#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-৬০……………………………..
!
তামান্না সিয়ামের বুকে শুয়ে আছে।তার হাতে মোট চারটা ছবি।অণুপমা আর সিয়ামের।প্রত্যেকটা ছবিতেই অণুপমা শাড়ি পড়া।এতোটা ক্লোজ না হলেও কোনোটাতে হাত ধরে বা কোনটাতে একদম পাশাপাশি বসে।যেটা বন্ধুর চেয়ে বেশির প্রমাণ রাখে।তামান্না এক এক করে সবগুলো ছবি ছিড়ে ফেললো।
এক দু টুকরো না অসংখ্য।
তারপর আচমকা সবগুলো ছাইয়ের মতো করে ফ্লোরে ছুড়ে দিলো।শরীর সমস্ত শক্তি দিয়ে সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে বললো, “সব নষ্ট করে দিলাম।”
সিয়াম একটা শ্বাস বড় রকমের শ্বাস নিলো।
নাহ্ দীর্ঘশ্বাস নয়।না কোনো কিছু হারানোর অসঙ্গায়িত ব্যথার বহিঃপ্রকাশ।কোনো দূঘর্টনার ভাগশেষ টুকু নিঃশেষ হয়ে যাওয়া মুক্তির আস্বাদন এই শ্বাস।যেটা অতীতের কালো রেখা পড়িয়ে বর্তমানকে আকড়ে ধরার প্রেরণা জোগায়।
তামান্না আর সিয়াম যখন ভার্সিটিতে আসে।অণুপমা তখন একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।বয়সে সিয়ামের সমান।রক্ত দান গ্রুপ বন্ধনে এক সাথে করতে করতে অণুপমার সাথে সিয়ামের একটা বেশ ভালো সখ্য গড়ে উঠে।সম্পর্কটা অণুপমার দিক থেকেই শুরু হয়েছিলো।তবে সিয়ামও আলাদা কিছু অনুভব করেছিলো।যেটা তামান্নাকে জানিয়েও ছিলো।তামান্না প্রথমে বিষয়টা মজার ছলে নিলেও কিছুদিন পর ধরতে পারে বিষয়টা সম্পূর্ণ ভেতরের দিকে চলে যাচ্ছে।এমনও হয়েছে অণুপমা ফোনে সিয়ামকে না পেলে তামান্নাকে নক করতো।দুজনের অনুভতিগুলো বেশ ভালো ভাবেই এগুচ্ছিলো।ব্যাপার টা ঘটেছিলো সিয়ামের ভার্সিটি লাইফের আট মাস পড়েই।যেটা সময়ের কারাগারে প্রায় তিন মাসেই আটকে গিয়েছিলো।কেননা-অণুপমা তখন অন্য কারো স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে নিয়ে হঠাৎ করেই সমস্ত আবেগ আর মায়ার সীমানা পেড়িয়ে সিয়ামের হাত টা ছেড়ে দিয়েছিলো।মাস তিনেকের খুনসুটি ছিলো অনেক।এক যুবক যুবতীর পাশপাশি রিক্সসা,হাতে হাত ধরে রেললাইনে হাটা,পথের ধারে কৃষ্মচূড়া গাছের নিচে ধারিয়ে সিয়াম অণুপমার শাড়ির কুঁচিও ধরে দিয়েছিলো।
সবটা ঘিরেই দুজন যেনো একসাথে এগিয়ে যাচ্ছিলো।
হঠাৎ করেই যে পথ চলার শুরু হয়েছিলো সেটা হঠাৎ করেই থেমে গিয়েছিলো।অণুপমা চায় নি সম্পর্ক টা রাখতে।তার মাত্র তিন মাসেই মনে হয়েছিলো সিয়ামের হাত ধরে সে নিজের স্বপ্নের চাঁকা খুব দূর পর্যন্ত ঘুরাতে পারবে না।তাই হাত ধরে ফেললো আমেরিকান এক কাজিনের।ব্যাস তাতেই শেষ সিয়ামের ধমকা হাওয়ার মতো জড়ো হওয়া হাজার হাজার অনুভুতি।যার জন্য স্ট্রিট মোড়ে গিটারের তার টা নতুন নতুন সুর তৈরী করতো তার জন্যই সমস্ত ছন্দগুলো বেতাল
বদলে হারিয়ে গেলো।
সিয়াম ভেঙ্গে পড়েছিলো।কাছের কয়েকজন বন্ধুরা ছাড়া আর কেউ জানতো না।তামান্না তো পুরোটাই জানতো।তামান্নাই বের করেছিলো সিয়ামকে। ভাঙ্গা বেতাল সুরটা নতুন করে গড়াতে না পারলেও স্বাভাবিক ছন্দ টা ফিরিয়ে এনেছিলো।
দুজনের কেউই তারপর কখনে অণুপমা নিয়ে কথা বলে নি।এক দিন তো দূরের কথা একটা মুহুর্তেও জন্যও না।তবে তামান্নার সাথে বিয়ের কথা হওয়ার সময় সিয়ামের মনে পড়েছিলো সেই তালমাতাল কিছু দিন।স্মৃতির পাতায় জমা করে রাখা ছবি চারটা অনেক দিন পর বের করেছিলো।আর আজ সেটাও শেষ করে দিলো।তাও আবার নিজে নয় তামান্নার হাতে।
সত্যিই কিছু ধ্বংসও হয় অনেক ভালোর জন্য।কপালের লিখন এক দিক অপূর্ণ করলে অন্য দিকে আরোও ভালোটা ঠিক মিলিয়ে দেয়।ব্যবধান টা শুধু সময়ের।
!
