নতুন তুই আমি পর্ব-৩০

0
2930

#নতুন_তুই_আমি
Writer:Nargis Sultana Ripa
পর্ব:-৩০…………………………….
ভোরের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভাঙলো তামান্নার।চোখ মেলে তাঁকল।
একটা নতুন ভোর নতুন ভাবে শুরু হলো আজ।
নতুন পরিচয়ে,নতুন আবাসে।
তামান্না নিজেকে সিয়ামের বুকে আবিষ্কার করল।
সিয়ামের একটা হাত তামান্নাকে তার সাথে বেঁধে রেখেছে।তামান্না সিয়ামের বুকে থুতনী রেখে সিয়ামের মুখের দিকে তাঁকায়।
মুহুর্তেই তার কাল রাতের সব কথা মনে পড়ে যায়।ইসসসস!কি লজ্জা!!!
লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে তামান্না।
তার চুল গুলো সিয়ামের বুকে গলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।সিয়ামের ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাঁকাতেই লজ্জা করছে তামান্নার।আর যখন সিয়াম জেগে থাকবে??তখন কি হবে??
ভাবতেই তামান্নার মুখ টা লাল হয়ে যাচ্ছে।
সিয়ামের হাত টা আস্তে করে সরিয়ে উঠে আসতে চাইলো তামান্না।কিন্তু চাদর টা সরাতে গিয়ে থমকে গেল।
ইশশ!!এক চাদরের নিচে দুজনে।ভাবতেই পারছে না সে।
দু হাতে নিজের মুখ টা ডেকে ফেলল লজ্জায়।
বেনারসি টা খাটের সাইডে পড়ে আছে তার পাশে ব্লাউজটাও।গহনাগুলো সব সাইড করে বালিশের পাশে রাখা।তামান্না জলদি করে শাড়ি টা নিজের শরীরে কোনো রকম পেঁচিয়ে নেমে আসে।পড়ার জন্য কাপড়গুলো কোনো রকম হাতে নিয়েই ওয়াশরোমে ছোটে চলে যায়।
প্রায় এক ঘন্টার মতো শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে তামান্না।
সিয়াম তখনো ঘুমাচ্ছে।
তামান্না বরং এতে খুশিই হয়েছে।জেগে থাকলে আবার কি না কি শুরু করবে।
আর সে লজ্জায় মরেই যাবে।
আয়নার সামনে বসে চুলগুলো এপাশ ওপাশ ঝাড়ছে তামান্না।হঠাৎ আয়নায় নিজেকে ভালো ভাবে খেয়াল করে সে।
চুলগুলো একপাশে সরিয়ে গলাটা খেয়াল করতেই মুঁচকি হাঁসল সে।
কাল রাতে যে তার স্বামী শরীরে ভালোবাসার চিহ্নও এঁকে দিয়েছে!!!
তামান্না হাঁসি মুখে ফিরে তাঁকায় সিয়ামের দিকে।
“বদমাইশ!!আমাকে সারা রাত না ঘুমাতে দিয়ে নিজে দেখো কি সুন্দর ঘুমাচ্ছে।দাঁড়া,ঘুমাতে দিচ্ছি আমি তোঁকে……..”
কাত হয়ে শুয়ে নিজের বালিশ টা মাথায় দিয়ে তামান্নার বালিশটা জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে সিয়াম।তার পাশেই তামান্না খুব সাবধানে বসে পড়ল।
চুলগুলো সব এক সাইডে এনে সিয়ামের মুখের উপরের দিকে ধরে রাখে।
সদ্য ভেজা ঘন চুলগুলো থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি ঝড়ছে সিয়ামের মুখের একপাশে,চোখেও।
একসময় মিট মিট করে তাঁকায় সিয়াম।বুঝার চেষ্ঠা করে কি হচ্ছে তার সাথে।
পরক্ষণেই চমকে উঠে বিছানা ছেড়ে উঠে আসতে চায় তামান্না।
কিন্তু পারে না।সিয়াম যে আটকে নিয়েছে।তামান্না বুঝে উঠার আগেই সিয়াম তাঁকে নিজের বাহুডোরে আটকে নিল।
বুকের উপর নিয়ে শক্ত করে আলগে রেখে মুঁচকি হেঁসে বলল,
“কি করছিলি??”
“কিছু না…..”
“আচ্ছা!!!”
