#ধূসর_রঙে_আকাশ
#পর্ব_৪৪
লিখা: Sidratul Muntaz
তোহা বিষম চিত্তে একপা দু’পা করে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো। ওর পা খুব ধীরে চলছে। তার ধ্যান জ্ঞান এখন আর এই দুনিয়ায় নেই। আমীরকে দেখে এতোটাই নিমগ্ন হয়ে পড়েছে যে নিজের অজান্তেই ওর পা দুটো আমীরপানে চলতে শুরু করেছে। তোহাকে আসতে দেখে আমীর যেন একটু পিছিয়ে গেল। তোহা এমন হতবিহ্বলের মতো হাঁটছে যে আমীরের পিছিয়ে যাওয়াটা তার হুশ ফেরাতে পারলো না। স্বপ্ন হোক কি সত্যি, আমীরকে একবার ছুঁয়ে দেখা নিয়ে হলো কথা। ওকে একবার ছুঁয়ে দিতে পারলেই যেন তোহা পৃথিবীর সবসুখ পেয়ে যায়। তোহার একবার মনে হয় সে আমীরকে ছুঁতে পারবে না। আবার মনে হয় এইতো আমীর। ওর সামনেই! কেনো ছুঁতে পারবে না? কিন্তু ছুঁতে গেলেই যদি হারিয়ে যায়? তোহার খুব ভয় লাগে। হাত কাঁপছে আমীরকে ছুঁতে। প্রচুর কাঁপছে! হঠাৎ পেয়ে আবার হারিয়ে ফেলার যে কি বিষাদময় যন্ত্রণা, তোহা সেটা সহ্য করতে পারবে না। তাও তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমীরকে ছুঁয়ে দিল। ডানহাতটা তুলে আমীরের মুখমন্ডলের ডানপাশে আলতোভাবে স্পর্শ করে নিজেই কেঁপে উঠলো। আমীরের চোখ ছলছল করছে। তোহার ছোয়া পেয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে সে। যেন তৃপ্তি উপভোগ করছে। তোহা অন্যহাত মুখে ঠেকিয়ে গভীর বিস্ময় প্রকাশ করে। এইতো আমীরকে ছুঁতে পেরেছে! তার মানে এটা স্বপ্ন নয়। সত্যি আমীর এসেছে! কিভাবে আসলো, কোথ থেকে আসলো, কিচ্ছু জানার দরকার নেই। তোহা কিচ্ছু জানতে চায়না। সে শুধু আমীরকে চায়। ভীষণভাবে চায়। আরও কাছে চায়। কিন্তু আমীরের শরীর এতো ঠান্ডা কেনো? তোহা দুইহাতে আমীরের দুইবাহু টিপে টিপে দেখতে লাগলো। ওর হাত বিচরণ করছে আমীরের সারা শরীরে, চোখের দৃষ্টি বিচরণ করছে আমীরের চেহারায়। খুব ভালো করে দেখছে সে আমীরকে। এতোদিনের ক্ষুদার্থ দৃষ্টি, তৃষ্ণার্ত মন, সব যেন এক নিমেষেই পরিপূর্ণ করার পালা। আমীর তোহার হাত ধরে বললো,
” এদিকে এসো।”
