নতুন তুই আমি পর্ব-৭২

0
2112

#নতুন_তুই_আমি#
💜💜
পর্ব:-৭২
Writer:Nargis Sultana Ripa
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
সিয়াম আর তামান্নার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দুজনেই বাড়িতে বসা একদম। যদিও সিয়ামকে বাসায় পাওয়া যায় না। বন্ধুদের সাথে সারাদিন এই-সেই করে বেড়ায়। তবে তামান্না বেচারী একা। আর তার সেই জনসেবা। তামান্না নেট ঘেটে জানতে পেরেছে-শেরপুর জেলার দিকে একটা এতিমখানা আছে। যেখানে সাহায্য করার মতো কেউ তেমন করে এগিয়ে আসে নি। বাচ্চাগুলো দিনাতিপাত করে না খেয়ে, কখনো দু বেলা-আর কখনো বা দিনে একবার। আর যদিও বা ভাগ্য জোটে তিন বেলা খাবার জোটে তাহলে দেখা যায়-সে খাবার গুলো কোনো অনষ্ঠান বাড়িতে নষ্ট হওয়া খাবার। তামান্নার বিষয় টা খুব বাজে লাগলো। খাবার যদি না দেওয়ারই হয় তো দিবে না। কিন্তু যে খাবার নিজেরা মুখে তুলতে পারে না সেসব পঁচা-বাশি খাবার অন্যকে কেনো দিতে হবে?

তামান্না সিধান্ত নিলো সে এতিমখানায় যাবে। কিছু আর্থিক সহায়তা করবে। কিন্তু শেরপুর তো ঢাকা থেকে প্রায় চার ঘন্টার রাস্তা। তাছাড়া এর আগে কখনো যাওয়া হয় নি সেখানে। বিয়ের আগে তো বাবা-মাকে বলে কাউকে ম্যানেজ করে চলে যেতো এখানে-সেখানে। মাঝে মাঝে বন্ধুদেরও জোর করে নিয়ে যেতো। কিন্তু এখন সবার আগে সিয়ামের সাথে শেয়ার করা দরকার। তাই তামান্না অপেক্ষা করতে লাগলো-কখন সিয়াম বাড়ি ফিরবে।
তামান্না লেপটপ বন্ধ করে রাইয়ানের রোমে গেলো। বেচারী পড়ছে। তামান্না বসলো তার পাশে। বললো,
“কি পড়িস রে?”
“এই তো পদার্থ দেখছিলাম।”
“ওহ।”
“হুম। আমাকে একটু হেল্প করো না গো।”
“কি?”
“আমি না এই সার্কিট টা স্লভ করতে পারছি না।”
তামান্না রাইয়ানের বই হাতে নিয়ে দেখলো।
“ওহ্। এটা তো একদম ইজি রে বাবু। একটু ঘুরিয়ে দেওয়া আছে। সমান্তরাল বর্তনী দিয়ে খেয়াল কর…..”
তামান্না খুব সুন্দর করে রাইয়ানকে পড়া টা বুঝিয়ে দিলো। শেষে প্রশ্ন করলো,
“বুঝেছিস এবার?”
রাইয়ান তামান্নার গাল টেনে বললো,
“ইয়াহ। সোনামনি।”
“ইশশশ। গাল টানে রে।”
“গাল টা তুলতুলা তোমার।”
“কিসব বলিস না। ভাইটার মতোই অসভ্য।”
“আমার ভাই অসভ্য? কি বললে তুমি এটা?”
“হয়েছে হয়েছে। তোরা ভাই-বোন দুজনেই খুব সভ্য এবার পড় মনোযোগ দিয়ে।”

“হুম। সত্য কথা বললেই অসভ্য হয়ে যায়!”
“পড়বি তুই?”
“আচ্ছা। বাবা পড়ছি।”
তামান্না রাইয়ানের রোম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পরেই রাইয়ানের ফোনে আকাশের নম্বর থেকে কল আসে।
“হ্যালো?”
“হুম। কি করছেন পিচ্চি?”
“এই তো পড়ছি। আপনি?”
“পিচ্চি মানুষের এতো এতো পড়াশোনা! কি যে অবস্থা?”
“আপনিও তো পড়েছেন। আমি তো আর একা পড়ি না।”
“হুম। তা অবশ্য ঠিক।”
“আপনি তো বললেন না আপনি কি করছেন?”
“উমমমম। কি করতে পারি? অনুমান করো তো?”
“আপনি কি করছেন আমি কি করে বলবো?”
“ট্রাই করো। দেখো পারো কি না?”
“উমমমম-শুয়ে আছেন?”
“তা অবশ্য আছি। আর কি কাজ করছি?”
“আমার সাথে কথা বলছেন।”
“আর?”
“আর কি?”
“আর কিছু করছি না?”
রাইয়ান ভাবলো। তারপর হঠাৎ করেই মনে হলো যে আকাশ তো স্মোক করে। তাই ঠাস করে বলে ফেললো,
“স্মোক করছেন আপনি।”
“এই তো, গুড আন্সার।”
“হু। কি পান বলুন তো এই সিগারেটে?”
“অনেক কিছু। ওসব বুঝতে পারবে না তুমি।”
“হ্যাঁ, আমি তো বাচ্চা! আমি কি আর এতো সব বুঝি?”
“আহ্! বাচ্চা আছো এখন আর কিছু বছর পর বাচ্চার মা হবে।”
রাইয়ান আকাশের কথায় রীতিমতো চমকে উঠলো।
এতটাই থ হয়ে রইলো-বলার মতো আর কিছুই খোঁজে পেলো না।

