নতুন তুই আমি পর্ব-৬৪

0
1538

#নতুন_তুই_আমি
💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-৬৪…………………………………….
!
সিয়াম আধা ঘন্টার মাঝেই ঔষধ নিয়ে বাড়ি ফিরলো।
ড্রয়িং রোম খালি। ড্রয়িং রোম থেকে উঁকি দিয়ে সিয়াম রান্নাঘরে দেখলো।
সিয়াম চিন্তামুক্ত-‘নাহ! আম্মু নেই। নিশ্চয় ঘুমাচ্ছে।’
সিয়াম সিড়ি বেয়ে নিজের রোমে চললো।
সিয়াম রোমের দরজায় পা রাখা মাত্রই ‘থ’ হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে-“যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যা হয়।” আজকে প্রবাদটা সিয়ামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ সিয়ামের চোখের সামনে তার মা তামান্নার পাশে বসে আছে।
সিয়াম পিছু হাটতে চাইলো। ভাবলো রাইয়ানকে দিয়ে ঔষধগুলো দিয়ে দিবে। কিন্তু সেটাও হলো না।
দু পা পেছানো মাত্রই দেখা গেলো রাইয়ান নিজের গরম পানির গামলা হাতে সিয়ামের সামনে হাজির।
সিয়ামকে দেখা মাত্রই রাইয়ান জোর গলায় বললো,
“ভাবী,ব্যথা পেয়েছে আর তুমি কাউকে না বলেই মেডিসিন আনতে চলে গেলে?”
সিয়াম চট করে জবাব দিলো,
“কি আর বলবো! বললে কি ব্যাথা সারবে? ব্যথা সারবে ঔষধে। তাই ঔষধ আনতে গিয়েছিলাম।”
“হ্যাঁ। তাই তো। আগে রোমে চলো। দেখো খালামনি কও করে তোমায়?”
সিয়াম ভাবছে- তামান্না কি তার আম্মুকে বলে দিলো! যদি আম্মু সত্যি সত্যি জেনে যায় তামান্নাকে সে বিছানা থেকে ধাক্কা দিয়েছে তাহলে কপালে খুব খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে তার জন্য।
তাই সিয়াম রাইয়ানকে বললো,
“তুই এক কাজ কর। ঔষধ টা রোমে নিয়ে যা।
আমার বাইরে একটু কাহ আছে।”
রাইয়ানও সিয়ামের বোন।
সিয়ামের যদি পালানোর বুদ্ধি থাকে তাহলে রাইয়ানেও ধরে ফেলার বুদ্ধি আছে।
রাইয়ান সিয়ামকে কিছু বললো না।
সে তার খালামনিকে শোনানোর জন্য জোরে চিৎকার করে বললো,
“খালামনি! ভাইয়া ঔষধ নিয়ে এসেছে। ”
রাইয়ান আর দাঁড়ালো না।
পা চালিয়ে রোমে ডুকলো। যাওয়ার আগে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে মুঁচকি হাসলো। যেটা শতভাগ ব্যঙ্গাত্মক।
সিয়ামের কি আর করার!
এখন পালালো আরও মসিবতে পড়বে।
বরং এখন যদি আম্মুকে কোনোভাবে বুঝানো যায় তাহলে বেঁচে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে।
অবশেষে মনে মনে অনেক সাহস সঞ্চয় করে সিয়াম রোমে পা রাখলো।
আম্মু সিয়ামের দিকে একবার তাকিয়ে তুলো হাতে গরম পানি দিয়ে তামান্নার ক্ষত মুছে দিতে লাগলো।
সিয়াম নিষ্পাপ মুখ করে তামান্নার দিকে তাকিয়ে ঔষধ টা পাশে রেখে বললো,
“ক্রিম টা লাগিয়ে ক্ষতটা একটু খোলামেলা রাখতে হবে কয়েক মিনিট। না হলে শোকাবে না। আর হালকা কিছু খেয়ে পেইন কিলার খেয়ে নিতে হবে। ব্যথা কমে যাবে।”
সিয়াম আম্মু আর রাইয়ান এমন একটা ভাব করলো! যেনো তারা সিয়ামের কোনো কথায় শোনে নি।
তবে তামান্না ব্যথায় কুচুমুচু হয়েও কষ্ট করে বললো, “আচ্ছা। রাখো তুমি।”
সিয়াম তার মায়ের কাছে ভালো সাজার জন্য হাত বাড়িয়ে তুলো টা নিতে চেয়ে বললো,
“আমাকে দাও আমি ক্লিন করে দিচ্ছি।”
ব্যাস!
আগুন লাগার যতটুকু বাকী ছিলো এবার সেটা পূর্ণ হলো।

