নতুন তুই আমি পর্ব-১৮

0
2710

#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
!
পর্ব:-১৮……………………….
!
বিশাল প্রশস্ত মাঠ।চারপাশে পানি।কচুরিপানায় ভরে আছে,ভাসমান কচুরিপানা গুলো রাতের স্নিগ্ধ আলোয় সবুজ রঙের মায়াবী আভায় রূপান্তিত হয়েছে।
দিনের বেলায় হয়তো শুধু সবুজ মায়া ই দেখা যেতো।
কিন্তু এই রাতে সবুজ রঙের এই জলমেলা কালোর মাঝে হালকা আলোয় এক আলাদা সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে।
দূরে শহরের ভেতরকার বড় বড় বিল্ডিং গুলোতে আলো জ্বলছে।সেখানে বসে এমন খোলা হাওয়া আর মুক্ত আকাশ উপলব্ধি করার কোনে সুযোগ নেই।
ইট-রডের ছাদের চেয়ে এই খোলা আকাশ টাই মাথায় উপর থাকলে যে এতটা শান্তি পাওয়া যায়।
যে কখনো সেটা অনুভব করে নি তার পক্ষে সেটা বুঝা সম্ভব নয়।
তামান্না প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিলো।
না এই বাতাসে কোনো সীসা নেই….কোনো পুরা কার্বনের গন্ধ নেই।আছে শুধু প্রকৃতির মিষ্টি সুবাস।
প্রকৃতি এতটা মুক্ত সংস্পর্শে এসে তামান্নার মনের আনন্দের সমস্ত জানালা গুলো উন্মুক্ত হয়ে যায়।
বারবার এমনি হয়-প্রকৃতি খুব ভালোবাসে তামান্না।
তাই এমন পরিবেশে এলে হারিয়ে যায় সে।
একটু আগের সমস্ত জড়তা-লজ্জা-অভিমান সব মুর্হুতেই ভুলে যায় তামান্না।
সিয়াম গাড়িতে হেলান দিয়ে দেখছিলো তামান্নাকে।
কি অপ্লুত আনন্দ রাশি ফুটে উঠেছে তামান্নার চোখে মুখে!!
আশি হাজার কেনো??আশি লক্ষ টাকার কোনো উপহার দিলেও তামান্না কখনো এতটা খুশি হবে না।
সিয়াম জানে-তাই তো নিয়ে আসা।
তামান্না দৌঁড়ে মাঠের মাঝখানে চলে গেলো।
পাখির মতো দুহাত মেলে মাথাটা উঁচু করে আকাশের দিকে তাঁকালো।
কি অপরূপ!!
এতো বিশলতা লুকিয়ে থাকে প্রকৃতিতে!!!
তামান্নার ইচ্ছা করছে যদি মিশে যেতে পারতো ঐ তারাগুলোর সাথে তাহলে খুব ভালো হতো।অন্তত্য প্রকৃতির মাঝে সব সময় এতো আনন্দ নিয়ে বিরাজ করতে পারতো তাহলে।
মানুষ হওয়ার কারণে তো সে টা সম্ভব হয় না।ঘর-বাড়ি কংক্রিটের মাঝে থাকতে হয় বেশির ভাগ সময়।
তারা হলে তো সেটা হতো না।
সামনের দিকে তাঁকিয়ে পানির উপর ভাসমান কচুরিপানা দেখে মনে হলো।
নাই বা হলাম তারা।কচুরিপানা হলেও তো দোষের কিছু ছিলো না।পানির উপর সবুজে মিশে থাকা যেতো!!ইশশশ কি ভালোই না হতো।
হঠাৎ সিয়ামের কথা মনে হলো।
পেছন ফিরে তাঁকালো তামান্না।হাঁসি মুখে দৌঁড়ে এলো সিয়ামের কাছে।
“অনেক ধন্যবাদ তোকে…..”
দৌঁড়ে আসায় একটু হাপাচ্ছে তামান্না।একটু হলেও অনেক দিন দৌঁড়ানোর তো অভ্যাস নেই তাই হাঁপাচ্ছে।
মুঁচকি হাঁসলো সিয়াম।
বলল,
“ধন্যবাদ কেনো??”
“আমাকে এতো সুন্দর একটা জায়গায় নিয়ে আসার জন্য।”
“ওহ।তোর কি মনে হয় আমি তোকে এমনি এমনি এখানে নিয়ে এসেছি??”
হাঁসি থামালো তামান্না।
জানতে চাইলো,
“কেনো??”
“শোন আমি তোকে এখানে নিয়ে এসেছি তোকে খুশি করার জন্য।আর কোনো কারণ নেই…..”
“তাহলে যে বললি??”
“তুই নিয়ে ঋণী থাকতে চাস কারো কাছে??”
“এটা আবার কেমন কথা??কেউ কখনো ঋণী থাকতে চায় নাকি???”
