নতুন তুই আমি পর্ব-৪৯

0
1844

#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
পর্ব :-৪৯…………
তামান্না জেগে উঠার আগেই আজ সিয়াম জেগেছে।সকাল সাত টা বেজে গেলেও তামান্না টের পায় নি।কালের ইনজেকশনের প্রভাবেই হয়তো আযান শোনেও টের পায় নি।
তামান্না এলোমেলো হয়ে সিয়ামের বুকে শুয়ে আছে।সিয়াম তামান্নার চুলগুলে ঠিক করে দিকে কপালে আলতো করে চুমু খেলো।
এত পবিত্রতা মাখা এই মুখে কেউ কি কখনো কুনজর দিতে পারে!সিয়ামের জানা ছিলো না।
সিয়াম তামান্নার ঠোঁটেও আলতো করে চুমু খেলো।তারপর রোদের কথা মনে পড়তেই দ্রুত অথচ খুব সাবধানে তামান্নার গায়ে পাশে রাখা শাড়ি টা একটু পেচিয়ে দিয়ে-গাঁথা দিয়ে শরীর টা ঢেকে দিলো।আস্তে করে উঠে ওয়াশরোমে চলে গেলো ও।সাওয়ার নিয়ে এসে দেখে তামান্না এখনো ঘুমাচ্ছে।সিয়াম আর ডাকলো না তাকে।
রেডি হয়ে নিলো।হাসপাতলে যাওয়ার জন্য।
তবে সিয়াম সব শেষে যখন ফোন টা নেওয়ার জন্য বেড সাইড টেবিলের কাছে গেলো।
তখন মিট মিট করে তাঁকায় তামান্না।
সিয়ামের দিকে চোখ পড়তেই মৃদু স্বরে বললো, “কোথায় যাচ্ছো?”
সিয়াম তামান্নার দিকে তাকালো।বললো, “ঘুম শেষ??”
“হুম।কখন উঠছো?আর কয়টা বাজে??”
তামান্না ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হলো।সাড়ে সাতটা বাজে অথচ সে এখনো বিছানায়!তৎক্ষনাৎ কাল রাতের কথাও মনে পরে যায় ওর।ইশশশ!সকাল সকাল তো এট লিস্ট সাওয়ারের দরকার ছিলো!নামায টাও মিস!
তামান্না চট জলদি উঠে বসলো।
সিয়াম বললো, “আস্তে।এতো তাড়া কিসের!”
“আমি এতো বেলা অবদি!!”
“তো।প্রবলেম কি!কাযা নামায পরে নিবে তাহলেই হবে।”
তামান্না পুরো তাজ্জব!কি বললো সিয়াম!
‘পরে নিবে’!তার মানে তুমি বলে সম্বোধন!
কিভাবে সম্ভব!সিয়াম তামান্নাকে তুমি!!!
তামান্নার মুখটা রীতিমতো হা হয়ে গেলো!
সিয়াম তামান্নার পাশে বসে বললো,
“কি ভাবছিস??”
তামান্না এবার ভাবলো ও হয়তো তাহলে ভুল শোনেছে।সিয়াম ওকে কখনোই তুমি বলবে না।বিয়ে ঠিক হওয়ার পর তো সে বলেই ছিলো যে এত তুমি টুমি ডাকতে পারবে না।তাহলে!!নিশ্চয় ওর কানের ভুল।
সিয়াম আবার বললো, “না ঠিক শোনেছিলে তুমি।আমি তুমি বলেই বলেছিলাম!”
তামান্নার এবার সত্যি সত্যি অদ্ভুত লাগছে!
‘তুমি’ শব্দটা সিয়ামের মুখে শোনতে কেমন অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে।
সিয়াম হাত বাড়িয়ে আলতো করে তামান্নাকে জড়িয়ে ধরে বললো, “এখন থেকে আমার যখন খুশি তুই বা তুমি করে ডাকবো।এনি প্রবলেম?”
তামান্না মু্চকি হেসে মাথা নাড়ালো। “নাহ্”
“ইশশশ!!কি লজ্জা!যা উঠে যখন পরেছিস সাওয়ার নিয়ে নে।কাল রাতে….”
তামান্না চোখ বেটে সিয়ামের দিকে তাকালো।বললো, “মুখে একটু লাগাল লাগানো উচিত।”
সিয়াম তামান্নার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললো, “আমার শরীরেই তো কোনো কন্ট্রোল নেই।মুখে কি করে থাকে বলো তো?”
