#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-৪৫………………………………….
আজ দুটো ল্যাব কমপ্লিট করতে হবে চতুর্থ বর্ষের ছেলে-মেয়েদরে।
তানান্না রাত তিনটা পর্যন্ত কাজ করেছে কালকের জন্য।কারণ সিয়ান নিজের হাতে কিচ্ছু করে নি।দুজনের এসিড থেকে শুরু করে একোয়াম সব করতে সময় তো লাগবেই।
তবে সিয়াম বসে আা ঘুমিয়ে ছিলো না।
তার তো নোট পড়া বাকী।
সে সেসব পড়েছে আর ফাঁকে ফাঁকে তামান্নাকে অবশ্য একটু জ্বালিয়েছেও।
ব্রেকফাস্ট করে সিয়াম-তামান্না বের হয়ে যায় ভার্সিটির জন্য।
ভার্সিটিতে গিয়ে জানতে পারে রোল অনুযারী গ্রুপ করে দেওয়া হয়েছে ল্যাবে।
সিয়াম-তামান্না ভেবেছিলো ওরা এক গ্রুপে কাজ করতে পারবে।কিন্তু রুল অনুযায়ী করায় সেটা হলো না।
কি আর করার!!সিয়ামকে তার সব ইমপ্লিমেট গুলো দিয়ে সে তার গ্রুপে জয়েন করে।
তবে তামান্না যখন জানতে পারলো তার গ্রুপে রোদ আছে তখন থেকে একটু খারাপ লাগছে।
যবে থেকে তামান্না জেনেছে রোদ তাঁকে পচ্ছন্দ করে সেদিন থেকে তামান্না তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্ঠা করে।
আর যেদিন রোদ তাঁকে সবার সামনে প্রপোজ করেছে তার পর থেকে আর কোনো দিন কথা বলে নি।
আর আজ এক গ্রুপে কাজ করতে হবে তারমানে দরকার পড়লে কথা বলতে হতেও পারে।
কিন্তু কিছু তো করার নেই।
কাজ করতেই হবে।
!
এক ল্যাব শেষ।
মাঝখানে ত্রিশ মিনিটের বিরতি।
তামান্না গ্রুুপের মেয়েদর সাথে ক্যান্টিনে যাচ্ছিলো। তাই ওরা বললো,
“তুই সিয়ামের সাথে দোস্ত।”
“কেনো??”
“আরে বোকা তোরা দুজন একটু আলাদা সময় কাঁটা….”
“ধুর।চল তো…..”
“তামান্না ইটস নট ফেয়ার।তুই আমাদের বন্ধুকে এভাবে ঠকাতে পারিস না।”
“আ….”
“চুপ।যা তো।বাই।তবে ত্রিশ মিনিটের বেশী কিন্তুু না।কেমন!!”
তামান্না মুঁচকি হাঁসলো।
কিছু বললো না।
বন্ধুরা চলে যেতেই সে সিয়ামকে একটা ফোন করে।
“হ্যালো….”
“হ্যাঁ বল….”
“কোথায় তুমি??”
“ল্যাব থেকে বের হলাম কেবল…”
“ও।খাবো আমি ক্ষুদা লাগছে।”
“আচ্ছা তুই তোর ল্যাবের সামনে দাঁড়া আসছি।”
“ওকে।ঠিক আছে।”
তামান্না ফোন কেটে সিয়ামের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
দাঁড়িয়ে আছে ও।তাই ভাবলো একটু হাঁটা যাক।
সে যেই না পেছন ঘুরলো তখন একটু ঘাবড়ে গেলো।কারণ পেছনে রোদ দাঁড়িয়ে আছে।
আর শুধু দাঁড়িয়েই আছে না কেমন একটা চোখে তাঁকিয়েও আছে তামান্নার দিকে।
রোদ ছেলেকে টা দেখতে খারাপ না।
তবে একটু বাউন্ডেলে ধরনের।
তর আগে অনেক মেয়ের সাথে প্রেম করেছে।
তবে তামান্নাকে কোনো ভাবেই পটাতেই পারে নি।তাই এক রকম জেদ ধরেই এখনো তামান্নার পেছনে পড়ে আছে।
এখন তামান্নার বিয়ে হয়ে গেছে সিয়ামের সাথে।
জেদ টা হয়তো সেজন্য আরোও বেড়ে গেছে।
-তামান্না রোদকে দেখেও কিছু বললো না।
কিছু বলার তো থাকতেও পারে না।
তাই সে চলে আসলো সেখান থেকে।
নিচে নেমে সিয়ামকে বললো এখানে আসতে।
কিছু সময় পর সিয়াম আসলো।
“কি ব্যাপার??এখানে??”
