সচল হয়ে উঠল চাপাস্বরের প্রত্যেকটি শব্দ স্পষ্ট বোঝার চেষ্টায়। সিকরুমের দরজা দুইটা। একটা বাহিরে বের হওয়ার দরজা। আরেকটা অন্যরুমে প্রবেশের দরজা। আওয়াজটা আসছে ওই রুম থেকেই। কিন্তু ওই রুম তো মেয়েরা জামা-কাপড় বদলানোর জায়গা। এখন তোহা যে কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছে সেটা মেয়েলী নয়। খুব সুন্দর,স্পষ্ট, ভরাট কোনো পুরুষালী কণ্ঠ। বোঝাই যাচ্ছে কোনো যুবক কথা বলছে। তোহার মাথায় আবার একই শব্দ চাড়া দেয়,’শাহ’। অডিটোরিয়ামে বসে যার স্পিচ শুনেছিল তারই গলা এটা। পার্থক্য শুধু এক জায়গায়। তখন কথা বলছিল উচ্চশব্দে আর এখন ধীরগলায়। তোহা কান পেতে কিছুটা শোনার চেষ্টা করল। বুকের ভেতর দ্রিম দ্রিম শব্দ হচ্ছে,ভয় লাগছে। তাও কথা শোনার আগ্রহ দমিয়ে রাখা গেল না। তোহা শুনল।ভেসে আসা শব্দগুলো অনেকটা এমন,
” ছুড়ি না, হীরা লাগবে। আগেই শিরা কেটে দিলে তো রক্তক্ষরণ হতে হতে দশমিনিটেই শেষ। মুখ খুলবে কখন? তুমি একটা কাজ করো, আমার ল্যাবে চলে যাও। সেখানে.. হোয়াইট… ছোট্ট.. একদম নিচের… কর্ণারে একটা…শিশি পাবে। কাচের.. হীরক চূর্ণ! সাথে পয়জন… দুজনের শরীরে… পড়ে মেখে দিবে। যতক্ষণ…থাকবে… যন্ত্রণা..। ”
তোহা অস্পষ্ট কথাগুলো ভালো করে শোনার জন্য দেয়ালে কান লাগিয়ে দিল। একদম দেয়ালের সাথে মিশে দাড়াল। এরপর স্পষ্ট শুনল,
” চামড়া ফেটে রক্ত বের হতে থাকবে। ম্যানেজারের মাথা পাথর দিতে থেতলে দেওয়া হবে। চোখ আটকানো হবে পেরেক দিয়ে। এসব দেখে যদি অফিসার সেন্সলেস হয়ে যায় আগে তার সেন্স ফিরাতে হবে। তারপর আবার একই কাজ। সবকিছু যেন সে স্বচক্ষে দেখে। যতক্ষণ স্বীকার না করবে এই পদ্ধতি চলতেই থাকবে।”
তোহা খেয়াল করল ওর বুকের একপাশ অবশ হয়ে আসছে। কেমন কেমন জানি লাগছে। কিছু কথা অস্পষ্ট তো কিছু কথা ভয়ংকর!
” এতেও না হলে জ্যান্ত মানুষের বিগলিত রক্ত পান করাবে। একজনের রক্ত অন্যজনকে।”
রক্তপানের কথা শুনে তোহা ঠান্ডা থাকতে পারল না। মুখ ফূড়ে বমি বেরিয়ে আসতে চাইল। ওয়াক, ওয়াক শব্দ করে পিছিয়ে গেল তোহা। আমীর আওয়াজ শুনে শতর্ক হয়। মোবাইলের অপরপাশের মানুষটাকে বলল,
” আচ্ছা রাখি।”
তোহা যখন বুঝতে পারে আমীর বের হচ্ছে তখন নিজের মুখ চেপে ধরল। চোখের পলক দ্রুত ফেলতে লাগে। আতঙ্কে জবুথুবু অবস্থা। হৃৎপিন্ড লাফাতে শুরু করে স্প্রিং এর গতিতে। মনে হয় এখনি আমীর বেরিয়ে এসে তার পেটে ছুড়ি ঢুকিয়ে দিবে। সে তো সব শুনে ফেলেছে। আমীর তাকে আর বাঁচতে দিবে না। এদিকে মুখভর্তি বমি নিয়ে তোহার দম আটকে আসছে। আমীর পর্দা সরিয়ে বের হতেই তোহা বমি আর শ্বাস একসাথে ছেড়ে দিল। কিছুটা বমি ছিটকে পড়ল আমীরের টিশার্টে। আমীর কপাল কুচকে বলল,
” এহ-হি-রে!”
