নতুন তুই আমি পর্ব-৬৮

0
1629

#নতুন_তুই_আমি
💜💜
Writer:-Nargis Sultana Ripa
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-৬৮
!
সিয়াম আরো একটু এগিয়ে গিয়ে ছায়া-মূর্তি টা কে ছোঁয়ার চেষ্টা করলো। আরো একটু লাল-নীল আলো এসে ছড়িয়ে পড়লো চারপাশে। মুখটা এবার আগের চেয়ে বেশ স্পষ্ট।
লজ্জাবনত চিরচেনা সেই মুখ!
সিয়াম অপলক তাঁকিয়ে আছে। নকে নথ, মায়াবী দুটো চোখ চমৎকার ভাবে সজ্জিত, ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক……..
সিয়াম তার বা হাতে মায়াবিনীর গালে আলতো করে ছোঁয়ার চেষ্টা করলো। হাত টা কাঁপছে তার।
তারপর আরো একটু কাছে………
আরো একটু গভীর অনুভূতি……..
তারপর তারপর হঠাৎ করেই চারপাশ থেকে জনস্রোতের চিৎকার-“নাআআআ। আর এগুনো যাবে না। দিস ইজ পাবলিক প্লেস।”
সিয়াম চমকে উঠলো। সঙ্গে তামান্নাও। সিয়াম আশে-পাশে তাঁকালো। রাইয়ান, আকাশ, প্রভা, রিনি থেকে শুরু করে সবাই উপস্থিত এখানে।
সিয়াম তার পাশে দাড়ানো মানুষটার দিকে তাকালো। তামান্না!
এতক্ষণ তামান্নাকে এভাবে দেখে ঘোরের ভেতরে চলে গিয়েছিলো সে। আলো আর সবার আওয়াজে সে ঘোর অনেকটাই কেঁটে গেছে।
প্রচন্ড রাগে সিয়ামের চোখ দুটো ফেঁটে পড়ছে। সে দু চোখে তাকিয়ে গলা টা শুকিয়ে যাচ্ছে তামান্নার।
সিয়াম তামান্নার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তামান্না ভয়ে কুকড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে।

“ইউ…….”

সিয়াম আর কিছু বলার আগেই তামান্নার সবার সামনে পা দুটো খানিক উঁচু করে সিয়ামের ডান গালে চুমু দিয়ে দিলো।
বললো, “হ্যাপী বার্থ-ডে মাই লাভ।”
সিয়াম কি বলবে?
কোথায় রাগ? আর কোথায় এতক্ষণের চিন্তা? এত পরিমাণ অবাক ও জীবনেও হয় নি!
আজ ওর জন্মদিন এটা সে চিন্তায় ভূলে গেছে। আর সব চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় তামান্না এভাবে সবকিছু এরেন্জ করেছে। আর এখন? সবার সামনে এভাবে চুমু দিয়ে শোভেচ্ছা!
সিয়ামের আশ্চর্যের সপ্তম আকাশে বিচরণ করছে।

আর বাকী সবাই! তো রীতিনতো হিড়িক দিয়ে উঠেছে তামান্নার কান্ডে। তামান্না যে এরকম কিছু একটা করবে কেউ ভাবতেই পারে নি।
সিয়াম তামান্নার দিকে তাকিয়ে আছে। কি অপরূপ লাগছে আজ তামান্নাকে!
আর বেচারী তামান্না তো লজ্জায় মুখ তোলে তাকাতে পর্যন্ত পারছে না। কি করলো এটা সে?
সবার সামনে কিস করে দিলো!
ভাবতেই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে।

প্রভা বললো, “এভাবে তাকিয়ে থাকলে তো সারা রাত এমনিতেই পাড় হয়ে যাবে!”
আকাশ বললো, “হ্যাঁ। তাহলে এতো কিছুর ব্যবস্থা না করে শুধু তামান্নাকে সাজালেই হতো।”