তামান্না সিয়ামের বুকে একটা থাপ্পর দিয়ে বললো, “ধ্যাত।”
“আচ্ছা।শোনো।আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।ওকে?”
“এত সকালে??কোথায়??”
“একটু কাজ আছে।”
“কিন্তু…”
“কোনো কিন্তু না।আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো।আর এসে যেন না শুনি আপনি মন মরা হয়ে বসে ছিলেন বা কান্না কাটি করেছেন।ঠিক মতো না খেলে খবর আছে আপনার।”
“ইশশশ। শেষমেষ খাওয়া!!”
“হ্যা।খাওয়া।”
“ওকে।”
“গুড।তাহলে আসছি আমি।একটু তাড়া আছে।”
“হুমম….”
সিয়াম তামান্নার কপালে আর ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে বেরিয়ে গেলো।
তামান্না উঠে সাওয়ার নিয়ে কাযা নামায আদায় করলো।
_
আর এদিকে হসপিটালে রোদের ঘুম ভাঙতেই সে কেবিনে সিয়ামকে বসে থাকতে দেখলো।রোদ খুব একটা কথা বলতে পারে না।কষ্ট হয় বলতে।গলা পুরে গেছে তো।তবে সিয়াম কাছে যেতেই বেশ একটু ঘাবড়ে গেলো সে।
সিয়াম হাসলো।
বললো, “কেমন আছিস বন্ধু?”
রোদ ঠোঁট নাড়ালো।
সিয়াম বললো, “না না থাক।কথা বলতে হবে না।কষ্ট হয় তো তোর।”
সিয়াম হঠাৎ আচমকা রোদের বেড শীট দিয়ে ওর গলায় অল্প চাপ দিলো।কিন্তু তাতেই বেশ লাগলো রোদের। কারণ পুরা ক্ষত!
সিয়াম রাগে কটমট করছে!
“লাগছে তাই না?লুচ্চা তোর চোখ দুটো আমি পুতে দিবো।আমার তামান্নার দিকে নজর দিস।তোর জীবন টা শেষ করতাম কালকেই শুধু তামান্নার কথা ভেবে ছেড়ে দিয়েছি।”
রোদ ছটফট করতে লাগলো।সিয়াম ওর গলা থেকে হাত সরিয়ে নিলো।তারপর বললো,
“শোন তোর সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করার ইচ্ছা আমার নেই।তাই সোজাসাপ্টা একটা কথা বলছি কান খোলে শোনে রাখ তামান্না যে তোর গায়ে এসিড লাগিয়েছে এটা যেনো কেউ জানতে না পারে।আর জানলেও সমস্যা নেই।কিন্তু তুই জানালে তোর জীবন সে দিন শেষ।আর তোর জীবন তো এমনিতেই শেষ হয়ে যাবে।তবে শ্বাস নেওয়ার অধিকার টা পাবি।আর জানলে সেটাও হারাবি।”
সিয়াম আবারও হাসলো।
বললো, “ওকে দোস্ত থাক তাহলে।আবার দেখা হবে।আর হ্যাঁ!ভুলে যাস না আমি কি করতে পারি!আর কথাগুলো মাথায় ডুকিয়ে নিস।”
সিয়াম আর দাড়ালো না সেখানে।বেড়িয়ে আসলো কেবিন থেকে।রোদের বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে হসপিটাল থেকেও চলে আসলো।আর মাঝপথে ভাবলো -মাঝে মাঝে হয়তো বীজ গুনে গাছ হয় না।যদি হতো তাহলে এমন ভালো বাবা-মায়ের ছেলে হয়ে রোদ কখনো এমন জঘন্য একটা মানুষ হতো না।সিয়াম ড্রাইভিং করতে করতে দীর্ঘশ্বাস নিলো।
আজব এই পৃথিবীতে কত কিছুই না হয়!
কারও কারও ভালো গুনগুলো কল্পনার বাইরে আর কারও কারও খারাপ গুন কখনো ধারণারও বাইরে থাকে!আজব দুনিয়ায় আজব সব মানুষ!অদ্ভুত মন!তবুও দিন শেষে তো মানবিকতা টা থাকা উচিত।কিন্তু আদৌ কি সবার মাঝে সেটা আছে???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here