তোহা ঢলে পড়ে যেতে নিচ্ছিল আমীর একহাত বাড়িয়ে ওকে ধরল। তোহা বেহুশ হতে নিয়েও হয়নি। ক্লান্ত গলায় অস্ফুট স্বরে বলল,
” কাটবেন না, মারবেন না। আমি কিছু বলবো না, করবো না…”
বলতে বলতেই তোহার চোখ বন্ধ হয়ে আসল। আমীর দ্রুত ওকে বিছানায় নিয়ে যায়। টেবিল থেকে টিস্যু বক্স নিয়ে তোহার নোংরা জামা পরিষ্কার করতে করতে বলল,
” কি বলবে না তুমি? কি শুনেছো?”
তোহা নিভু নিভু চোখে তাকায়। যেন এখনি দম চলে যাবে। মরে যাবে। আমীর তোহার গালে আলতো করে চড় দিয়ে বলল,
” এই মেয়ে শুনতে পাচ্ছো? কি শুনেছো তুমি? এভাবে লুকিয়ে কারো কথা শোনা ম্যানার্সের মধ্যে পড়ে?”
তোহার এদিকে জান যাওয়ার অবস্থা অন্যদিকে এই লোক তাকে ম্যানার্স শিখাচ্ছে! কি আশ্চর্য! আমীর ঠান্ডা বোতলের পানি নিয়ে তোহার মাথা ভিজিয়ে দিল। কিছুটা পানির ঝাপটা চোখেমুখে ছিটিয়ে দিল। থার্মোমিটার বের করে শরীরের তাপমাত্রাটাও মেপে নিল। তারপর আস্তে-ধীরে তোহার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
” শুয়ে থাকো, তোমার প্রচুর রেস্ট দরকার।”
তোহা অদ্ভুত এক মাদকময় সুভাষ পেল। মনে হচ্ছে সুগন্ধটা কোনো ঔষধের। এই ঘ্রাণ তাকে নেশার মতো টানছে। ঔষধের ঘ্রাণও যদি এতো সুন্দর হয় তাহলে সারাজীবন ঔষধ খেয়ে কাটিয়ে দিতেও কোনো সমস্যা হবে না। উফফ এসব কি ভাবছে সে? এখন এসব ভাবার সময় না। আমীরের টি-শার্টের কলার মুষ্টিতে নিয়ে রেখেছে তোহা। চোখ বন্ধ অবস্থায় আবারও বলল,” আমি কাউকে কিচ্ছু বলবো না। আমাকে মারবেন না।”
আমীর বিরক্তির মতো শব্দ করল,” উফফ! মারবো কেন? তোমাকে মেরে আমার লাভ কি?”
তোহা ক্লান্তিতে হাত-পা ছেড়ে দেয়। ডানহাতটা আমীরের বুকে এসে ঠেকে। আমীর তোহার হাতটা নিজের হাতে নেয়। একবার দেখলো। ফরসা হাতের লম্বা লম্বা নখ। চিকন আঙুল। কোমল চামড়া। যেন একটু শক্ত করে ধরলেই ব্যথা পাবে মেয়েটা। আমীর আস্তে আস্তে মালিশ করে দেয় হাতে। এই মেয়ে সব ভুলে গেলেই ভালো। অডিটোরিয়ামে প্রচুর ভীড় ছিল। কলেজ প্রাঙ্গনে কেউ না কেউ সারাক্ষণ আসা-যাওয়া করে। ইমারজেন্সী ফোন কলস এটেন্ড করার জন্য আমীর এর চেয়ে ভালো জায়গা আর খুঁজে পায়নি।এ জায়গাটা নিরব, তোহাও সেন্সলেস ছিল। আমীর ভাবেনি এতো জলদি ওর জ্ঞান ফিরে আসবে৷ তাহলে আরও শতর্ক থাকতো। এই মেয়ে কি শুনেছে? কতটুকু শুনেছে? ভয় পেয়ে স্ট্রোক করবে না তো? কোনো নিষ্পাপ মেয়ের মৃত্যুর কারণ আমীর হতে চায়না। আমীরের এটুকু যত্নও তোহার কাছে অমৃতের মতো লাগে। তোহা বুঝে না এ কেমন অনুভূতি? কখনো তীব্র ভয় আত্মাকে দূর্বল করে দেয় আবার কখনো ভালোলাগার আবেশ মনে শক্তি যোগায়। এ যেন এক মিশ্র অনুভূতি ঘায়েল করেছে তাকে! শাহেরা বানু টিপট হাতে রুমে প্রবেশ করলেন। উনার গায়ে নীল ইউনিফর্ম। আমীর তোহার হাত ছেড়ে উঠে দাড়াল৷ শাহেরা জিজ্ঞেস করলেন,
” চা খাইবেন স্যার?”