তোহা স্তম্ভের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে কারণ নড়াচড়ার শক্তি ওর মধ্যে নেই। শুধু চোখ দিয়ে টপটপ পানি পড়ছে। প্রবল আনন্দের বহিঃপ্রকাশ! আমীর ডানপাশের সরু গলিতে তোহাকে নিয়ে গেল। আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে তোহার অশ্রুসিক্ত মুখের দিকে তাকায়। তোহার চোখের নিচে আঙুল রেখে ভেজা দৃষ্টিতে চেয়ে রয় কতক্ষণ। আমীরের চেহারা ভারাক্রান্ত দেখাচ্ছে। যেন খুব কষ্ট পাচ্ছে। কেন কষ্ট পাচ্ছে? তোহার চোখের নিচে কালো দাগ দেখে কষ্ট পাচ্ছে? এসব তো আমীরের জন্যই হয়েছে। ওর শোকে তোহা কতরাত ধরে ঘুমায় না! আমীর তোহার বামহাতের কবজিটা ধরে দেখে। ওর মুখে ঘন হতাশার ছাপ, চেহারা ফ্যাকাশে। মনে হয় আক্ষেপে মরে যাচ্ছে। তোহার ফুটফুটে শরীরটা শুকিয়ে চিমসে গেছে! আমীর সেটাই মনোযোগ দিয়ে পরোখ করছে। তোহার এমন করুণ অবস্থার জন্য সে দায়ী। তোহা একটা কথাও বলতে পারেনি এখন পর্যন্ত। সে আমীরময় স্রোতে ডুবে আছে। বারবার আমীরকে স্পর্শ করছে। এই তৃষ্ণা যেন কিছুতেই মিটবে না। তোহা চোখের পলকও ফেলতে ভুলে গেছে। যদি একপলকেই হারিয়ে যায় আমীর! সেই ভয়ে তোহার থমকানো হৃৎপিন্ড ঝড়ের বেগে কাঁপে। আমীরকে শক্ত করে ধরে রাখতে মন চায়। জাপটে ধরতে মন চায়। আমীরও তোহাকে একইভাবে দেখছিল। তারপর হঠাৎ ভাঙা গলায় বললো,
” এসব কি অবস্থা করেছো তোহা! সব আমার জন্য। আই এম স্যরি। আমাকে মাফ করে দাও।”
তোহা আবিষ্ট কণ্ঠে জবাব দিল,” আর আমাকে ছেড়ে যাবেন না তো? আপনি এখন থেকে সবসময় আমার চোখের সামনে থাকবেন তো? এক সেকেন্ডের জন্যও চোখের আড়াল হবেন না তো? তাহলে কিন্তু আমি মরে যাবো।”
আমীর তোহার কথা শুনে ভ্রু কুচকে ক্লান্ত শ্বাস ছাড়ে। তার বুকে ব্যথা উঠে যায়। নিজেকে সামলে বললো,” এইরকম আবদার করোনা তোহা। এ যে নিষিদ্ধ আবদার। প্রকৃতি আমাদের মিলন কখনও মেনে নিবে না।”
তোহা অবুঝের মতো প্রশ্ন করলো,
” কেনো মেনে নিবে না? প্রকৃতি কে? মানতে হবে না তাকে। শুধু আপনি আর আমি মানলেই হয়ে গেল।আমি আর কিচ্ছু চাইনা। শুধু আমার আপনাকে লাগবে। আপনাকেই লাগবে।”
তোহা আমীরের কলার ধরে খুব কাছে চলে আসে। অস্থিরতায় ব্যাকুল হয়ে কথাগুলো বলতে থাকে।
আমীর রুদ্ধ গলায় বললো,” এতো পাগল কেনো হলে তুমি? সব দোষ আমার। অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি তোমার সাথে। আমাকে ক্ষমা করে দিও!”
আমীর দ্রুত নিঃশ্বাস ফেলছে। তোহা বললো,
” আমাকে ছেড়ে গেলে কোনোদিন ক্ষমা করবো না আপনাকে। কথা দিন ছেড়ে যাবেন না!”
