#ধূসর_রঙে_আকাশ
#পর্ব_৫৭
লিখা: Sidratul Muntaz
তোহা ওই মুহুর্তেই কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যায়। তারপর ওকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তোহা রেগেমেগে সেখান থেকেও বের হয়ে যায়। বাসায় গিয়ে পাগলের মতো চেচামেচী করে। তোহার এমন বেহাল দশা আমীর হতভম্ব হয়ে শুধু দেখে।সে কালো কোর্ট, সানগ্লাস আলগা দাড়ি পড়ে ছদ্মবেশে তোহাকে ফলো করে সারাদিন। প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তোহার সামনে যেতে পারেনা। কারণ দুনিয়াবাসীর কাছে সে তখন মৃত। পুরোটা সময় আমীর সুযোগ খুঁজে বেড়ায় কখন তোহাকে একটু একা পাওয়া যাবে। অবশেষে সুযোগ আসে। মাঝরাতে তোহা হঠাৎ বাসা থেকে বের হয়ে রিম্মিদের ফ্ল্যাটে দৌড়ে যাচ্ছিল। আমীর তখন তোহার পিছু নেয়। রিম্মি কিছুক্ষণ পর তোহাকে বাসা থেকে বের করে দেয় আর তোহা দরজার কাছে দাঁড়িয়েই কাঁদতে থাকে। ওর হাতে একটা ছুড়ি ছিল। সেই ছুড়ি দিয়ে শিরা কেটে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল। আমীর তখন আর আড়ালে থাকতে পারলো না। দ্বিতীয়বার তোহার সামনে আসলো। ওকে আটকালো। আমীরের চেহারা দেখে তোহা ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে। সেই কান্না দেখে আমীরের হৃদয় চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। খুব কষ্টে নিজেকে সামলে রাখে। তোহাকে বুঝানোর চেষ্টা করে, তাদের মধ্যে মিলন আর কোনোদিন সম্ভব না। তোহা যেনো ওর অপেক্ষায় থেকে কষ্ট না পায়। বাকিটা জীবন যেনো খুশিতে বেঁচে থাকে। কিন্তু তোহা বারবার বলছিল এতো কষ্টের চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়। আমীর যেন তাকে মৃত্যু দেয়। তারপর তোহা আমীরকে জড়িয়ে ধরে। আমীরেরও প্রচন্ড ইচ্ছে করে তোহাকে শেষবারের মতো জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু সে পারেনা। কারণ একবার ধরলে আর তোহাকে ছেড়ে যেতে পারবে না সে। মনের বিরুদ্ধে এই লড়াই বড্ড কঠিন। আমীর তোহাকে বলেছিল সে যদি কাঁদে তাহলে আমীর খুব কষ্ট পাবে আর সে হাসলে আমীর খুশি থাকবে। তোহা এই কথা শুনে আর একবারও কাঁদেনি। তারপর আমীর যখন ওকে হাসতে বললো, তোহা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে চোখমুখ মুছে একটা মায়াবী হাসি দিল। আমীরের তখন ডুকরে কেঁদে উঠতে মন চাইলো৷ তোহা বললো,”
” এইতো আমি খুশি, তাহলে আপনি কেনো কষ্ট পাচ্ছেন?”