তামান্না সিয়ামের চোখে চোখ রাখতে পারছে না।মাথা নিঁচু করে বলল,
“অনেক সকাল হয়ে গেছে।উঠ।আর কত ঘুমাবি??”
“তুই কখন জেগেছিস?”
“অনেক আগে।”
“ওহ্।তাহলে এতো সকালে সাওয়ার কেনো নিলি??”
সিয়ামের প্রশ্ন শোনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে মুখ তুলে তাঁকায় তামান্না।
সিয়াম আবারও প্রশ্ন করে,
“সাওয়ার না নিলেই হতো এতো সকালে।তোর তো একটুতেই নাকি আবার ঠান্ডা লাগে।”
বলে মিটমিট করে হাঁসতে লাগল সিয়াম।
তামান্না সিয়ামের বুকে কয়েকটা কিল-ঘুষি দিয়ে বলল,
“ছাড় আমায়।আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই আমি সকালে সাওয়ার নিয়েছি।তোর কি??আমার মন চাইলে সকাল,দুপুর,বিকাল,রাত সব সময় সাওয়ার নিবো আমি।তাতে তোর কি??”
“আচ্ছা??সত্যি ই তুই সকাল,দুপুর,বিকাল,রাতে সাওয়ার নিতে চাস??”
দুষ্টু হাঁসি হাঁসলো সিয়াম।
তামান্না ভ্যাবাচেকা হয়ে প্রশ্ন করল,
“মানে??”
“মানে তুই যদি চাস তাহলে আমি তোর মনের ইচ্ছা টা পূরণ করতে পারি।আই মিন তুই যেনো দিনে চারবার সাওয়ার নিতে পারিস সে ব্যবস্থা করতে পারি।আমার পক্ষ থেকে কোনো কমতি থাকবে না।”
কথাটা বলেই তামান্না নিজের আরও কেছে টেনে নিল সিয়াম।তামান্না তো সিয়ামের কথা শোনে হতবাক।
কি বলে এই ছেলেটা!!
সিয়াম এমন কিছু বলবে সেটা আশা করে নি তামান্না।
তাই লজ্জা টা একটু বেশিই পাচ্ছে।
তামান্নার লাল হওয়া মুখ টা দেখে সিয়াম বলল,
“আহ্!!!কি চেহারা করেছিস মুখটার।একদম পাঁকা টমেটো হয়ে আছে।ইচ্ছে করছে কাঁমড়ে একটু টেস্ট করে দেখি…..”
তামান্না কথাটা শোনে আরও লজ্জায় পড়ে গেল।
নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্ঠা করছে সে।
“কি নড়ছিস কেনো??আমার উপরেই তো আছিস।”
তামান্না অসহায় মুখ করে সিয়ামের দিকে তাঁকায়।
আকুতির সুরে বলল,
“ছাড় প্লিজ……”
“কেনো??”
“কেনো আবার??চুল শুকাবো আমি।”
“চুল শুকাবি তাহলে চুলের পানিতে জাগালি কেনো আমায়??”
“তুই তো সারা রাত আমাকে ঘুমাতেই দিস নি।কিন্তু এখন নিজে নিজে পড়ে ঠিক ই ঘুমাচ্ছিলি।তাই তো…..”
“তাই তোর সহ্য হয় নি।এখন তো আমারও সহ্য হচ্ছে না….”
“কিহ??”
“হুম।তুই এতো সুন্দর কেনো বল তো??যাদু করে ফেলেছিলি কাল রাতে আমায়।যাদুকর নাকি তুই??হ্যাঁ??এখন আমার তোর এই রূপ সহ্য হচ্ছে না।আমি আদর করবো এখন…..”
বলেই সিয়াম তামান্নাকে নিয়ে উল্টো হয়ে শুয়ে পড়ল।
“আওওও…….”
“ওহুহফফ!!ব্যথা পেলি তাই না??”
“সর তো।উঠ….সারা শরীরে ব্যথা করেও শান্তি হয় নি তোর!!উঠ বলছি…..”
“হুসসসস।চুপ।ব্যথা সারিয়ে দিচ্ছি……..”