” এটা হয়না। আমাকে যেতে হবে। তুমি কথা দাও কখনো কাঁদবে না আমার জন্য। নিজেকে কষ্ট দিবে না। প্লিজ তোহা, আমাকে তোমার ভুলতেই হবে। অন্তত আমার জন্য হলেও আমাকে ভুলে যাও।”
” কি বলছেন এসব? আপনাকে কিভাবে ভুলে যাবো? আর আপনাকে যেতে হবে মানে কি হ্যা? কোথাও যাবেন না আপনি। গেলে আমাকেও সঙ্গে নিয়ে যান! যা বলবেন তাই করবো৷ যদি মরতে হয় তাও মরে যাবো।”
আমীর ক্রুদ্ধগলায় বললো,
” কখনও না। তোমার আমার জীবনের লাইন বদলে গেছে বুঝেছো? চাইলেও আর কোনোদিন সেটা এক হবে না। সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেলেও তোমার আমার মিলন সম্ভব না। আমাদের যাত্রাপথ এতোটুকুই ছিল। এই সত্যিটা তোমাকে মানতেই হবে!”
আমীরের কঠিন ব্যবহারে তোহা বড় বড় চোখে তাকিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে। কিন্তু কিছু বুঝে উঠতে পারে না। আমীর আবার নরমগলায় অনুরোধের মতো বললো,
” তুমি কথা দাও আমাকে ভুলে যাবে? আবার সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে? হাসি-খুশি থাকবে? তোমার হাসিতেই আমি মিশে থাকবো। কাঁদলে কিন্তু আমি থাকবো না। প্লিজ কথা দাও আর কখনো কাঁদবে না?”
তোহা আকুল আবেদনে বলে উঠলো,” আপনিই তো আমার হাসির উৎস। আপনি না থাকলে আমি হাসবো কেমন করে? সূর্য ছাড়া পৃথিবীতে যেমন দিন আসে না। তেমনি আপনাকে ছাড়াও আমার জীবনে আনন্দ আসে না। আপনি আমার সকল আনন্দের উৎস। আমার পৃথিবীর সূর্য আপনি।”
” এসব অর্থহীন কথা। তুমি প্রকৃতির নিয়ম ভাঙতে পারো না। আমিও পারিনা। যে প্রকৃতির নিয়ম ভাঙতে যায়, প্রকৃতি তাকে কঠিন শাস্তি দেয়। তুমি চাইলেই আমাকে ছাড়া সুখী হতে পারো। একশোবার পারবে। এ পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কিছু নেই। আমি জানি তুমি পারবে তোহা।”
আমীর তোহার ডানহাতের উল্টো পিঠে চুমু দিল। তোহা তীক্ষ্ণ শীহরণে চোখ বন্ধ করে নেয়। দূর থেকে শিউলির চিৎকার ভেসে আসতে লাগলো,” তোহা আপা, ও আপা! কই গেলো?”
তোহা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। শিউলির ডাক সে শুনতেও পায়নি। আমীরের উষ্ণতায় মগ্ন হয়ে ডুবে আছে সে৷ আমীর বললো,
” আমি চলে যাচ্ছি তোহা। বিধাতা হয়তো আমাদের একে-অপরের জন্য সৃষ্টি করেন নি। এই সত্যিটুকু মেনে নাও৷ এই সত্যি মেনে নিলে তুমি ভালো থাকবে।”
আমীর তোহার কপালে অল্প ঠোঁটের পরশ দিয়ে চলে যেতে নেয়। তোহা শক্ত করে হাত দিয়ে আটকে রাখে। পাগলের মতো বলতে থাকে,” যাবেন না, যাবেন না!” আমীরের প্রত্যেকটা কথা তার মন বিষাক্ত আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছে। আমীর অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে নিজেকে মুক্ত করে নিল। তোহা দুইহাত বাড়িয়ে হাঁপড়ের মতো কেঁদে উঠে৷ কাঁদতেই থাকে। আমীর চলে যায়। মিলিয়ে যায়। তোহার দৃষ্টিসীমার বাহিরে হারিয়ে যায়। তোহা আর খুঁজে পায়না ওকে। কিন্তু উন্মাদের মতো খুঁজতেই থাকে। যখন বুঝলো আমীর নেই, ওর পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে আসে। মাথা খামচে চিৎকার করে ডাকে,” আমীর!”