আমীর বললো,” কষ্ট পাচ্ছি না, সয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।”
আমীর প্রথম ও শেষবার তোহাকে কোমলমতী আহ্লাদী নামে ডাকে। তারপর চলে যায়। কিন্তু আমীর চলে যাওয়ার পর তোহা আবার কান্নায় ভেঙে পড়ে। আমীর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তোহার কাছে ছুটে আসতে পারেনা।
চতুর্থবার আমীর চোখ খুলে দেখলো এবার সে রকেটের ভিতর। এটাই সেই রকেট যেটা নিয়ে ওরা অভিযানে বেরিয়েছিল। শীতল ঘরে আমীর শুয়ে আছে। চারদিকে একটা মিষ্টি সুভাষ। তিরান রকেটের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখছে। আমীর বিছানা থেকে নেমে তিরানের পাশে দাঁড়ালো। তিরান আনন্দিত হাসি দিয়ে আমীরকে জড়িয়ে ধরে বললো,
” হিরো, তুমি একদম ঠিক সময় জেগেছো। সুসংবাদ আছে! আর মাত্র কয়েকঘন্টা পর আমরা কাংক্ষিত গ্রহটিতে পৌছে যাবো। তুমি কি জানো? প্রায় নয় বিলিয়ন বছর কেটে গেছে। কিংবা তার চেয়েও বেশি। এতোবছরের অপেক্ষা সফল হয়েছে।”
আমীর হতচকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে লাগলো চারিপাশ। সে এখনো মহাশূন্যেই আছে? তাহলে এতোক্ষণ যা দেখেছে সব কি স্বপ্ন ছিল?আমীরের মনের উদিত এই প্রশ্নের উত্তর তিরান বলে দিল,
” কিচ্ছু স্বপ্ন ছিল না। তুমি এ পর্যন্ত তিনবার তোহার সাথে দেখা করেছো। নিজেকে খুন করেছো, চিঠি বদলেছো, তারপর আবার মহাশূন্যে ফিরে এসেছো। এসবকিছুই হয়েছে চোখের পলকে। আমাদের অনেকবার যাত্রাবিরতি নিতে হয়েছে। তখন ভিন্ন তিনটি গ্রহে আমরা থেমেছি। তুমি তখন ঘোরের মধ্যে ছিলে৷ তাই হয়তো কিছু মনে নেই। শেষ দুইটি গ্রহ পৃথিবীর অনুরূপ, তাই তুমি নিজের সাথে দেখা করতে পেরেছো, তোহার সাথেও দেখা করতে পেরেছো। এখন আমরা যে গ্রহে যাচ্ছি সেটাই আমাদের আসল গন্তব্য। এখানেও তোহার সাথে দেখা হওয়া সম্ভব। কিন্তু তোহার বয়স এই গ্রহে আনুমানিক তিন কিংবা সাড়ে তিন। শী ইজ আ ভেরি ইয়াং চাইল্ড নাউ। লিটল গার্ল।”
তিরান কথাটা বলেই ফিক করে হাসলো। আমীর উৎসাহিত গলায় বললো,
” আমরা কি মায়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি?”
” হ্যা যাচ্ছি।”
” মা আছে ওই গ্রহে?”
” হুম। কিন্তু সে অসুস্থ। একুশদিন ধরে ঘুমাতে পারছে না। সাতদিন পর তার মৃত্যু হবে। সেখানে তোমার বয়স মাত্র বারো বছর। তুমি মাকে বাঁচানোর জন্য হাহাকার করছো। ঠিক ওই সময় আমরা দেবদূতের মতো উপস্থিত হবো। তোমার মাকে বাঁচাবো।ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং না?”
আমীরের চোখে জল চিকচিক করছে। অসীম খুশি নিয়ে সে ধরে আসা গলায় বললো,
” ভীষণ ইন্টারেস্টিং!”
আমীরের এখনো মনে আছে, ছোটবেলায় একটা আওয়ার গ্লাসের দিকে সে সবসময় নজর রাখতো। দুইটি কাচের গোলকে আবদ্ধ একটা বালিপূর্ণ সময় মাপক যন্ত্র। উপরের গোলকটা খালি হলেই আমীরের মায়ের জীবনের শেষ মুহুর্তে চলে আসবে। এই ভয়ে ছোট্ট আমীর সর্বদা তটস্থ ছিল। ডাক্তার বলেছিলেন লায়ভান্টিকার মস্তিষ্ক ছোট হয়ে যাচ্ছে। ক্রমশ এই মস্তিষ্ক বিলীন হতে হতে নিঃশেষ হয়ে যাবে। তখনি তার মৃত্যু ঘটবে। আর যতদিন সে বেঁচে থাকবে একটারাতও ঘুমাতে পারবে না। কারণ তার চোখ থেকে বরাবরের মতো ঘুম উঁবে গেছে। ঘুমহীন