#নসিব #নসীব
১-৫
#নসীব
#আরবি_আরভী
#পার্ট_১
-আবির ছাড়েন প্লিজ ব্যাথা পাচ্ছি ছাড়েন আর কখনো এমন করব না,,খালুকে ডাকব কিন্তু প্লিজ ছাড়েন,,,
-সাওনের সাথে তোর কি হুমম,
-কিচ্ছু না বিশ্বাস করেন,, (তার হাতটা চুলের মুঠো থেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টায়)
-তোর কি আমাকে ছাড়া আরও কাস্টমার আছে নাকি
-ছ্বি ও খালামনি দেখ না তোমার ছেলে আমাকে মারছে,,
আমি নিলা বয়স ১৯।। শারীরিক সম্পর্কের জন্য পার্ফেক্ট তাই না হা হা হা তা আমি বলিনি বলেছে আমার আদুরের খালাতো ভাই আবির।। ছেলেটার জন্য রুমে শান্তি মত কাপড়ও চেইঞ্জ করতে পারি না হুট করে রুমে ঢুকে বিছানায় শুয়ে পরে।। কখনো তো আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আমার কাপড় চেইঞ্জ করা দেখেন।। আমার শরীরের প্রতিটি অংশ হয়তো উনার চেনা শেষ।। উউফ কবে যে দিনগুলো শেষ। সবাই বলে উনি নাকি তার অফিসের সুন্দরী কোনো এমপ্লয়িরের দিকে ফিরেও তাকান না।। কিন্তু জানি না আমার মধ্যে কি খুজে পান আমার প্রতিই কেন জুলুম করেন।।
গল্পটার শুরু হয়েছিল আমাদের ছোটকাল থেকে।। আবির আমার খালাতো ভাই আমাদের একসাথে খেলা আনন্দ হাসি ঠাট্টা কিন্তু আমার আব্বু খালামনিকে পছন্দ করত না কারন খালামনি সবার বিপক্ষে গিয়ে লাভ ম্যারেজ করেছিলেন।। আর আমার বাবা হলেন ভালোবাসার বিরুদ্ধে।। খালামনি যখনই বেড়াতে আসতেন বাবা মাকে আড়ালে নিয়ে খুব কথা শুনাতেন কিন্তু নিজের বোনকে তো আর ফেলে দেয়া যায় না,।।
সময়ের একপর্যায়ে খালামনি ভবিষ্যতে আমার আর আবিরের বিয়ের কথা বললে বাবা খুব রেগে যায় সাথে খালামনিকে কষে থাপ্পড় মারে বলতে থাকেন,,
-তোর সাহস হয়ে কিভাবে আমার মেয়েকে নিয়ে তোর এসব বলার নোংরা মেয়ে একটা পরপুরুষদের সাথে মেলামেশা করিস কে জানে তোর ছেলে আবির এটা কি বিয়ের পরে হয়েছে নাকি বিয়ের আগে,,, কে জানে বিয়ের আগে কয়েটা বাচ্চা ফালাইছিস ব্যা** কোথাকার,,
-প্লিজ থামো ,, (আম্মু)
-তুমি চুপ কর এই শুন তোই একটা বাজারের মেয়ে আর তোর ছেলের সাথে বিয়ে দিব আমার মেয়ের,,,বেরিয়ে যা,,
আম্মু শত চেষ্টার পরেও আব্বুকে থামাতে পারেন নি ঐ দিন খালামনি খুব কান্না করেছিলেন ছোট আবির রক্ত মাখা চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।। সেই দিনের পর থেকে খালামনি আর আমাদের বাসায় আসেননি কোনো কন্টেক্টও করেননি।।
১৬ বছর পেরিয়ে গেছে আমি তো ইতিমধ্যে ভুলেই গেছি আমার কোনো খালামনি আছে।। তার মধ্যে আবার আম্মুকে হারিয়ে আব্বু একদম নিরব হয়ে গেছে কারো কাছে কোনো রাগ নেই কোনো অভিমান নেই।। আব্বুর শেয়ারের বিজনেস ৩ বার ড্রপ খেয়েছে সংসার একদম অচল তাই আর পড়াশোনাটাও করা হয়নি সংসার আর আব্বুর অসুখের খরচ চালাতে দু একটা টিউশনি করি এই যা।। ডাক্তার বলেছে আব্বুর অপারেশনের জন্য অনেক অনেক টাকা লাগবে কিন্তু তা ম্যানেজ করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব।।
এমই একদিন টিউশনি শেষ করতে করতে অনেক রাত হয়ে যায়।। রাস্তায় কোনো গাড়ির চিহ্ন নেই হঠাৎ একটা নীল কালারের প্রাইভেট কার দেখতে পেলে আমি সিগন্যাল দেই রাস্তার একটু দূরে গিয়ে গাড়িটা থামে আমি দৌড়ে গিয়ে ড্রাইভাইকে একটু লিভ দিতে বললে সে একটু পেছনে ফিরে মালিকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আমাকে আসতে বলে আমি গাড়িতে উঠে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম একটা হ্যান্ডসাম ছেলে দেখতে আমার পছন্দের নায়ক রানবির কাপুরের মত নিচের দিকে তাকিয়ে মোবাইলে ব্যাস্ত,,, ড্রাইভার আমার চাহনি দেখে হয়তো বুঝে গেছেন উনার মালিকের ওপর আমি অলরেডি ক্রাশ খাইছি তাই মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করছেন,,
-কোথায় যাবেন,,
আমি ঠিকানা বললে ছেলেটা আতংক হয়ে আমার সম্পর্কে সব কিছু জানতে চাইলে আমি তাকে সব বলি।। তারপর উনি আমাকে একটা কার্ড এগিয়ে বলে কোনো দরকার হলে উনার অফিসে যেতে আমি একটু ভেবাচেকা খেয়ে রাজি হলাম।। এমন একটা ছেলে যাকে তাকে কার্ড দেয়ার মত না ব্যাপারটা কি,,,
বাড়ি ফিরে দেখি বাবার হার্টের ব্যথা অনেক বেড়ে গেছে নিশ্বাস নিতে পারছেন না তারাহুরা করে হসপিটাল নিয়ে গেলে ডাক্তার জানান ইমার্জেন্সি অপারেশন করতে হবে তানা হলে অনেক কিছু হয়ে যেতে পারে কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন মোটা অংকের টাকা।। রাতভর ভাবতে ভাবতে সকালে আমি কার্ডের ডিটেইলস অনুযায়ী তার অফিসে যাই।। উনি নাকি এই অফিসের ম্যানেজার ডিরেক্টর।। আমাকে দেখে তো উনি রীতিমতো হেসে বলতে লাগলেন,,
-রাতে কার্ড দিয়েছি আর সকালেই হাযির বাহ,,
-জ্বি মানে আমার ইমারজেন্সি একটা কাজ লাগবে,,
-কেন,,
-আমার বাবা অসুস্থ ইমারজেন্সি অপারেশন লাগবে তাই অনেক টাকার দরকার ,,
-ও হুমম তা শিক্ষাগত যোগ্যতা?