শিউলি তোহার চিৎকারের উৎস ধরে সরু গলিতে উঁকি দেয়। দেখলো কালো বোরখা পরিহিত তোহা দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে। শিউলি হাতের ব্যাগ ফেলে হুড়মুড় করে ছুটে যায়। তোহাকে দুই বাহুতে ধরে জিজ্ঞেস করে,
” কি হইসে আপা, আপনের কি হইসে?”
” শিউলি, তোর ভাইজান এসেছিল। সে চলে যাচ্ছে। ওকে থামা প্লিজ। ওকে যেতে দিবি না। প্লিজ ওকে থামা।”
শিউলি থতমত খেয়ে চেয়ে থাকে। তোহা চিৎকার করতে করতে অজ্ঞান হয়ে যায়। যখন ওর জ্ঞান ফিরে ও দেখলো মায়ের কাধে মাথা রেখে শুয়ে আছে। চারপাশে অনেক আলো। ওর বামপাশেই বাবা একটু দূরে বসে আছেন। সামনে তাকিয়ে কারো সাথে কথা বলছেন। মনে হলো খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা চলছে। তোহার সামনেই টেবিলের অপর পাশে একজন কোর্ট পড়া ভদ্রলোক সাদা কাগজে কিছু একটা আঁকিবুকি করছেন। এভাবে তোহার বাবাকে কি যেন বোঝাচ্ছেন। জাবিদ সাহেবও মনোযোগ দিয়ে দেখছেন। ভদ্রলোকের ঠিক মাথা বরাবর পেছনের দেয়ালে একটা ঝুলন্ত পেইন্টিং। পেইন্টিংটায় মানুষের মস্তিষ্কের ছবি। রঙ-বেরঙের মস্তিষ্ক। তোহার বুঝতে বাকি রইল না সে কোথায় এসেছে। ওকে চোখ খুলতে দেখে লাভলী মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
” সামনে দ্যাখ, স্যার কি বলে মনোযোগ দিয়ে শোন।”
তোহা সামনে তাকালো না। পেছনে তাকিয়ে দেখলো শিউলি বসে আছে। চিন্তিত চোখে ওকে দেখছে। জাবিদ সাহেবের মুখটাও হতাশাগ্রস্ত। সাইকিয়াট্রিস্ট কোমলচিত্তে হেসে তোহাকে সালাম দিল,” আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনি?”
তোহা ভ্রু কুচকে তাকায়। ভদ্রলোক খুব সুন্দর করে বললেন,
” আপনাকে একদম চাপ নিতে হবে না। মাথা ঠান্ডা করে শুধু আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিবেন।”
তোহা অবলীলায় বললো,” না, দিবো না।”
তারপর চট করে উঠে দাঁড়ালো। সবাইকে চরমভাবে বিস্মিত করে তোহা টেবিল থেকে একটা কাঁচের গোলক নিয়ে দেয়ালে ছুড়ে মারলো। চুরচুর করে ভেঙে গেল গোলকটি। জাবিদ আর লাভলী তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালেন। জাবিদ সাহেব চোখ গরম করে তোহাকে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু সাইকিয়াট্রিস্ট বাধ সেধে বললেন,
” ওকে ওকে, প্লিজ কুল ডাউন! এগুলো আমার জন্য নতুন না। প্রায়ই হয়। ডাজন্ট ম্যাটার। মামনি, আপনি ঠান্ডা মাথায় বসুন প্লিজ।”
তোহার যেন আরও রাগ উঠে গেল। টেবিলের নিচে পা দিয়ে ধাক্কা মারলো জোরে। যে চেয়ারে সে বসেছিল সেই চেয়ারটাও একধাক্কায় ফেলে দিল। লাভলী বললেন,
” আরে, আরে, মেয়েটা এমন করছে কেন?”
জাবিদ সাহেব ধমক দিলেন,” তোর সমস্যাটা কি? এসব কি শুরু করেছিস?”
