#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-২৯………………………………..
তামান্না সিয়ামের ঘরে বসে আছে।
এ ঘরে সে জীবনে অনেকবার এসেছে।
কিন্তু পরিচয় ছিল অলাদা।আজ থেকে এটা শুধু সিয়ামের ঘর না।তামান্নাও যে আজ থেকে এই ঘরটার মালিক।
সিয়ামের ভাবীরা তামান্নাকে খাটে বসিয়ে রেখে গেছে।তারপর থেকেই নৌশিন ঘরটা দেখছে।
আজকে পুরো অন্য রকম লাগছে ঘরটা।
সিয়ামের যে ছোট্ট কার্বাড টা ছিল সেটা চেন্সস করা হয়েছে।এখন যে দু জন।বড় কার্বাড তো লাগবেই।☺☺
আর বাকী জিনিস ঠিকই আছে।
পুরো ঘর টা ফুলে ফুলে সাজানো।
বারান্দার দিকটাও ছোট ছোট মোমে সাজানো হয়েছে।একদম কথায় বলতে গেলে ভালোবাসার একটা সর্বোত্তম পরিবেশ তৈরী করে রাখা হয়েছে ঘরটাতে।
!
দরজা লাগানোর খুট শব্দে জড়োসড়ো হয়ে বসে তামান্না।বুকটা ধুকধুক করছে।
এই প্রথম কোনো ছেলের সাথে একা ঘরে।
ভাবতেই তামান্নার কেমন লাগছে!!!!
সে যতই চেনাজানা হোক!ছেলে তো।
তামান্নার জন্য তো সে প্রিয় বন্ধু।যে কিনা এখন বর হয়েগেছে।
সিয়াম ফোন আর ঘড়িটা আয়নার সামনে রাখল।
তামান্না সাহস করে বিছানা থেকে নেমে আসল।
সিয়াম ঘুরে দাঁড়াতেই তামান্না সিয়ামের পা ধরে সালাম করে ফেলে।
সিয়াম রীতিমতো অবাক।
সে যদিও জানে আজকের রাতে স্ত্রীরা তাদের হাসবেন্ডকে সালাম করে তারপরও সে ভাবে নি যে তামান্না এই কাজটা করবে।
তামান্না জড়োসড়ো হয়ে সিয়ামের সামনে মাথা নিঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
সিয়াম বলল,
“কি করলি এটা??”
তামান্না তাঁকাল না সিয়ামের দিকে।মাথা নিঁচু করে জবাব দিল,
“আমি আমার জীবনের প্রতিটা ধাপের শুরু ইসলামী শরিয়ত অনুসারে করতে চাই।তাই নিয়মানুযায়ী আজ আমার তোকে সালাম করার কথা।”
মুঁচকি হাঁসল সিয়াম।
তারপর বলল,
“হুম বুঝলাম।তা তুই যে এতো সব হাবিজাবি পড়ে আছিস এই গরমের মাঝে খারাপ লাগছে না??”
“এসি চলছে তো রোমে।”
“তবুও সেই বিকেল থেকে।চাইলে চেন্স করে নিতে পারিস।”
“লাগবে না…..”
“তোর ইচ্ছা।”
সিয়াম কার্বাড খুলে টি শার্ট আর টাওজার বের করে ওয়াশরোমে চলে গেল।
তামান্না অবশ্য এ বাড়িতে আসার পরেই রাইয়ানের সহায়তার চোখে মুখে একটু পানি ছিটিয়ে নিয়েছে।
তামান্না চুপচাপ গিয়ে খাটে বসে রইল।
সিয়াম ফ্রেস হয়ে এসে তামান্নার পাশে বসল।
একটু দূরেই বসে দুজন।
দুজনের মাঝেই একটু জড়তা কাজ করছে।
অবশ্য সিয়ামের অল্প।আর তামান্নার ক্ষেত্রে সেটা বহুগুন বেশী।
সিয়াম সামান্য একটু এগিয় বসল।তামান্না কাছ থেকে দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।ইচ্ছা করছে একটু ছুঁয়ে দিতে।
কিন্তু সেটা করতে পারছে না সিয়াম।
এমন টা লাগবে ঘরে ঢুকার আগেও ভাবে নি সিয়াম।
তামান্না কি করবে কিচ্ছু ভেবে পাচ্ছে না।এক অসহ্যকর লজ্জা এসে ভীর করেছে তারপাশে।
এরমধ্যে সিয়াম বলল,
“আমি কি তোর হাত টা ধরতে পারি??”
