#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-৫২………………………………..
রাইয়ান আর আকাশের গাড়ি আগে এগিয়ে চললো।তাদের পেছনে একটু দূরে সিয়াম আর তামান্নার গাড়ি।
রাইয়ান বেশ চটপটে একটা মেয়ে।দেখতে যেমন মিষ্টি,চঞ্চ্যল,কথাতেও তেমন পটু আর মনটাও ভীষণ ভালো।সে গাড়িতে উঠতেই আকাশকে প্রশ্ন করেছে, “আপনি ভাইয়া আর ভাবীর সাথে পড়েন নাকি এমনিই বন্ধু??”
“এক ডিপার্টমেন্ট। ভালো বন্ধু।”
“ওহ্।বিয়েতে দেখেছি মনে হচ্ছে।”
“হ্যাঁ।”
এর মাঝে রাইয়ান আরও অনেক অনেক প্রশ্ন করে ফেলেছে আকাশ।আকাশ শুধি উত্তর দিচ্ছে কোনো প্রশ্ন করছে না।সত্যি বলতে সে প্রশ্ন করার মোডে নেই।তার সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে সে এখন রাইয়ানকে পর্যবেক্ষণ করতে ব্যস্ত।
!
এদিকে সিয়াম তামান্নাকে একদম নিজের কাছাকাছি বসতে বাধ্য করেছে।তামান্না ঠিকভাবে বসতে চাইলেও পারছে না।কারণ সিয়াম এক হাত দিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে আর অন্য হাতে তামান্নার কমড় ঝাপটে ধরে আছে।
তামান্না এক সময় বললো, “শোনো,তুমি এভাবে ধরে রাখবে বলে আমায় লং ড্রাউভে নিয়ে এসেছো?”
“কেনো ভালো লাগছে না??”
“তা না।একহাতে আমাকে এভাবে ধরে রেখেছো।এক্সিডেন্ট হবে তো??”
“হপ।চুপ কর।মুখে আটকায় না?”
“রাগ কেনো করছো!আমি তো শুধু বললাম।”
“এরপর থেকে বলবি না।”
“হুম।”
সিয়াম তামান্নার কমড়ে আলতো করে চাপ দিলো।তামান্না চোখ বন্ধ করে ফেলেছে।সিয়াম টা না কিসব করে।ড্রাইভিং এর সময়ও এমন করতে হয়!
তামান্না একটু স্বাভাবিক হয়ে বললো, “কোথায় যাচ্ছি আমরা??”
“দেখতে পারবে।”
“ওহ্।”
“হুম।”
“এই শোনো না!মনে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের দিকে যাচ্ছি।আরও একটু সামনে গিয়ে বামে একটা পার্ক পড়বে।ওদিকে যাবো একটু।”
“ঐদিকের পার্ক টা তো একদম ছোট!তেমন একটা ভালোও না।”
“না প্লিজ প্লিজ যাবো।”
“ওকে।আকাশকে ফোন করে বলছি ওদিকে ঘুরতে।”
“ওক্কে।”
তামান্না খুশিতে সিয়ামের গালে চট করে একটা চুমু খেলো।সিয়াম তাকালো তামান্নার দিকে।মু্চকি হেসে বললো, “কি আছে রে ঐ পার্কে??”
তামান্না লজ্জা পেলো।বললো, “গেলেই দেখতে পারবে।এখন আকাশকে ফোন করো।”
!
ওরা পার্কে থামলো।গাড়ি থেকে নেমেছে।এই পার্ক টা ছোট হলেও অনেক সুন্দর।একটা বিলের পাশ ঘেষে পার্ক টা তৈরী।আর পড়ন্ত বিকালে আসার একটা উৎসবময় আমেজও পড়েছে চারপাশে।তবে শুক্রবার তাই স্বাভাবিকভাবেই বাচ্চা কাচ্চা বেশি।
বিলের ধারে মোড়ার মত করে সিঙ্গেল বসার জায়গা।চার জন গিয়ে বসলো সেখানে।ফুরফুরে বাতাসে মন ভালো না হয়ে কোনো উপায় নেই।প্রশান্তিতে হৃদয় জুড়িয়ে যাওয়ার মত পরিবেশ।
তামান্না বললো,
“ভাবী,পার্ক টা কিন্তু সুন্দর।”
“হ্যাঁ।অনেক।তবে এখানে কেনো এসেছিস জানিস?”
