নাটাই ঘুড়ি পর্ব-৩০

0
609

#নাটাই_ঘুড়ি
।।৩০।।
রিম্মিকে কোথাও দেখা যায় না ইদানিং, সে যেন শামুকের মত গুটিয়ে গেছে খোলের ভেতর। কালচারাল গ্রুপ আর ব্লাড কালেকশন প্রোগ্রামগুলোতে আর তার উপস্থিতি নজরে পড়ে না কারো।
প্রাণপণে সংসার করে রিম্মি, রাঁধে বাড়ে, ঘর দোর টিপটপ রাখে, কাউকে কোনো অভিযোগের অবকাশ মাত্র দেয় না। ক্লাসে যায় না, কারো সাথে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথাটুকু বলে না।
তবে রিম্মির শূন্যস্থান খালি পড়ে নেই, সেই জায়গায় সক্রিয় হয়েছে মুশফিক। রিম্মির যাবতীয় চ্যারিটি প্রোগ্রাম, ব্লাড কালেকশন প্রোগ্রাম যেগুলোতে রিম্মি আগে নিয়ে গিয়েছিল মুশফিককে, রিম্মি না গেলেও মুশফিক এখন নিয়মিত হাজিরা দেয় সেগুলোতে।
শুক্রবার যথারীতি বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়ার কথা, বুধবার রুবেল ফোন করে বলল, “একটা সমস্যা হয়ে গেছে যে?”
“কী সমস্যা?”
“আতিক ভাই তো চাকরি ছেড়ে দিয়েছে! এই ফ্রাইডে নিয়ে যাওয়ার মত কোনো ডাক্তার পাচ্ছি না!”
মুশফিক সংক্ষেপে বলল, “আমি দেখছি।“
সেদিন বাসায় ফিরে ছয়তলার ডাক্তার মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করল মুশফিক। এই শুক্রবার ডিউটি না থাকায়, আর কিছুটা কৌতূহল বশত রাজি হয়ে গেল সে।
শুক্রবার খুব ভোরে রওনা দিয়ে দিল ওরা। রেল স্টেশন যাওয়ার পথে পপি জানতে চাইল, “এটার খোঁজ পেলে কী করে তুমি?”
“রিম্মি আপুর কাছ থেকে”, উত্তর দিল মুশফিক।
“ওই যে ওই মেয়েটা? সেদিন ওয়ার্ডে দেখলাম যে তোমার সাথে?”
“হ্যাঁ সেই মেয়েটাই।“
“ইন্টারেস্টিং তো!”
“হ্যাঁ রিম্মি আপু অনেক ইন্টারেস্টিং। কত কাজ যে করে সারা দিন। কত জায়গায় যে কত এক্টিভিটি ছিল আপুর!”
“ছিল মানে? এখন নেই?”
মুশফিক কিছুটা চুপসে গিয়ে বলল, “না, এখন আর দেখি না তো। এখন আর আসে না।“
“কেন?”
“কী জানি। বাসায় সমস্যা মনে হয়।“
পপি অনেকটা স্বগতোক্তির মত করে বলল, “তাই হবে!”
আগের বারের মতই রাস্তায় দোকানটা থেকে এক কার্টুন বিস্কিট কিনে নিল মুশফিক। কার জন্য, পপি জিজ্ঞেস করাতে বলল, “রিম্মি আপু নাকি রান্না করেও নিয়ে খাবার নিয়ে যেত, আমি তো আর তা পারছি না, খালি হাতে কীভাবে যাই!”
পপি গত বছরই পাস করেছে, মাত্রই কিছু দিন আগে ইন্টার্ন শেষ হলো তার, এখন অনারারি করছে নিজের মেডিকেলেই। কয়েক জায়গায় এপ্লাই করেছে, কোথাও এখনো ডাক পড়েনি।
বৃদ্ধাশ্রমের রোগীদের দেখে চোখ ছল ছল করতে লাগল তার। লাঞ্চ আওয়ারে মুশফিক আর রুবেলের পাশে বসে খেতে খেতে সে ঠিক করে ফেলল, এই এনজিওতেই এপ্লাই করবে।
মুশফিক খুশি হয়ে বলে উঠল, “রিম্মি আপু শুনলে খুব খুশি হতো!”