তামান্নার মাঝে এবার আরও বেশী ভয় করছে।
অনেক সংকোচন হচ্ছে তামান্নার।তবুও তার কম্পিত হাতটা সিয়ামের দিকে বাড়িয়ে দিল।
সিয়াম তামান্নার কাঁপা কাঁপা হাতটার দিকে পলক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে।
হাত ভর্তি চুরিতে তামান্নাকে একটু বেশীই লাজুকীয় লাগছে সিয়ামের কাছে।
হাত টা ধরল সিয়াম।
আর সঙ্গে সঙ্গে কেঁপে উঠল তামান্না।
সিয়াম আলতো করে হাত টা ধরে তামান্নার দিকে তাঁকিয়ে আছে।কোনো এক অর্পূব লজ্জাবতী তার সামনে বসে।
অদ্ভুত একটা ভালো লাগা কাজ করছে সিয়ামের মাঝে।
যাকে সারা জীবন বন্ধু বলে জেনে এসেছে।সে যে তার জীবনের চিরসঙ্গী হয়ে যাবে ভাবতে পারে নি সিয়াম।তবে মাত্র কয়েকটা দিনের যে অনুভুতি তার মাঝে কাজ করছে।সিয়াম অবশ্য তাঁকে ভালোবাসা বলেই সঙ্গায়িত করতে চায়।
তাই সে ভালোবাসার দাবী থেকেই তামান্নার মাথায় ঘোমটা টা ফেলে দিয়ে তামান্নার গালে হাত রাখে।
আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে তামান্না।
নিশ্বাসগুলো বুকের ভেতরে পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাচ্ছে তার।
বাড়বেই বা না কেনো!!সেও যে ভালোবেসে ফেলেছে।
ভালোবাসা যে হঠাৎ করেই তাদের ঘিরে ফেলেছে।
“তোঁকে অনেক সুন্দর লাগছে।”
সিয়ামের হাতটাও কাঁপছে মৃদুভাবে।কাঁপা হাতে তামান্নার গালে হাতে বুলিয়ে কানের পাশ থেকে নাকে লাগানো নথের রিং টা খুলে ফেলল সে।
সিয়াম কি করবে না করবে কিচ্ছু তার মাথায় আসছে না।এমন মায়াবতীকে দেখে কোনো বরের কোনো সময় মাথা কি আদৌ কাজ করতো কি না সেটা সিয়াম জানে না।
সিয়াম আরও এগিয়ে গেল তামান্নার দিকে।তামান্নার সারা শরীর কাঁপছে।কিন্তু সিয়ামের চোখদুটো তামান্নার কম্পিত ঠোঁট জোড়ায় আটকে গেছে।
সিয়াম তামান্নার কানের পাশে হাত রেখে,যে হাতে তামান্নার হাতটা ধরেছিল তাতে হাল্কা একটা টান দিয়ে তামান্নাকে নিজের বুকের কাছে নিয়ে নিল।দৃষ্টি যেনো লাল রঙের রাঙানো ঠোঁটে বিধে গেছে সিয়ামের।
সিয়াম কমশ্র নেশাতুর হয়ে যাচ্ছে।এতটা কাছে থাকায় সিয়ামের প্রতিটা নিঃশ্বাস তামান্নার মুখে লাগছে।
তামান্নার ভেতরে সাইক্লোন বয়ে যাচ্ছে যেটা তামান্না ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারবে না।
আর একটু মাত্র দূরত্ব সিয়ামের ঠোঁট দুটো তামান্নার ঠোঁট স্পর্শ করবে।
এমন সময় তামান্না নিজেকে আচমকা ছাড়িয়ে ছুটে নেমে দাঁড়ায়।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একের পর এক বড় বড় নিঃশ্বাস ছাড়ছে সে।
মনে হচ্ছে জীবন টা আর একটু হলে বোধহয় বেরিয়ে যাবে তার।
সিয়ামও উঠে দাঁড়ায়।
আজকে তামান্না যে তাঁকে ঘ্রাস করে ফেলেছে।
থাকতে পারবে না তামান্নাকে ছাড়া সে।তামান্নার পেছনে দাঁড়ায় সিয়াম। শাড়ির সাথে লাগানো ওড়নার ক্লিপ টা খুলে ফেলে ওড়নাটা সরিয়ে নিতেই চমকে গেল সে।
এমন ধবধবে সাদা পিঠও হয় কোনো মেয়ের!!!ঘাড়ের কাছে একটা বিশাল কালো আধারের মতো খোপা যার সৌন্দর্য পৃথিবীর কোনো কিছুর সাথে তুলনা করা যায় না।পেছন থেকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুজল সে।সিয়ামের এমন স্পর্শে তামান্না দিশেহারা।দু হাতে শাড়ি খামচে ধরে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ভাবছে সরে যাবে।ভালোবাসার কথা বলে তারপর ধরা দিবে তার কাছে।
কিন্তু মন যে তার ভালোবাসা উপভোগ করছে।এমন স্পর্শও হয়!!এর মাঝে যে হারাতে ইচ্ছা করছে তার।
সিয়ামের ঠোঁটে স্পর্শ লাগছে তামান্নার গাঁয়ে।গরম নিঃশ্বাসগুলো আরও আবেশিত করে ফেলছে।
সিয়াম অবশ্য দুষ্টুমিতে বরাবর ই পটু।নিজের কোনো কিছু সে কখনো ছাড়ে না।
তবে আজ কেনো ছাড়বে!!!
