নাটাই ঘুড়ি পর্ব-৩৬শেষ পর্ব

0
2698

#নাটাই_ঘুড়ি
(শেষ পর্ব)
আজকে বিকেলে নাইমার গায়ে হলুদ, বাসাতেই হচ্ছে ছাদে প্যাণ্ডেল খাটিয়ে। ভোরে উঠে নাস্তা সেরেই রেডি হচ্ছে মীরা, নীরা, নাইমা, আজকে পার্লারে যেতে হবে, সকাল সকাল না গেলে দেরি হয়ে যাবে।
সেই ফ্ল্যাটের টাকা ফিরিয়ে এনে দেবে এই শর্তে বড় চাচাকে ক্ষমা করা হয়েছে, লাভের মাঝে লাভ হয়েছে এই চুরি ধরা পড়ার কারণে সেই হাঁকডাক কমেছে বড় চাচির। বড় চাচার ভাগের এক টুকরো জমি বন্ধক রেখে শিহাবকে দোকান কিনে দেওয়া হয়েছে, আপাতত এইটুকুই তার শাস্তি।
বিয়ের কনের খুশি প্রকাশের নিয়ম নেই, তবু বোঝা যায়, নাইমার মনের ভেতর চেপে বসে থাকা সারা পৃথিবীর প্রতি যে অভিযোগের পাহাড় আর এক আকাশ সমান তিক্ততা বোঝা, সেটা এখন আর নেই। ছোট খাটো রসিকতায় ইদানিং খুব হাসছে সে, চেহারায় অন্যরকম উজ্জ্বলতা যেন ভেতর থেকেই দ্যুতি ছড়াচ্ছে।
মনের ভেতরে দমচাপা সব না পাওয়ার বিষণ্ণতার কালো মেঘের দল এক দমকা হাওয়ায় সরে গেছে বুঝি। বহু বছর ধরে জমতে থাকা চোখের নিচের কালো দাগ এক দিনে তো সরবে না, তবে একটু হালকা হয়েছে আজকাল।
সত্যিই, নানান চিন্তায় ব্যস্ত থেকে একা একা নির্ঘুম রাত জাগা চোখের নিচে যেভাবে কালো থাবা বসায়, ফোন কিংবা মেসেঞ্জারে অন্য প্রান্তের সাথে স্বপ্নমাখা কথোপকথনের সাথে আনন্দময় রাত্রি জাগরণ সেভাবে থাবা বসায় না কেন, এটা নিয়ে একটা গবেষণা হওয়া এখন সময়ের দাবি।
ফুপির বিয়ে উপলক্ষ্যে মুশফিকও ঢাকা থেকে চলে এসেছে আগের দিনই, সে একটু মনমরা। বড় চাচার কীর্তি প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার কারণে বাসার সবার সামনে পালিয়ে পালিয়ে থাকছে লজ্জায়।
কেউ তাকে লক্ষ্য করছে না তেমনভাবে। তবে মীরা নিজে ঠিক করে রেখেছে, ছোট ভাই মাশুককেও বুঝিয়েছে, বড়দের মধ্যে যাই হোক না কেন, তার আঁচ যেন তাদের ভাইবোনদের মধ্যে না আসে।
তাই মীরা মাশুক আগের মতই স্বাভাবিক ব্যবহার করছে মুশফিক আর নীরার সাথে। বড় চাচা টাকা চুরি করেছে করুক, তাদের ভাই বোনদের দোষ কী?
ইমরুল আর তিথিও এসেছে, তিথি মিশে গেছে বাসার সবার সাথে। আপাতত সে গতকাল থেকেই কোমরে ওড়না পেঁচিয়ে ঘর বাড়ির আনাচে কানাচে জমে থাকা ধুলোবালি পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত। শুধু ধুলো নয় মীরার মনে হলো ছোট চাচা চাচীর আসার পরে অনেক দিন ধরে এ বাড়িতে জমে ওঠা সব নিরানন্দও বিদায় হবে এইবার।
শিহাবদের বাসা থেকে শিহাব চলে এসেছে সকালে, ছাদে ডেকোরেটরের দলের সাথে প্যাণ্ডেলের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে ইমরুল আর শিহাব। ফাঁকে ফাঁকে শিহাবের চোখাচোখি হচ্ছে নীরার সাথে, ইমরুলের চোখ এড়াল না সেটা।
ইমরুলের সামনে শিহাব নীরার দিকে ভালো করে তাকাচ্ছিল না। তবে নীরা চিরকালের সাহসী।
নীরা অনায়াসে গিয়ে শিহাবকে বলল, “ভাইয়া দাদার আপনার সাথে একটা কাজ আছে, আপনি একটু নিচে আসেন।” শিহাব কিছুক্ষণ ইতস্তত করছিল।
ইমরুল বলে উঠল, “যাও না। কী জন্য ডাকল দেখে আসো। আমি একাই পারব এখানে।”
মুখ বেজার করে নিচে নামল শিহাব। সিঁড়ির ল্যাণ্ডিং এ তাকে চেপে ধরে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরল নীরা।
“এমন চোরের মত চুল কেটেছেন কেন?”