তোহা কারো কথার তোয়াক্কা না করে আছড়ে আছড়ে পা ফেলে চেম্বার থেকে বের হয়ে যায়। লাভলী মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। জাবিদ সাহেব চেয়ারে বসে একগ্লাস পানি খেয়ে মাথা ঠান্ডা করলেন। বাসায় গিয়ে তোহা এলাহী কান্ড বাধিয়ে দেয়। সে কি পাগল? তার বাড়ির লোক কি তাকে পাগল ভাবে যে পাগলের ডাক্তার দেখাতে নিয়ে গেছিল? সে একটুও পাগল না। তবুও আজকে পাগলামি দেখাবে। ঘরের সব জিনিসপত্র ভেঙে গুড়া করবে। তারপর সেসব দিয়ে পাউডার বানিয়ে মুখে লাগাবে। চিকন গলায় চিৎকার করে ঘর কাঁপিয়ে তুলবে। তোলপাড় করে ফেলবে সবকিছু। লাভলী বিছানায় চুপ করে বসে আছেন। জাবিদ সাহেব বারান্দায় সিগারেট টানছেন। যেন তেমন কিছুই হয়নি। এ বাড়িতে এমন কান্ড নতুন না। এর আগেও তোহাকে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো হয়েছিল। তখনো সে এমন করেছে। এর চেয়েও ভয়ংকর কান্ড করেছে। ওকে থামাতে গিয়ে লাভ নেই। আগুন বাতাস থেকে অক্সিজেন পেলে যেমন আরও দপদপ করে জ্বলতে থাকে, তোহাকে সামলাতে গেলেও তার পাগলামীর মাত্রা আগুনের মতো দপদপ করে বাড়ে। পূরবী আর শিউলি ভয়ে একটা ঘরে বসে কাঁপছে। লতিফা গ্রামে ফিরে গেছেন। পূরবী ঢাকার একটা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। তাই সে এখানেই থেকে গেছে পড়াশুনার জন্য। শিউলি আর পূরবী তোহার এমন উন্মত্ত রূপ ভীষণ ভয় পায়। আতঙ্কে অস্থির হয়ে থাকে। লাভলী আর জাবিদ সাহেব চিন্তায় অস্থির থাকে। আর তোহা এই মুহুর্তে অস্থির আছে আমীরকে নিয়ে।
আজকে আমীর সত্যি তার কাছে এসেছিল, তাকে ছুঁয়েছিল৷ তোহার বোরখাটায় এখনো আমীরের গন্ধ লেগে আছে৷ তোহার গাঁয়ে আমীরের স্পর্শের আবেশ লেগে আছে। সেই আবেশ তো এতো সহজে ভোলার মতো না। সারাঘর উলট-পালট করে এলাহী দশা বানিয়ে রেখে এখন ঘরের একটা কোণায় গুটিশুটি মেরে বসে বোরখাটা নাকে লাগিয়ে শুঁকছে তোহা। এতেও যদি আমীরকে একটু অনুভব করা যায়। কিছু মুহুর্তের জন্য যদি মনে করা যায় আমীর আছে, ওর কাছেই আছে৷ তাহলে সেটুকু মুহুর্তই অনেক দামী। তোহা সেই দামী মুহুর্তটিই পাগলের মতো বোরখায় মুখ গুঁজে খুঁজতে থাকে। হঠাৎ কেউ এসে দরজার নিচ দিয়ে খাবারের প্লেট আর পানির বোতল ঢুকিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিল৷ তোহা সঙ্গে সঙ্গে বললো,
” এই দাঁড়া, যাবি না। খবরদার যাবি না। আমি জানি তুই শিউলি।”
শিউলি থেমে দাঁড়ালো। তার ভয় লাগছে। পা শিরশির করে উঠে। তোহা দরজা খুলে স্তম্ভের মতো দাঁড়ায়। ওর কাধ পর্যন্ত ঘন চুলগুলো এলোমেলোভাবে মুখের উপর পড়ে আছে। দেখতে ভয়ানক লাগছে। শিউলির গলা শুকিয়ে আসে। তোহা ভারী কণ্ঠে বললো,
” আমি কি জেলখানার কয়েদী?”