রাইয়ান কলেজে যাবে।রেডি হয়ে সকালে খাবার খেয়ে বেড়িয়ে পড়েছে।কলেজ বাসে করেই সে যায়।কলেজ শেষে কলেজ বাস বেশ খানিক ঘুরে ঘুরে আসে।তাই সিয়ামের আম্মু গাড়ি পাঠিয়ে দেয় রোজ।তাতেই বাসায় আসে রাইয়ান।আজও তাই হয়েছে।তবে মাঝপথে রাইয়ানে কেনো জানি মনে হচ্ছিলো-চেনা কোনো মুখ দেখতে পেয়েছে।জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে সত্যিই তাই।শপিং মলের নিচে বাইকের চাবি টা আঙ্গুলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।রাইয়ান ট্রাফিক রোলে পড়ে অনেক টা সময় পেয়ে গেছে আকাশকে দেখার।রাইয়ানের কেমন যেনো লাগছে।আকাশ এভাবে হেসে হেসে কথা বলে কেনো সব সময়।
রাইয়ানে মনে হয় এই হাসিতে কেমন যেনো যাদু আছে।কেমন একটা লাগে তার।তবে সেটা যে কি এটাই ধরা মুশকিল।রাইয়ান তার বেণুনী দুটো সামনে নিয়ে জানালা থেকে মুখ টা সরিয়ে নিলো।ট্রাফিক মোড়ে সবুজ বাতি।গাড়ি যে এগিয়ে যাচ্ছে।রাইয়ানের জ্যামে আটকে থাকতে সবচেয়ে বেশি বিরক্তও লাগে।তবে এই প্রথম তার মনে হলো-গাড়িটা যদি আরও কিছুটা সময় থেমে থাকতো!
রাইয়ান ব্যাগ থেকে তার ফোন বের করলো।কিছুক্ষন দ্বিধায় থেকে ছট করে আাকাশের নাম্বারে একটা এসএমএস সেন্ড করে ফেললো, “সব সময় দাঁত ক্যালিয়ে থাকেন কেনো??”
আকাশ সাথে সাথে চেক করতে পারে নি।ফোনে কথা বলছিলো তাই।তবে যখন এসএমএস টা তার চোখে পড়লো-ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।তার চেয়েও বেশি হাসি পায় তার।রাইয়ানের মাঝে যে বাচ্চামি স্বভাবের প্রতিসরণ টা দেখতে চায় আকাশ কেনো জানি বারবার রাইয়ান নিজের অজান্তেই সেটা আকাশের সামনে উপস্থিত করে ফেলে।
আসলে উপস্থিত বলা চলে না-কেননা রাইয়ানের স্বভাব টাই এমন বাচ্চা টাইপ।
আকাশ সাথে সাথে রাইয়ানকে ফোন করলো।
রাইয়ানও দেরি না করেই ফোন টা তুললো।
আকাশ প্রশ্ন করলো, “তুমি কোথায়?”
“রাস্তায়।”
“কোথায় আছো??”
“এই তো আপনি যে শপিংমলে তার থেকে অনেকটা এগিয়ে আবার জ্যামে পড়েছি।”
“আমাকে দেখেছো।তাহলে দাঁড়াতে পারতে।”
“কেনো??”
“বড়দের দেখলে কথা বলতে হয়।”
“গাড়ি থেকে নেমে??”
“জ্বী।অনেক পরিচিত বড় মানুষ হলে অবশ্যই নামবে।”
আকাশ এতক্ষণে বাইকে উঠে পড়েছে।কানে ফোন নিয়ে কথা বলতে বলতে সামনের দিকে ছুটছে।উদ্দেশ্য একবার হলেও রাইয়ানকে কলেজ ড্রেসে দেখবে।রাইয়ানকে কি পিচ্চি লাগবে নাকি অন্য রকম!
ওপাশ থেকে রাইয়ান বললো, “আপনি আমার এত পরিচিত কই??ভাইয়ার বন্ধু।”
আকাশ কাঁধ আর কানের মাঝে ফোন চেপে ধরে জবাব দিলো, “ভাইয়ার দাদা তোমার দাদা।তো ভাইয়ার অতি পরিচিত মানে তোমারও অতি পরিচিত।”
“হি হি হি।মজার সূত্র তো।”
রাইয়ান আর কিছু বলার আগেই জানালার দিকে নজর পড়লো।জ্যামের মাঝে আকাশ তার জানালাই সাইডে কি করে এলো!আর কখন এলো!
রাইয়ান কানে ফোন ধরেই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশ হাসলো।ফোনটা হাতে নিয়ে কানে ধরে বললো, “ফোন রাখো।”
রাইয়ান কিছু বলতে পারলো না।হা করে তাকিয়ে রইলো।
অগত্যা আকাশ-ই ফোন কাটলো।আর কি ভাবে দু পা ঠেলে গাড়ির সামনের দিকে এগিয়ে গেলো।রাইয়ানের মনে হচ্ছিলো আকাশ চলে যাচ্ছে।তাই কেমন একটা খারাপ লাগছিলো।এলোই যখন আবার চলে কেনো যাচ্ছে।
কিন্তু রাইয়ানের মন খারাপের কারণ টা অবশ্য সত্যি হলো না।ঘটনা টা পুরো উল্টো পথে চললো