“তাহলে আমার কাছেও থাকিস না।”
অবাক হচ্ছে তামান্না।কিসব বলছে সিয়াম।মাথায় তো কিছু আসছে না।
“এত ভণিতা না করে বল তো….কি বলছিস বুঝতে পারিস না।”
“বিষয় টা খুব সহজ।আমি তোকে খুশি করার জন্য কত কষ্টে করে ড্রাইভ করলাম,এখানে নিয়ে আসলাম।তো তোর জন্য কিছু তো একটা করলাম আমি।তাই না??”
“হ্যাঁ…..তো??”
“তাহলে সোজা হিসাব আমার কাছে ঋণী হয়ে আছিস এখন তুই…..”
“মানে কি বলতে চাস তুই?”
“তেমন কিছু না।আমি যেমন তোর ভালো লাগার জন্য কিছু একটা করেছি তেমনি তুইও আমার ভালো লাগার জন্য কিছু একটা কর।তাহলেই আর ঋণী হয়ে থাকলি না আমার কাছে……”
চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে আছে তামান্না।
কি বলে এই ছেলে???
এখন নাকি তাঁর ঋণ শোধ করতে হবে???
!
“এই কি করবো আমি হ্যাঁ??আমি কি তোকে বলেছি আমাকে এখানে নিয়ে আসার জন্য??”
“নিয়ে তো এসেছি।লাভ তো হয়েছে তোর…..”
চোখ বেটে সিয়ামকে দেখছে তামান্না।তারপর কিছু একটা ভেবে বলল,
“আচ্ছা যা কালকে তোর ফেবরিট চিকেন চিলি করে খাওয়াবো আমি।তাহলেই তো তুই খুশি।আমারও ঋণ শোধ করা হয়ে যাবে।”
“না না চিকেন চিলি তো অনেক করে খাইয়েছিস।এটা বাদ….নতুন কিছু প্ল্যান কর….”
“আজব!!!তুই না…..”
“ভাব কি করবি।না পারলে বল আমায়…আমি বলছি…..”
“দেখ…তুই আমাকে কিন্তু কোনো ভাবে খাটানোর চেষ্ঠা করবি না…..”
“আরে না না।তুই তো আমাকে খাটাস নি।আমি কেনো খাটাবো??জাস্ট দু জন দুজনকে খুশি করার দায়িত্ব নেওয়া।এই তো…..”
“আচ্ছা বল।কি করলে তুই খুশি হবি??”
“আসলো না তোর মাথায় কিছু??”
“নাহ্ আসে না।আমি কি আর তোর মতো বুদ্ধিমান??”
“ভেবে দেখতে পারিস আর একটু….”
“কি ভাববো???কোথায় নিয়ে যাবো তোকে আমি??আমাকে ই তো তুই বা বাড়ির কেউ নিয়ে যায়।তো এটা আমি পারবো না।নরমালি যেটা করি তোর মন ভালো করার জন্য বা সারপ্রাইজের জন্য সেটা হচ্ছে রান্না।বাট তুই তো খাবি না বললি।আমার সামনে তো এখন কিছু গিফ্ট দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় আমি দেখছি না……”
“তাহলে গিফ্ট…..”
“চলবে??”
“অবশ্যই চলবে।তবে সেটা আমার পচ্ছন্দ করা গিফ্ট।আমি তোর কাছে চাইবো।
দিবি তো??”
“আমার কাছে কিন্তু কার্ড টাড নেই।পার্সে চার হাজার টাকা আছে শুধু।তাই আমার সাধ্যের মতো বল। তাহলে দিবো……”
“চার হাজার টাকা লাগবে না আমার গিফ্টের জন্য।ইভেন কোনো টাকাই খরচ করতে হবে না তোর।তোর সাধ্যের মধ্যেই আমার গিফ্ট টা চাই।
শুধু তুই দিলেই হবে।দিবি তো??”
তামান্না বুঝতে পারছে না কি চায় সিয়াম।টাকা লাগবে না এমন গিফ্টট কি হতে পারে??
কেমন দ্বিধা লাগছে ‘হ্যাঁ’ বলতে।ভয় করছে না অবশ্য কেননা তামান্না জানে সিয়াম কখনোই এমন কিছু চাইবে না যা তামান্না জন্য কষ্টদায়ক।
“কি রে বল।তুই কিন্তু না হলে আমার কাছে ঋণী রয়ে যাবি।আর আমি এই ঋণ কিন্তু মাফ করতে পারবো না……”
সিয়ামের চোখে চোখ রাখলো তামান্না।নাহ্….কোনো খারাপ হতেই পারে না ওর সাথে।
বিশ্বাস করা যায় এই ছেলেকে।
তাই কোনো কিছু না জেনেই বলে ফেলল,
“হ্যাঁ,দিবো বল কি গিফ্ট চাই তোর??”
“প্রমিস কর???”