“কেনো?”
“কারণ এখানে সন্ধ্যার দিকে দারুণ মজার ফুচকা পাওয়া যায়।”
রাইয়ান কিছু বলার আগেই সিয়াম বললো, “কিহ!!”
“হ্যাঁ।এত অবাক হওয়ার কি আছে?”
“তুমি এজন্য–আকাশ-উঠ।”
“মানে আর একটু বসবো।কিছুক্ষণ পরেই ঐ মামা টা আসবে।”
“অন্য কিছু খাবি।ফুচকা না।উঠ।”
“না।”
“রাইয়ান চল।তামান্না একা ফুচকা খাবে।”
তামান্না দাঁড়িয়ে সিয়ামের হাত টা ধরলো।বললো, “প্লিজ।খাবো।”
“উফফফ।কি পাও ফুচকাতে?”
“প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”
“ভাইয়া,থাকি না।ভাবী এতো করে বলছে।”
“হ্যাঁ।তোর ফুচকা পাগলী খেতে চাইছে।কি আর করবি!”
সিয়াম অগত্যা থেকে গেলো।
আকাশ বললো, “তুই আর তামান্না থাক।আমরা ঐদিক টায় আছি।”
সিয়াম হাসলো।বললো, “ওকে।”
সিয়াম ভেবেছে আকাশ তাদের সুযোগ করে দিলো।কিন্তু আসলে আকাশ তো নিজের সুযোগ টার জন্য বেশী এগিয়ে গেলো।
ওরা চলে যেতেই তামান্না আশেপাশে তাকিয়ে সিয়ামের হাত টা আলতো করে ধরলো।
“ধন্যবাদ।থেকে যাওয়ার জন্য।”
“আচ্ছা?”
“হুম।”
সিয়াম তামান্নার হাত টা আরও শক্ত করে মুঠি করলো, “আমার যে বিনিময় ছাড়া কিছু দিতে ইচ্ছা করে না।”
“আমি তো বিনিময় দিচ্ছি।এই যে হাত ধরেছি।”
“এটা তো অল্প।আমার অল্পতে মন ভরে না।”
“ইশশ।ঢং।”
“যা ভাবিস তাই।কফি খাবি?”
“হুম।খাবো।”
!
আকাশ রাইয়ানকে নিয়ে আইসক্রিম বারে গিয়ে বসলো।তামান্না যেমন ফুচকা পাগলী তেমনি রাইয়ানও একটা আইসক্রিম পাগলী।আইসক্রিম বারে এসেই রাইয়ানের জিভে জল আসার অবস্থা।তবে আকাশকে আইসক্রিম খাওয়ানোর কথা বলতে আনজি লাগছে।সে নিজেও তো পার্স আনে নি সাথে তাহলে তো খেতে পারতো।
রাইয়ান এসব ভাবতে ভাবতেই আকাশ আইসক্রিম অর্ডার করে ফেললো।
রাইয়ান বিষয়টা খেয়াল না করলেও যখন সামনে আইসক্রিম আসলো।বেচারী অবাক হওয়ার চেয়ে খুশি হয়েছে বেশি।
আকাশকে কোনো কিছু না বলেই সে চট করে আইসক্রিম টেস্ট করলো।
“ওয়াও।থ্যাস্ক ভাইয়া।উমমম।”
রাইয়ান মুখ না না ধরনের আকার করে আইসক্রিমের স্বাধ নিচ্ছে।
আকাশ তাকিয়ে আছে সেদিকে।মেয়েটা কত সহজ সরল।কতটা অমায়িক হলে কারও সাথে এতো সহজে মিশে যাওয়া যায়!
রাইয়ান আইসক্রিম খেতে খেতে বললো, “ভাইয়া-ভাবীও আমাদের সাথে আসতো?”