“ল্যাবের সামনে একা একা ছিলাম তাই…”
“এখানেও তো একা!”
“তবুও এখানে ভালো লাগছিলো।গাছের ছায়ায়।”
“ওকে ওকে।চল।ত্রিশ মিনিট সময় মাত্র।”
“হুম।”
!
সিয়াম তামান্না একে অপরের দিকে মুখ করে বসেছে।
ক্যান্টিনে বসে নি ওরা।
ভার্সিটি থেকে বের হয়ে রেস্টুরেন্টে এসেছে।
সিয়াম তামান্নার পচ্ছন্দ মতোই খাবার অর্ডার করলো।
সে জানে তামান্নার কি পচ্ছন্দ আর কী নয়।তামান্না কিছু বলছে।
চুপচাপ বসে আছে।
সিয়াম তামান্নার দিকে তাঁকিয়ে বললো,
“কি হয়েছে??”
“হুম??”
“বললাম,কি হয়েছে?”
“না মানে।”
“হুম….”
“তুমি স্যারকে বলে আমার গ্রুপে এসে পড় না……”
আসলে তামান্না তখন রোদের চাহনীতে কেমন একটু ভয় পেয়েছে।তাই সিয়ামকে বলবে না বলবে না করেও বলেই ফেললো।
সিয়াম অবশ্য এতে কিছু সিরিয়াস ভাবনা ভাবলো না।
হাঁসলো সে।তারপর বলল,
“এইটুকু সময়েই মিস করছিস??”
“ধুর।সবসময় ফাযলামি করবে না…..”
“আচ্ছা।ঠিক আছে।করছি না ফাযলামি।তবে এক ল্যাব করে অন্য ল্যাবে যাওয়া যাবে না এখন।সকালে বললে হতো।”
“ওহ্।ঠিক আছে তাহলে।
এর মধ্য ওদের খাবার এসে গেলো।সিয়াম বললো,
“নে সব তোর ফেবরিট।”
তামান্না সিয়ামের দিকে তাঁকিয়ে মুঁচকি হাঁসলো।
সিয়ামের কি হলো!!সে হঠাৎ এসে তামান্নার পাশে বসলো।
“আরে কি হলো??”
“তোর পাশে বসলাম।আমার পাশে তোকে ডাকলে তো বলতি-লোকজনের দিকে মুখ করে খেতে পারবি না তুই।তাই আমি বসলাম।”
“হুম।ভালোই তো।”
“অফ কোর্স ভালো।নে খা এবার।টাইম তো শেষ প্রায়।”
“হুম।খাচ্ছি।”
দুজনেই খাবার শুরু করেছে।
সিয়াম খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে তামান্নাকে দেখছে।
এক সময় তামান্নার গা ঘেষে বসে হাতটা তামান্নার কমড়ের উপর রাখলো।
হঠাৎ এমন হওয়ায় তামান্না একটু চমকে উঠছে।
“আরে কি হচ্ছে?লোকজন আছে তো পাশে।”
সিয়াম কিছু হয় নি এমন একটা ভাব ধরে খাচ্ছে।
এই মানুষটার সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।তাই সেও চুপচাপ মেনে নিলো সবটা।
কিছুটা খেয়েই তামান্না বললো,
“আমার শেষ…..”
সিয়াম তাঁকালো।
প্লেটের খাবার এখনো অর্ধেকও হয় নি।
তবে সে কিছু বললো না।
সরাসরি তামান্নার চামচ টা হাতে তুলে নিয়ে খাবার টা তামান্নার মুখের সামনে ধরে বললো,
“হা কর…”
“কি??”
“খেতে বলছি আমি।”
“পারবো না।সত্যি বলছি পেট ভরে গেছে।”
“থাপ্পর খাবি??নাকি খাবার?”
“প্লিজ….”