আমীর হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে বলল,
” না৷ আমার কিছু লাগবে না। এই মেয়েটাকে স্যালাইন দিয়েন। ওর শরীর প্রচুর দূর্বল।”
” আইচ্ছা।”
” আর ফ্লোরটা পরিষ্কার করবেন। বমি করেছে। ওকে একটা বমির ট্যাবলেটও দিবেন।”
” জ্বী।”
আমীর সিকরুম থেকে বেরিয়ে গেল৷ তোহা তখনো চোখ বন্ধ করে বলছিল,” মারবেন না, প্লিজ মারবেন না।”
শাহেরা বানু ভ্রু কুচকে চেয়ে রইলেন। তোহা হঠাৎ উঠে আরেক দফা বমিতে সারা বিছানা ভাসিয়ে দিল। শাহেরা মাথায় হাত রেখে বললেন,” হায়! কাম সারসে!”
তোহা দ্বিতীয়বার জ্ঞান হারায়। এরপর যখন তার জ্ঞান ফিরে, সে চোখ পিটপিট করে আশেপাশে তাকালো। তখন তার একপাশে মিতু অন্যপাশে কাকলী। তোহার ভেজা মুখ তোয়ালে দিয়ে মুছিয়ে দিল কাকলী। তোহা পূর্ণরূপে চোখ খুলল। ফারজানা মিস একদম বরাবর চেয়ারে বসে আছেন। চোখে চোখ পড়তেই ম্যাডাম মিষ্টি করে হাসলেন। তোহা শোয়া থেকে উঠতে উঠতে ক্ষীণ গলায় বলল,
” মিস আসসালামু আলাইকুম।”
ফারজানা মিস বিচলিত হয়ে বললেন,” থাক থাক, উঠতে হবে না। শুয়ে থাকো। বিশ্রাম নাও।”
মিতু বলল,” ফাইনালি চোখ খুলেছিস। আমি তো ভেবেছিলাম আজকে আর উঠবিই না।
তোহা প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে বলল,
” সবাই কোথায়?”
আসলে সে জানতে চাইছিল শাহভীর খান কোথায়!
কাকলী বলল,” কিছুক্ষণ আগেও এই জায়গায় পিপড়ার মতো মেয়েরা গিজগিজ করছিল। তুই চোখ খুলে এতো মানুষ দেখলে আবার অজ্ঞান হয়ে যেতি।
এজন্য শাহভীর খান সবাইকে বের করে দিয়েছেন। শুধু আমাদের থাকতে বলেছেন তোর খেয়াল রাখার জন্য। ”
তোহা বিস্মিত গলায় প্রশ্ন করল,” শাহভীর আমীর হোসাইন খান? আমার খেয়াল রাখতে বলেছেন?”
বুকের মধ্যে শব্দটা ঝংকার তুলল। একটু আগের ঘটনা আবার স্মৃতিতে ভেসে উঠছে। মনের অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। দুমদাম শব্দ হচ্ছে বুকে। যেন কেউ ঢোল বাজাচ্ছে। ফারজানা মিস কপাল কুচকে বললেন,
” এভাবে বলে না কাকলী, বলতে হয় স্যার শাহভীর খান। উনাদের নামের আগে স্যারযুক্ত করা ভদ্রতা। এটা উনাদের সম্মান।”
কাকলী অনুগত মুখে বলল,” ওকে মিস।”
ফারজানা উঠে দাড়ালেন। শাড়ির ভাজ ঠিক করতে করতে বললেন,
” তোমরা ওর খেয়াল রাখো। আমি করিডোর হয়ে আসছি।”
ফারজানা মিস চলে যেতেই মিতু এক্সাইটেড হয়ে বলল,
” তোহার বাচ্চা, তোর যে কি রাজকপাল! জানিস কি হয়েছে অডিটোরিয়ামে? ”
কাকলী উত্তেজিত গলায় বলল,” আমাকে বলতে দে প্লিজ।”
মিতু বলল,” একদম চুপ, আমি বলবো।”
তোহা মহাবিরক্ত হয়ে বলল,” উফফ, কেউ একজন বল প্লিজ। মিতু তুই-ই বল।”
কাকলী মিতুকে থামিয়ে বলল,” আগে বল তুই শুনতে চাস নাকি সরাসরি দেখতে চাস?”
” মানে?”