“চোরের মত!”
“দেখে মনে হচ্ছে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন, শাস্তি দেওয়ার জন্য কেটে দিয়েছে!”
শিহাব বলল, “ছাড়ো আমাকে, দাদা কীসের জন্য ডেকেছেন, দেখে আসি!”
“দাদা ডাকেনি, আমি ডেকেছি! দিকভ্রান্ত নাবিক কোথাকার!”
শিহাব নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আবারও ছাদে উঠে গেল দ্রুত পায়ে। নীরা নিচে নেমে গেল হাসতে হাসতে।
পার্লার থেকে কচি কলাপাতা সবুজ শাড়ী পরে ফুলের গয়নায় সেজে আসা নাইমাকে আজ আর চেনা যাচ্ছিল না। যেন বিষণ্ণতার মূককীট কেটে আচমকা বেরিয়ে এসেছে অপরূপ কোনো প্রজাপতি।
মীরা মহা ব্যস্ত, তার বন্ধুদের নিয়ে সে নাচ তুলেছে। নীরা আর তার বন্ধুরাও আছে সেই নাচে।
শিহাবকে সেই নাচে যোগ করা হয়েছে গত পরশুদিন, শেষ মুহূর্তে আসা মুশফিক আর ছোট চাচা চাচীকেও জোরাজুরি করে নেওয়া হয়েছে সেই নাচে। কাল গভীর রাত পর্যন্ত সেই নাচের প্র্যাকটিস চলেছে।
মুরুব্বিরা গায়ে হলুদ দেওয়া শেষ করার পর নাচ করা হবে। পার্লার থেকে ঘুরে আসার পর নাইমাকে একা বসিয়ে রেখে মীরা নীরা তিথিকে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।
মেহমানরা চলে আসার আগেই শেষ মুহূর্তের প্র্যাকটিস সেরে ফেলতে হবে। একদম সময় নেই।
একা ঘরে বিছানায় চুপচাপ বসে ছিল নাইমা, দরজাটা ফাঁক হলো খুব আস্তে। দরজা খুলে উঁকি দিল ছোট একটা মুখ।
“আন্টি!”
হাসিতে উদ্ভাসিত হলো নাইমার মুখ। “আহনাফ!”
“ভেতরে আসব?”
“আয় আয়!” ব্যস্ত হয়ে ডাকল নাইমা।
আহনাফ ভেতরে এসে বিছানায় উঠতে উঠতে বলল, “তোমাকে তো খুব সুন্দর লাগছে, আন্টি!”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ!”
“কার সাথে আসছিস তুই?”
“দাদার সাথে!”
দরজা খুলে ব্যস্ত ভঙ্গিতে ঢুকল বড় ভাবী, মেজ ভাবী। ‘চল চল, গেস্টরা এসে পড়ছে। তোমাকে প্যাণ্ডেলে নিয়ে বসাতে হবে।“
নাচের প্র্যাকটিস ছেড়ে নীরা মীরা তিথিও চলে এসেছে। ক্যামেরা ম্যান রেডি।
নাইমার মাথার ওপর ধরা হলো লাল চাঁদোয়ার মত ওড়না। ক্যামেরা ম্যানের ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী চার পাশে দাঁড়িয়ে চার কোণা ধরে দাঁড়াল নীরা, মীরা, তিথি আর মীরার বান্ধবী।
আহনাফ কখনো এত সাজগোজ করা মেয়ে এত কাছ থেকে দেখেনি, আসলে সে যখন থেকে বুঝতে শিখেছে ততদিনে তার আম্মু আব্বুর ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার কারণে তার আব্বু কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে যেত না। তাই সে অবাক বিস্ময়ে নাইমার আঙুল ধরে তার প্রায় গা ঘেঁষেই দাঁড়িয়ে ছিল।
ফটোগ্রাফার কিছুটা বিরক্ত ভঙ্গিতে বলল, “এই বাচ্চাটা কার, এই বাচ্চাটা সরান, ভিডিও ভালো আসবে না তো!”
