#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-৫৮……………………………..
!
রাইয়ান অনেক ভাবার পর কোনো এসএমএস করলো না।সরাসরি ফোন করলো।
কিন্তু একটা রিং হওয়ার পরেই অপর পাশ থেকে একটা খটখটে মহিলার মিষ্টি কন্ঠেস্বর ভেসে আসলো, “আপনি যে নাম্বারে ফোন করেছেন তা এই মুহুর্তে ব্যস্ত আছে।অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর কল করুন।ধন্যবাদ।”
এখানেই কি শেষ!মহিলা ইংরেজী ভার্সানও তো বাদ দিলো না, “The number you are calling is busy now,please call at the sometime.Thank you.”
রাইয়ান মুখ টা ভেংচি কাটলো।
নিজে নিজেই বললো, “ইশশশ!কি এমন ব্যস্ত রে।ফোন টাও ধরতে পারেন না।হু!”
রাইয়ান ফোনটা আগের জায়গায় রেখে পড়তে বসলো।বইটা খুলতেই ফোন বেজে উঠলো।তারমানে আকাশ ব্যস্ততার জন্য ফোন কাটে নি।রাইয়ানের ফোন ধরবে না তাই কল কেটে নিজে ব্যাক করলো।
রাইয়ান হাসলো।
তারপর ফোন তুলে বললো, “আমার ফোন ধরলে কি হতো?”
আকাশ এ কথার জবাব দিলো না।
বললো, “বড়দের সাথে কথা বললে প্রথমে সালাম দিতে হয়।এটাও জানো না এখনও।”
“ওহ!সরি সরি।আসসালামু-আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।পিচ্চি একটা মেয়ের ফোন ধরলে মান সম্মান নিয়ে প্রবলেম হতে পারে।”
“এএএ…আমি পিচ্চি নই।”
“পিচ্চি উইথ অন্ধ।”
“উফফ।আপনি আমায় অন্ধ কেনো বলছেন?”
“তুমি বাইরে বেড়ুলে চশমা কেনো পড় না?”
“কিহ্!”
“তোমার চোখে শুধু রোম চশমা থাকে।কাল রাতে যখন ছাদে গিয়েছিলে তুমি অনেকটা দূরে ঠিক দেখতে পারো না।তোমার কথায় বুঝে গিয়েছিলাম।বাট চশমা কেনো পড় না??”
রাইয়ান একটু লজ্জা পেলো।
কেনো জানি তার চশমা পড়তে সত্যিই খুব লজ্জা লাগে।তাই শুধু পড়ার সময় আর পরীক্ষার হলেই চশমা পড়ে যায়।তা ছাড়া ব্যবহার করে না।সমস্যা হলেও মানিয়ে নিতে চায়।
রাইয়ানকে চুপ থাকতে দেখে আকাশ নিজেই আবার কথা বললো, “কি হলো!চুপ কেনো??”
“আমার না চশমা পড়তে কেমন জানি লাগে।”
“কেমন নাকি লজ্জা??”
“সেরকম-ই বলতে পারেন।”
“লজিক ব্যতীত কথা বলো কেনো?এটা কোন ধরনের ব্যাখা।চশমা একটা দরকারী জিনিস।এখনকার অনেক ছেলেমেয়ে তো ফ্যাশনের জন্য হলেও চশমা পড়ে।আর তুমি-তোমার প্রবলেমের জন্য পড়বে তাতে আবার এতো কাহিনী!”
“কি জানি!আমার ভালো লাগে না।”
“এক্সট্রা গাঁধা টাইপ মেয়ের মতো কথা বলো না।”
“কিহ!!!”
“জ্বী।”
“আপনি আমাকে এসব কি বলে ডাকেন??গাধা,পিচ্চি,বোকা,অন্ধ!!!!”
“সেসব তোমার কাছে ব্যাখা দিবো না আমি।”
“হু!আমাকে ডাকবেন আর আমি ব্যাখা চাইবো না।”
“আমার একটা বাক স্বাধীনতা আছে।আমি অবশ্যই আমার যা বলার তাই বলতে পারি।”
“হ্যাঁ।তা তো আছে।আপনার কি মনে হয় আমার নেই?”
“না।”
রাইয়ান অবাক হয়ে বলল, “কিহ?”
আকাশ প্রশ্ন করলো, “তোমার বয়স কত?”
রাইয়ান গলা খাকরি দিয়ে আস্তে করে বললো, “১৭।।।।”
“এজন্যই নেই।”
“মানে??”
“মানে ১৮ বছর এখনও হয় নি তোমার।তুমি বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে এখনও শিশু।তাই তোমার উপর তোমার পুরোপুরি অধিকার এখনও হয় নি।সবটাই তোমার অভিবাবকের।তাই আমার মতো বাকস্বাধীনতা তোমার নেই।”
“ইশশশশ।বললেই হলো।সতেরো থেকে আঠারো হতে আর কতক্ষণ!”
“তাহলে যবে হয় তবে আমার কাছে যবাত টা নিয়ে নিও…..”
রাইয়ান এবার খানিক টা বিরক্ত হয়ে বলল, “আপনি না একদম বেশি বেশি…..”
আকাশ হাসলো।
“আচ্ছা!আচ্ছা বেশ!তা কি করা হচ্ছিলো।”
“পড়ছিলাম।আপনি?”
“কি করছি বলে মনে হয়??”
“সিগারেট??”