মিতু বলল,” অডিটোরিয়ামে কাকলী অনেক কিছু ভিডিও করেছে। ওই কাইক্কা, ওকে সব দেখা প্লিজ।”
কাকলী ফোন বের করল। তোহা বলল,
” তোর কাছে ফোন কিভাবে? কলেজে তো ফোন আনা নিষেধ। ”
” আরে এটা আজাদ আঙ্কেলের ফোন(কলেজের সহকারী কর্মচারী)। বাসায় ফোন করার জন্য নিয়েছিলাম। তারপরই তো তুই অঘটন ঘটালি। তাই সুযোগ পেয়ে ভিডিও করেছি।”
কাকলী ভিডিও প্লেয়ার অন করল। দৃশ্যটা শুরু হয়েছে যখন হাজার মানুষের ভীড় ঠেলে শাহভীর খান তোহাকে পাঁজা কোলায় নিয়ে অডিটোরিয়াম থেকে বের হচ্ছেন। উনার চোখেমুখে দুশ্চিন্তা। যেন উনার খুব কাছের কেউ অসুস্থ হয়েছে। তোহা বাচ্চাদের মতো হাত পা ছড়িয়ে রেখেছে। অনেক কিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। মানুষের ক্যা কু শব্দের অত্যাচারে কোনো কথাই ঠিকমতো বোঝা যাচ্ছে না। শাহভীর খান মিতুর কানে কানে কি যেন বললেন। মিতু উত্তর দিল। এই দৃশ্যে এসে মিতু নিজে থেকেই বলল,
” উনি আমাকে জিজ্ঞেস করছিলেন আমাদের সিকরুম কোনদিকে। আমি দেখিয়ে দিয়েছি।”
এরপর ভিডিও শেষ। কাকলী আরেকটা ভিডিও অন করল। এবার তোহা বিছানায় শুয়ে আছে। শাহভীর খান খুব ব্যস্ত হাতে তোর চোখেমুখে পানি ঢালছেন। অভিজ্ঞ চোখে তোহাকে পরখ করলেন। গালে দুই একটা টোকার মতো দিলেন। মাথায় ম্যাসাজ করলেন। হাত নিয়ে হাতে ম্যাসাজ করলেন। পায়েও করলেন। এসব দেখে তোহার নিঃশ্বাস স্তব্ধ হওয়ার উপক্রম। ভাগ্যিস তখন সে হুশে ছিল না। নাহলে তো ভয়ে কাপতে কাপতেই প্রাণ যেতো। তোহার শরীরে অদ্ভুত এক শীহরণ প্রবাহিত হচ্ছে। সে জানে না এ কেমন স্রোত। তোহার চোখে বিস্ময় দেখে মিতু বলল,
” এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। উনি ডাক্তার মেটেরিয়াল। এটুকু তো করবেই।”
কাকলী হেসে বলল,” তুই আবার ভাবিস না উনি তোকে স্পেশাল কেয়ার করছে। আসলে উনি সবারই খেয়াল রাখে। একটু আগেই তোকে ধরতে গিয়ে মিতুর দরজার কোণার সাথে লেগে হাত কেটে গেছিল। উনি নিজে অ্যান্টিসেপ্টিক লাগিয়ে দিয়েছেন। ”
তোহা তাকিয়ে বলল,
” ওইটার ভিডিও কই?”
” ভিডিও করিনি। খালি ছবি তুলেছি।”
কাকলী ছবিটা দেখালো। শাহভীর খান মিতুর হাত ধরে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিচ্ছেন। তোহার মাথা ঝিম ঝিম করতে লাগল। ফারজানা মিস শাহভীর আমীর হোসাইন খানকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলেন। তোহা আৎকে উঠল আমীরকে দেখে। এই লোক এখনো যায়নি কেন? আমীর তোহাকে সুস্থ দেখে মুচকি হেসে তোহার সামনে বসল। তোহার বুকের ভেতর ভূমিকম্প শুরু হয়। আমীর সেই কম্পন আরও বাড়িয়ে বলল,
” কেমন আছো তোহা? এখন কি একটু বেটার ফীল করছো? আমার মনে হয় তোমার ডিশক্লোথ গর্ডে ঝামেলা আছে। চেঞ্জ আনা দরকার।”
তোহা ভ্রু কুচকে ঢোক গিলল,” জ্বী?”
আমীর আরেকটু হেসে বলল,
” বুঝোনি? মানে খাদ্যাভ্যাস। সকালে কি না খেয়েই কলেজে চলে আসো? এটা খুবই বদভ্যাস। কখনো করবে না। এখন থেকে নিয়মমাফিক চলবে। আচ্ছা তুমি সারাদিন কি কি খাও?”