তামান্না সিয়ামের দিকে তাকিয়ে মুঁচকি হাসলো।
সিয়াম স্থির চোখে তাঁকিয়ে দৃষ্টিটা সরিয়ে নিয়ে নিজেকে আর রাগের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারলো না-হেসে ফেললো।
রাইয়ান বললো, “এখন বারো টা এক বাজে। আমরা কি কেক কাটবো না?”
আকাশ জবাব দিল, “হ্যাঁ পিচ্চি কাটা হবে কেক। তুমু টেনশন নিও না।”
“আপ….”
রাইয়ান ক্ষেপে গিয়ে কিছু বলার আগেই রিনি তার মুখ আটকে ধরে বললো, “থাক বাবু, ঐ আকাশ বদ টার সাথে তোমার আর রাগা-রাগি করতে হবে না। আগে আমরা ভাইয়ার সেলিব্রেশন টা করি তারপর……. ”
“ধুর! তুমি আমার বাবু ডাকো কেনো? তোমাদের সবার যদি আমাকে বাবু, পিচ্চি এসব মনে হয় তাহলে তোমাদের বড়দের মাঝে ডাকলে কেনো আমায়?”
তামান্না সিয়ামের হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বললো, “এটা দু-মিনিটে পড়ে আসো।”
তারপর রাইয়ানের পাশে গিয়ে ওর গালে হাত দিয়ে বললো,
“এটা বয়সে পিচ্চি হলেও কাজ টা কিন্তু তোদের চেয়ে বেশি করছে। তাই কেউ আমার সুইট ননদিনী টা-কে ক্ষেপাবি না।”

রাইয়ান হেসে জড়িয়ে ধরলো তামান্নাকে। বললো, “শুধু ভাবীই আমাকে ভালোবাসে আর কেউ না। সব কটা কেমন কেমন!”
রাইয়ানের কথা শোনে হাসলো সবাই। আকাশ মনে মনে ভাবলো, “আরো একজন ভালোবাসে গো মিস.পিচ্চি সুন্দরী।”

সিয়াম রেডি হয়ে এসে গেছে। তামান্না নিজে পচ্ছন্দ করে ওর সিয়ামের ড্রেস টা কিনেছে।
গাঢ় নীল রঙের পান্জাবী, তার উপর কালো কটি, হলুদ চিরুজার, সিয়ামের প্রিয় বেন্ড্রের ঘড়ি……..
সব মিলিয়ে সিয়ামকে বারুণের চেয়ে কোনো অংশে কম লাগছে না। তামান্নার তো ইচ্ছা করে এখনি দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরুক তাঁকে।
কিন্তু একটু আগে সবার সামনে যে লজ্জাহীন কাজ টা সে করলো। এখন যদি সেরকম কিছু হয় তবে মান-সম্মান আর কিছুই বাকী রইবো না।

তামান্না সিয়ামের হাতে একটা ছুরি দিয়ে বললো, “কেক টা কিন্তু একা কাঁটবে না।”
সিয়াম হাসলো। যার সবচেয়ে পচ্ছন্দের কাজ তামান্নার পেছনে লাগা সে কি আর না লেগে থাকতে পারে।
তাই আজকের দিনেও সে তামান্নাকে ক্ষেপানোর জন্য বললো,
“তোকে সঙ্গে নিয়ে কেনো কাঁটবো। জন্মদিন আমার-তাই আমি একাই কাটবো।”
“কিহ্?”
“ইয়াহ্। কেক এরকম ঢেকে রেখেছিস কেনো তোরা? কোন ফাইভ-স্টার থেকে অর্ডার করলি?
তামান্না অভিমানের স্বরে বললো, “কেউ একজন কষ্ট করে হাত পুড়িয়ে বানিয়েছে।”

সিয়াম তামান্নার দিকে তাঁকালো। আজকে অত্যন্ত সে এরকম কোনো কথা আশা করে নি। কিন্তু সিয়াম-ই বা কি করবে? ওর তো তামান্নার সাথে না খোঁচালে ভালো লাগে না।
তামান্নার অভিমানী চোখ আর লজ্জাবনত মুখ টা যে সিয়ামের সবচেয়ে বেশী ভালো লাগে। সিয়াম অপেক্ষা করে থাকে-কখন তামান্নার এই রূপ দুটো সে দেখতে পারবে।

