#নতুন_তুই_আমি
💜💜💜💜💜💜💜
Writer:-Nargis Sultana Ripa
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-৬৫
!
সিয়াম বাসায় নেই। তামান্না রাইয়ানকে নিয়ে বাসা থেকে বের হতে চাচ্ছে। কিন্তু সিয়ামের আম্মু কিছুতেই অনুমতি দিচ্ছে না।
“তুই না কালকে বাথরোমে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলি। তাহলে আজ সন্ধ্যায় কেনো তোকে বাইরে যেতে হবে?”
“আম্মু! প্লিজ যাই। রাইয়ানও তো যাচ্ছে। গাড়ি নিয়ে যাবো। যেতে দাও না।”
“সিয়াম কোথায়?”
“ও কি জানি কোথায় জানি না।”
“দেখ,তামান্না-তুই এই শরীর নিয়ে কোথাও যেতে পারবি না। তোর মাম্মামের কাছে যাবি? নো প্রবলেম। আমি ফোন করে দিচ্ছি। তোর মাম্মাম এখনি এসে যাবে।”
তামান্না তার শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরলো। আদুরে গলায় বললো, “না আম্মু। আমার একটু দরকার আছে। যেতে দাও না।”
“সিয়ামকে সাথে নিয়ে যা। যদি কোনো বিপদ হয়? আমার তো ভয় করে মা।”
রাইয়ান বললো, “ভয়ের কিছু নেই খালামনি। তুমি একদম চিন্তা করো না। আকাশ ভাইয়া,প্রভা আপু ওরা সবাই আমাদের সাথে থাকবে।”
“কি ব্যাপার বল তো? তোরা কিসের জন্য যাচ্ছিস?”
তামান্না রাইয়ানের দিকে তাকালো। চোখাচোখিতে কিছু একটা বললো দুজনে।
তারপর তামান্না গলা খাড়কি দিয়ে বললো, “আগে তোমাকে প্রমিস করতে করতে হবে। তাহলেই বলবো।”
“প্রমিস!”
রাইয়ান উচ্ছাস্বিত হয়ে বললো, “হ্যাঁ খালামনি। যদি প্রমিস করো তাহলেই বলা যাবে। তা না হলে বলবো না। ”
“আচ্ছা। ঠিক আছে বাবা। প্রমিস।”
তামান্না হাসলো। বললো,
“আজকে কত তারিখ বলো তো?”
“১৫ ডিসেম্বর। কিন্তু তারিখ কেনো জানতে চাচ্ছিস?”
রাইয়ান ভ্রু নাঁচিয়ে বললো, “কাল কত তারিখ খালামনি?”
“আজ ১৫ তারিখ হলে কাল তো ১৬ তাআআআ…….”
সিয়ামের মা কথা শেষ করতে পারলো না। অবাক হয়ে তাঁকালো তামান্নার দিকে।
তার এমন অবস্থা দেখে রাইয়ান আর তামান্না হাসতে হাসতে শেষ।
তামান্না হাসি থামিয়ে বললো,
“আরো কিছু বলতে হবে তোমায়?”
সিয়ামের মা মুচকি হাসলো।
বললো, “তোরা না পারিস ও বটে। আমার তো খেয়াল-ই আসছিলো না।”
“তাহলে এবার তো যেতে দাও।”
“তারমানে তোরা আজ ভোরে বাড়ি ফিরবি?”
“তেমনি তো হবে। এখন তো কেবল সন্ধ্যা। পনেরো তারিখ। ষোলো তারিখ তো হবে বারোটায়।”
“আচ্ছা। ঠিক আছে যা। সিয়াম জানে না?”
“না। এটার জন্যই তোমাকে প্রমিস করিয়েছি। ওকে তুমি বলতে পারবে না।”
“আচ্ছা সোনা। বলবো না। তা কোথায় যাচ্ছিস?”
“ভুত-আড্ডায়।”
“এই রেস্টুরেন্ট টা তো উত্তরার দিকে। তাই না?”