-মাধ্যমিক,,
-হা হা হা হা হা হা বাবা অনেক শিক্ষিত তুমি,,
-আমার সত্যিই টাকাটা লাগবে,,
-তুমি এসব বাদ দাও আচ্ছা তুমি জানো আমি কে,,
-না
-আমি তোমার আফরোজ খালামনির ছেলে আবির,,
-কিইই,,, (অবাক হয়ে) প্লিজ আমাকে হেল্প করেন আব্বুর শরীর অনেক খারাপ আবির
-দিব সব টাকা দিব কিন্তু তোমাকে আমার সাথে আমার বাড়িতে ৬ মাস থাকতে হবে যতক্ষন না তোমার বাবা ঠিক হয়ে যায়,,
-মানে,,
-মানে খুব সোজা তোমাকে আমার সাথে থাকতে হবে ফ্রিতে না যখন ইচ্ছা টাকা পেয়ে যাবে,,
রেগে আবিরকে একটা থাপ্পড় দিয়ে,
-কি ভাবছেন আমাকে,,, লজ্জা করে না ছ্বি আপনে এমন হয়ে গেছেন,,
-উউফফ ন্যাকামি বন্ধ কর বাবাকে বাচাতে চাইলে এটা তোমাকে করতেই হবে তানা হলে কিচ্ছু করার নেই আসতে পার ,,
-আমি খালামনির সাথে কথা বলব উনি নিশ্চয়ই আমাকে বুঝবেন,,,
-সেট আপ এন্ড গেট লষ্ট,,
রাস্তায় হাটতে হাটতে কথাগুলো ভেবে আর কোনো উপায় না পেয়ে তার সব শর্তে আমি রাজি হয়ে যাই।।আমার বাবার জন্য এটা আমাকে করতেই হবে।। বাবাকে কোনো রকমে বুঝিয়ে বললাম আমার একটা জব হয়েছে ওখানে থেকে আমাকে কাজ করতে হবে প্রায় ৬ মাস অনেক ভালো বেতন দিবে ।। বাবা রাজি হচ্ছিল না আমি এক প্রকার জোর করে চলে এলাম খুব কষ্ট হচ্ছে।।
ভেবেছি ওখানে খালামনি আছে ৬ মাস তা তেমন কি আর চোখের পলকে পেরিয়ে যাবে কিন্তু এখানের পরিবেশটা ছিল একদম ভিন্ন বিশাল এক বাড়ি ৬-৭ জন ইস্টার্ফ আবিরের একটা বোনও আছে আমি খালামনিকে হাজার বার নিজের পরিচয় দেয়ারপরেও উনি আমাকে চিন্তেই পারলেন না হয়তো না চিনার ভান করছেন উল্টো আবিরকে আড়ালে নিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলেন,,,
-এই মেয়ে এখানে কেন তাড়াতাড়ি বিদায় কর
চলবে,,
#নসীব
#পার্ট_২
#আরবি_আরভী
.