তো তামান্নার অভিমানী চোখ টা তো দেখা হলো। এবার লজ্জা রাঙা মুখ দেখার পালা। সিয়াম সেটাও মিস করতে চাইছে না এই মুহুর্তে। তাই কেকের উপর থেকল ভালবেটের কাপড় টা সরিয়ে তামান্নার কমড় জড়িয়ে তার একদম কাছে নিয়ে আসলো। তারপর তামান্নার হাতের আঙ্গুলগুলো নিজের হাতের মাঝে নিয়ে কেকের উপর ছুরি বসালো।
তামান্নার কি যে লজ্জা লাগছে!
শুধু হাত ধরলেই হতো। এতগুলো মানুষের সামনে এভাবে কমড় জড়িয়ে ধরতে হয়?
সিয়াম কেকের দিকে তাকিয়েছে একবার! তামান্নার জন্য কেক বানানো সহজ কাজ হলেও এরকম পাঁচ স্টেপের চকলেট কেক টা করতে তার অনেক খাটুনি লেগেছে। আর কতটা প্ল্যান করলে এরকম ভাবে চঁমকে দেওয়া যায় একটা মানুষকে!

সিয়াম আর একবারও তাকায় নি কেকটার দিকে! তামান্নাকে দেখছে সে। কেমন সেজেছে ও আজ! আর সবার সামনে এতটা কাছে আসায় কি লজ্জাটাই না পাচ্ছে। সিয়াম এতটাই বেঘোর হয়ে তামান্নার দিকে তাকিয়ে আছে যে তার আশেপাশে এতগুলো লোক তাকে বার্থ-ডে সং বলে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে সেটা তার কানেই যাচ্ছে না।

কেক কাটা হয়ে গেছে। সিয়াম তো যেভাবে হুশ হীন হয়েছে তার সে দিকে নজর নেই। তাই তামান্নাই কেক টা হাতে তুলে নিলো। সিয়ামের মুখের সামনে নিয়ে বললো, “আমি যেনো আমার ভালোবাসাটার লাঠি ভড় দিয়ে হাঁটার সময়টাতেও এভাবেই প্রতিবছর এই দিনটাতে শুভেচ্ছা জানাতে পারি।”
সিয়াম অবাক হয়ে তামান্নার চোখের দিকে তাকালো। কতটা ভালোবাসলে এমন আশা করা যায়!

পাশ থেকে আকাশ বললো, “আরে ভাই! তোর বউ সারা জীবন তোর চোখের সামনে থাকবে। বেচারী কেক টা ধরে রেখেছে আগে সেটা খা।”
সিয়াম খানিক টা লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। তামান্নার হাত থেকে কেক টা খেতে যাবো তখনি তামান্না হাত সরিয়ে নিয়ে বললো, “পুরো টা মুখে ঢুকিও না। আমি খাবো।”
সবাই হাসলো তামান্নার কথায়। সিয়াম এই ফাঁকে কেকে কামড় বসানোর পাশাপাশি তামান্নার আঙ্গুল দুটোও কামড়ে দিলো।
বেচারী তামান্নার হাতে এখন অল্প একটু কেক আছে। সিয়াম সেটাই তামান্নাকে খাইয়ে দিচ্ছে।
তামান্না হাসলো। দুষ্টু হেসে সিয়াম যতটা জোরে তার হাতে কামড় দিয়েছিলো তার চেয়ে আরও দ্বিগুণ জোরে বিট করলো সিয়ামের আঙ্গুলে।

“আওওও…..”
তামান্না হাঁসতে হাঁসতে শেষ।
“কি ব্যাপার তামান্নু! তুই আমাদের বন্ধু টাকে এভাবে কামড়ালি কেনো?”
“আরে ও আমাকে কামড় দিয়েছিলো আগে।”

সিয়াম তামান্নার মাথায় একটা গাট্টা দিয়ে বললো, “দিন দিন বেশী বদ হয়ে যাচ্ছিস।”
“ইশশশ, আমিও তাই ভাবছি। তোমার রোগগুলো আমার মাঝে ট্রান্সফার হচ্ছে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here