সবটা উপভোগ করবে সে।
তাই আয়নায় দেখছে তামান্নাকে।দু চোখ বন্ধ করে আছে লজ্জাবতী তার।গাল দুটো লাল হয়ে গেছে লজ্জায়।
সিয়াম হাত দুটো তামান্নার কমড়ে রাখল।
আর তামান্না সাথে নিজের ঠোঁট দুটো নিজেই কামড়ে ধরল।আয়নায় দৃশ্য টা দেখা মাত্রই সিয়ামের ভেতরে একটা আগুন জ্বলে উঠে।
পেটের কাছে হাত দুটো নিয়ে আলতো করে চেপে ধরে।
তামান্না আর পারে নি নিজেকে সামলাতে।
সিয়ামের দিকে ঘুরে মুখ লুকায় সিয়ামের বুকে।
সিয়াম তীব্র ভাবে অনুভব করছে তামান্নাকে।নিজের বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছা করছে এই মেয়েটাকে।
সিয়াম তামান্নার দু গালে হাত রেখে তামান্নার চোখে চোখ রাখল।তামান্নার চোখ দুটো আজ বড্ড মায়াময়।
সিয়ামের সেই মায়াবী চোখে চোখ রেখে বলল,
“ভ্রমণ সঙ্গী হবে?
সেই মেঘেরে দেশে নিয়ে যাবো।
সাদা সাদা মেঘ!
খুব ভোরে?
বল,যাবে?
ভয় নেই,নরম হাতে আলতো করে ছুবো;
সঙ্গী করে নিয়ে যাবো সেই দূর পাহাড়ে
তোমার পদধুলিতে ধন্য হবে পাহাড়ের উর্ধ্ববিন্দু।
পূর্ব দিকে ফিরিয়ে দাঁড় করাবো তোমায়;
আবঝা আলোয় দূরে দৃষ্টি রাখতে হবে তোমায়।
আগুন জ্বালা সূর্যটা পৃথিবী রাঙানোর আগে তোমার নাকের ডগা রাঙাবে।
তারপর সবুজের চূড়া বেয়ে পুরো পৃথিবীটা!
মুগ্ধ হয়ে যাবে তুমি!!
সত্যি বলছি,মুগ্ধ হয়ে যাবে।
পাশ থেকে সাদা সাদা মেঘে ভেসে এসে তোমার রাঙা কপল ছোয়ে যাবে;
আবেশে চোখ নুয়ে আসবে তোমার।
চোখের কোণে জল এসে
আকর্ষিত হবে সাদা মেঘে।
আবার এক গুচ্ছ মেঘ ভীরে এসে তোমার খোলা চুলে খেলা করবে,
আরও একটা মেঘ খন্ড!
তোমার গলা,কানের পাশে নরম শরীর ছুঁয়ে গলে যাবে।
আবেশিত হবে তুমি-
আগলে রাখা হাতটি শক্ত করে ধরে হয়ে তাঁকিয়ে রবে…
সেই দূরে….
রাঙা আকাশ পাণে।
মিষ্টি আভায় মেঘগুলো হারিয়ে যাবে।
লাল আলোর থালায় ছেয়ে যাবে তুমি অতঃপর পৃথিবী।
বল যাবে??
যাবে কি আমার সঙ্গে??
সেই মেঘের দেশে?
বল,হবে কি ভ্রমণসঙ্গী?”
……………………………..