খালামনিকে হাজার বার আমার পরিচয় দেয়ার পরেও উনি আমাকে চিনতে পারলেন না হয়তো না চেনার ভান করছে উল্টো আবিরকে আড়ালে নিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলেন,,,
-এই মেয়ে এখানে কেন তাড়াতাড়ি বিদায় কর,, কি রে কথা বলছিস না কেন বিয়ে টিয়ে করে নিলি নাকি,,
-উউফফ থাম তো আম্মু পৃথিবীতে যদি মেয়ের জাতি শেষ হয়ে যায় তাহলেও আমি একে বিয়ে করব না আর তুমি কি না,,,
-দেখ এই মেয়ে যেন আমাদের পারিবারিক বিষয় কখনো নাক না গলায় এই বলে দিলাম,,
-ওকে কিচ্ছু করবে না তুমি নিশ্চিত থাকো,,
তারপর আবির একটা স্টার্ফের কাছে গিয়ে আমার থাকার রুমটা দেখিয়ে দিয়ে বলে রুমটা যেন ওর রুমের সাথেই হয় যাতে উনার যখন ইচ্ছা আমার রুমে আসতে পারেন।।খুব একা একা লাগছিল ঐ দিন এত্ত মানুষ কিন্তু আমার সাথে কথা বলার কেউ নেই সবাই সবার মত।। তার পর থেকে আমি এখানে।। আবির খুব হ্যান্ডসাম একটা ছেলে খুবই স্ট্রেইট এন্ড স্মার্ট।। তাহলে কেন আমার মত একটা সাধারন মেয়ের সাথে উনি এসব করেন তাও আবার এত্ত এত্ত টাকা দিয়ে।। শুধু আমার সাথেই কেন।। কথাগুলো প্রায় আমি চিন্তা করি। কিন্তু দিনশেষে বাবার সাথে কথা বললে নিজেকে অনেকটা হালকা লাগে।।
-নিলা মা কবে আসবি তোকে দেখতে অনেক ইচ্ছা করে,,
-আসব বাবা ছুটি পেলেই চলে আসব তুমি চিন্তা কর না ঔষুধ গুলো ঠিক মত খাবা,, আচ্ছা এই সপ্তাহে চেকআপের এপয়েন্টমেন্ট আছেনা তোমার।। টাকাটা পেয়েছ তো বাবা,,
-হ্যা রে মা কিন্তু এত টাকা,,, তুই খুব হার্ডোওয়ার্ক করছিস তাই না,
-না বাবা আমার কিচ্ছু করতে হয় না,,আচ্ছা আমি রাখি ভালো থেকো,
আবির যখন তখন আমার রুমে ঢুকে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে বলে ঘরের মেয়ে স্টার্ফগুলো আমার কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখে।। আমার মত চরিত্রহীন মেয়েদের জন্য নাকি হাজারো সংসার ভাঙে।। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে নিপা একটু আলাদা শুরু থেকেই তার সাথে আমার একটা পজিটিভ কনভেনশন।। আমাকে নিয়ে তার ভিন্ন এক ধারনা তার মতে আবির আমার খালাতো ভাই তাই আমার রুমে আসে তাছাড়া আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই তাই তার সাথে আমি আমার মনের কথাগুলো একজন আপন ভেবে শেয়ার করতাম কিন্তু সেদিন যখন সে আমার রুম ঝাড়ু দিচ্ছিল আর আমি ওয়াশরুমে শাওয়ার নিচ্ছিলাম তখন আবির শাওয়ার নিতে আসলে নিপা বাধা দিয়ে বলে ,,,
-আরে কোথায় যাচ্ছেন ছোট সাহেব,, ভিতরে নিলা আপু শাওয়ার নিচ্ছেন,,
কিন্তু তার কথার পাত্তা না দিয়ে আবির ওয়াশরুমে ঢুকে পরলে তার সম্পুর্ণ ধারনা বদলে যায় তাছাড়াও এক রাতে আমাকে আর আবিরকে একসাথে শুয়ে থাকতে দেখে সকালে বলেই ফেলে,,
-আপনার সাথে কি ছোট সাহেবের বিয়ে হয়েছে,,
-নাতো,, (একটু হেসে)
-ছ্বি ছ্বি ছ্বি আপনাকে ভালো ভাবছিলাম এই আপনাদের মত মেয়েদের জন্য আমাদের মেয়েজাতির এত্ত বদনাম,, আপনার কি মা বাবা নাই বেড়াতে এসে খালাতো ভাইয়ের সাথে এসব,, এখন বুঝেছি বড় ম্যাম সাহেব( খালামনি) কেন আপনাকে পছন্দ করে না,,
এভাবেই পেরিয়ে গেল ৪ টি মাস বাবা এখন কিছুটা সুস্থ।। আমাকে নিয়ে নাকি তার অনেক গর্ব হয়।। বাড়ি ফিরলে উনি আর আমাকে কাজ করতে দিবেন না একটা রাজকুমার খুজে তার সাথে উনার নিস্পাপ রাজকুমারী বিয়ে দিবেন।। বাবার মুখে কথাগুলো শুনলে সত্যি খুব কষ্ট লাগে।।
ইদানিং খুব মাথা ব্যথা অনুভব হয় তার সাথে বমি ফ্রি।। ৩ সাম পিরিয়ড অফ।। খুব ভয় ও টেনশনে আছি ।। এমন কেউ নেই যার সাথে আমার সমস্যাগুলো শেয়ার করব তাই নিজে নিজে একদিন সকালে প্রেগন্যান্সি টেস্টার দিয়ে টেস্ট করে যা দেখলাম তার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলাম না।। আমি প্রেগন্যান্ট!!! আমার ভেতর আরেকটা প্রান।। আমি মা হব।। কিন্তু আবির কি আমাকে মেনে নিবে।। আমার কুমারীত্ব নষ্ট করে সে কি পেল জানি না কিন্তু আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে তা বলতে পারি ।।বাবা সমাজে মুখ দেখাবেন কি করে।।আমি উনার মান সম্মান সব মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছি।। কথাগুলো ভেবে ডুকরে কেদে উঠলাম।।আমি আসলে মেয়ে নামে কলঙ্ক।।
সারাদিন রুমে থেকে কান্না করছি ।। অবশ্য তাতে কারো মাথা ব্যাথা নেই।। আবির অফিস থেকে এসে চেইঞ্জ করে হাতে মোবাইল আর কানে হেডফোন দিয়ে ডাইরেক্ট রুমে ঢুকে পরেন। সোফায় বসে ফোনে গেইমস খেলছে হঠাৎ আমার দিকে চোখ পরতেই ইশারায় জানতে চাইলে আমি মুখ লুকিয়ে আরও জোরে জোরে কাদতে থাকি।। তারপর উনি কাছে এসে বেখেয়ালী হয়ে বলতে লাগলেন,,
– এসব মরাকান্না থামিয়ে কি সমস্যা সেটা বল,,
-আবির আমি,,,,
-কি আরও টাকা লাগবে,,, ইট’স নট এ ফ্যাক্ট ডারলিং পেয়ে যাবা,,
-না আবির,, (কান্না করতে করতে)
-তাহলে নিশ্চয়ই আরও কাস্টমার দরকার ওকে চিন্তা কর না আমি আমার বন্ধুদের বলব কিন্তু উরা শুধু দিনে রাতটা কিন্তু আমার,,, ঠিক আছে,,
রেগে কষে উনাকে থাপ্পড় মেরে উচ্চ সুরে বলতে লাগলাম,,
-আমি প্রেগন্যান্ট ।।(জোরে জোরে কান্না করে)
-তা আর এমন কি,, কংগ্রেস, (অন্য দিকে তাকিয়ে ফোনে ব্যাস্ত হয়ে)
-বিয়ের আগেই আমি মা হয়ে গেছি বুঝতে পারছেন একমাত্র আপনার এই নোংরা অফারটার কারনে। আপনে ইচ্ছা করলেই ফ্রিতে টাকাটা দিতে পারতেন কিন্তু না আপনে একটা সরল মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিয়েছেন ।। আমি আমার বাবার আদর্শ মান সম্মান সব শেষ করে দিয়েছি।।
-সো সেড তোমার আব্বু জানতে পারলে অনেক রাগ করবে তাই না,
-একদম মরেই যাবেন, (কান্না করতে করতে)
-আচ্ছা চল,, (হাত ধরে উঠিয়ে)
-কোথায়,?
