#নতুন_তুই_আমি
💜💜
Writer:-Nargis Sultana Ripa
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-৬৬
!
সিয়াম ওর মায়ের কাছে জানতে পারলো তামান্না আর রাইয়ান বাসায় নেই। কিন্তু তারা কোথায় এটা জানতে চাইলে মা উত্তর দিলো, “কোথায় গেছে আমি জানি না। তুই ফোন করে জেনে নে।”
সিয়ামের ব্যাপার টা অদ্ভুত লাগছে। তামান্না তো এমন নয়।সে তো বিয়ের আগেও কোথায় গেলে তার মাম্মামকে জানিয়ে যেতো। আর সন্ধ্যার পর খুব দরকার না হলে বাসা থেকে বের হয় না।
তাহলে আজ কোথায় গেলো? তারউপর কোথায় যাচ্ছে না জানিয়ে! আর এখন বাজে রাত দশটা এখনো তো ফিরলোও না।
সিয়ামকে ভাবুক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মা বললো, “কি হলো? কি ভাবছিস? ফোন করবি না?”
সিয়াম ভাবনা থেকে ফিরে এসে বললো, “নাহ্, করবো। আব্বু এতো তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লো?”
“হ্যাঁ। মাথা ধরছে বললো।”
“ওহ্। তাহলে তুমি এখানে টি.ভি চালাচ্ছো কেনো? ”
“তোর কি? যাহ্ নিজের বউকে ফোন কর। আমি সিরিয়াল দেখছি-একদম ডিস্টার্ব করবি না।”
“যাক বাবা। ডিস্টার্ব কোথায় করলাম! বাজে বাজে অপসংস্কৃতি দেখছো আবার এভাবে বলছো?”
“তুই যাবি?”
“আরে যাচ্ছি যাচ্ছি। ড্রয়িং রোমেও তো টি.ভি আছে।”
“এখন শীতের দিন রোম ছাড়া টি.ভি দেখতে ভালো লাগে না। ”
“ওহ্। কি আরাম রে বাবা!”
সিয়াম নিজের রোমে এসে তামান্নার নম্বর ডায়েল করলো। কিন্তু রিং হলেও তামান্না ফোন রিসিভ করলো না। তারপর আবার ফোন করলো সেটাও রিসিভ করলো না তামান্না।
সিয়ামের এবার রাগ হচ্ছে। বাসা থেকে বের হলো সেটা তো তাকে জানালোই না তারউপর এখন ফোনটাও ধরছে না!
সিয়াম রাইয়ানের নম্বরে দু বার রিং করেও একই অবস্থার সম্মুখীন হলো। রাগ টা এবার আরো তীব্র হলো।
বাধ্য হয়ে ড্রাইভারকে ফোন করলে সে জানালো-‘সে তামান্না আর রাইয়ানকে কোনো একটা রেস্টুরেন্টের সামনে নামিয়ে দিয়ে এসেছে। কোন রেস্টুরেন্ট জানতে চাইলে তিনি নাম বলতে পারলেন না শুধু বললেন-উত্তরায় সেটা। আর এটাও জানালো তামান্না আর রাইয়ান বলেছে সিয়াম আনতে যাবে।”
সিয়ামের অবাক লাগলো!
তারা যদি রেস্টুরেন্টের গিয়ে থাকে তাহলে ডিনার-ই করতে গেছে।
কিন্তু মিরপুরে কি ভালো রেস্টুরেন্টের অভাব! এই রাতের বেলা দুজনের ওখানে যেতে হবে!
আর গেছে তো সন্ধ্যায়?
শুধু ডিনারের জনয গেলে তো আরও পরে যাওয়ার কথা!
তারউপর আবার গাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে বলছে সে আনতে যাবে। কিন্তু সিয়ামকে তো ওরা বললেই নি!
সিয়াম বিষয়টা বুঝতে পারছে না। কোনো প্রবলেমে পড়লো না তো আবার?
এক হচ্ছে চিন্তা, আবার রাগও হচ্ছে দুজনের উপর।
পনেরো মিনিট পর আবার ফোন করলো। এবারও দুজনের কেউই ফোন ধরে নি।
তামান্নার বাসায় কি ফোন করবে?
যদি সেখানে না গিয়ে থাকে তাহলে তো ওরা টেনশন করবে। এতো রাতে শুধু শুধু ওদের টেনশন দেওয়ার কোনো মানে হয় না।
সিয়াম কি করবে ভাবছে।
আর ভাবতে ভাবতেই তার ফোন টা বেজে উঠলো।
প্রভা ফোন করেছে।
এ সময় প্রভার ফোন করার কথা না। হয়তো কোনো দরকারে করেছে তাই রিসিভ করলো।
“হ্যালো। বল?”
“তুই কোথায়?”
“আমি বাসায়। কেনো?”
“তামান্না কোথায়?”