সিয়াম তামান্নার গালে আলতো করে চুমু দিল।
তামান্না অবাক হয়ে সিয়ামকে দেখছে।এই সিয়াম তো সত্যি ই অন্য সিয়াম যে তামান্নার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।তামান্নাকে ভালোবাসা যার নেশায় পরিণত হচ্ছে।
সিয়াম তামান্নার ভেজা চুলের গন্ধ নিচ্ছে।তামান্না আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলল।
সিয়াম এভাবে কাছে আসলে মেয়েটা সব শক্তি হারিয়ে ফেলে।কেমন যেনো নিথর হয়ে যায় তার প্রতিটা ছোঁয়ায়।
“সিয়াম!!প্লিজ…..”
সিয়াম শোনল না।
তামান্নার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবাল।
তামান্না আটকাতে চেয়েও পারল না।সিয়াম তামান্নার সদ্য ভেজা ঠোঁটে ঠোঁট মিলায়।
এক সিন্গন্ধ সান্নিধ্যতায় হারিয়ে যাচ্ছে সিয়াম।
তামান্না বেশীক্ষণ তাল না দিয়ে থাকতে পারল না।
সিয়ামের এলোপাথারী চুমুর সাথে এক সময় সে ও সিয়ামকে আগলে ধরে তাল মেলাতে শুরু করে।
সিয়াম তামান্নার ঠোঁটে কামড়ও বসিয়ে দিচ্ছে।
কাল রাতেও এই কাজটা করেছে সিয়াম।এমনিতে ঠোঁট কেঁটে গেছে আজও লাগছে।
তবে এ যে ভালোবাসার ব্যথা।
এ তে যে নারীর মহাসুখ।
নারী তো সারা জীবন এই ব্যথা পেতে রাজি।তামান্নাও যে নারী!!সে যদি ভালোবাসায় এর চেয়ে আরও ব্যথা পায় তবুও তার আপত্তি নেই।
সিয়াম তামান্নার গলায় চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে।তামান্না সিয়ামের চুলগুলো আকড়ে ধরেছে দুহাতে।এ কোন নেশায় মাতিয়ে তুলেছে সিয়াম!!
তামান্না যে সত্যিই মেতে যাচ্ছে সিয়ামের ভালোবাসার মাদকতায়।
হঠাৎ এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ানোর শব্দে দুজনেই চমকে উঠে।
তামান্না দ্রুত সিয়ামকে সরানোর জন্য ধাক্কা দেয়।
কিন্তু সিয়াম এমন সময় কড়া নাড়ানোয় খুব বিরক্তবোধ করল।তাই দীর্ঘশ্বাস নিয়ে তামান্নার গলাতেই মাথা রাখল।
আবার দরজায় কড়া পড়ল।
তামান্না সিয়ামকে সরানোর জন্য ধাক্কা দিয়ে বলল,
“সিয়াম!!প্লিজ সর।কেউ এসেছে।প্লিজ।”
সিয়াম সরল না।ওর তো তামান্নাতে মাততে ইচ্ছা করছে।কে যে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো!!!
তামান্না বুঝতে পারছে সিয়ামকে।বুঝবে না কেনো??
সে তো ভালোবাসে সিয়ামকে।
একটা স্বামী তার স্ত্রীর কাছে মন থেকে কিছু চাইলে সে স্ত্রী অবশ্যই সেটা বুঝতে পারে।
তাই তামান্না বলল,
“আমি তো একেবারের জন্য পালিয়ে যাচ্ছি না।তাই না??”
“উফফফ……”
বলেই সিয়াম বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
তামান্নার খুব হাঁসি পাচ্ছে সিয়ামের মুখটা দেখে।
কিন্তু এখন হাঁসা যাবে না।
সময় নেই।দ্রুত উঠে শাড়িটা ঠিক করলো তামান্না।তারপর মাথায় ঘোমটা দিয়ে দরজা টা খুলে দিলো।
“আরে ভাবী,কখন থেকে নক করছি।দরজা খুলছোই না।”
“রাইয়ান!!সরি রে বাবু।আয়…..”
সিয়াম রাইয়ানের দিকে একবার তাঁকাল। তারপর আবারও চাদর দিয়ে মুখ টা ডেকে ফেলল।
রাইয়ান ভেতরে ডুকে তামান্নাকে প্রশ্ন করল,
“এতক্ষণ কি করছিলে??”
তামান্না কি বলবে??
এই পিচ্চি কি বুঝতে পেরেছে নাকি কিছু!!যা পাকনা এটা।
তামান্না এবার একটা মিথ্যা বলেই ফেলল,
“আমি ওয়াশরোমে ছিলাম। তাই শুনতে পাই নি।আর তোর ভাইয়া তো এখনো ঘুমে।”
“ও…আচ্ছা ঠিক আছে
তুমি নিচে আসো।খালা মনি ডাকছে তোমায়….”
