ধূসর_রঙের_জলছবি #অস্মিতা_রায় (আট )

0
166

#ধারাবাহিক
#ধূসর_রঙের_জলছবি
#অস্মিতা_রায়
(আট )
রাতে শুয়ে শুয়ে ফেসবুক ঘাঁটতে ঘাঁটতে বন্ধুদের পোস্টে লাইক কমেন্ট করছিল অরণ্য। নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে একটা পেজে এসে থমকালো ও । পেজটা ও ফলো করে রেখেছে । মালবিকা দাশগুপ্তর অফিসিয়াল পেজ। আজ মালবিকা ওনার ব্যালকনিতে বসে খালি গলায় একটা গান গেয়ে পোস্ট করেছেন। তাতে একের পর এক লাইক কমেন্ট পড়ছে। মালবিকা দাশগুপ্তর ফ্যান ফলোয়ারের সংখ্যা নেহাত কম নয়। অরণ্যর ইচ্ছে আছে, একবার এই মহিলার সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করার। আজকের গানটা শুনছিল অরণ্য। এমন সময়ে ওর ফোনটা বেজে উঠল। দিয়ার মা ফোন করছে। রাত এখন দেড়টা পেরিয়ে গেছে। অরণ্য ফোন ধরতেই কাকলির উৎকন্ঠীত গলা, “অরণ্য, তুমি কী শুয়ে পড়েছো? আসলে তোমার কাকু কেমন করছে!” ধরমর করে উঠে বসল অরণ্য, “কী হয়েছে?”
-“বলছে খুব শ্বাসকষ্ট।”
প্রতাপ রায়চৌধুরী এখন হাসপাতালে ভর্তি। অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। অতো রাতে ফ্ল্যাটের সবাই ঘুমোচ্ছিল। অরণ্য জেগে থাকতে পারে ভেবে ওকেই ফোন করেছিল কাকলি। দৌড়ে গেছিল অরণ্য।ক্যাব বুক করে হাসপাতালে আসা হয়েছে সবাই মিলে। এখানে এসে অরণ্য অনেক ছুটোছুটি করেছে। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে এলো অরণ্য। দিয়ার মা মনে হয় বাথরুমে গেছে। লাউঞ্জের সোফায় দিয়া একা বসে চোখের জল ফেলছে। দিয়ার টলটলে মুখটা দেখে মায়া হল অরণ্যর। এগিয়ে গিয়ে দিয়ার মাথায় হাত রাখলো ও। অরণ্যর হাতের ছোঁয়ায় চমকে তাকালো দিয়া। অরণ্য বলল, “কাঁদিস না। কোনো চিন্তা নেই। ডাক্তার বলেছেন কাকু ভালো আছে।”
বাবা ভালো আছে শুনে দিয়া চোখ মুছলো।তার সঙ্গে হঠাৎ একটা অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করল ওর মধ্যে।এই কটাদিন অরণ্যর সঙ্গে কথা বলতে ভারী অস্বস্তিতে ছিল দিয়া । কেমন সিঁটিয়ে ছিল ও। আজ অরণ্যর ছোঁয়াতে ওর মনে হল যেন হসপিটালের মধ্যেই গুচ্ছগুচ্ছ গোলাপের পাপড়ি চারপাশে ছড়িয়ে পড়লো।