শিউলি গোল গোল চোখে আতঙ্ক নিয়ে তাকায়। তারপর নাসূচক মাথা নাড়ে। তোহা বললো,
” তাহলে এভাবে আমাকে খাবার দিচ্ছিস কেন?”
শিউলি ভয়ে তোতলাতে থাকে। কি বলবে খুঁজেও পাচ্ছে না। তোহা একটু কাছে এসে বললো,
” আচ্ছা তোরও কি মনে হয় আমি পাগল?”
শিউলি এই প্রশ্নের উত্তরটাও ভেবে বের করতে পারেনা৷ তোহা মুখের সামনে থেকে চুলগুলো সরিয়ে ভালোভাবে প্রশ্ন করলো,
” দ্যাখ তো, আমাকে দেখে পাগল মনে হয়?”
শিউলি ভীত দৃষ্টিতে মাথা এপাশ-অপাশ করে। অর্থাৎ না, তোহাকে দেখে পাগল মনে হয়না। তোহা বললো,
” আমি কি পাগলের মতো আচরণ করি?”
শিউলি মুখ ফসকে বলে ফেললো,” আগে মরা মানুষের লগে খালি মনে মনে কথা কইতেন, এখন মরা মানুষরে চোখেও দেখেন। এডি তো পাগলামির কারবার।”
তোহা ধপাশ করে চড় দিল শিউলিকে। শিউলি চড় খেয়ে গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে রাখে। ওর কাঁধ কাঁপছে। তোহা বললো,
” আমীর মরেনি। বেঁচে আছে ও। বুঝেছিস? এখন থেকে মরা মানুষ বললে তোর জীভ পুড়িয়ে দিবো।”
শিউলি জবাব দেয়না। ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতে থাকে। শব্দহীন কান্না। তোহা বললো,
” চড় দিলাম বলে কি মাইন্ড করেছিস?”
শিউলি মাথা নেড়ে না জানালো। তারপর আবার মাথা নিচু করে ফেললো। তোহা বললো,
” আচ্ছা, আমীরের কবরটা যেন কোথায় খোঁড়া হয়েছিল?”
শিউলির মুখ দিয়ে দীর্ঘশ্বাস বের হয়। এইমাত্র তোহা বললো আমীর জীবিত। এখন আবার বলছে ওর কবর কই। জীবিত মানুষের আবার কবর কিভাবে হয়? শিউলি উত্তর দেওয়ার আগেই তোহা পাল্টা প্রশ্ন করলো,
” অস্ট্রেলিয়াতে না?”
শিউলি হ্যাসূচক মাথা নাড়ে। তোহা বললো,
” আমি তাহলে কালকেই অস্ট্রেলিয়া যাবো।”
চলবে
( ওইটা তোহার কল্পনা না, আমীর ছিল।আমীর সত্যিই ব্যাক করেছে। আপনারা বিশ্বাস করেন। আর এখন কিন্তু অনেক অনেক রহস্য আসবে। কেউ কেউ হয়তো মজা পাবেন, কেউ আবার না বুঝলে বিরক্ত লাগতে পারে। কিন্তু কেউ নিরাশ হবেন না। শেষে বড় একটা মিষ্টি সারপ্রাইজ আছে সবার জন্যই৷ আর আসল রহস্য যে আগেই বুঝে ফেলতে পারবে সে শুধু জিনিয়াস না, জিনিয়াস আল্ট্রা ম্যাক্স প্রো। আমি পাঠক হলে জীবনেও কিছু ধরতে পারতাম না। আপনারা তাও অনেককিছুই আন্দাজ করতে পারেন।👌 )