-তোমার আব্বুর কাছে উনার একমাত্র মেয়ে প্রেগন্যান্ট সুসংবাদটা উনাকে দিতে হবে না,,
-না আবির আপনার পায়ে পরছি প্লিজ আব্বুকে কিছু বলবেন না প্লিজ,,
-চল তো,, আমার আম্মুকে তো অনেক বড় লেকচার শুনিয়েছিলেন উনি চরিত্র নিয়ে এবার উনার মেয়ের সম্পর্কেও সবার জানা দরকার ,,
-আবির আমার প্রতি দয়া করুন প্লিজ প্লিজ আবির আমার বাবা অনেক অসুস্থ উনি এসব মেনে নিতে পারবেন না প্লিজ,,
কে শুনে কার কথা আবির আমার হাতটা ধরে জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে ফুল স্পিডে ড্রাইভ করতে লাগলেন যেন টাইম ওয়েস্ট না যায়।। খুব কান্না পাচ্ছে।। বাবা জানতে পারলে কি পাগল হয়ে যাবেন।।
বাসায় এসে নিচের দিকে তাকিয়ে কান্না করছি।। আবির আমার হাতটা ধরে আছেন।। বাবা চেয়ারে বসে পেপার পরছিলেন হঠাৎ আমাকে দেখে মুখে এক ঝাক হাসি নিয়ে ,,,
-নিলা মা কেমন আছিস রে মা তুই এত দিন পরে মনে পরল বাবার কথা,,
আমি চুপ হয় কান্না করতে থাকলে বাবা কাছে এসে আতংকিত কন্ঠে বলতে থাকেন,,
-কি রে মা কি হয়েছে,,, আর এই ছেলে কে তোর সাথে,,,, (আবির আমার হাত ধরে আছে সেদিকে নজর দিয়ে)
-আসসালামুয়ালাইকুম আংকেল আমি আবির,,
চলবে,,
#নসীব
#পার্ট_৩_৪
#আরবি_আরভী
-কি রে মা কি হয়েছে,,, আর এই ছেলে কে তোর সাথে,,,, (আবির আমার হাত ধরে আছে সেদিকে নজর দিয়ে)
-আসসালামুয়ালাইকুম আংকেল আমি আবির,,
-ওয়ালাইকুম আসালাম তা বাবা তোমাকে তো চিনলাম না ,,
-আংকেল আপনার জন্য অনেক বড় একটা খুশির সংবাদ নিয়ে এসেছি ,,, (ঠোঁটে মিথ্যা হাসি নিয়ে)
-কি খুশির সংবাদ,,
– কনগ্রেচুলেশন আংকেল আপনে নানুভাই হতে যাচ্ছেন,, আপনার একমাত্র মেয়ে প্রেগন্যান্ট,,
বাবা হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তার ওপর যেন আকাশটা ভেঙে পরলো।। গোটা পৃথিবী এলোমেলো হয়ে গেলো।। আমার থেকে কখনো এটা আশা করেননি তা উনার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।। চোখ দিয়ে তার রীতিমতো পানি চলে এসেছে।। কথাটা যেন তার বিশ্বাস হয়েনি তাই নিশ্চিত হতে আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন ,
-নিলা এসব কি,,, কি বলছে ছেলেটা তুই আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়েছিস,,,
আবির ভ্রু কোচকে বাবাকে বলতে লাগল,,
-ইয়ে আংকেল আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে নিলার তো বিয়ে হয়নি,, না মানে বলতে চাচ্ছি,,,,
বাবা চোখ দুটো লাল করে রাগি লুক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে,,
– আমার মেয়ে এসব করতে পারে না।। আমার মেয়ে ফুলের মতো নিষ্পাপ নিলা তুই বলে দে যে তুই আমার মেয়ে তুই এসব করতেই পারিস না এই ছেলে যা বলছে সব মিথ্যা,,, কি রে বল,,
বাবার কথাগুলো শুনে ডুকরে কেদে উঠলাম।। বাবা আমার অবস্থা বুঝতে পেরে কষে দু গালে থাপ্পড় দিয়ে চাবুকটা হাতে নিয়ে খুব জোরে জোরে আঘাত করতে লাগলেন।।এমন জানলে নাকি উনি অনেক আগেই আমাকে নিজ হাতে মেরে ফেলতে।।উনার আত্নসম্মানকে হীন করার আমার কোনো অধিকার ছিল না।।আমার মত মেয়ের উনার দরকার নেই।।
আবির লোকদেখানো শান্তনা দিয়ে বাবাকে আটকিয়ে বলতে লাগলেন,,
-কামডাউন কামডাউন,, মেয়ের এই অবস্থা হলে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক,,,, যেমনটা আমার লেগেছিল,, যখন আমার মায়ের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন,,তাকে ব্যা** বলেছিলেন আমার জন্ম নিয়ে সন্দেহ করেছিলেন,,, এখন আপনার মেয়েকে কি বলবেন মি.আকরাম সাহেব,,,
-কে তুমি,,,
-আমি আফরোজা ইমরান চৌধুরীর একমাত্র ছেলে আবির চৌধুরী,, আপনার মেয়ের আগত সন্তানের পিতা,,