আম্মু কোনো মতো ক্লিন টা করেই উঠে দাঁড়ালো।
কোনো কথা না বলেই সরাসরি সিয়ামের কানে ধরে বললো,
“বদজাত ছেলে! মেয়েটা বাথরোমে পড়ে গেলো। তুই কোথায় ছিলি? কতটা ব্যথা পেয়েছে মেয়েটা-কাউকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলি নি। রাইয়ান আবার না আসলে তো বুঝতেই পারতো না। ভাগ্যিস মেয়েটা আবার এসেছিলো তুই চলে যাওয়ার পর।”
রাইয়ানও বলা শুরু করলো,
“আমার তো কেমন জানি লাগছিলো। ভাবীকে কেমন জানি দেখাচ্ছিলো তাই আবার এসেছিলাম দেখতে। ভাইয়া যে কেমন সেটা তো জানি। ”
সিয়ামের আম্মু এখনও ছেলের কান ছাড়ে নি।
কানটা আরও একটু শক্ত করে ধরে বললো,
“একা একা সব বুঝে নিতে চাও। খেয়াল তো রাখোই না বউয়ের। আবার লুকিয়ে রাখা হয়!”
রাইয়ান বললো,
“আর ভাবী! তুমিও না! ব্যথা পেয়েছো কাউকে বলবে না।”
আম্মু আরও ক্ষেপে গেলো।
রাইয়ানে বললো,
“চিনিস না আমার বাদর টা কে। নিশ্চয় মেয়েটাকে শাসিয়ে গেছে যেনো না বলে! ”
আম্মু এবার গলা নামালো। কাতর স্বরে বললো,
“ইশশ রে! মেয়ে আমার কত টা ব্যথা পেয়েছে পড়ে গিয়ে! আর এই বদমাইশ টা……
বলেই সিয়ামে শরীরে কয়েকটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো,সিয়াম অন্য দিন তার আম্মুকে বাঁধা দিলেও আজ দিচ্ছে না।
তামান্নার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
তামান্না তার মানে সত্যি কথা বলে নি আম্মুর কাছে।
কারণ সে জানে যদি আম্মু জানতে পারে সিয়াম তাকে এতটা ব্যথা দিয়েছে তাহলে পুরো ভূমিকম্প তৈরী করে ফেলবে। বাথরোমে পড়ে যাওয়া কথা বলাতেই যা হচ্ছে! সত্যি কাহিনী বললে তো যুদ্ধ লেগে যাবে।

তামান্না বুঝিয়ে শুনিয়ে অনেকটা শান্ত করলো আম্মুকে। তবুও তিনি সিয়ামকে বকে যাচ্ছেন।
++++++

সিয়ামের আম্মু তামান্নাকে ক্রিম লাগিয়ে দেওয়ার পর মিডিসিন খাইয়ে কিছুটা ক্ষান্ত হলো।
যাওয়ার আগে সিয়ামের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
“খেয়াল রেখো। বেয়াদপ কোথাকার।”
সিয়াম হ হয়ে তাকিয়ে রইলো শুধু। কিছু বললো না।
সিয়াম এতক্ষণে তামান্নার পাশে বসতে পারলো।
তামান্না সিয়ামের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
সিয়াম কিছু না বলে তামান্নাকে চট করে জড়িয়ে ধরলো। তামান্না আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না।
সিয়াম বললো,
“মিথ্যা বললি কেনো? আমাকে বকা খাওয়া খেতে বাঁচাতে গিয়ে….”
“বা রে! আমার বর আমাকে ধাক্কা দিয়েছে সেটা কি আমি জনে জনে বলে বেড়াবো।”
সিয়াম তামান্নার দু গালে হাত দিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো,
“বলে দিতেই পারতি! এমনিতেও তো মার খেলাম।”
“হু! এখন তো কম। এটা তোমার জন্য নরমাল। সবটা আম্মুকে বললে আম্মু তোমাকে আর আমার কাছে আসতেই দিতো না। রোম থেকে বের করে দিতো তোমায়।”
সিয়াম হাসলো।
ব্যঙ্গাত্মক স্বরে বললো,
“তাহলে তো ভালোই হতো। তুই একা একটা রোম পেয়ে যেতিস।”
তামান্না চোখদুটো কুচকে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে রইলো। বললো, “তোর মতো নাকি? তুই হয়তো একা একা আমাকে ছেড়ে থাকতে পারতিস। আমি পারবো না।”
সিয়াম তামান্নার গাল দুটো টেনে দিলো।
কপালে কপাল ঠেকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
“আম্মু রোমে আসতে না দিলেও লুকিয়ে লুকিয়ে আসতাম তোর কাছে।”
তামান্না আর রাগ ধরে রাখতে পারে নি।
সিয়ামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাসলো।