“ওকে।তুই যা আমি আসছি…”
“ভাইয়াকেও ডেকে দিও…..”
“হুম….”
রাইয়ান চলে গেল।
যাক তার মানে পিচ্চি এতো কিছু বুঝে শোনে প্রশ্ন করে নি।সরল মনেই করেছে।
তামান্না সিয়ামের উপর থেকে চাদর টা এক টানে সরিয়ে দিল,
“উঠ বলছি…..”
“আরে আমি ঘুমাবো।যাহ তুই…..”
“উঠ। তা না হলে আন্টিকে ডাকতে পাঠাবো।”
“যা পাঠা।সর…..”
তামান্না মুখ টা ভেঙিয়ে চলে গেল।আর ডাকল না।
রান্নাঘরে কাজ করছিলো তার শাশুড়ি।তামান্নাকে দেখেই বলল,
“ঘুম ভেঙেছে মা??”
“হ্যাঁ আন্টি…..”
“ও মা!!কে আন্টি রে তামান্না??”
তামান্না লজ্জা পেয়ে বলল,
“আসলে খালামনি!!!সরি….”
“সরি বলতে হবে না রে পাগলী।তোর শাশুড়ী হয় এখন।মা বলে ডাকবি।বুঝলি??”
“ওকে খালামনি।”
সিয়ামের মা হাঁসল।
বলল,
“আচ্ছা।ঠিক আছে সে না হয় ডাকবে।মা আয় তো এদিকে….”
“হুম বলো…..”
“এটা খেয়ে দেখ তো…..”
“কি এটা??”
“ও মা??কি মানে??মিষ্টি তুই চিনিস না!!!”
“আমি খাবো না প্লিজ।।”
“একটা মাইর দিবো।ঐ বাড়িতে যা মন চায় খেয়েছো কিন্তু এই বাড়িতে সব খেতে হবে।বুঝলে??”
“মা!!!”
“চুপ। দেখি হা কর…..”
তামান্না মিষ্ট টা মুখে তুলল।
বাসায় কখনো মিষ্টি খায় নি তামান্না।ওর মাম্মাম কত্ত বকাবকি করেছে।তাতেও লাভ হয় নি।কিন্তু আজ এই মায়ের মতো মানুষটার ভালোবাসা টা ফিরিয়ে দিতে পারল না।
“এই এসব কি??হ্যাঁ??চোখে পানি কেনো??”
তামান্না ওর শাশুড়ি মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“এত্ত আদর করো যে তাই…..”
“ধুর বোকা মেয়ে!!মা কি কখনো মেয়েকে আদর না করে পারে…..”
তামান্না চোখের পানি মুছে খানিক হাঁসলো।
“হুম মুখে যেনো সব সময় হাঁসি টা থাকে।তবে শোনো!মা হয়ে যেমন আদর করবো তেমন বকবোও কিন্তু।”
তামান্না হাঁসলো।বলল,
“তোমার যা খুশি করো।আমার কোনো আপত্তি থাকবে না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।যা এবার,দেখ আমার বাঁদর ছেলেটা উঠেছে কি না।তাঁকে নিয়ে আধাঘন্টার মাঝে নিচে আসবি।”
“আচ্ছা।”
তামান্না চলে এল।
সিরি দিয়ে উঠেছে।আর কৃতঙ্গতায় মন টা ভরে উঠছে।
সত্যিই বাবা-মা একদম ঠিক সিধান্ত নিয়েছে।সিয়ামের সাথে বিয়ে না হয়ে অন্য কারও সাথে হলে হয়তো সম্পর্কগুলো এতো সহজ হতো না।এখানে তো সবাই কত আপন!!কত চেনা মানুষ!!
তাই ভালোবাসা টা যেনো খুব সহজেই তামান্নার কাছে ধরা দিয়েছে।
তামান্না আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া জানাচ্ছে।
আর চাইছে যেনো সারা জীবন সে এই ভালোবাসাগুলোকে নিজের করে রাখতে পারে।

লেখিকার গ্রুপ : https://facebook.com/groups/646951215765318/

_—–___–_-___________——-_____——

সেরা সব গল্পের লিংক পেতে :https://www.facebook.com/SeraGolpo500/
💜💜💜💜💜💜💜💜💜💜

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here