সিয়াম বাইরে থেকে এসেছে বিকাল চার টার দিকে। তামান্না ওয়েট করতে করতে রীতিমতো অতিষ্ট।
“এতোক্ষণ লাগে আসতে?”
“অভির বাসায় গিয়েছিলাম একটু।”
“অভির বাসায় কেনো?”
“ওর একটু দরকার ছিলো।”
“আমি যে এতো বার ফোন দিলাম?”
“সরি রে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম।”
“একবার তো কল ব্যাক করতে পারতে?”
সিয়াম তামান্নার গাল দুটো টেনে দিয়ে বললো,
“সরি জানপাখি।”
“থাক আর আদর দেখাতে হবে না। লান্স করবো আসো।”
“কিহ?”
“এতো অবাক হওয়ার কি আছে? আমি তোমার জন্য ওয়েট করছিলাম।”
“তামান্না এখন চার টা ওভার। আর তুই খাস নি?”
“আমি তো ভেবেছিলাম তুই আসলে সরি তুমি আসলে খাবো।”
“ইচ্ছা করতেছে একটা থাপ্পর লাগাই। আমি চারটা পর্যন্ত বাইরে কি না খেয়ে থেকেছি নাকি?”
“মানে? তুমি খেয়ে আসছো না?”
তামান্না কেমন যেনো গাল দুটো ফুলিয়ে দিলো। সিয়াম বুঝতে পারছে-তামান্না এবার হয় কাঁদবে না হয় রাগারাগি করবে। কান্না করার সম্ভাবনাটাই বেশী।
তাই সিয়াম তামান্নার কপালে চুমু দিয়ে বললো,
“ওকে ম্যাডাম, যাও লান্স করে এসেছি তো কি? দুপুর দুইটার খাবার হজম হয়ে গেছে আমার।”
তামান্না অভিমানী সুরে বললো,
“থাক আর খেতে হবে না।”
“আহা রে বাবু! রাগ করছিস কেনো? আমি জানতাম না তো।”
“আর জানতে হবেও না।”
“এমনটা করে না সোনাবউ।”
“আহ্লাদ দেখানো হচ্ছে?”
সিয়াম তামান্নার ঘাড়ের পেছনে দু হাত বেঁধে নিচু হয়ে তামান্নার চোখে চোখ রেখে বললো,
“আমার একটা মাত্র বউকে আমি আহ্লাদ করবো না তো কে করবে?”
তামান্নার অভিমানটা একটু হলেও কমলো। কথাটা খুব ভালো লাগে তার-‘একটা মাত্র বউ’।
সিয়াম বললো,
“খাবো।”
“আচ্ছা। ফ্রেস হয়ে আসো।”
“আমি ভাতের কথা বলি নি।”
“তাহলে? আম্মু তো ভাতই রান্না করেছে। অন্য কিছু তো করে নি আজকে।”
সিয়াম তামান্নার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,
“আহা রে। বোকা বউ! তোমার লিপস্টিকের কথা বলেছি আমি। বাই দা ওয়ে লিপস্টিক টা মানিয়েছে খুব।”
“যাহ্।”
“উমহু।”
সিয়াম তামান্নার ঘাড় থেকে হাতদুটো তামান্নার কমড়ে নিয়ে এলো। এক হাত কমড়ে রেখে অন্য হাতে তামান্নার ঠোঁট আলতো করে ছুয়ে দিয়ে বললো,
“ঠোঁট টা এতো পাতলা কেনো তোর?”
সিয়ামের স্পর্শে কেঁপে উঠলো তামান্না। আর প্রশ্ন শোনে অবাক হলো। ও কি করে বলবে ওর ঠোঁট কেনো পাতলা!
সিয়াম চুমু খেলো তামান্নার ঠোঁটে। তারপর?
আরো কিছুটা সময় এইভাবেই রইলো দুজন।
সিয়াম তামান্নাকে ছাড়তেই তামান্না সিয়ামের বুকে মাথা ঠেকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো।
সিয়াম অবাক হয়ে বললো,
“কি হলো এটা?”
তামান্না হাসতে হাসতেই জবাব দিলো,
“কিছু না।”
“আমি তোর হাসার কারণ জানতে চাইছি।”
তামান্না হেসেই যাচ্ছে। লজ্জা তো আছেই তবুও এক অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে তার মাঝে। তাই হাসছে।
“হাসিটা থামা পাগলী।”
“আমার না কেমন জানি লাগলো।”
“কেমন?”
“কিস টা অন্যরকম ছিলো।”
সিয়াম তামান্নার মুখটা দু হাতে তুলে ধরে বললো,
“অন্য রকম বলতে?”
তামান্না মিষ্টি হেসে জবাব দিলো,
“কেমন একটা বরাবরের মতো না।”
“বাজে ছিলো নাকি?”
“আরে নাহ্।”
“আচ্ছা বল তো তোকে কেমন কিস করতে পারি আমি?”
“এটা আবার কি প্রশ্ন?”
“বল না?”
“জানি না আমি। ছাড়ো। ফ্রেস হও ভাত খাবো আমি।”
“ইশশশ রে। ক্ষুদা লাগছে?”
“হুম। খুব।”
“আমায় চুমু খা একটা পেট ভরে যাবে।”
তামান্না চোখ বেঁটে তাকালে সিয়ামের দিকে।
সিয়াম মুঁচকি হেসে বললো,
“আই আম নট জোকিং জানু। মাঝরাতে ঘুম ভাঙার পর আমার যখন ক্ষুদা পায় তখন তোর কপাল, গাল, ঠোঁটে চুমু দিলেই ব্যাস ক্ষুদা মিটে যায় আমার। তুইও ট্রাই করতে পারিস।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here