রাইয়ান পড়া শেষ করে ঘুমুতে যাবে। তখন তার খালামনি রোমে এলো।
রাইয়ান ব্যাগ গুছিয়ে রাখছে। সকালে জাস্ট উঠবে খেয়ে দেয়ে কলেজে। আর প্যারা নিতে হবে না।
খালামনি বললো,
“মশারি দিয়ে ঘুমাবি কিন্তু।”
রাইয়ান সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলো,
“পারবো না আমি।”
খালামণি ক্ষেপে গিয়ে বললো,
“কি বললি তুই? কাল রাতে এসে দেখি মহায় সারা শরীর একদম ঝারটে বসে আছে। মুখে মুখে বেয়াদবি করা হচ্ছে? একদম ভাইয়ের মতো হচ্ছে। যেমন বেয়াদব ভাই তার তেমন বেয়াদব বোন।”
রাইয়ান অসহায় গলায় বললো,
“আমি কি করলাম? মশারি দিতে ভাল লাগেনা আমার। কেমন দমবন্ধ হয়ে আসে।”
“আহারে। দম বন্ধ হয়ে আসে তো যা বাগানে গিয়ে ঘুমা। খোলা হাওয়া নিচে ঘুমাবি দমবন্ধ লাগবেনা।”
রাইয়ান খিল খিল করে হাসলো।
বললো,
“তুমিও দেখি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মতো কথা বলছো!”
খালামণি অবাক হয়ে বললো,
“মানে?”
“ইমরান খান বলেছেন-গাছ নাকি রাতের বেলায়ওঅক্সিজেন ত্যাগ করে আর কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে।”
কথাটা বলেই রাইয়ান অট্টহাসিতে ভেঙ্গে পরলো।
সামের আম্মু হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
মনে মনে ভাবছে-একজন প্রধানমন্ত্রী কি করে এমন কথা বলতে পারে। তারপর আবার নিজেকে বোঝানোর জন্য ভাবলেন-যদি বাংলাদেশের কোন সাংসদ বলতে পারেন-“ডেঙ্গুর জন্য পুরুষ মশা বেশি দায়ী” তাহলে ইমরান খান কেন একথা বলতে পারবেন না!
খালামণি দীর্ঘশ্বাস নিলেন।
রাজনৈতিক নেতারা বিজ্ঞানের যত রকমের বিকৃতি সাধন করছে! সারাজীবন রাতের বেলায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড করে সেই তথ্য আজ কোন হ্যাঁ প্রধানমন্ত্রীর কাছে উল্টো লাগছে। যেখানে ডেঙ্গুর জন্য এডিস মশকী দায়ী। সেখানে পুরুষ মশার আবার কিসের দোষ!
খালামণিকে এসব আর ভাবলো না।
রাইয়ানের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,
“তোমার এত সব বলতে হবেনা। যার যার বউ তার তার কাছে। তুমি মশারি টানিয়ে ঘুমাও।”
রাইয়ান মন খারাপ করে বললো,
“খালামণি!”
“রাইয়াননন!”
রাইয়ান মাথা নিচু করে বললো,
“ওকে। টানাবো।”