-না আমি বিশ্বাস করি না চুপ কর চুপ ,, নিলা তুই তো ভালো একটা জব করে আমাদের সুদিন ফিরিয়ে আনবি বলেছিলি তাহলে এসব কি ,, এই জানোয়ারটা তোর সাথে জোর করে কিছু করেছে মা বল আমাকে তুই ভয় পাস না আমরা পুলিশের কাছে যাবো,,,
-আপনাকে নিলা এভাবে বোকা বানিয়েছে তাহলে ,, শুনুন আপনার মেয়ে টাকার বিনিময়ে আপনার কাছে মিথ্যা বলে দীর্ঘ ৪ টা মাস আমার সাথে আমার বাড়িতে ছিল।। আমরা একসাথে শুয়েছি একসাথে থেকেছি নিলা তো কয়েকদিনেই আমাকে আপন করে নিয়েছে আমার সামনে কাপড় চেইঞ্জ করতেও তার কোনো আপত্তি ছিল না তাই না নিলা,,,,,সত্যি টা হল আমার আম্মু না আপনার মেয়ে একটা চরিত্রহীনা নষ্টা,,,, একসময় মেয়ের বিয়েতে আপনার অনেক অমত ছিল আর এখন তো ফ্রিতে দিলেও আপনার এই বাজে মেয়েকে কেউ গ্রহণ করবে না কেউ না (মুচকি হেসে)
বাবা গম্ভীর হয়ে চেয়ারে বসে মেঝে দিকে তাকিয়ে আবিরের কথাগুলো শুনছে।।।বাবার রাগটা যেন আগের মত নেই নাকি শরীরের সাথে পেরে উঠছেন না।। আবির উনার সাধ্যমতো আমাকে অপদস্থ করে আমার কাছে এসে চোখ রাঙিয়ে বলে গেলেন আমি যদি কোনোদিন উনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি তাহলে খুন করে ফেলবেন,, যাওয়ার আগে মুখের উপর টাকার বান্ডিলগুলো ছুড়ে ফেলে বলে গেলেন,,,
-ডো অ্যাবর্শন এস সোন এস পসিবল,,
তারপর চশমাটা পড়ে চলে গেলেন।। বাবা এখনও নিস্তব্ধ হয়ে আছেন।। আমি দৌড়ে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে তার হাত দুটো ধরে আকুতি মিনতি করে আমার বাধ্যকতার কথা বলতে থাকলাম তার সাথে তার জন্য যে আমি আমার জীবনটাও দিতে পারি সেটাও বললাম,,
-বাবা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তোমাকে আমি হারাতে চাইনি বাবা তাই নিজের অতি মুল্যবান জিনিসটার বিনিময়ে তোমাকে বাচাতে চেয়েছি,, তুমি আমার সব বাবা আমি তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছি মান সম্মান মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছি আমাকে তুমি বকা দাও মারো,,, বিশ্বাস কর বাবা আমি এখানে থাকব না অনেক দূরে চলে যাবো,,, তুমি শুধু একবার আমার সাথে কথা বল,,,
বাবা আমার চোখের দিকে তাকালে আমি ভয় পেয়ে যাই।। রক্তমাখা দুটো চোখ বেয়ে অঝোরে পানি পরছে,,,।। এই প্রথম আমি সরাসরি বাবাকে কাদতে দেখলাম।
-মা রে তুই আমাকে বাচাতে যা করেছিস সেই কাজটা করেই আমাকে মেরে ফেলেছিস,, আগে মানুষ আমাকে দেখলে শ্রদ্ধা করত আর এখন আঙুল তুলবে ছ্বি ছ্বি করবে গালি দিবে,,
-বাবা আমি,,,, (কান্না করতে কারতে)
-চুপ এই পাপি মুখে আমাকে বাবা বলবি না তোর বাবা মরে গেছে মরে গেছে,,,
কথাগুলো বলেই বাবা হাটতে হাটতে নিজের রুমে চলে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন।। আমি মেঝেতে পড়ে থেকে নিজের পাপের জন্য বাবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।। সত্যি আমি যা করেছি তার কোনো ক্ষমা নেই আমার মরে যাওয়া উচিত।। এই জীবন রাখার কোনো অধিকার নেই আমার,।।।কিন্তু এখন তো আর আমি একা না,,,
রাত পেরিয়ে সকাল হল বাবা রুমের দরজা খুলছেন না অনেকবার ডাকলাম কিন্তু কোনো সারা শব্দ নেই।। মনে খুব ভয় কাজ করলে আমি কান্না করতে থাকি তারপর কয়েকজন প্রতিবেশীদের ডেকে এনে দরজা ভেঙে ভিতরে গিয়ে দেখি বাবা ফ্যানের সাথে ঝুলছেন।।
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।।বাবার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।। চোখ বেয়ে অনাবরত পানি পরছে।। যাক আজ থেকে আমি এতিম হয়ে গেলাম ।। এই পৃথিবীতে সম্পুর্ণ একা একজন।
#নসীব
#পার্ট_৪