তোহা মনে মনে ভাবল,” আর যাই খাক, সে কখনো জীবিত মানুষের গলিত রক্ত খায় না।” আবার বমি আসতে চাইল৷ তোহা মুখে হাত দিয়ে ওয়াক ওয়াক শুরু করল। সাথে সাথে মিতু পলিথিন এগিয়ে দিল। তোহা পলিথিন ধরল না। বমি থেমে গেছে। আমীর তোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। তোহা ভয়ে কেপে কেপে উঠল। নিজেকে সংবরণ করল। এখানে আরও মানুষ আছে। ফারজানা মিস আছে৷ তার ভয় পাওয়ার কারণ নেই। তবুও প্রত্যেকটি রগ কাপছে, ব্যথা করছে। শারীরিক যন্ত্রণা অনুভূত হচ্ছে। তোহার ভয়ের কারণ আর কেউ না জানলেও আমীর জানে। তবুও সে উপদেশ দেওয়া শুরু করল,
” এখন থেকে ক্যালরিযুক্ত খাবার বেশি করে খাবে। তোমার দেহে প্রচুর ক্যালরি ঘাটতি আছে। সকালের নাস্তায় ডিম, রুটি, দই পনির এসব খাওয়া যেতে পারে। মাখন,দুধের সর,কাজুবাদাম এসব তোমার শরীরেত জন্য বেশি দরকারী। দিনে অন্তত দুইবেলা চা খাবে। শরীর চাঙ্গা থাকবে৷ চা ভালো না লাগলে কফি খাবে। তাও খাবে। আমি তোমাদের জন্য একটা চার্ট লিখে দিবো। মিতু, কাকলী, তোমাদের কাজ কি জানো? একটা গ্রুপ ক্রিয়েট করবে। সবাই মিলে চার্টটা ভবনের সামনে টানিয়ে রাখবে আর সবাই যেন সেটা মেনে চলে। এখন থেকে আর কেউ অসুস্থ বা দূর্বল থাকবে না। শুধু তোহা না, কলেজের সবাই ফলো করবে।”
সবাই আনুগত্য প্রকাশ করতে মাথা নাড়ল। শুধু তোহা থম মেরে বসে রইল।
আমীর চিন্তিত গলায় বলল,” অবশ্য শারীরিক দূর্বলতা ঘুমের কারণেও হতে পারে। তুমি রাতে কয়টায় ঘুমাও তোহা?”
তোহার হাত-পায়ের সাথে গলাও অসাড় হয়ে আসছে। সে কোনো উত্তরও দিতে পারেনা। আমীর বলল,
” আচ্ছা শোনো, দৈনিক আটঘণ্টা ঘুমানো কম্পালসারি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে যখন তখন আটঘণ্টা ঘুমালেই হবে। আবার ব্রেক দিয়ে ঘুমালেও হবে না। যেমন বিকালে চারঘণ্টা ঘুমিয়ে সারারাত জেগে সকালে আবার চারঘণ্টা। এমন করলে কিন্তু হবে না। রাত দশটার মধ্যে শুয়ে পড়বে৷ আর সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠবে। স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট করে কলেজে আসবে। মনে থাকবে?”
তোহা ধীরে মাথা নাড়ল। আমীর বলল,
” ভেরি গুড।”
আবার ঠোঁটে হাসির ঝলক ফুটিয়ে উঠে দাড়াল আমীর। জানালার সামনে গিয়ে পর্দা সরালো। রোদেলা ঢেউ তোহার মুখশ্রীতে এসে বারি খায়। তোহা চোখমুখ কুচকে নেয়। আমীর বলল,
” এই রুমটা অনেক ইম্পোর্ট্যান্ট। প্রত্যেকদিন এটা পরিষ্কার করা উচিত। আর খোলামেলা রাখতে হবে। অসুস্থ রোগীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ এখানে নেই। খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা করা দরকার।”
তোহা বুঝতে পারছে না উনি হঠাৎ তোহার প্রতি এতো কনসার্নড কেন হচ্ছেন? উনার তো রেগে থাকা উচিৎ ছিল। তাহলে? তবে নিজেকে খুব ইম্পোর্ট্যান্ট মনে হচ্ছে তোহার। মনে হচ্ছে আমীর নয়, আজকের চীফ গেস্ট তোহা নিজেই।
আমীর পকেটে হাত রেখে তোহার সামনে দাড়িয়ে কোমলচিত্তে হাসল। বলল,” বাই তোহা৷ টেক কেয়ার।”
তারপর ফারজানা মিসের সাথে বেরিয়ে গেল।
কাকলী নিজের কাধ দিয়ে তোহার কাধে ধাক্কা মেরে বলল,” টেক কেয়ার!”
তার গলায় রসিকতার সুর। মিতু খিকখিক করে হেসে উঠল। তোহার বিরক্ত লাগছে। এই ভ্যাম্পায়ারের বংশধর তাকে কত কিছু খাওয়ার পরামর্শ দিল। কই? রক্ত খাওয়ার পরামর্শ তো দিল না!

