নতুন তুই আমি পর্ব-৫৩

0
1900

#নতুন_তুই_আমি
Writer:Nargis Sultana Ripa
পর্ব:-৫৩……………………………..
!
রাইয়ান মনমরা হয়ে বসে আছে।আকাশের উপর রাগ টা বেড়ে যাচ্ছে।আকাশ অবশ্য এতে কিছু মনে করছে না।তার উদ্দশ্যেই ছিলো রাইয়ানের মনে দাগ কাটা।আজকের পর থেকে রাইয়ানের মনে আকাশের একটা ভাবনা থাকবে।যদিও রাগের তারপরও আকাশের চিন্তা।ব্যাপার টা আকাশের জন্য অনেক কিছু।
!
এদিকে সিয়াম তামান্নাকে ফুচকা খাওয়ার অনুমতি দিতেই তামান্না প্লেটের পর প্লেট ফুকচা খেয়ে যাচ্ছে।সিয়াম তাকিয়ে হাসছে।এক এক করে টোটাল সাত প্লেট ঝাল ফুচকা সাবাড় করে দিয়েছে তামান্না।আরও নিতে চেয়েছিলো সিয়াম বাঁধা দিয়েছে।
বিল মিটিয়ে তামান্নার হাত ধরে দ্রুত গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো সিয়াম।তামান্নাকে বুঝাতে চাইছে সে রেগে আছে।তবে সে নিজে সত্যিই রাগে নি।বরং তামান্নার এমন বাচ্চামোতো বেশ ভালো লাগছে ওর।
“উফফ,আস্তে টানো না।এরকম টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছো!”
“দেরী হয়ে গেছে অনেক।”
“আমরা কি ভাইবা দিতে যাচ্ছি যে টাইলমি যেতে হবে!”
“সেরকম ই।”
তামান্না আর কিছু বললো না।সিয়ামের পায়ের সাথে পা মিলিয়ে গাড়ি পর্যন্ত গেলো।
আকাশের গাড়ির পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখলো রাইয়ান মন খারাপ করে বসে আছে।আকাশ গাড়িতে নেই।
সিয়াম বললো,
“কি রে আকাশ কোথায়??”
“এই তো কোথায় গেলো কেবল।”
“ওহ্।”
রাইয়ান গাড়ি থেকে নামলো।
বললো, “ভাইয়া,আমাকে টাকা দাও।”
“টাকা?”
“হুম।আমি আইসক্রিম খেয়েছি আকাশ ভাইয়া বিল দিয়েছে।ওনার টাকা দিতে হবে।”
“আরে ধুর পিচ্চি।আকাশকে আবার টাকা দিতে হবে নাকি।”
“না ভাইয়া।তুমি দাও।ওনি বলেছেন দিয়ে দিতে।”
তামান্না হেসে বললো, “বোকা।তুই টাকা দিলেই সে টাকা নিবে নাকি।ও হয়তো দুষ্টামি করেছে।”
“সে যাই করুক ভাবী।আমি ওনার টাকা দিয়ে দিবো।”
সিয়াম রাইয়ানের হাতে এক হাজারের একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে বললো, “ওকে। যা দিয়ে দিস।”
সিয়াম আকাশকে ফোন করলো।আকাশ জানালো আসছে।
রাইয়ান গাড়িতে উঠে বসলো।
সিয়াম তামান্নাও তাদের গাড়িতে।আকাশ আসলেই আবারও তাদের যাত্রা শুরু।সন্ধ্যা পেড়িয়ে রাত হচ্ছে।রাতের আধারের সাথে শহরের আলো পেড়িয়ে তারা হারিয়ে যাচ্ছে ঝোনাকি ঘেরা গ্রাম্য রাতে।
এমন সময় রাইয়ান আকাশের দিকে টাকা ধরে বললো, “নিন।”
আকাশ তাকালো।টাকা দেখে বললো, “কিসের?”
“আপনার।আমার আইসক্রিমের বিল।”
“কিন্তু সে তো আড়াইশো টাকা।তুমি এক হাজার দিচ্ছো কেনো?”
“আমার কাছে ভাংতি নেই।আপনি রেখে দিন।”
“তুমি কি আমায় সুদ খাওয়াতে চাইছো?”