একটি মানুষের বেঁচে থাকা খুব কষ্টের। সেই ঘুমের ক্ষতিপূরণ যোগাতেই মস্তিষ্ক একটু একটু করে গায়েব হয়ে যাচ্ছিল। লায়ভান্টিকার বেঁচে থাকার সময়সীমা ছিল মাত্র একমাস। আমীরের মাঝে মাঝে ইচ্ছে করতো পৃথিবীর সমস্ত ঘড়ি থামিয়ে দিতে। যেন সেই একমাস কোনোদিন শেষ না হয়। সে তার মাকে হারাতে চায়না। কিন্তু আমীরের তখন সময় নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ছিলনা। এবার হয়তো আছে। সময়ের বিপরীত স্রোতে গিয়ে মাকে বাঁচিয়ে আনা তার জন্য অসম্ভব কিছু না। কিন্তু এতে কি প্রকৃতির নিয়মের অবমূল্যায়ন হবে? হলে হোক! আমীর পরোয়া করে না। তার শুধু মাকে চাই। লায়ভান্টিকার মৃত্যুর পর থেকেই আমীর মানব মস্তিষ্কে নিয়ে গবেষণা শুরু করে। তার জীবনের একটাই লক্ষ্য ছিল মায়ের সেই বিরল রোগ নির্মুলের ফর্মুলা আবিষ্কার করা। সেই থেকেই আমীরের বিজ্ঞানের পথে যাত্রা শুরু। এখন সে একজন সফল মস্তিষ্ক গবেষক। মায়ের বিরল রোগ নির্মুলের ফর্মুলাও তার হাতেই আছে। ইচ্ছে করলেই মাকে বাঁচাতে পারবে। আমীর এই অতি প্রতীক্ষিত খুশির মুহুর্তে এসে রিম্মি, সানভী, রিডের ব্যাপারটা ভুলেই গিয়েছিল।
আমীর ভাসমান চশমাটির দিকে আনমনে চেয়ে আছে। চশমার দুই ফ্রেমে সে দুটি হাসিমাখা মুখ দেখতে পাচ্ছে। প্রথমটি তার বাবার আর দ্বিতীয়টি মায়ের। আমীরের আবিষ্কৃত ফর্মুলার মাধ্যমে লায়ভান্টিকা নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন। আমীর একজন মৃত্যু পদযাত্রীকে বাঁচাতে সফল হয়েছে। প্রকৃতির নিয়ম কি তাহলে পাল্টে গেছে? এখন কি সে তার আসল পৃথিবীতে ফিরে যেতে পারলে মা-বাবাকে ফিরে পাবে? তিরান আমীরের মনের প্রশ্নের উত্তর দিল,
” এটা সম্ভব না হিরো। আমরা যেই গ্রহে গিয়ে গ্র্যান্ডমার জীবন বাঁচিয়েছি, তিনি শুধু সেখানেই সুরক্ষিত। সেই সময়টা আলাদা। তার মানে এই নয় যে অন্য সকল টাইমলাইনের গ্রহতেও তিনি ফিরে আসবেন। গ্র্যান্ডমা মৃত, এটাই মহাবিশ্বের চিরন্তন সত্য। আমরা শুধু একটা ছোট্ট গ্রহের নিয়ম পরিবর্তন করতে পেরেছি। কিন্তু এতে গোটা মহাবিশ্বের নিয়ম কখনই বদলাবে না।”
আমীর ভ্রু কুচকে বললো,” তাহলে কি তুই বলতে চাচ্ছিস আমি পৃথিবীতে ফিরে গেলেও মা-বাবাকে পাবো না?”
” উহুম, আমাদের পৃথিবীতে তাদের সঠিক সময়েই মৃত্যু হয়েছিল৷ তাই ওখানে গেলে ওদের ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।”
আমীর অন্যমনস্কভাবে প্রশ্ন করলো,” তাহলে কি আমার মৃত্যু হওয়ারও সম্ভাবনা নেই?”
” তোমার মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা কেনো থাকবে?”
” আমি দ্বিতীয় পৃথিবীতে গিয়ে নিজেকে খুন করে এসেছি। নিয়ম অনুযায়ী আমাকেও খুন হতে হবে অন্যকারো হাতে।”
” তুমি যাকে খুন করেছো সে তার পাপের শাস্তি পেয়েছে। এই মাসুল তোমাকে দিতে হবে না। কারণ তুমি তো কোনো পাপ করোনি।”
” তাহলে যে মারা গেছে? সে কি আমি না?”
” সে তুমি না। তোমারই মতো দেখতে অন্য এক সত্তা। আমাদের মহাবিশ্বে যত প্যারালাল গ্রহ আছে এবং সেই সব গ্রহে আমাদের অনুরূপ অসংখ্য সত্তা আছে। কিন্তু সবাই আমাদের মতো না। আমাদের প্ল্যানেট যেমন আলাদা তেমনি মন-মানসিকতা, বিবেক-বুদ্ধিও আলাদা।”
” মানে?”