নীলাভ্র ভোরবেলা বাসা থেকে বের হয় নেভি ব্লু চেক শার্ট পড়ে। সকালের দিকে হালকা শীত শীত অনুভূত হয় প্রতিদিনই। যত বেলা বাড়তে থাকে ততই সূর্য তেজস্বী রূপ ধারণ করে। রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধভাবে বিল্ডিং। বারান্দাগুলো গাছ দিয়ে ভর্তি। আজকাল মানুষের সব শৌখিনতা যেন বারান্দায়।ফুলে,গাছে,সবুজে সাজিয়ে রাখে বারান্দাগুলো। এতে অবশ্য রাস্তার সৌন্দর্য্যও বৃদ্ধি পায় বহুগুণ। নীলাভ্র পকেটে হাত রেখে আশেপাশের বিল্ডিংয়ের বারান্দাগুলো দেখতে দেখতে হেটে যায়। প্রতিদিন ভোরেই সে বের হয়। হাঁটতে হাঁটতে পার্ক পর্যন্ত যায়। সেখানে কিছুক্ষণ সময় হাটাহাটি করে, শারীরিক ব্যায়াম। তারপর বাসায় ফিরে গোসল করে ভার্সিটি যায়। নীলাভ্র উপরে তাকিয়ে হাঁটছিল বিধায় নিচে খেয়াল করেনি। কিছু একটার সাথে হোচট খায়। একটা পিচ্চি সামনে এসে পড়েছে। নীলাভ্র পিচ্চিটাকে ধরে বলল,
” ব্যথা পেয়েছো?”
পিচ্চিটা হাসিমুখে তাকালো। মিষ্টি হাসি। নীলাভ্র ছোট মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
” সরি।”
মেয়েটা কাধ ঝাকিয়ে বলল,” ব্যাথা পাইনি।”
নীলাভ্র একটু হেসে জিজ্ঞেস করল,
” নাম কি তোমার?”
” মুন।”
নীলসভ্র আশেপাশে তাকালো। মুনের গার্জিয়ানকে দেখার জন্য। তখনি চোখে পড়ল একটা মেয়ে ব্যাগের ভিতর কি জানি খুজতে খুজতে গেইট দিয়ে বের হচ্ছে। মুনও এ বাসার গেইটের সামনে দাড়িয়ে। নীলাভ্রর চোখ বেরিয়ে আসতে চাইল রিম্মিকে দেখে। রিম্মি যখন নীলাভ্রকে দেখল, সে থমকে দাঁড়ালো। নীলাভ্র একবার বাচ্চা মেয়েটির দিকে তাকালো তারপর আবার রিম্মির দিকে। মুনের সাথে রিম্মির চেহারার অনেক মিল। এটা কি রিম্মির মেয়ে! নীলাভ্র উত্তর জানতে মুনের দিকে ঝুঁকে প্রশ্ন করল,
” তোমার মা?”
মুন হাসিমুখেই মাথা নেড়ে বলল,” উহুম,বোন।”
নীলাভ্রর নিঃশ্বাস ফিরে আসল। মুন যদি বলতো রিম্মি ওর মা তাহলে এখনি দম বন্ধ হয়ে মরে যেতো নীলাভ্র। রিম্মি ভ্রু কুচকে ভ্রু কুচকে মুনের হাত ধরল। তারপর গটগট করে হেটে যেতে লাগল। এর অর্থ, নীলাভ্রর সাথে যেমন তার নিজের কথা বলার ইচ্ছে নেই, তেমনি মুনকেও কথা বলতে দিবে না। কিন্তু নীলাভ্র দমে থাকার পাত্র নয়। সেও পকেটে হাত দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ওদের পেছন পেছন যেতে থাকে। রিম্মি ওই বাসার গেইট দিয়ে কেন বের হচ্ছিল নীলাভ্র জানেনা। কিন্তু তার অদ্ভুত খুশি লাগছে। শুধু মনে হচ্ছে আজকে দিনের শুরুতেই তার জন্য সৌভাগ্যের দরজা খুলে গেছে। নীলাভ্র হাটতে হাটতে খেয়াল করল মুনের এক পায়ে সমস্যা। খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটে মেয়েটা। নীলাভ্র কাছে গিয়ে বলল,
” ওকে আমি কোলে নেই?”