খালামণি চলে গেলে রাইয়ান মশারী টানালো। ফ্রেশ হয়ে এসে ফোনে এলার্ম দিয়ে শুয়ে পড়লো।
রাইয়ান আবার এলার্ম ছাড়া ঘুম থেকে উঠতে পারে না। সকালবেলা কলেজ না থাকলে কখনোই সকালে ঘুম থেকে উঠে না সে। কিন্তু এখন ক্লাসের জন্য উঠতে হয়।
রাইয়ানের চোখ দুটো প্রায় লেগে এসেছে। কিন্তু ফোনের রিংটনে আর ঘুমাতে পারল না।
হাত বাড়িয়ে কে ফোন করেছে না দেখেই ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরলো।
ঘুমঘুম গলায় বললো,
“হ্যালো?”
ওপাশ থেকে কোন সাউন্ড এলো না।
তাই রাইয়ান আবার বললো,
“হ্যালো? কে বলছেন?”
ওপাশ থেকে কথা হলো এবার,
“ফোন নম্বর চেক না করেই রিসিভ করে ফেললে? নাকি নম্বরটা এখনো সেভ করা হয়নি।”
কন্ঠটা কাছে আসা মাত্রই রাইয়ান লাফ দিয়ে উঠে বসলো।
ফোনের স্ক্রিনে দেখল ‘আকাশ’।
“আপনি এত রাতে ফোন করলেন?”
“কি করব বলো? তখন তো শ্বশুরবাড়িতে ছিলাম‌। তাই ভালো করে তোমার সাথে কথা বলতে পারিনি।”
“আমার সাথে কথা বলার কি আছে?”
“কি আর থাকবে? তবে আমার পিচ্চি মানুষের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে।”
রাইয়ান রেগে গেল।
বললো,
“আপনাকে কতবার বলেছি পিচ্চি ডাকবেন না।”
“যাক বাবা। তুমি তো দুদিন আগে বললে ১৮ বছরের পর আর পিচ্চি ডাকা যাবে না তোমাকে। আগে ১৮ হতে দাও।”
রাইয়ান আর কিছু বলল না। আর যাই হোক আকাশের সাথে তর্ক করে জিতে যাওয়া সহজ ব্যাপার নয়।
আরো বেশ কিছুক্ষণ কথা হল ওদের।
রাইয়ান জানতে পারল-আকাশ সত্যি সত্যি বিয়ে করে নি। তাকে মিথ্যা বলে ঢপ খাওয়ানো হয়েছিলো।
রাইয়ান আর রেগে নেই। আকাশ এমন সব কথা বলেছেন রাইয়ান হাসতে হাসতে শেষ।
সব আকাশের ছোট সময় দুষ্টুমির কথা।
রাইয়ান হাসতে হাসতে বলল,
“থাক থাক। আজ এ পর্যন্তই শুনলাম। পরে আবার শুনবো। দুটো বেজে গেছে। এখন না ঘুমালে সকালে উঠতে পারব না আমি। ক্লাস মিস করে ফেলব।”
আকাশের ফোন রাখতে ইচ্ছা করছিল না। কিন্তু কি আর করার! বাধ্য হয়ে বললো,
“ওকে। পিচ্চি মানুষের তো আবার সকাল-সকাল ক্লাস থাকে।”
রাইয়ান দাঁত কটমট করে বললো,
“হু। বুড়ো মানুষের তো আর ক্লাস থাকে না।”
“এই ওয়েট ওয়েট। কি বললে তুমি? আমি বুড়ো?”
“আঠারো বছরের নিচে সতেরো বছর হলে একজন মানুষ যদি পিচ্চি হয় তাহলে যাদের চব্বিশ পেরিয়ে চব্বিশ প্লাস হয়ে গেছে তারাও বুড়ো।”
রাইয়ানের কথায় আকাশ হাসল।
বললো,
“বাহ! পিচ্চি দেখছি খুব ভালো কথা বলতে পারে!”
“আবার?”
“যতদিন আঠারো বছর না হবে ততদিন পর্যন্ত।”
রাইয়ান জোর গলায় বললো,
“আপনার মাথা আর মুন্ডু। তবে এতক্ষণ যেসব প্লানিং এর কথা বললাম সেগুলো মাথায় রাখবেন। না হলে ভাবি আমার উপর রাগ করবে।”
“ওকে পিচ্চি রানী। আমি সব ব্যবস্থা করে রাখবো। তোমাকে আর টেনশন নিতে হবে না‌।”
“আচ্ছা বুড়ো ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে। এখন রাখছি। শুভ রাত্রি।”
আকাশ আবারও হাসলো।
বললো,
“শুভরাত্রি পিচ্চি রানী।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here