“যাক বুদ্ধি আছে তাহলে।”
“হু।জানেন মৌরি আপু একটা উপন্যাস কনফিউশন তো যে হিরো নাম কাব্য সে না সারাক্ষণ সিগারেট খায়।”
আকাশ হাসছে।
সিগারেটে আরও একটা টান দিয়ে বললো, “আমি বাবা কোনো আরশির জন্য সিগারেট ছাড়তে পারবো না।”
রাইয়ান অবাক হলো,
“আপনিও উপন্যাস টা পড়েন??”
“আমার বোন জোড় করে পড়তে দিয়েছিলো।তারপর থেকে বাকী টা আমি নিজের ইচ্ছাতেই পড়ছি।”
“ওহ!”
“হুম।কি যে হতভাগা কপাল-একটা আরশিও জুটলো না কপালে।”
“জুটবে কি করে আপনি তো আরশির জন্য সিগারেট ছাড়তে পারবেন না।”
“আমি কাব্য নই।আমি আকাশ।আরশি তো শুধু কাব্যের সাথে যায়।আমি আকাশ আমার আকাশে তো আরশিকে মানায় না।এ আকাশ অন্য কারও।আর তাঁকে আমি আমার প্রিয় সিগারেটের ধোয়ার মতোই আমার ফুসফুসে ধারণ করবো,নিকোটিনের মতো গিলে খাবো তাকে,সিগারেটের মতো করেই ওষ্ঠে জড়িয়ে রাখবো তাকে।”
রাইয়ানে কি হলো কে জানে!আকাশের এইসব অদ্ভুব কথা শোনে ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেলো।
আর তার অপরিপক্ব মস্তিক ভাবতে লাগলো-কাউকে আবার গিলেও খাওয়া যায়!
হৃৎপিন্ডে ধারণ করার কথা তো অনেকেই বলেছেন কিন্তু এই পুরুষ তো ফুসফুসে চলে গেলো।আর ওষ্ঠ!!!
নাহ্!ছিঃ কি লজ্জা!!
রাইয়া মনে মনে তো -বেশরম-উপাধি দিয়ে ফেললো আকাশকে।
আকাশ রাইয়ানের কথার অপেক্ষায় আর রইলো না।কিশোরী যে লজ্জায় পরেছে সেটা বেশ ধরতে পারছে সে।
তাই প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বললো, “তুমি কোন কলেজে জানি পড়ো?”
রাইয়ান গলা টা একটু ঠিক করে বললো, “হলিকর্স।”
“গুড।পড়াশোনার কি খবর।”
“উম।ভালো।”
“ফিউচার প্ল্যান কি??”
“আপাতত কিছু নেই।”
“মানে??কোনো প্যাশন নেই তোমার।”
“নাহ্…..”
এই বোকা মেয়ে!প্যাশন ছাড়া মানুষ আর চালক ছাড়া গাড়ি এক কথা।লাইভে কিছু করতে গেলে কিছু ড্রিম রাখতে হয়।”
“আমার তো এমন কোনো কিছু নেই।তবে হ্যাঁ,একটা আছে।”
“কি সেটা??”
“আব্বুর সাথে ব্যবসায় জয়েন করবো।আমার তো ভাই-বোন নেই তাই আম্মু এটাই চায়।”
“তোমার আম্মু চায় তাই বলেই কি??”
“না না!আম্মু তো আগে বুয়েটে পড়ার জন্য বলতো।কিন্তু আমার ইন্জিনিয়ারিং ভালো লাগে না।আমার খুব ইচ্ছা আমি আমার বাবার পাশের চেয়ারে বসবো।”
“ওয়াও। গ্রেট।”
“গ্রেট কি না জানি না।তবে আমি আমার আব্বুর এত কষ্ট করে দাঁড় করানো ব্যবসাটাকে আরও অনেক দূর নিয়ে যেতে চাই।”
“আলহামদুলিল্লাহ।আমি দোয়া করি তোমার স্বপ্ন পূরণ হোক।”
“হুম।তারপরও একটা কথা কি জানেন?”
“কি কথা??”
“দেশের সবাই যদি চাকরি-ই করি তাহলে চাকরি টা দিবে কে!”
“দারণ একটা কথা বললে তো।”
“হুম।সবাই যদি বিসিএস এর পেছনে ছুটে-সবাই যদি গোগলে জব খোঁজে তাহলে আমাদের শিল্প-ব্যবসা-কালচার তো ধ্বংস হয়ে যাবে।”
“বাব রে।তোমাকে যতটা পিচ্চি ভাবী তুমি কিন্তু ততটা নও।”
“হি হি হি হি।”
“আবার হাসছো।”
“হাসতে ভালো লাগে।”
আকাশ কি যেনো বলছিলো অপর পাশ থেকে।কিন্তু তার আগেই রাইয়ানের ডাক পড়লো।
তাই জলদি করে রাইয়ান বলে ফেললো, “এই এই রাখছি।ভাবী ডাকছে।খাবো এখন।টাটা। ভালো থাকবেন।”
আকাশকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রাইয়ান ঠাস করে ফোন টা রেখে চলে গেলো।
এদিকে আকাশ হ্যালো বলে ফোনে তাঁকাতেই দেখলো-কল কেটে দিয়েছে রাইয়ান।
বেশ খানিক টা বিরক্ত কাজ করলেও রাইয়ানে এই অল্প পক্বতা,বাচ্চামি আর মায়াবী মুখটার কথা ভেবে কোনো এক অজানা অনুভূতিতে হারিয়ে গেলো।