বাবার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।। চোখ বেয়ে অনাবরত পানি পরছে।। যাক আজ থেকে আমি পিউর এতিম হয়ে গেলাম ।। এই পৃথিবীতে সম্পুর্ণ একা একজন।।
বাবাকে কবর দিয়ে যখন সবাই ফিরে এলো তখন বাবার কবরের পাশে বসে খুব কান্না করেছিলাম।। বারে বারে চিৎকার করে বলছিলাম আমাকে একা রেখে কেন চলে গেলেন আমাকেও কেন উনার সাথে নিয়ে গেলেন না।। আজ আমার জন্য বাবার এই অবস্থা।। আমার পাপের মাশুল আমার বাবা দিলেন।।আমি বাবাকে ফেলেছি।। আমি আসল খুনি আমার ফাসি হওয়া চাই।।
বাবার মৃত্যুর পর আমি আমার এক দূর সম্পর্কের মামার বাড়ি চলে যাই।।মামা প্রচুর বায়না করেন।।আজ নাকি তিনি প্রতিষ্ঠিত কেবল বাবার জন্যই হতে পেরেছেন।।এক কালে বাবা উনাকে আর্থিক সাহায্য করে বাচার পথ দেখিয়েছিলেন প্রতিদানে কিচ্ছু চাননি।। এখন আমাকে উনার বাড়িতে নিজের মেয়ের মতো রাখতে পারলে নাকি বাবার কিছুটা ঋণ শোধ করার সুযোগ পাবেন ,।।
ও বাড়িতে গেলে মামানি আমাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন ওখানে থাকলে চাইলে আমাকে বাজার এনে দিতে হবে রান্না করতে হবে ঘর পরিষ্কার সহ নানা সাংসারিক কাজে নিয়োজিত থাকতে হবে।। আমি তার এক কথায় সব মেনে নেই।। আমার ভাগ্যে হয়তো এটাই লেখা ছিল সবাই তো আর সারাজীবন মা বাবার দোলালি হয়ে থাকতে পারে না।। তাদের মধ্যে হয়তো আমিও একজন অভাগী।।
দিন যাচ্ছিল বাড়ির সব কাজ একলা হাতে সামলিয়ে খুব ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে আছি হঠাৎ রিনকি এসে আমাকে ডেকে তুলে আমার কাছে টাকা আছে কি না তা জানতে চাইলে আমি আবিরের দেয়া টাকাগুলোর কথা ভেবে বলতে থাকি,,
-হ্যা আছে কিন্তু এই টাকা আমি খরচ করতে পারব না ,,
-আপু আগামীকাল আমার একটা ফ্রেন্ডের বার্ডে অনেক দামী কিছু গিফট করতে হবে প্লিজ হেল্প,,,
-ঠিক আছে তুমি ১০-২০ হাজার নিয়ে নাও,,
-না না আপু এতে কিচ্ছু হবে না প্লিজ বুঝ,,
-তাহলে কত,,
-তুমি আমাকে ১ লাখ দাও আমি জানি তোমার কাছে এর থেকেও বেশি আছে প্লিজ প্লিজ আপু না করো না,,
-হ্যা আছে কিন্তু এই টাকা আমার না যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি যার টাকা তাকে ফিরিয়ে দিব,,, তুমি বুঝ প্লিজ,,
-ঠিক আছে লাগবে না তোমার টাকা ,হূম,, (মুখ বিকিয়ে চলে গেলো)
পরের দিন ঘরের বাজার নিয়ে বাসায় ফিরে দেখি রিংকি দৌড়ে আমার রুম থেকে পালিয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা বুঝতে রুমে গিয়ে রুমের সব জিনিসপত্র এলোমেলো আবিষ্কার করি সবকিছু অগোছালো।। টাকার ড্রয়ারটাও খালি হয়ে পড়ে আছে ।। এ কাজ রিংকি ছাড়া কেউ করেনি সেই আমার টাকাগুলো চুরি করেছে তা মামানি কে জানালে উনি উল্টো আমাকে দোষী সাব্যস্ত করেন।। সেদিন দু মায়ে মেয়ে মিলে খুব নির্যাতন চালায় আমার ওপর ।।তখন মা বাবার কথা খুব মনে পরছিল।। আজ যদি উনারা বেচে থাকতেন।।
আমি যদি সেই বাড়িতে থাকি তাহলে নাকি রিংকি অন্য কোথাও চলে যাবে।। কারো সুখের সংসার ভাঙতে চাই না বলে নিজেই বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় পাড়ি জমালাম।। গভীর রাত রাস্তার দুপাশে ল্যাম্পপোষ্ট নিস্তব্ধ পরিবেশ আমি হাতদুটো এক মুঠো করে একটা গাছের নিচে শুয়ে আছি।। হঠাৎ কে যেন আমার হাতটা স্পর্শ করল।। চোখ খুলে দেখি একটা মাতাল আবোলতাবোল বকছে আর আমার কাছে আসার চেষ্টা করছে।। খুব ভয় পেয়েছিলাম ।।হাতে থাকা ব্যাগ টা দিয়ে তাকে আঘাত করে কোনোরকমে নিজে বাঁচিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাই ।।