“আগে বল কি চাই…..”
“ভয় পাচ্ছিস নাকি??”
“আজব!!ভয় পাবো কেনো??বলবি তো কি চাই…..”
“আচ্ছা শোন আগে আমি প্রমিস করছি……”
“কি??”
আবারও হাঁসলো সিয়াম।তবে এই হাঁসি যেনো অন্য কিছু বলছে।
সিয়াম তামান্নার হাতটা আলতো করে ধরলো।
অবাক হচ্ছে তামান্না!!
কি করে কি এই ছেলে।
তামান্না সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো হাতটা ধরে আর একটু কাছে আনলো সিয়াম।
কেমন একটা অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে তামান্নার।সিয়াম তো আগেও হাত ধরছে তবে এখনকার ছোঁয়া টা অনেকটা অন্যরকম।
তামান্নার ভাবনা শেষ না হতেই সিয়াম তামান্নার চোখে চোখ রেখে ধীরস্বরে বলল,
“আই প্রমিস।এমন কিছু চাইবো না যেনো একটা মেয়ে হিসেবে তোর কোনো সম্মান হানি হয়।এবার তুই প্রমিস কর…..”
তামান্না চমকে উঠলো।
সিয়াম কি বলছে??
তামান্না তো আগে থেকেই জানতো সিয়াম এমন কোনো জিনিস চাইবে না।কিন্তু সিয়াম যে এই প্রমিস টা করবে জানতো না সে।
দুজন দুজনের চোখের দিকে তাঁকিয়ে আছে।রাতের আবছা আলোয় কি অরূপ মায়াবী মুহুর্তে তলিয়ে যাচ্ছে দুজন।
দুজনের চোখে এক অন্য রকম ভাষা আজ।
অনুভুতিগুলো নড়া দিচ্ছে দুজনের মনে।
সিয়াম বলল,
“কি রে??প্রমিস কর……”
নীরবতা টা ভেঙ্গে গেলো।
ইশশশ!!কি দরকার ছিলো সিয়ামের কথা বলার।
ভালোই তো লাগছিলো তামান্নার।
বুঝে নিতো সিয়াম যে-তামান্না প্রমিস করছে।তা না!!কথা বলে ফেললো।
তবুও মুঁচকি হেঁসে সিয়ামের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল,
“প্রমিস…..”
এই কন্ঠস্বর টা যেনো কেমন।
ঘোর লাগানো।স্বাভাবিক সময়ে তো এমন লাগে না সিয়ামের।ঠিক ধরতে পারলো না সিয়াম!!তামান্নার কন্ঠে কি কোনো মায়া জড়িয়ে আছে এই রাতের মাধুরতায় নাকি ওর কানে কোনো মায়া সুর তৈরী হলো!!!!
সে যাই হোক।
এখন সেটা ভাবার সময় নেই সিয়ামের।এখন তো সময় তামান্নার কাছে নিজের গিফ্ট নেওয়ার।
তাই নিজের মুখ টা তামান্নার কানের কাছে নিয়ে গেলো।
হিজাব প্যাঁচানো মেয়েটার মাথায়।হিজাবের কাপড়ের একটু উপরের ঠোঁট লাগিয়ে আবেগী সুরে বলল,
“আমায় দেখাতে হবে…….”
চমকে উঠলো তামান্না।
যদিও সিয়ামের ঠোট ওর হিজাবে লাগে নি।তারপরও মনে হচ্ছিলো সিয়ামের নিশ্বাস টা পড়ছে ওর কানের উপর।
তাই একটা আবেশ কাজ করছিলো।কিন্তু এ কি বলল সিয়াম!!
তামান্না চমকে উঠায় একটু সরে যেতে নিলো।কিন্তু সিয়াম হাত টা ধরে রাখায় যেতে পারলো না।বরং আরও শক্ত করে হাত ধরে ফেলে সিয়াম।
তামান্না সিয়ামের দিকে তাঁকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“কি বলছিস??”
“আমি প্রমিস করে ছিলাম বিশ্বাস রাখতে পারিস…….”
চেয়ে আছে তামান্না।
বুঝতে পারছে না সিয়ামকে।
“বিশ্বাস আছে তো??”
মাথা নাড়ালো তামান্না।
বলল,
“আছে…..”
“তাহলে গাড়িতে যে সাদা প্যাকেট টা আছে সেটা খুলে দেখ।আর আমার গিফ্ট টা দিয়ে দে। আমি অপেক্ষা করছি।”
“গাড়িতে??সাদা প্যাকেট??কি??”
“দেখলেই বুঝবি…..”
তামান্নার হাত টা ছেড়ে দিলো সিয়াম।গাড়ির পেছনের দরজা টা খুলে দিয়ে বলল,
“দেরূ করিস না প্লিজ।তুই গাড়িতে ঢুক।তারপর নিজেই সব বুঝে যাবি।জলদি……”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here