পপি ওর দিকে স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, “তোমার রিম্মি আপুকে তুমি খুব পছন্দ কর, তাই না?’
মুশফিকের চোখ মুখ লাল হয়ে গেল মুহূর্তেই। সে বিপন্ন মুখে বলল, “আরে পছন্দ করতে যাব কেন? ম্যারিড একটা মেয়ে…”
“তাই?”
পপি মুশফিকের ওপর থেকে চোখ সরাচ্ছে না। রুবেলের খাওয়া শেষ, সে উঠে হাত ধুতে গেছে।
মুশফিক ক্রমাগত মনে মনে সৃষ্টিকর্তার নাম স্মরণ করে যাচ্ছে আর প্রার্থনা করছে রুবেল যেন এই মুহূর্তে ফিরে না আসে। পপি বাঁকা হাসি হেসে বলল, “আমার তো ধারণা তুমি তোমার রিম্মি আপুর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছ!”
“যতসব বাজে কথা!”
খাওয়া অসমাপ্ত রেখেই উঠে পড়ল মুশফিক। পপি বলল, “তুমি নিজেই ভেবে দেখ। সে খাবার নিয়ে আসত বলে তুমি বিস্কিট কিনে আনছ।“
রুবেল ফিরে এসেছে। পপি বলল, “রিম্মি মেয়েটা আর আসে না কেন?”
“ও তো অসুস্থ!”
“তাই নাকি? কী হয়েছে ওর?”
“টাইফয়েড হয়েছিল, কয়েক দিন ক্লাসে আসেনি। আর টাইফয়েডের টেস্ট করতে গিয়েই ধরা পড়েছে শরীরে এনিমিয়া আছে, ওর নাকি আগে থেকেই বুক ধড়ফড় করত, এর আগে বলেনি কাউকে। ভিটামিন ডি এর লেভেলও নাকি কম। ডাক্তার ভিটামিন ডি এর কোর্স দিয়েছে, ক্যালসিয়াম খেতে বলেছে। পরিশ্রম করতে নিষেধ করে দিয়েছে।“
“এত কিছু হয়ে গেল, তুমি তো আমাকে কিছুই বললে না রুবেল ভাই?”
অভিমানে গলা কাঁপছে মুশফিকের। রুবেল থতমত খেয়ে বলল, “আরে, রিম্মিই তো বলতে মানা করল! কিরা কসম কাটিয়ে নিয়ে বলল তোমাকে যেন কিছুই না বলি!”
“এটা কোনো কথা হলো? কেন!”
“রিম্মির ধারণা এসব শুনলে তুমি ওকে দেখতে অস্থির হয়ে ওর বাসায় চলে যাবে! আর ও শ্বশুরবাড়িতে ঝামেলায় পড়ে যাবে। বোঝোই তো, একটা মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে একটা ছেলে গিয়ে উপস্থিত হলে সবাই সেটা ভালোভাবে নেবে না!”
“আমি কি বাচ্চা নাকি?”
পপি হাত তুলে বলল, “ঠিক আছে ঠিক আছে, আমিও যাব রিম্মিকে দেখতে! তোমাদের মুখে ওর এত কথা শুনে আমারও ভীষণ দেখতে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে ওকে! আমি গেলে তো আর প্রবলেম নেই? আমি তো মেয়ে, তার ওপরে পাস করা ডাক্তার!”
“আপনি যাবেন আপু? তাহলে তো আর কোনো সমস্যাই রইল না! আমরা তিনজন মিলেই যাব তাহলে!”
(পরের পর্বের সময় বলতে পারছি না। যখন ভালো লাগবে লিখে পোস্ট করব ইন শা আল্লাহ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here