বড় রাস্তার মুড়ে এসে আমি ক্রমাগত বমি করতে থাকি।। প্রেগ্ন্যাসি অবস্থায় যা হয় আরকি।। সাহায্য করার মত কেউ নেই আমার।। ভাগ্যবশত নিপা সেখান দিয়ে যাচ্ছি হঠাৎ আমাকে দেখতে পেয়ে রিকশা থামিয়ে বলতে লাগলেন,,
-নিলা ম্যম আপনে এখানে,, কি হয়েছে একি অবস্থা আপনার,,,
আমি তাকে দেখে যেন স্বস্তি ফিরে পেলাম।।চোখ বেয়ে পানি পরতে শুরু করল।। কিছু বলব তার আগেই মাথা ঘুরে পড়ে যাই।। চোখ খুললে নিজেকে আবিরের বাসায় খুজে পাই।।বেডের পাশেই চিন্তিত চেহারায় নিপা আমার দিকে তাকিয়ে আছে খালামনি কিছুটা দূরে দাড়িয়ে রাগি লুক নিয়ে গম্ভীর হয়ে বলছেন,,,
– তোমার বাবা যা করেছেন তা কি কম ছিল যে এখন বারে বারে তুমি ফিরে এসে জ্বালাতন শুরু করলে,,,,তোমার বাবা কেন বুঝতে চাইছেন না তোমাকে এভাবে আমাদের পেছনে লেলিয়ে দিয়ে কোনো লাভ নেই,,,আমরা তোমাদের সাথে সম্পর্ক রাখতে চাই না।।গিয়ে হীনমন্যতা সম্পন্ন লোভী বাবাকে বলে দিবে উনার থেকে ভালো কাপড় আমাদের পোষা কুকুরটি পড়ে বুঝেছ ,,,, সামনে আবিরের এনগেজমেন্টে এর মধ্যে আমি তোমাদের কোনো ঝামেলা চাই না,,,,
আবির অফিস থেকে আসার সময় হয়ে গেছে তোমাকে এখানে দেখলে ভীষণ রাগ করবে,,, দেখ তোমার সামনে হাত জোড় করছি তুমি প্লিজ চলে যাও আর কখনো আসবে না,,,,
চলবে,,,,
#নসীব
#পার্ট_৫
#আরবি_আরভী
-দেখ তোমার সামনে হাত জোড় করছি তুমি প্লিজ চলে যাও আর কখনো আসবে না,,,, (বিরক্তি ভাব নিয়ে)
আমি আস্তে করে বিছানা থেকে উঠে খালামনি হাত দুটো স্পর্শ করে ডুকরে কেদে উঠলাম ,,,
-আমার থাকার কোনো জায়গা নেই ,,যতদিন না কোনো কাজ পাচ্ছি আমাকে এখানে তোমার কাছে রেখে দাও না খালামনি ,,, বিশ্বাস করো কোনো ঝামেলা করব না ,, নিপা তরী সুমি সাজিয়া ওরা যেমন তোমার বাড়ির স্টার্ফ তেমনই মনে করো না আমিও একজন নতুন কাজে যোগ দিয়েছি,,, ও খালামনি আমাকে বেশি কিছু দিতে হবে না শুধু থাকার জায়গা আর খাবার দিলেই হবে,,, বিশ্বাস কর কাজ পেলে চলে যাবো,,
এক জাটকায় হাত দুটো ছাড়িয়ে,,,
-মাথা খারাপ খাল কেটে কুমির আনব নাকি,,, অতীতের কিছুই ফিরে আনতে চাই না,,
-আবিরের এনগেজিমেন্টে কোনো ঝামেলা হবে না,, খালামনি থাকতে দাও না প্লিজ,,আমি খুব অসহায় প্লিজ সাহায্য কর (তার পাগুলো জড়িয়ে)
-আচ্ছা আচ্ছা ছাড়ো,,, ঠিক আছে কিন্তু একজন স্টার্ফ হয়েই থাকবে কখনো যদি আমাদের ফ্যামিলির কেউ হতে চেয়েছ অথবা পারিবারিক কিছু নিয়ে আলোচনা করেছ তাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব,,,
খালামনি কথাগুলো বলছে এমন সময় আবির অফিস থেকে ফিরে আমাকে দেখে রেগে একাকার হয়ে বলতে থাকেন ,,
-তুমি,,, সাহস হয় কিভাবে আমার বাড়িতে আসার,,
-আবির ও নিপাদের সাথে কাজ করবে তাছাড়াও কয়েকদিন পর তোর এনগেজমেন্টের অনেক কাজ,, লোক পেয়ে গেছি ভালোই হয়েছে বল,,
-কোনো দরকার নেই অনেক লোক আছে কাজ করার,,
তারপর আবির আমার হাতটা ধরে জোর করে টেনে বাড়ির থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করছেন ।। খালামনির কথাও শুনছেন না।। আমিও অনেক রিকুয়েস্ট করছি কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।। গেইটের সামনে এনে রেগে আঙুল দেখিয়ে বলতে লাগলেন,,
– আর কোনো দিন যদি আমার বাড়ির বরাবর দেখিছি তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না ,, যেইনা বাবা মেনে নিতে অস্বীকার করছে অম্নি আমার কাছে ফিরে আসা তাই না ,,,,তোদের মত মেয়েরা এমন কেন আচ্ছা বল আর কত টাকা দিলে তোর এই অপবিত্র শরীরটা আর আমাকে দেখতে হবে না হুম,,(ভীষণ রেগে)
-আপনার থেকে খারাপ তো এই পৃথিবীতে আর কেউ হতেই পারে না আবির আপনে অনলি ওয়ান যে কি না অযথাই একটা নোংরা গেইম খেলে আমাকে শেষ করে দিয়েছেন,,,আপনে জানোয়ার থেকেও নিকৃষ্ট ,,আল্লাহর গজব পড়ুক,,,
