ধূসর_রঙের_জলছবি #অস্মিতা_রায় (ষোলো)

0
201

#ধারাবাহিক
#ধূসর_রঙের_জলছবি
#অস্মিতা_রায়
(ষোলো)
এই অনুভূতিটাকে কী বলে ব্যাখা করবে সেটা ওর জানা নেই। একই সঙ্গে রাগ আর কষ্ট দুটোই হচ্ছে। সেদিন দিয়াকে সেই ছেলেটার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখার পর থেকেই দিয়ার প্রতি কেমন একটা অধিকারবোধ জেগে উঠছে! দৃশ্যটা মনে পড়লেই ভীষণ খারাপ লাগছে ওর। আতা ক্যালানে টাইপ ছেলেটা কেমন দিয়ার হাত ধরে গদগদ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়েছিল আর দিয়াও দিব্যি হাসিমুখে দাঁড়িয়েছিল।যে দিয়া এতদিন ধরে শুধু ওর মুখের দিকেই হাঁ করে তাকিয়ে থাকতো, সে ওকে পাত্তাই দিল না! তবে কথাটা হচ্ছে ছেলেটা কে? দিয়া এর মধ্যে প্রেম করা শুরু করে দিল নাকি! অরণ্যর কথা ভুলে গেল! সব মেয়েই কি এমন আলগা মনের হয়!ভালোবাসার মধ্যে কোনো গভীরতা নেই!
অরণ্য আবার ভাবলো ও দিয়াকে দুষছে কেন? ও নিজেই তো দিয়াকে এতদিন ধরে এড়িয়ে চলেছে। আসলে ও তো আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল দিয়ার থেকে দূরে সরে যাওয়ার! দিয়ার এত বেশি ওর কাছে আসতে চাওয়ার চেষ্টায় ও কি বিরক্ত হয়েছিল নাকি ভয় পেয়েছিল আসলে! ওর খুব রাগ হয়েছিল, দিয়া কেন না বলে ওর ডায়রি পড়বে! কেন ওর মায়ের ব্যাপারে জানবে!বরাবর এটা ওর ভীষণ স্পর্শকাতর একটা জায়গা। ছোটো থেকেই অরণ্য নিজের কষ্টগুলো লুকিয়ে রাখতো। মাঝে মাঝে ডায়রিতে কিছু মনের কথা লিখে রাখতো।খুব গুছিয়ে না হলেও, এলোমেলো ভাবেই লিখতো।সেই ডায়রি দিয়া পড়ে নেওয়াতে ওর মনে হয়েছিল, ওর ভীষণ গভীর গোপন জায়গাটায় কেউ জোর করে ঢুকে পড়ছে।
এছাড়াও ও ভয় পেয়েছিল, দিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার।কোনো সম্পর্কে থাকার অনেক হ্যাপা। মানুষটাকে ধরে রাখার জন্য অনেক চাপ নিতে হয়। অথচ, দিয়ার থেকে দুরে সরে গিয়েও,আজ দিয়াকে অন্য ছেলের সঙ্গে দেখে যে ওর মনে চাপ তৈরি হচ্ছে!
শুভেন্দু ঘরে এসে বলল, “কীরে টুবলু, মুখচোখ এমন শুকনো কেন?প্রেমটেম নিয়ে কোনো ব্যাপার?”
-“প্রেম আবার কোথা থেকে এলো! কিছু হলেই কি প্রেমঘটিত ব্যাপার হবে?”
-“তোর মন খারাপের আর তো কোনো কারণ দেখছি না আপাতত! ক্যাম্পাসিং-এ এত ভালো সিলেকশন, ব্রাইট ফিউচার…”
-“আমি এখন জব জয়েন করবো না বাবা। আমি এমটেক করবো। গেট দেবো।”
-“বেশ তো, সেটাও তো কোনো চাপের ব্যাপার নয়!”
-“চাপ নয় ঠিক…আচ্ছা বাবা, মেয়েরা কি সবাই খুব অগভীর হয়?ওদের কি একজনকে ভুলতে বেশি সময় লাগে না?”
-“ কে তোকে ভুলে গেল? দিয়া?”
-“তুমি কিভাবে বুঝলে?”
-“চুলগুলো তো এমনি এমনি পাকে নি! দিয়া যে তোকে পছন্দ করে, ওর চোখমুখ দেখে এটুকু বোঝার মতো বুদ্ধি তোর বাবার আছে।তবে তোর মনে ওর জন্য ঠিক কেমন ফিলিংস আছে, সেটা যদিও ঠিক করে বুঝি নি।“