রিম্মি একটু থেমে তাকায়। তারপর আবার হাটতে লাগে। জোরে জোরে হাঁটে। নীলাভ্র জিভ কেটে মাথা চুলকায়। রিম্মি তো তার কথা শুনতেই পায়নি। না জানি কি ভেবেছে! আরও কিছুটা সামনে গিয়ে লাইব্রেরী থেকে একটা ছোট নোটপ্যাড আর পেন কিনল নীলাভ্র। এখন থেকে সে এই নোটপ্যাড দিয়ে শুধু রিম্মির সাথে কথা বলবে। মুনের জন্য কিনল তিনটা কিটক্যাট। এতোক্ষণে রিম্মি আর মুন অনেক দূরে চলে গেছে। মুন বারবার পেছনে ঘুরছে। সে নীলাভ্রকে খুঁজছে। নীলাভ্র বুঝল পিচ্চি এই মেয়েটা অত্যন্ত বন্ধুসুলভ। বড়বোনটার মতো অহংকারী না। নীলাভ্র ওদের পেছনে দৌড়ে গেল। তারপর রিম্মির সামনে দাড়িয়ে হাত প্রসারিত করে ওদের থামালো। রিম্মি বিরক্তিতে ভ্রু কুচকালো। নীলাভ্র নোটপ্যাডের পাতা ছিড়ে চিরকুটে লিখল,
” আমি কি ওকে কোলে নিয়ে হাটতে পারি?”
নীলাভ্র চিরকুটটা রিম্মির দিকে দিল। রিম্মি কৌতুহলবশত নিয়ে পড়ল৷ মুন আগ্রহ নিয়ে পা উচু করল চিঠিটা পড়তে। রিম্মি কোমরে হাত দিতে ঝাঝালো দৃষ্টিতে তাকালো মুনের দিকে। মুন ভয়ে নিচু হয়ে গেল। নীলাভ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রিম্মিকে দেখলো। এতো কিউট পিচ্চি মেয়েকে কেউ এভাবে ভয় দেখায়? শব্দ ছাড়াই যে ধমকাতে পারে, শব্দ থাকলে সে কি করতো? রিম্মি ক্ষিপ্ত চোখে তাকালো নীলাভ্রর দিকে। যেন নীলাভ্র খুব বাজে ধরণের কথা বলেছে। নীলাভ্র দ্রুত হাতে আরেকটা চিরকুট লিখল,
” মনে হয় ওর হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছে, তাই! ওর পায়ে কি কোনো সমস্যা আছে?”
তারপর রিম্মিকে দিল। রিম্মি দুইটা চিরকুট একসাথে মুড়িয়ে রাস্তার পাশের ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলল। তারপর ছোটবোনকে নিয়ে নীলাভ্রকে পাশ কাটিয়ে সামনে যেতে চাইল। নীলাভ্র যেতে দিল না। আবার একটা চিরকুট লিখল,
” আপনিসহ আপনার বোন দুজনেই অনেক কিউট।”
রিম্মি এই চিরকুটটা নিয়ে নীলাভ্রর মাথায় ছুড়ে মারল। তারপর মুনকে নিয়ে সামনে হেটে গেল। নীলাভ্র দাড়িয়ে মাথা চুলকাতে থাকে। সে কি ভুল কিছু করেছে? মুনতাজ আবারও পেছনে ফিরে নীলাভ্রর দিকে তাকায়। সে চাইছে নীলাভ্র ওদের সাথে সাথেই থাকুক। নীলাভ্র তাকাতেই মুন লজ্জা পেয়ে হেসে দিল। নীলাভ্রও হেসে হাতের ইশারায় বলল,
” হায়।”
তারপর আবার ওদের অনুসরণ করতে লাগল। যেতে যেতে নীলাভ্র মুনকে ইশারায় জিজ্ঞেস করল,
” তোমার আপুর এতো মেজাজ কেন?”
মুন ইশারায় বুঝাল,” চুপ থাকো। নাহলে আপু মারবে।”
নীলাভ্র চোখ বড় করে বুঝাল,” আমাকে মারবে? আমি তোমার আপুর থেকে বড়।”
মুন মুখ টিপে হেসে বলল,” তাও মারবে। কারণ তুমি বিরক্ত করো।”
নীলাভ্র মনখারাপের মতো মুখ করে বলল,” বিরক্ত করি? তাহলে চলে যাই।”
মুন সাথে সাথে হাত নাড়িয়ে বলল,” প্লিজ থাকো। যেও না।”
রিম্মি মুনকে হাত নাড়িয়ে কথা বলতে দেখে তেতে উঠল। ওর এক হাত ধরে ঝাড়ি মারল। মুন ভয় পেয়ে গেল। রিম্মি ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে মুনকে বলল চুপচাপ সামনে হাটতে। এরপর মুন আর পেছনে তাকালো না। নীলাভ্র ওদের পাশাপাশি যাওয়ার বাহানায় পকেট থেকে তিনটা কিটক্যাট বের করে মুনের হাতে দিয়ে দিল। কিটক্যাট দেখে মুনের মুখ খুশিতে ঝিলিক দিয়ে উঠল। অবাক হয়ে তাকালো নীলাভ্রর দিকে। নীলাভ্র হাসি দিল। রিম্মি তখনো দেখেনি মুনের হাতে চকলেট। আরও কিছুটা সামনে গিয়ে বুঝল। চোখ বড় করে ইশারায় জিজ্ঞেস করল,
” চকলেট কই পেয়েছো?”