” মনে আছে, লিয়াম ওয়ানওয়ানজিরোতে অবস্থানের সময় আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম। তুমি পৃথিবীতে ফিরতে চাও নাকি চাও না। তুমি বলেছিলে চাও না। কিন্তু তুমি যদি তখন পৃথিবীতে ফিরতে চাইতে তাহলে সেই মুহুর্তে আমরা পৃথিবীতে ফিরতে পারতাম। আর তখন তোমার মৃত্যু হয়ে যেতো। যদি তখনি আমরা ফিরতাম তাহলে তুমি নিজেকে খুন করতে না। নিজের দ্বারা খুন হতে। আর সেটা হতো প্রকৃতির দেওয়া ভয়ংকর শাস্তি। কারণ তোমার কাজটি হতো চরম স্বার্থপরতা।কিন্তু তুমি পৃথিবীতে ফিরতে চাওনি বলেই আজকে আমরা অভিযানে সফল হয়েছি। গ্র্যান্ডমাকে বাঁচাতে পেরেছি। অর্থাৎ প্রকৃতি আমাদের কোনো শাস্তি দিচ্ছে না। তুমি যাকে খুন করেছো সে তার উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে। কারণ সে স্বার্থপরতার পথ বেছে নিয়েছিল। প্রকৃতির নিয়ম বদলে শুধু নিজে সুখী হতে চেয়েছিল। তাই সে ওইসময় পৃথিবীতে ফিরে যায় আর তুমি তাকে খুন করে ফেলো। তার আর তোমার মধ্যে পাথক্য এখানেই। সে স্বার্থপরের মতো শুধু নিজেকে বাঁচাতে চেয়েছে৷ তাই ধ্বংস হয়ে গেছে। আর তুমি আমার সাথে থেকে রিড, রিম্মি, সানভী ওদের খুঁজে বের করতে চেয়েছো, গ্র্যান্ডমাকে বাঁচাতে চেয়েছো। নিজের মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তুমি সবার খুশির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে চেয়েছো। ভালোবাসাকেও বিসর্জন দিয়েছো। জানো এটা কতবড় ত্যাগ? ইউ আর আ নোবেলম্যান। এজন্যই আমার কাছে তুমি সুপার হিরো। আই লভ ইউ হিরো।”
” রিম্মিদের কথা তো ভুলেই গেছিলাম। ওদের আমরা কখন খুঁজে পাবো?”
” ওদের নিয়ে চিন্তা করো না। ওরা নির্দিষ্ট জায়গায় ভালো আছে। তুমি এখন ঘুমাও। আমাদের দ্বিতীয় যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। আমরা এবার নিজস্ব প্ল্যানেটে ফিরে যাবো। তুমি চোখ খুললেই দেখবে আমরা গন্তব্যে পৌঁছে গেছি।”
তিরান আমীরকে শীতলঘরে নিয়ে শুয়িয়ে দিল। চোখ বন্ধ করার আগে আমীরের মাথায় হঠাৎ প্রশ্ন আসে। সে সন্দিহান কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” তুই কি আমার মাকে গ্র্যান্ডমা বলেছিস?”
তিরান শুধু হাসলো। কোনো জবাব দিল না। একটু পর আমীর গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। এরপর কেটে যায় আরও বিলিয়ন বিলিয়ন বছর।
আমীর যখন চোখ খুললো, দেখলো তিরান ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমীর শোয়া থেকে উঠে বসলো। এই ঘরটা তার খুব পরিচিত। হ্যা মনে পড়েছে, এইটা তো আমীরের ল্যাবরুম। সে ল্যাবরুমের বিছানায় শুয়ে আছে। তিরান একটা ম্লান হাসি দিয়ে আমীরকে বললো,
” আই উইল মিস ইউ মাই হিরো।”
ওর কণ্ঠ কেমন যেন শোনালো। আমীর চোখ ছোট করে তাকিয়ে রইল। কোনো উত্তর দিতে পারলো না। কিন্তু মনে মনে তার বলতে ইচ্ছে করছিল,” থ্যাংকস তিরান।”
এটুকুও বলতে পারলো না। তিরান চলে গেল। আমীর তখনো বুঝতে পারেনি সে তিরানকে শেষবারের মতো দেখছে। আর কখনো তাদের দেখা হবে না। বিলিয়ন বিলিয়ন বছর তারা একসাথে ছিল। অনন্তকালের বন্ধুর মতো। অজান্তেই তাদের মধ্যে আত্মার অটুট বন্ধন তৈরী হয়ে গেছিল। তিরান হারিয়ে যেতেই চারিপাশ আলোকিত হয়ে উঠলো। করতালির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। সবাই আমীরকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। আমীর খেয়াল করলো সে মাত্র রকেট থেকে পৃথিবীতে ল্যান্ড করেছে। প্রফেসর ট্রুডো, আনাস্তাসিয়া ম্যাম, টিজুয়ু ম্যাম হিরোশ, ইউজান, সবাই তাকে রিসিভ করতে এসেছে। প্রফেসর ট্রুডো এগিয়ে এসে আমীরের একহাত ধরে উপরে তুলে বললেন,
” তুমি বিশ্বের প্রথম টাইম ট্রাভেলার। আমরা আমাদের অভিযানে সফল হয়েছি। তুমি ফিরে এসেছো। অনেক অনেক অভিনন্দন।”
আমীর রিম্মি, সানভী রিডকে খুঁজছে৷ সাথে তিরানকেও খুঁজছে। ওদের কাউকে দেখা যাচ্ছে না কেনো? আমীর জিজ্ঞেস করলো,
” প্রফেসর, বাকিরা কোথায়?”