-“বাবা, আমি কোনোরকমভাবে প্রেমে পড়তে চাই নি কারোর। দিয়াকে আমি সরিয়ে রাখার জন্য ওকে দিনের পর দিন অ্যাভয়েড করে গেছি। অথচ আজ ওকে অন্য একটা ছেলের সঙ্গে দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে।জানি ওর কোনো দোষ নেই, তবু আমার রাগ হচ্ছে ওর উপর।“
শুভেন্দু হাসল। বলল, “এগুলো তোর ছেলেমানুষি। শোন, যদি খারাপ লাগে তাহলে দিয়ার সঙ্গে গিয়ে কথা বল! কেন ভেতরে কথা চেপে রাখছিস?”
-“কী বলবো?”
-“সিম্পল…তুই ওকে ভালোবাসিস। ডাইরেক্ট বলে দিবি, আই লাভ ইউ!”
-“অসম্ভব! অতো ন্যাকামি আমি পারবো না। তাছাড়া বলেই বা কী হবে? ও তো অন্য ছেলের সঙ্গে প্রেম করছে! যেচে রিজেক্টেড হবো!”
-“হাত ধরে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে ছিল মানেই যে প্রেম করছে, তা নাও হতে পারে। চোখে দেখা সব জিনিস সব সময়ে সত্যি নাও হতে পারে।” শেষ বাক্যটা শুভেন্দুকে অনেক দিন আগে মালবিকা বলেছিলো, শুভেন্দুর মনে আছে।
অরণ্য বলল, “আর যদি সত্যি হয়?”
-“হলে হবে! কী এসে যায়! জীবনে সবার জায়গাই রিপ্লেস হয়ে যায়। দিয়া যদি অন্য কারোর হাত ধরে, তুইও হাত ধরার জন্য অন্য কাউকে পেয়ে যাবি।একলা কেউ পড়ে থাকে না।“
-“তুমি তাহলে কেন একলা পড়ে রইলে? তোমার ইচ্ছে হয় নি কোনো সঙ্গী আসুক জীবনে?”
-“এই যে তুইই তো আমার সঙ্গী। বরবউ, প্রেমিক-প্রেমিকা এরাই শুধু সঙ্গী হয় তা তো নয়!”
একটু থেমে শুভেন্দু আবার বলল, “এক কাজ করা যেতে পারে, আমাদের এবারের উত্তরাখন্ড ট্যুরে দিয়াদেরও যেতে বলি আমাদের সঙ্গে। দিয়ার বাবা সেদিন বলছিলেন, কোথাও একটা ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে আছে ওনাদের। দিয়া নাকি এখনও জায়গা বলে নি। একসঙ্গে ঘুরতে গেলে তোদের মধ্যে ডিসট্যান্স অনেক কমে যাবে।”
-“দিয়াদের ঘুরতে যেতে বলবে আমাদের সাথে! মেয়েদের অনেক প্রবলেম থাকে, ভালোমতো ঘোরা যাবে না।প্রতি বছর তুমি আর আমি মিলেই তো নানা জায়গায় ঘুরতে যাই। ওরা গেলে পাহাড়ে ট্রেক করতে পারবে?“
-“সব কিছুরই আলাদা আলাদা আনন্দ আছে।কিছু স্যাক্রিফাইসের মধ্যে দিয়েও তুই হয় তো অন্য কোনো আনন্দের খোঁজ পাবি।এনজয় ইওর লাইফ ইন ভেরিয়াস আসপেক্টস। ডোন্ট বি সো সিরিয়াস টুবলু!আর মনে কিছু পুষে রেখে কষ্ট পাস না।ইগো রেখে কোনো লাভ নেই রে। আর স্পেশালি তোর এই বয়সটা আনন্দে থাকার বয়স। পরে কী হবে না হবে সেসব অতো ভাবিস না। এখনকার মতো নিজের ফিলিংসকে গুরুত্ব দে।”
অরণ্যর মনে পড়লো, মালবিকা দাশগুপ্তও ওকে এই কথাটাই বলেছিলো না! ওর বাবা – মা দুজনের ভাবনা চিন্তাতেই কত মিল!

(ক্রমশ)

© Asmita Roy

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here