“হ্যাঁ। সব আয়োজন তো আকাশকে করতে বলেছি। তো ওর বাড়ি সেখানে, ওর যেনো কাজ করতে সুবিধা হয় তাই ওদিকেই করছে।”
“আচ্ছা। এসব তো অনেক প্যারার কাজ। আমি আরও তোদের দেরী করিয়ে দিলাম।”
“নো প্রবলেম খালামনি। কিন্তু এবার আটকে রাখলে সত্যিই দেরী হয়ে যাবে।”
তামান্না আর রাইয়ান বড় বড় দুটো ব্যাগ হাতে বেড়িয়ে পড়লো। সিয়ামের মা তাদের পার্কিং পর্যন্ত এগিয়ে দিলো। ওরা গাড়িতে উঠার পরও জানালা দিয়ে বললো, “ভালো ভাবে যাস। আর পৌঁছে আমাকে ফোন করিস।”
“ওকে আম্মু। আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।”
পুড়ো রাস্তা তামান্না আর রাইয়ান বকবক করতে করতে গেলো। গাড়ি থেকে নেমে তামান্না ড্রাইভারকে বললো, “চাচা,আপনি চলে যান। আমাদের দেরী হবে।”
“বউমনি,পরে তোমরা একলা কেমন যাইবা? রাইতের বেলা,আমি থাহি।”
রাইয়ান বললো, “না আঙ্কেল। আপনাকে থাকতে হবে না। কিছুক্ষণ পর ভাইয়া আসবে ওর গাড়ি নিয়ে। আমরা ভাইয়ার সাথে চলে যাবো।”
ড্রাইভার হাসলো। বললো,
“ও আইচ্ছা।”
ড্রাইভার চলে যেতেই ওরা তিন তলায় উঠে গেলো। যেখানে ওদের ম্যান প্রোগ্রাম। তামান্না ফোন বের করে ওর শাশুড়িকে জানালো। তারপর ঘড়িতে দেখলো সাড়ে সাতটা বাজে। রাইয়ান আর ও ব্যতীত এখনো কেউ আসে নি। আকাশরা শুধু প্লেস টা পরিষ্কার করিয়ে রেখেছে। এখন নিশ্চয় সুপার মলে আছে।
তামান্না প্রভাকে ফোন করলো, “কি রে তোরা কোথায়?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ আসছি। আমাদের সব কেনাকাটা শেষ। তুই সব নিয়ে এসেছিস তো?”
“আরে বাবা হ্যাঁ। তাড়াতাড়ি আয় না। আমার খুব টেনসন হচ্ছে।”
“আহা রে। বরের জন্য কি টেনসন। তুই টেনশন করতে থাক। আমরা আসছি।”
তামান্না ফোন রেখে ব্যাগ দুটো খোললো। ব্যাগের যা কিছু দরকার ছিলো সব ঠিক জায়গায় সাজিয়ে নিলো।
রাইয়ান বললো,
“ভাবী! তুমি একাই সব করছো। আমাকে কিছু করতে দাও।”
“এইটুকু আমি একা করছি সোনা। তুমি আপাতত রেস্ট নাও।”
রাইয়ান সোফার উপর পা তুলে বললো, “ওক্কে ভাবী জি…..”
তামান্না আর সিয়ামের সব বন্ধুরা অল্প কিছু সময়ের মাঝেই এসে গেছে। তামান্না তবুও তাদের দেখে বললো, “এতো সময় লাগে তোদের এই কয়েকটা জিনিস কিনতে?”
সবাই হাসলো। আকাশ বললো, “তামান্না তুই তো দেখছি ধৈর্যহীন হয়ে পড়ছিস। আরো চার ঘন্টা বাদে বারো বাজবে।”
“চার ঘন্টা তো সাজাতেই লাগবে। আমি রেডি হবো না?”
তামান্নার কথা শোনে আবারও সবাই হেসে উঠলো। রিনি তামান্নার গাল দুটো টেনে বললো, “তোমার বরের জন্য তুমি সাজবে। আর আমরা কি কাজের লোকের মতো ড্রেস আপ নিয়ে থাকবো? আমরাও তো রেডি হবো ভাবী জি।”
“যাহ্। কিসের ভাবি জি। এখন তাড়াতাড়ি হাত লাগা তো।”
“ওকে বাবা। চিন্তা করিস না, টাইমলি সব হয়ে যাবে।”
রেসুরেন্টের পার্টি প্লেস টা আজ পুরো ফাঁকা। আকাশ অর্ডার করছে। তারা নিজের হাতে জায়গা টা সাজাবে বলে শুধু একটা ছোট্ট টেবিল আর সোফা টা রেখেছে। সবাই হাতে হাতে জায়গা টা সাজিয়ে নিলো। যদি কারও বিন্দু পরিমাণও ভুল হচ্ছে তামান্না জোর করে আবার সেটা ঠিক করাচ্ছে।
রাইয়ান একটা ফুলের ঝোকা অনেকক্ষণ যাবত লাগানোর চেষ্ঠা করছে। কিন্তু কিছুতেই ঠিক জায়গায় সেট করতে পারছে না।
আকাশ খেয়াল করে এগিয়ে আসলো রাইয়ানের দিকে। হাত থেকে ফুলগুলো টেনে নিয়ে সেট করে দিয়ে বললো, “পিচ্চিরা সব কিছু পারে না।”
“আপনি এখানেও আমাকে পিচ্চি বলছেন?”