” কাদের কথা বলছো?”
” রিম্মি, সানভী, রিড, তিরান।”
” ওরা তো তোমার সাথেই ছিল। কেউ ফিরে আসেনি৷ তুমি একাই ফিরে এসেছো।”
” তিরানও আমার সাথে ফিরে এসেছে, তিরান কোথায়?”
প্রফেসর বিভ্রান্ত হয়ে বললেন,” মহাকাশ স্টেশনে তিরান কোথ থেকে আসবে? তার তো নভোচারী হওয়ার বয়সই হয়নি।”
” কি বলছেন? তিরানকেই তো ডুপ্লিকেট রকেট দিয়ে আমাদেরকে উদ্ধার করতে পাঠানো হয়েছিল। ও না থাকলে আমি জীবিত অবস্থায় পৃথিবীতে ফিরতে পারতাম না।”
প্রফেসর কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বললেন,
” ডুপ্লিকেট রকেট? এই রকেট পৃথিবীতে একটাই তৈরী হয়েছে। ডুপ্লিকেট পাবো কোথায়? আর তোমাদের উদ্ধার করতে তিরানকে কেনো পাঠানো হবে?ওকে কিছুদিন আগেই আমাদের সংস্থা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।”
” কেনো?”
” ওর ইচ্ছেতেই।”
” ও এখন কোথায়?”
প্রফেসর হেসে বললেন,” তা তো আমরা জানিনা।”
আমীর রকেটের ভিতর চলে গেল। হতবিহ্বলের মতো তিরানকে খুঁজতে লাগলো। কোথায় তিরান? আমীর চিৎকার করে ডাকলো,
” তিরান!”
কেউ সাড়া দিল না। আমীর হতাশ হয়ে সিটে বসে রইল কিছুক্ষণ। তিরানের শেষ কথা কানে বাজছে,” আই ইউল মিস ইউ মাই হিরো।” আমীরের চোখ থেকে টুপ করে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। একটু পর কারো পদধ্বনি কানে এলো। আমীর ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো ইউজান। আমীর মলিন মুখে প্রশ্ন করলো,
” ইউজান, কেমন আছিস?”
ইউজান বললো,” ভালো। তোর ফিরে আসার খবর শুনে হাসাদ খুব খুশি হয়েছে। তাই এটা পাঠিয়েছে তোর জন্য। ”
হাসাদের নামটা শুনেই আমীরের চোখমুখ শক্ত হয়ে আসলো। সে দাঁত কিড়মিড় করে বললো,” খবরদার, ওই বিশ্বাসঘাতকের নাম আমার সামনে উচ্চারণ করবি না। তুই জানিস, ওর জন্যই রিম্মি,সানভী, রিডকে আমরা হারিয়েছি।”
ইউজান বাঁকা হেসে বললো,” এবার ওর জন্যই তুই আরও একটা জিনিস হারাবি।”
আমীর কপালে ভাজ সৃষ্টি করে বললো,” কি?”
ইউজান হাসাদের দেওয়া উপহারটা আমীরের হাতে তুলে দিয়ে বললো,” এটা হচ্ছে বিয়ের কার্ড। আজকে হাসাদের সাথে তোহার বিয়ে।”
শেষ বাক্যটা শুনে আমীরের কপালের রগ গুলো নিজস্ব শক্তিতে ফেঁপে উঠে।
চলবে
(আগামী পর্বেই গল্পটা শেষ করে দিবো।😣)