কাউকে সরাতে হলো না, আহনাফ নিজেই নাইমার আঙুল ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়াল আহত, অভিমানী মুখে।
“হ্যাঁ এইবার ঠিক আছে ফ্রেমিং, আপনারা এবার আস্তে আস্তে হেঁটে আসেন!”
কিন্তু নাইমা হাঁটল না, আসলে হাঁটতে পারল না, তার চোখ পড়ল ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে থাকা শিশুটির দিকে। লাল ওড়নার চাঁদোয়ার তল থেকে বেরিয়ে এসে, একটি পারফেক্ট ফ্রেম ভেঙে দিয়ে দ্রুত এগিয়ে গেল হলুদের কনে নাইমা।
শক্ত করে আহনাফের হাত ধরে রেখে ক্যামেরা ম্যানকে বিস্ময়ের শেষ সীমায় পৌঁছে দিয়ে বলল, “ও আমার ছেলে, আমার সাথেই থাকবে। আহনাফ তুমি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে সুন্দর করে হাসো তো আব্বু, এখন ভিডিও হবে আমাদের!”
আজকের ড্রেস কোড কলাপাতা সবুজ, কলাপাতা সবুজ পাওয়া যায়নি আহনাফের মাপে, তাই গাঢ় সবুজ পাঞ্জাবি পরেই এসেছে সে। সব অতিথিরা অবাক হয়ে দেখল হলুদের কনে ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে এসে উঠোনে সাজানো প্যাণ্ডেলে এসে বসল, আর তার সাথে সাথে রইল সবুজ পাঞ্জাবি পরা এক শিশুও।
ডেকোরেটরের কাছ থেকে আনা উঠোনে পেতে রাখা চেয়ারগুলোতে ততক্ষণে এসে বসেছে আরো কেউ কেউ আশেপাশের প্রতিবেশী, ফিসফাস করছে নাইমার সাথে বসে থাকা শিশুটির পরিচয় নিয়ে। কেউ কেউ আফসোস করছে নাইমার ভাগ্য নিয়ে।
কিছু কিছু কানে গেল নাইমারও। তাই সে গুছিয়ে বসার পর যখন ফটোগ্রাফার এসে আবারও নম্রভাবেই বলল, “ম্যাডাম স্টেজে আপনার কয়েকটা একা ছবি তুলব না?”
আহনাফ সবই বোঝে, এ কথা বলার সাথে সাথে সে দাঁড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম করছিল। কিন্তু সামনে বসা মহিলাদের ওপরে এক বিন্দুও বিশ্বাস নেই নাইমার, এইটুকু বাচ্চাকে তারা বিভিন্ন প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত করতে পারে।
নাইমা তাই আহনাফকে আঁকড়ে রেখেই বলল, “না, আমার একা ছবি লাগবে না। আমার সব ছবি আমার ছেলের সাথেই হবে।“
এ কথায় আহনাফের মুখে ছড়িয়ে যাওয়া দ্যুতি আলো ছড়াল নাইমার মনেও। নাইমা সামান্য হেসে হলুদের জন্য সামনে রাখা রকমারি খাবার, মিষ্টি, ফল, পুডিং, কেক দেখিয়ে আহনাফকে জিজ্ঞেস করল, “কোনটা খাবি? যা মন চায় খেয়ে ফেল! কেউ কিছু বললে বলবি, আমার মায়ের হলুদ, আমি খাব না তো কে খাবে!”
হলুদ হয়নি ইমরুল আর তিথির, আজ তাই মীরার বুদ্ধিতে সাধ মিটিয়ে পার্লার থেকে সেজে নিয়েছে সে। পরিকল্পনা আছে নাইমার হলুদ শেষ হয়ে গেলে সেই স্টেজে বসে ইমরুল আর তিথিও হলুদের সাজে সেজে কিছু ছবি তুলে নেবে চট করে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেখানোর জন্য কিছু স্মৃতি রাখতে হবে তো!