সিয়াম চোখ বড় বড় করে তাঁকায়।তামান্না একটু আশে পাশে তাঁকিয়ে দেখলো।নাহ্!লোকজন তেমন নেই।আর বড় রেস্টুরেন্ট গুলোতে এতো লোক থাকতেও না।আশেপাশের টেবিলগুলোতে দু-চারটা কাপল আর কি।
কে জানে হতে পারে জিএখ-বিএফ বা স্বামী-স্ত্রী।
বন্ধু গ্রুপও আছে তবে সেটা কম।
সিয়াম বললো,
“খাচ্ছিস হাসবেন্ডের হাতে তাতে লোক দেখার কি আছে!!”
তামান্না সিয়ামের হাতেই খেতে লাগলো।যেদিন ওর শাশুড়ি বাসায় থাকে সেদিন ওনিই সকালের ভাত টা খাইয়ে দেয়।
আর ওনি না থাকলে সিয়াম।
শাশুড়ী মায়ের হাতে খেতে ভালো লাগে তামান্নার।তবে সিয়ামের হাতের খাবার টা মনে হয় সব চেয়ে সেরা।
খাচ্ছে দুজনেই।সিয়াম-ই তামান্নাকে পুরো খাবার টা নিজ হাতে শেষ করিয়েছে।
এর মাঝে যে দুজন দুজনের চোখাচোখি হয়ে কত হাঁসাহাঁসিও করছে!!!!
!
আবার যে যার ল্যাবে চলে যায়।আবার কাজ করতে হবে দু ঘন্টার মতো।
তামান্না সব সময় মনোযোগের সাথে সব কাজ করে।
আজও তাই হচ্ছে।
তবে এইবারে একটা বিষয় সে খেয়াল করলো-রোদ তার পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করছে।
কিন্তু সকালে এপাশে রোদ ছিলো না।ছিলো অন্য একটা ছেলে।এখানে তো আর বলার কিছু নেই।আর তামান্না এখন ইচ্ছা করেও এই জায়গা থেকে সরতে পারবে না।
তামান্না ভয়ে ভয়ে সারা টা ল্যাব ওর্য়াক কমল্পিট করেছে।
মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়াও আদায় করছে।
!
ল্যাবে কাজ করার পর সবাইকে যার যার ডেস্ক আর ব্যবহৃত যন্ত্রত্রপাতি পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখতে হয়।
সবাই যার যার মতো ক্লিন করে চলে যাচ্ছে।
তামান্নাও তাই করছে।
সে এক্সপ্রিমেন্ট বেশী করায় ক্লিন করতে দেরী হচ্ছে।
যথা সম্ভব চেষ্ঠা করছে দ্রুত করার জন্য।একা পড়লে আবার রোদ যদি কিছু বলে!
মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে তবে কিছুক্ষণ পর ওর মনে হলো ওর এপ্রোণে তরল কিছু লাগছে।
আর পাশে তাঁকাতেই দেখতে পেলো রোদ টেস্টটিউবে রাখা থিতানো পানি অল্প অল্প করে তার ঘাড়ের কাছে ঢালছে।
তবে হিজাবের জন্য আগে টের পায় নি তামান্না।
পানি যখন হিজাবের কাপড় ভেদ করে জামায় লেগেছে তখন বুঝেছে ও।
আর বুঝার সাথে সাথেই বেশ রাগ হলো তামান্নার।
ঝটকা দিয়ে রোদের হাত টা সরিয়ে দিলো,
“এটা কি ধরনের অসম্ভতামী??”
টেস্টটিউব টা ভেঙে গেলো।
কাঁচগুলো ছোট ছোট টুকরা হয়ে চারপাশে ছড়িয়েছে।
তামান্না হঠাৎ আশে পাশে তাঁকাতেই খেয়াল করলো ল্যাব পুরো ফাঁকা।ওর গ্রুপের বাকী চার জন চলে গেছে।
এখন শুধু সে আর রোদ।
তামান্না আর দিক বিদিগ ভাবলো না পুরো পরিষ্কার না করেই হাঁটা ধরলো বাইরের দিকে।
কিন্তু দরজার কাছে আসতেই রোদ দৌড়ে এসে দরজা টা লাগিয়ে দিলো।
তামান্না ভয় পাচ্ছে তবে সেটা প্রকাশ করছে না।
সাহস রেখেই বললো,
“রোদ,আমি বাইরে যাবো।”
“কিন্তু তোমার তো কাজ শেষ হয়নি।”
“বাকী টা আমি কাল সকালে এসে করবো।”
“কেনো??রুলস ভাঙবে??”