“তো। আজ কি তোমার আঠারো বছর হয়েছে? হয় নি তো? সো তুমি এখনো পিচ্চি।”
রাইয়ান রেগে গেলো।
চেঁচিয়ে ডাকলো, “ভাবী!!!!”
রাইয়ানের চিৎকারে সবাই আকাশ আর ওর দিকে তাকালো। তামান্না বললো, “কি হয়েছে?”
“আকাশ ভাইয়া আমাকে বারবার ক্ষেপাচ্ছে।”
প্রভা আর রিনি মুখ টিপে হাসলো।
আকাশ বললো, “আমি কোথায় ক্ষেপালাম তোমায়? ”
“আপনি বারবার আমাকে পিচ্চি ডাকেন। আমার ভালো লাগে না।”
“তোমাকে আমি বলেছি না? আমাদের দেশে আঠারো বছরের নিচে সবাই শিশু। তোমার আঠারো বছর হোক তারপর আর পিচ্চি ডাকবো না।”
রাইয়ান চোখ-মুখ কুঁচকে আকাশের দিকে তাকালো। হাতের কসটিপ টা আকাশের হাতে জোর করে দিয়ে তামান্নার কাছে চলে গেলো।
বললো, “ভাবী! ওনি সব সময় এমন করে।”
তামান্না হাসলো। আকাশকে বললো, “আকাশ! তুই আমার ননদিনীকে এভাবে বলতে পারিস না।”
“তোর ননদিনীকে আরো অনেক কিছু বলার আছে আমার। সব শোনতে হবে তাকে। ”
প্রভা গলা খারকি দিয়ে বললো, ” হয়েছে হয়েছে। এবার সবাই থামো। যা বলার পরে বলিস। আপাতত এখানের কাজ টা শেষ কর।”
রাইয়ান আকাশের দিকে মুখ ভেঙচি কেটে কাজে হাত লাগলো। আকাশ মুঁচকি হেসে রিনির দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করে বললো। তারপর আবার সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লো যার যার কাজে।
এদিকে সিয়াম সাড়ে নয়টার দিকে বাসায় ফিরে দেখলো তামান্না রোমে নেই। সিয়াম ভেবেছে তামান্না হয়তো আম্মু না হয় রাইয়ানের রোমে। তাই ফ্রেস হয়ে নিলো। কিন্তু ফ্রেস হয়ে দেখলো তামান্না এখনো রোমে আসে নি। রাইয়ানের রোম টা পাশেই। এ রোম থেকে জোরে ডাক দিলে শোনতে পাওয়া যায়। তাই সিয়াম রাইয়ানকে ডাকলো। কিন্তু কোনো সারা শব্দ না পেয়ে রাইয়ানের রোমে গেলো। কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার মনে হলো তার। রাইয়ান তামান্না কেউ নেই। তাই নিচে মেনে এলো সিয়াম। এই সময় তো এতক্ষণ তো আম্মুর রোমে থাকবে না তামান্না। আব্বু আছে এখন। আর কাজের লোকরা তো দেখেছে সিয়াম এসেছে। তাহলে অবশ্যই তো তামান্না কে বলতো। আম্মু আবার অসুস্থ হয়ে পড় নি তো!
সিয়াম ওর আম্মুর রোমে নক করলো। আম্মু বললো, “কে? ভেতরে আয়।”
সিয়াম ভেতরে গিয়ে দেখলো ওর আব্বু ঘুমাচ্ছে। আর আম্মু স্লো ভলিউমে জি বাংলার সিরিয়াল দেখছে।