-স্টপ টকিং নন্সেন্স এন্ড গেড লস্ট ফ্রম হ্যার,,
কথাটা বলে চলে যাচ্ছিলেন,,,
-শুনুন আমাকে থাকতে না দিলে এক্ষুনি পুলিশের কাছে গিয়ে বলব আপনে আমার সাথে জোর করে ফিজিক্যাল রিলেশন করেছেন আমাকে বিয়ের প্ররোচনা দিয়ে এখন বিয়ে করতে অস্বীকার করছেন,,, প্রতারণার করেছেন,, তখন আপনার বিয়ের কি হবে চিন্তা করে দেখেছেন,,,
উনি ভীষণ রেগে চোখগুলো আগুনের গোলা করে ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন এরই মধ্যে খালামনি এসে আবিরকে শান্ত করার চেষ্টা করছে আর এদিকে নিপা এসে আমাকে ঘরের ভেতর নিয়ে চাচ্ছে।। আবির কিচ্ছু বলছে না তার বিয়েতে ঝামেলা হবে হয়তো এটা ভেবে মনকে শান্তনা দিচ্ছেন।। আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।খুব ভয়ংকর চাহনি পারলে যেন এক্ষুনি গিলে খেতেন আমাকে ।।
এভাবেই শুরু হল আমার জীবনের আরেকটা নতুন ধাপ।। সত্যি বলতে আমি আগে জানতামই না যে আমার মধ্যে এত ধৈর্য আছে।। ।অসুখ বমি মাথা ব্যাথা এসব কাটিয়ে সারাদিন পরিশ্রম করছি ।। খালামনি কাজে অসন্তুষ্ট হলে আমাকে যে বের করে দিবেন তখন যাবো কোথায় ।।
আমার বমি আর বারেবারে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার কারনটা সবার কাছ থেকে আড়াল করতে পারলেও নিপার কাছ থেকে করতে পারেনি।।আমার গল্পটা জেনেই ছাড়লো।। মেয়েটা রীতিমতো কেদে গলা জড়িয়ে বলতে লাগল আজ থেকে ও নাকি আমার ছোট বোন আর আমার কথামত প্রেগ্ন্যাসির ব্যাপারটা কাউকে বলবে না বলে প্রমেস করল,।। যাক এখানে সব স্বার্থপরদের ভিড়ে একটা বোন তো পেলাম,,,।।
কয়েকদিন পরই আবিরের এনগেজমেন্ট ইভেন্ট আয়োজন করা হলো।।মেয়ে আমেরিকার সিটিজেন নাম তরী। কালকেই দেশে ফিরেছে।। ৫ বছর আগে আবির অফিসের কাজে আমেরিকা গেলে সেখানের তার সাথে তরীর পরিচয় হয়।। তরীকে আর তার ফ্যামিলিকে খালামনির খুব পছন্দ হয়ে যায় বিত্তশালীর পরিবারের একমাত্র মেয়ে।। এ বিষয় আবিরের মত জানতে চাইলে উনি উনার মায়ের খুশি সবচেয়ে দামী বলে জানিয়ে দেন।।
আগামীকাল আবিরের এনগেজমেন্ট রাতে আবির আমাকে ফোন দিয়ে বলেন আমি যেন কোনোভাবেই উনার এনগেজমেন্ট পার্টি এটেন্ট না করি ঔ দিন বাবার বাসায় চলে যেতে বলছেন।। বেচারা ভয় পাচ্ছে আমি যদি আবার কোনো হট্টগোল পাকিয়ে দেই।।
যেহেতু আমার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই তাই আবিরের কথাটা রাখতে পারলাম না লুকিয়ে এখানেই থেকে গেলাম।। সন্ধ্যায় বেস রমরমাট পরিবেশ।। গেস্টদের অভাব নেই।। শিল্পপতি আবির চৌধুরীর এনগেজমেন্ট বলে কথা।। রিং এক্সচেঞ্জ হলে সবাই আনন্দে উতফুল্ল হয়ে উঠেন।।নিজেকে মানুষের ভিরে আড়াল করে সব দেখছি ।। সবশেষে শুরু হল কাপল ডান্স।।যে যার মত পার্টনার নিয়ে ডান্স করছে।। আবির তরীকে নিয়ে কাপল ডান্সে মগ্ন।। মন মরা করে দাড়িয়ে আছি বাবার কথা খুব মনে পরছে একমনে বাবার কথা চিন্তা করছি ।। এদিকে নিপা আমার অবস্থা দেখে ভেবেছে আবিরের জন্য মন খারাপ তাই ইচ্ছে করে আমাকে ধাক্কা দেয়।। আমি লুটে গিয়ে আবিরের উপর পড়ি।। সব অন্ধকার লাইটের ফোকাস আমাদের উপর।। উনার রাগি চোখগুলো দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে যাই।। আজকেই আমাকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিবেন নিশ্চিত।। উনি গম্ভীর চেহারায় তাকিয়ে থাকলে আমি আমতা আমতা করে যাওয়ার জন্য যেইনা ফিরেছি অম্নি উনি আমার হাতটা ধরে ঘুরিয়ে উমার বুকের সাথে মিশিয় এক হাত আমার হাতে আর অন্য হাত কোমরে রেখে গানের সাথে তাল মিলাতে থাকেন,,,
চলবে