মুন ভীতমুখে নীলাভ্রর দিকে তাকালো। রিম্মি রেগে মুনকে একটা চড় দিল। মুনের মুখ কাদো কাদো হয়ে গেল আর নীলাভ্রর মুখ ফ্যাকাশে। মুন দ্রুত চকলেট নীলাভ্রকে ফিরিয়ে দিল। নীলাভ্র চকলেটগুলো নিয়ে অসহায় কণ্ঠে বলল,
” আহারে, থাক।”
তারপর মুনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। রিম্মি ঠাস ঠাস করে চলে গেল মুনকে নিয়ে।
রিম্মি আর মুন পার্কে একটা স্টিলের বেঞ্চিতে বসে। নীলাভ্র অনেকটা দূরে দাড়িয়ে ওদের উপর নজর রাখে। ইশারায় ছোটবোনের সাথে কথা বলছে রিম্মি। দমকা বাতাসে রিম্মির লম্বা চুল উড়ে বেড়াচ্ছে। মুখের উপর আছড়ে পড়ছে। রিম্মি চুল সরিয়ে নিচ্ছে দ্রুত। নীলাভ্র ঝটপট একটা চিরকুট লিখল,
” ডুবে মরতে চাই তোমার ওই গভীর চোখের পদ্মপুকুরে।”
তারপর মনে হলো রিম্মির হাতে চিরকুট দেওয়া যাবে না। আবার মুখে ছুড়ে মারতে পারে। সবার সামনে একটা অপমান হয়ে যাবে। তাই নীলাভ্র সিদ্ধান্ত নিল অন্যভাবে বার্তাটা উপস্থাপন করবে৷ পার্কের পাশ থেকে একটা হার্ডবোর্ড কুড়িয়ে নিল। ভাগ্যিস পকেটে মার্কার প্যান ছিল। তাই সেটা দিয়েই লিখল আবার উপরোক্ত বাক্যটি। এরপর রিম্মির বরাবর দাড়িয়ে প্রায় অনেকটা দূরত্ব বজায় রেখে মেলে ধরল। মুখে বিরাট হাসি। রিম্মি ভ্রু কুচকে তাকালো৷ এই মেয়ের মনে হয় কথায় কথায় ভ্রু কুচকানো রোগ আছে। অধিকাংশের দৃষ্টি স্থির হলো নীলাভ্রর উপর। অনেকেই লেখাটা পড়ল। তারপর রিম্মির দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাতে লাগলো। রিম্মি কিছুটা বিব্রত হলেও হেসে উঠলো। নীলাভ্রর বুক ছেদ করে হার্টে তীরের মতো আঘাত করে হাসিটা। দ্বিতীয়বার হাসতে দেখল সে রিম্মিকে। ফ্লায়িং কিস দেওয়ার সময়ও এভাবেই হেসেছিল। এই হাসিতেই তো আটকে গেছিল নীলাভ্র। রিম্মি জায়গা ছেড়ে উঠে আসল। নীলাভ্রর হাত থেকে বোর্ড আর মার্কার প্যান নিল। নিজের জায়গায় বসে কিছুএকটা লিখতে শুরু করল। নীলাভ্র হাত ভাজ করে দাড়িয়ে রইল।অপেক্ষা করল কিছুক্ষণ। মুখে হাসি নিয়ে অপেক্ষা।রিম্মি কি লিখেছে জানতে আগ্রহ লাগছে খুব। একটু পর রিম্মি হার্ডবোর্ডের উল্টো পিঠ মেলে ধরল,
” পেছনেই আছে পদ্মপুকুর। মরার ইচ্ছে থাকলে সেখানে ঝাপ দিন। তারপর ডুবে মরুন। অনুগ্রহপূর্বক আমার চোখদুটোকে রেহাই দিন। এখানে মরতে আসবেন না। ”
সবাই হেসে উঠল। নীলাভ্রর পেছনে তাকিয়ে দেখল আসলেই পদ্মপুকুর। নিজের জীভ নিজে কাটল। একদম বেকুব বনে গেল।

চলবে

( আমীর-তোহার অংশটা চেঞ্জ করলাম কারণ যাকে তোহা এতো ভয় পায় হঠাৎ করেই তার উপর ক্রাশ খাওয়া সম্ভব না। বিষয়টা আমার কাছেই আজগুবি টাইপ লাগছিল। আপনাদের লাগেনি?🙄)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here