সিয়াম রেগে গিয়ে বললো, “সে কোথায় আমি কি করে জানবো? তার পা বড় হয়ে গেছে হয়তো খুব। তাই কোথাও উড়ছে।”
“উউু। সে কি একা কোথায় যেতে পারে না? সব সময় তোকে জানিয়ে যেতে হবে? ওর কি নিজস্ব কোনো স্বাধীনতা নেই। ”
“দেখ। মেজাজ খারাপ করবি না। আমি বলি নি ওর স্বাধীনতা নেই। ও যেতেই পারে। সব সময় আমাকে বলে যেতে হবে এমনটাও না। কিন্তু এখন রাত প্রায় সাড়ে দশটা আমি সে বাসায় আসে নি। আমার তো টেনশন হয়। আর আমিও যদি এ সময় বাসায় থাকতাম তারও টেনশন হতো। বিষয়টা সিম্পল। বাট তাকে আমি ফোন দিচ্ছি সে ফোন টা তোলছেই না। এখানে তো রাগ হওয়া টাই স্বাভাবিক।”
“ওহ্। আচ্ছা। আমি জানি তামান্না কোথায়?”
সিয়াম অবাক হয়ে বললো, “কোথায়?”
“ভুত আড্ডা-তে।”
“ডিনারের জন্য? তাহলে আমার ফোন রিসিভ করছে না কেনো?”
“আরে না। রাফিন নাকি ওকে ফোন করে দেখা করতে বলছিলো-কি দরকার নাকি। তামান্না দেখা করতে চায় নি। কিন্তু রাফিন বলছে নেগেটিভ কিছু না শুধু কিছু কথা বলবে। তামান্না তারপর হ্যাঁ জানিয়ে দিয়েছে। একা যেতে ভয় পাচ্ছিলো তাই রাইয়ানকে সঙ্গে নিয়ে গেছে। এখন আমি ভাবলাম ফোন করে জানি কি বললো রাফিন। কিন্তু তামান্না তো ফোন-ই ধরলো না। তাই তোকে ফোন করলাম। আমার কিন্তু এবার টেনশন হচ্ছে। আমি ভাবলাম তোকে বলে গেছে। কিন্তু এখন দেখছি তোকে বলে যায় নি। ”
সিয়ামের মাথা কাজ করছে না। তামান্না এই বোকামি টা কেনো করতে গেলো! এরকম কিছু হলে একবার অত্যন্ত তাকে জানাতে পারতো।
সিয়াম ঝাঁঝালো গলায় বললো, “ফোন রাখ।”
তারপর গাড়ির চাবি টা হাতে নিয়ে পাগলের মতো বেড়িয়ে পড়লো উত্তরায় দিকে।
এতো রাতে রাস্তা মোটামোটি ফাঁকা। সিয়াম যতটা দ্রুত সম্ভব ড্রাইভ করছে। ভয়ে তার শরীর কাঁপছে। তামান্নার কোনো বিপদ হয় নি তো? সে কোন সন্ধ্যায় বেড়িয়েছে। রাফিন প্রতিশোধ নেওয়ার জনয কিছু করছে না তো? সঙ্গে আবার রাইয়ান!
দুজনের একজনের কিছু হলেও সিয়াম সেটা মেনে নিতে পারে না। আর তামান্নার এই সরলতার সুযোগ নিয়ে রাফিন যদি তাদের কিছু করে তাহলে আজ-ই হবে রাফিনের শেষ দিন।
আর এদিকে প্রভা ফোন রাখার পরেই সবাই অট্ট হাসিতে ভেঙ্গে পড়লো। কারণ প্রভা এতক্ষণ ফোনের স্পিকার লাউডে দিয়ে কথা বলছিলো। তাই সিয়ামের কথাগুলো সবাই শোনতে পেরেছে।
তামান্নার খুব ভালো লাগছে। সে জানতো সিয়াম তার জন্য চিন্তা করবে। তবে সিয়াম যে এতো সুন্দর করে সেটা বলবে তামান্নার জানা ছিলো না। আর স্বাধীনতারও কি সুন্দর করে ব্যাখা দিলো!
তামান্না মুঁচকি হাসলো।
বললো, “ওকে। এবার যারা যারা রেডি হওয়ার হয়ে নে।”
রাহাত বললো, “বোন রে। তোরাই রেডি হ। দেড় ঘন্টায় তোদের হবে তো?”
প্রভা বললো, “হবে বাট আরো একটু হলে ভালো হতো।”
রাহাত অবাক হয়ে প্রভার দিকে তাকালো। বললো, “তামান্নার বদলে তুই আবার শাড়ি পড়তে শুরু করিস না।”
তামান্না হাসলো। বললো, ” না না শুধু আমিই শাড়ি পড়ছি। ওরা কেউ পড়বে না। আমার দেড় ঘন্টাও লাগবে না।”