“হ্যাঁ।দরকার পড়লে ভাঙবো।”
তামান্না দরজা খুলতে নিলে রোদ হাত টা ধরে ফেললো।
“কি হচ্ছে কি??হাত ছাড়ো আমার।”
“যদি না ছাড়ি??”
“হাত ছাড়ো বলছি….”
রোদ হাত ছাড়লো না।
তবে সে তার নিজের অন্য হাত টা তামান্নার কমড়ে রাখল।
তামান্নার পুরো দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসছে।
এমন পরিস্থিতিতে ও জীবনেও পড়ে নি।
সিয়াম ছাড়া ওর শরীর আর কোনো পুরুষ এভাবে হাত দিবে সে কখনো কল্পনাও করতে পারে না।
চোখ দুটো ছলছল করছে তামান্নার।
সে বললো,
“কি করছো?ছাড়ো?এরকম অসভ্যতামী করে ঠিক করছো না তুমি…”
তবে রোদ বেশ শান্ত ভাবেই বললো,
“এই পাশের কমড়েই তো সিয়াম হাত রেখেছিলো তাই না??আজ লান্সের সময়??”
“হাত সরাও বলছি…”
তামান্না ধস্তাদস্তি করছে তবে পারছে না।
রোদের সাথে তামান্নার না পেরে উঠা টাই স্বাভাবিক।
তামান্না কেঁদে ফেলে,
“রোদ প্লিজ।ভাই।এমন করো না।”
এবার রোদ চটে যায়।
সে তামান্নার কমড় ছেড়ে দিয়ে শক্ত করে গাল চেপে ধরে,
“ঐ…কি বললি??ভাই না??আমি তোর কিসের ভাই??হ্যাঁ কিসের ভাই….”
তামান্নার গালে চাপ লাগায় কথা বলতে পারছে না ও।
“উউউউউ…..”
“কি কষ্ট হয়??হুম??আমারও হয়।তুই যখন সিয়ামের সাথে যাস।সিয়াম তোকে সবার সামনে লিপ কিস দেখায়।রেস্টুরেন্টে খাইয়ে দেয়।কমড়প হাত দেয়।”
তামান্না মাথা ঝটকা দিয়ে রোদের হাতটা ওর মুখ থেকে ছাড়িয়ে নিলো।রেগে সেও জবাব দিলো,
“কেনো জ্বলবে তোমার??সিয়াম আমার হাসবেন্ড….”
রোদ সাথে সাথে ঠাটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলো তামান্নার গালে।তামান্না তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে গেলো।
টেস্টরিউবের ভাঙা কাঁচের টুকরাগুলো সেখানেই ছিলো।
সেগুলোর কিছু খন্ড তার হাতের তালুতে লেগে দু হাতের তালুই কেটে গেছে।
“আল্লাহ্ গো….”
রোদ ছুটে যায় তামান্নার কাছে।
হাত দুটো টেনে ধরে বলে,
“দেখি দেখি।কেটে গেছে তো….”
তারপর আবার তামান্নার হাতটা নিজের গালে চেপে ধরে বলে,
“তামান্না সিয়ামকে কেনো বিয়ে করলে বলো তো??আগে থেকেই ওর সাথে রিলেশন থাকায় আমার প্রস্তাবে রাজি হও নি।তাই না??”
তামান্না কাঁদছে।তবে সে কষ্ট করে বললো,
“আগে বসতাম না।না তোকে না সিয়ামকে।তবে এখন সিয়ামকে নিজের থেকে বেশী ভালোবাসি।আর তোকে তো অপচ্ছন্দ করতাম আর আজ থেকে ঘৃণা করি।”
রোদ রাগ দেখালো না।
তামান্নার রক্তাতো হাতে চুমু খেলো।বললো,
“আচ্ছা।সিয়াম কি কি করে তোমার সাথে??আমি যদি তাই তাই করি তাহলে কি আমায় ভালোবাসবে তুমি??”
তামান্নার পিলে চমকে উঠলো।
কি বলছে রোদ!!আল্লাহকে ডাকছে ও।যেনো রহমত হয়।
তবে রোদ এগিয়ে আসছে তামান্নার দিকে।তামান্না প্রাণপণে চেষ্ঠা করে ছুটে আসার।কিন্তু পারছে না……