“না।তাহলে আড়াই শো রেখে বাকী টা আমাকে দিয়ে দিবেন।”
“তুমিই দিও।”
“না।আপনিই দিয়েন।আমি ভাংতি কোথায় পাবো।আপনার ভাংতি আছে।বিল দেওয়ার সময় ভাংতি করলেন যে।”
“সেগুলো আমার লাগবে।তুমি এক কাজ করো। আমাকে পরে দিও।আমি চেয়ে নিবো।”
“পরে না।এখনি নিন।ঋণ রেখে ঘুমাতে নেই।”
“বেশ ভালো জানো দেখছি”
“হুম।হায়ত মুওতের কথা তো বলা যায় না।যদি আজই মরে যাই তাহলে বাকী ঋণ কি করে শোধ করবো!”
আকাশ হঠাৎ গাড়ি টা ব্রেক করে ফেললো।রাইয়ান বেশ ভয় পেয়ে গেছে।এভাবে কেউ গাড়ি থামায়।
রাইয়ান আকাশের দিকে ক্ষেপে তাকালো।কিন্তু তার ক্ষেপানো দৃষ্টি মুহুর্তেই ভয়ার্ত দৃষ্টিতে পরিণত হলো।কারণ স্বয়ল আকাশ তার দিকে অগ্নিমুর্ত হয়ে তাকিয়ে আছে।
সিয়াম-তামান্না এবার আকাশ-রাইয়ানের গাড়ি ক্রস করে গেলো।ওদের গাড়ি থামানো দেখে সিয়ামও ব্রেক করলো।জানালা দিয়ে মুখ বের করে চেঁচিয়ে বললো, “কি রে??এনি প্রব?”
আকাশ জবাব দিলো, “না।তোরা এগো।আমরা আসছি।”
“ওকে।”
সিয়াম গাড়ি স্টার্ট করতেই রাইয়ান আকাশকে বললো, “কি হলো?গাড়ি চালু করুন।”
“তার আগে তুমি বলো।তুমি উল্টা পাল্টা কেনো বললে?”
“মানে?”
“হায়াত-মউত।”
“এটা তো নরমাল।”
“নেক্সট টাইম এসব কথা না যেনো না শুনি।”
বলেই আকাশ গাড়ি চালানো শুরু করলো।রাইয়ান বুঝতে পারলো না।এমন কথায় আকাশের রাগ করার মানে কি!সেও আর কথা বাড়ালো না।
“যাক যা হওয়ার হোক তাতে আমার কি।বদমাইশ লোক একটা।”
রাইয়ান মনে মনে বললো।
তারপর চোখ রাখলো বাইরের দিকে।মৃদ্যু বাতাসে রাইয়ানের চুল গুলো উড়ছে।ফাঁকা রাস্তায় শুধু ওদের দুটো গাড়ি বেগ বাড়িয়ে নিচ্ছে।
আকাশ মাঝে মাঝে আড় চোখ তাকাচ্ছে রাইয়ানের দিকে।মেয়েটার সাথে একটু আগে যে রাগ করে কথা বলা হলো-সেটা তার মাথা বা মনে কোথাও নেই।কি অবলীলায় প্রকৃতির মাঝে নিজেকে বিলীন করে দিচ্ছে।
তবুও আকাশ নিজে থেকে কিছুটা অপরাধবোধ করলো।বললো, “সরি।”
রাইয়ান তাকালো।মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে বললো, “রাগ দেখিয়ে আবার সরি।”
“তুমি ওমন কথা না বললেই পারতে।”
“হু।আমার ইচ্ছা হলে আবার বলবো।”
“বলে দেখো।কি করি।”
“এই তো এখনি বলবো।আপনি কি করবেন শুনি।হায়াত-মউ…উহুহুহু…”
আর কিছু বলার আগেই আকাশ রাইয়ানের হাত টা শক্ত করে ফেললো।
“বলো….”