*******************************

বিছানায় শুয়ে ছটফট করছিল কৌস্তভ। গায়ে কোনো পোশাক নেই ওর। ইদানিং নিজেকে নিয়ে ভয় লাগে ওর। ওর কী যৌন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে! কেমন যেন শিথিল হয়ে পড়ছে ও!কলেজে পড়ার সময় দু’বছরের সিনিয়র এক মেয়ের সঙ্গে কিছুদিন যৌন সম্পর্ক হয়েছিল কৌস্তভের। সে কী কামোন্মাদোনা, অদ্ভুত এক সুখ! প্রতিনিয়ত হতো সেসব তখন। তারপর সেই সিনিয়র পাস করে বেরিয়ে যাওয়ার পর সব হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। খুব কষ্ট হতো কৌস্তভের। তার সঙ্গে হতো একটা অদ্ভুত মানসিক কষ্টও। তখন ওর বয়সও কম ছিল।এ কী করে ফেলল ও! যে সম্পর্কে কোনোরকম মনের টান ছিল না, শুধুমাত্র শরীর ভোগের জন্য ও এতদিন ধরে কেন একজনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লো! একদিন মালবিকাকে অবশেষে বলে দিয়েছিল ও এই ঘটনাটা। মালবিকা বেশ সহজভাবেই বলেছিল, “এটা নিয়ে অপরাধবোধের কী আছে!” কৌস্তভ জিজ্ঞেস করেছিল, “নেই?”
-“একদমই না। তুই তো আর মেয়েটাকে রেপ করিস নি। প্রেমের অভিনয় করে ঠকাসও নি। তোরা যা করেছিস, একসঙ্গে দুজনের ইচ্ছেতেই করেছিস।”
মালবিকাকে নিজের ব্যাপারে সব কিছু শেয়ার করতে পারত কৌস্তভ। মেয়েটা বিশ্বস্ত তো বটেই, কৌস্তভের দেখা আর বাকি পাঁচটা মেয়ের চেয়ে অনেক বেশি যেন বুঝদারও।
কলেজ শেষ হওয়ার পরেই জীবন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছিল কৌস্তভকে। বাড়িতে হাঁ করে ছিল দারিদ্র।টিউশন পড়িয়ে চাকরির পরীক্ষার জন্য পড়তো কৌস্তভ। মালবিকাও তখন চাকরির চেষ্টা করছিল। নিজের হাতখরচের টাকা দিয়ে কৌস্তভকে মাঝে মাঝেই জোর করে বিকেলের টিফিন খাওয়াতো মালবিকা। কৌস্তভ দাম দিতে চাইলে জোর করে আটকাতো, বলতো আজ নয়, কাল তুই খাওয়াবি। সেই কাল আর আসতো না।
বন্ধুত্ব থেকে আস্তে আস্তে মালবিকাকে ভালোবেসে ফেলল কৌস্তভ। স্ট্রাগল পিরিয়ডে মালবিকাই ছিল ওর শক্তি। স্বপ্ন দেখতো, চাকরি পেয়েই মালবিকাকে ও বিয়ে করবে। তবে মালবিকা প্রথম থেকেই পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছিল, ও কৌস্তভকে সেই চোখে দেখেই না, বাবা-মায়ের সম্বন্ধ করা ছেলেকেই বিয়ে করবে ও ।
বিয়ের তিন বছর পরে সংসার ছেড়ে চলে এল মালবিকা। একলা একলা লড়ে যাচ্ছে নিজের পায়ের জমি শক্ত করার জন্য। সস্তার একটা বাড়িতে ভাড়া থেকে কোনোমতে খেয়ে পরে দিন গুজরান করে ও। কৌস্তভের থেকে কোনো সাহায্য নিতে চায় না। তবে কৌস্তভ ছুটির দিনগুলোয় মালবিকাকে টুকটাক সিনেমা দেখিয়ে, রেস্টুরেন্টে খাইয়ে আনে । গঙ্গার ধারে হাঁটে দুজনে। মালবিকার চুল থেকে আসা বুনোফুলের গন্ধটা আবার কৌস্তভকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে। এত কাছে বসে থাকে মালবিকা, তাও কৌস্তভের মন ভরে না। মালবিকাকে আরো অনেকটা বেশি কাছে পেতে ইচ্ছে করে ওর।আরো আরো আরো! শারীরিক, মানসিক, আত্মিক সব দিক থেকেই।অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত শরীরে বসে মালবিকার ছিপছিপে নগ্ন শরীরটা কল্পনা করতে আজকাল খুব ভালো লাগে ওর। এখনও তিরিশের কোটায় পড়ে নি কৌস্তভ। চাকরি পেয়েছে বছর তিনেক। আর দু’এক বছরের মধ্যে বিয়ে থা করে সংসার করতে মন চাইছে।প্রতিনিয়ত একটা যৌন জীবন খুব দরকার ওর এখন।ও ভীষণভাবে চাইছে মালবিকাকে বিয়ে করতে। তবে মালবিকার সেই এক রা, তোকে বন্ধু ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারি না।
হতাশায় হাত মুঠো করল কৌস্তভ। মেয়েরা এক একটা জিনিস বটে! এই মালবিকার ভাবনা কৌস্তভকে বড্ডো উচাটন করে তুলছে ভেতর থেকে।বড়ো তাড়াতাড়ি ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে ও আজকাল।পাশবালিশটাকে জড়িয়ে ধরল কৌস্তভ।আজ অফিসেও একটা মেয়ে ওর মাথা খারাপ করে দিয়েছিল। বিদিশা বলে মেয়েটা অফিসে নতুন ক্লার্ক হিসেবে জয়েন করেছে। আজ সব টাকা লেনদেনের পর হঠাৎ শোনা গেল, হিসেবের গন্ডগোল হচ্ছে। কৌস্তভ এখন হেড ক্যাশিয়ার। গিয়ে ব্যাপারটা দেখলো। সে কী হয়রানি! অবশেষে বোঝা গেল, মেয়েটা পাঁচশোর নোটের বদলে হাজার টাকার নোট কাস্টমারকে দিয়ে দিয়েছে। মেয়েটাকে খুব ঝেড়েছে আজ কৌস্তভ। মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল বিদিশা।
কিরিং কিরিং শব্দে ঘরের ল্যান্ডফোনটা বেজে উঠল। ফোনটা তুলে হ্যালো বলল কৌস্তভ। ওপার থেকে মালবিকার গলা, “কৌস্তভ, জানিস আজ গানের স্কুলে একজন ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলা এসেছিলেন আমার সঙ্গে কথা বলতে।আমাদের গানের স্কুলের প্রোগ্রামে আমার গান শুনে নাকি ওনাদের খুব ভালো লেগেছে। ওঁদের পাড়ার ক্লাবের অনুষ্ঠানে আমাকে গান গাওয়ার জন্য নেমন্তন্ন করে গেলেন। তুই কি যাবি আমার সঙ্গে?”

(ক্রমশ)

© Asmita Roy

——————————————————
পরবর্তী পর্বের আপডেট পাওয়ার সুবিধার জন্য আমার পেজটি ফলো করে সঙ্গে থাকুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here