“কেনো?”
“আইসক্রিম খেতো।”
“ওরা একটু একা থাকুক।”
“ওমা।এটা আবার কোন ধরনের কথা।”
“আমি তো জানি তুমি খুব বুদ্ধিমতী।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমি ভুল জানি।”
“মানে??”
“মানে ওরা নতুন হাসবেন্ড ওয়াইফ ওদের তো একটু আলাদা সময় ব্যয় করা উচিত।আমরা থাকলে তো তাদের প্রাইভেসি টা নষ্ট হবে।”
রাইয়ান একটু লজ্জা পেলো তবে সেটা নিজের বুদ্ধি কম হওয়ার জন্য।এই বিষয় টা বেড়াতে আসার পরও ওর মনে হয় নি।আহা রে।এই মুহুর্তে আকাশকে আরেকটা ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলেও বললো না।
“চলুন।আমার শেষ।”
“হ্যাঁ।চলো।টাকা টা দিয়ে দাও।”
আকাশের এই কথাটা শোনা মাত্র রাইয়ানের মাথা চড়ক গাছ।কি বলছে এই এসব সিয়াম।
রাইয়ান ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললো, “আমার কাছে তো টাকা নেই।”
“তাহলে আইসক্রিম কেনো খেলে?”
রাইয়ান মৃদু স্বরে বললো, “আমি ভেবেছি আপনি খাইয়েছেন।”
“আমি কি তোমাকে বলেছি?”
রাইয়ান মন খারাপ করে আকাশের দিকে তাকালো।তারপর বললো, “ভাইয়াও তো এখানে নেই।”
“এখন কি করবে?”
“কত টাকা এটা?”
আকাশ বিল টা জেনে নিয়ে রাইয়ানকে বললো, “আড়াইশো টাকা।এই টাকা নেই তোমার কাছে?”
“নাহ্।আমি তো বাসা থেকে পার্স আনি নি।”
রাইয়ান এই কথাটা বলতে বেশ কাঁদোকাঁদো হয়ে গেলো।সে ভাবেই নি আকাশ তাকে এমন করে বিল দেওয়ার কথা বলবে।আর আকাশ যদি নিজে থেকে বিল না দেয় তবে সে তো আর জোর করতে পারবে না।
রাইয়ান ভাবলো।তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, “আপনার ফোন টা একটু দিবেন?”
“কেনো?”
“ভাইয়াকে ফোন করবো।আমার ফো গাড়িতে।”
“ভাইয়াকে ফোন করবে টাকার জন্য?”
“হুম।”
“আচ্ছা।তুমি একটা কাজ করতে পারো।”
“কি?”
“আমার কাছে টাকা টা ধার নাও।পরে দিয়ে দিও।”
রাইয়ানের এই মুহুর্তে চরম রাগ হলো আকাশের উপর।কেউ এমন করে?বা করতে পারে তা রাইয়ান ভাবে নি।এ তো রীতিমতো ইচ্ছা করে ধাক্কা দিয়ে ফাদে ফেলে দেওয়া।তবুও রাইয়ান আপাতত নিজেকে সেফ করার জন্য বললো, “ঠিক আছে।আপনি বিল টা দিয়ে দিন।আমি আপনার টাকা শোধ করে দিবো।”
“আর ইউ সিউর?”
“জ্বী।”
রাইয়ান আর একটা কথাও বললো না।আকাশ মুচকি হেসে বিল দিলো।রাইয়ানের মোড ওফ।সেটা দেখে তার আরও হাসি পাচ্ছে।তবে হাসলো না।রাইয়ানকে নিয়ে গাড়িতে বসলো।
সিয়াম-তামান্না এলেই আবার যাত্রা শুরু করবে।তার আগে রাইয়ানকে স্বাভাবিক করতে হবে।তাই আকাশ নিজের মাথায় আরও কিছু কু-বুদ্ধি আটতে লাগলো।দেখা যাক না আকাশের এই জটলাবুদ্ধির জবাব ছোট্ট রাইয়ান কি করে দেয়।☺☺☺☺☺☺☺