“হুহু।হাত ধরেছেন কেনো!লাগে।”
“কথাটা বললে এমন একটা মুচড় দিবো না।হাত ভেঙে দিবো।”
আকাশ সত্যি সত্যি এক হাতে রাইয়ানের হাতে হালকা মুচড় দিলো।রাইয়ান ব্যথায় “উহু” শব্দ করলো।
তবুও ছাড়লো না আকাশ।
রাইয়ান বললো, “লাগছে আমার।ছাড়ুন না ভাইয়া।আর বলবো না।”
“গুড।বড়দের সাথে এভাবে সম্মান দিয়ে কথা বলবে।”
“ওকে।বলবো।ছাড়ুন না হাত টা।”
আকাশ রাইয়ানের হাত টা ছাড়লো।তবে ছাড়ার আগে রাইয়ানের ছোট কমল নরম হাত টাতে আলতো করে চুমু দিলো।যেটা রাইয়ান কখনো কল্পনাও করে নি।তার শরীর জোরে বিদ্যুৎ চমকের মতো শিউরে উঠলো।কি হলো!কিভাবে হলো!তার ধারণা করতে পারছে ন রাইয়ান।
অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।অথচ আকাশ মুচকি হেসে ঠিকই নিজের মতো করে গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দিয়েছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে না সে একটু আগে কোনো মেয়েকে উষ্মতার আবেশে দিয়েছে।
!
সিয়াম গাড়ি থামালো একটা রির্সোটের সামনে।তামান্না বুঝতেও পারলো না।বুঝবে কি করে সে যে সিয়ামের কাঁধে মাথা রেখে সিয়ামের একটা হাত বুকে জড়িয়ে মহাসুখে ঘুমিয়ে কাতর।সিয়াম গাড়ি থামিয়ে আস্তে করে তামান্নাকে সিটের উপর মাথা দিয়ে শুইয়ে দিলো।তারপর নেমে গিয়ে আকাশকের গাড়ির কাছে গিয়ে বললো, “রাইয়ান আজ আমরা এই রির্সোটে থাকবো রাতে।”
“কিহ?”
“হ্যাঁ।সামনে আর যাবো না।”
“তাহলে চলো ঢাকায় ব্যাক করি।”
“তা করা যাবে না।একটা এক্সিডেন্টের খবর এসেছে।বাইরে থেকে গাড়ি আজ রাতে ঢাকায় ডুকতে দিবে না।”
“কিন্তু।এখানে কি কর…..”
“প্রবলেম হবে না।আমরা আগেও এসেছি।আর তুই ভয় কেনো পাচ্ছিস?তুই তো আর একা নস।”
রাইয়ান কাঁদোকাঁদো হয়ে গেলো।বললো, “আমি থাকবো না।ভয় করে।অচেনা জায়গা।”
“আরে বুদ্ধু এমন করে নাকি।আমরা হঠাৎ করে বিপদে পড়ে গেলাম।আব্বু ফোন করে জানিয়েছে এক্সিডেন্ট টার ব্যপারে তা না হলে জানতাম-ই না।”
“আমার ভয় করছে।কেমন ভুতুরে রির্সোট!”
“হ্যায়।কিচ্ছু হবে না।তুমি না কলেজে পড়ো।তারপরও এই অবস্থা।আসলে বাচ্চা বাচ্চাই হয়।”
আাকশ এই কথা বলতেই রাইয়ান তেলে বেগুন জ্বলে উঠলো, “আপনি চুপ করুন তো।সব সময় বেশী বেশী করেন।”
আকাশ হা করে তাকিয়ে রইলো রাইয়ানের দিকে।কি গলা রে বাবা! এতো জোরে ধমকও যে রাইয়ান দিতে পারে সেটা আকাশের জানা ছিলো না।
সিয়াম রাইয়ানকে অবশেষে বুঝাতে সক্ষম হলো।আকাশকে বললো রাইয়ানকে নিয়ে ভেতরে যেতে।সে তামান্নাকে নিয়ে বাকী সব ব্যবস্থা করে আসবে।
!
সিয়াম গাড়িতে গিয়ে বসলো।তামান্না ঘুমাচ্ছে।জার্নিতে বেচারীর ছোট খাটো ঘুম ঘুমানোর অভ্যাস আছে।তবে আজ অনেকটাই ঘুমাচ্ছে।সিয়াম তার ঘুমন্ত পরীর কপালে আলতো করে চুমু দিলো।যেন ঘুম না ভাঙে।
তারপর কায়দা করে কোলে করে গাড়ি থেকে বের করে নিলো।ঘুমন্ত মায়া মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলো সামনে।নীবিড় ভাবে বুকের কাছে জড়িয়ে নিয়ে নিজেকে কোনো রাজ্যজয়ী রাজকুমার ভাবতে লাগলো।যে কিনা বিপরীত পক্ষকে পরাজিত করে রাজকন্যাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here