ক্যামেরা ম্যানকে সাইড করে এনে ফাঁকে ফাঁকে রোমান্টিক ফটো শ্যুট সেরে নিচ্ছে তারা দুজন, মুরুব্বিরা দেখেও না দেখার ভান করছেন। তারপরও তারা সহজ হতে পারছিল না দেখে বিকেল মরে যাওয়ার আগেই ইমরুল আর তিথিকে ক্যামেরা ম্যানসহ ছাদে টেনে নিয়ে এসেছে মীরা, এখানে এখনো অতিথিরা আসেনি, ছাদের একটা কোণা ফাঁকা আছে, নিমগাছের ডাল এসে ছুঁয়ে দেয় যেখানে। ইমরুল লজ্জা পাচ্ছে, ফটোগ্রাফার বলল, “আরেকটু ক্লোজ হন স্যার, দুজন দুজনের দিকে একটু তাকান!”
তিথি ফিক করে হেসে ফেলল, শেষ বিকেলের রঙিন আলোয় বড় মায়াবী উঠল ছবিটা। এমন ছবি কোটিতে দুটো ওঠে না।
ফটোগ্রাফার মনে মনে ভাবল, এই ছবিটা তাদের ফেসবুক পেইজের কাভার ফটোতে রাখতে হবে। আর ইমরুল সেই মায়াবী হাসির দিকে তাকিয়ে নিজে থেকেই এক হাতে জড়িয়ে নিল তিথিকে, তিথির বাহুতে হাত স্পর্শ করে মনে মনে নিজের কাছে নিজেই নতুন করে প্রতিজ্ঞা করল, আজ থেকে আর কখনো রুম্পার কথা ভাববে না সে, কিছুতেই ভাববে না!
এতকিছু এত আনন্দের মধ্যেও মুশফিক এক কোণায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে বিষণ্ণতার প্রতিমূর্তি হয়ে, কিছু দিন সময় লাগবে তার রিম্মিকে ভুলে যেতে। কিন্তু ভুলে যাবে নিশ্চয়ই, জীবন ভুলিয়ে দেবে সব।
সময় সারিয়ে দেয় সব ক্ষত, মুছে দেয় সব নিঃশব্দ অশ্রু। আরো ছয় মাস কিংবা এক বছর পর মুশফিকের জীবনে নতুন কোনো প্রেমিকা আসবে নিশ্চয়ই, যে তার সাথে মানানসই ব্যাচমেট কিংবা জুনিয়র হবে, যাকে নিয়ে কোনো জটিল হিসাব নিকাশ করতে বসবে না সমাজ।
অনুমান করা যায়, সেই মেয়েটির কিছু না কিছু একটা রিম্মির সাথে মিলে যাবে খুব করে। হয়ত রিম্মির মত ঘুরে তাকানো কিংবা হাসিটা, কিংবা এক ঢাল চুল! কিছু না কিছুতে তো মিল থাকবেই।
মানুষের মন বড় রহস্যময়, ভুলে যাওয়া ভালোবাসাকেও সে খুব যত্ন করে ঠাই দিয়ে রাখে মনের কোনো অচিন কুঠুরিতে।
রূম্পা কিংবা রিম্মির পরবর্তী গল্পটা আমরা জানি না। সব ঘুড়ি কি নাটাইয়ে ফিরে আসতে পারে?
কিছু কিছু ঘুড়ি সুতো কেটে উড়ে চলে যায় দূরে দূর দূরান্তে মুক্ত আকাশে। কোথায় হয় তাদের ঠিকানা, কোথায় তারা খুঁজে পায় আশ্রয়, সব কি আমরা জানতে পারি?
তবে আমরা আশা করে নেব কিছুদিন পর সঠিক সময় এলে রূম্পাও খুঁজে পাবে তার সঠিক মানুষটিকে, যে তাকে নির্দ্বিধায় ঘর দেবে, আশ্রয় দেবে! রিম্মিও পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে নিশ্চয়ই!
তার ছোট বোনের বিয়ে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর, খুলে ফেলে দেবে বিয়ে নামের প্রহসনের মিথ্যা শিকলটা, নিজের মত করে থাকবে কিংবা সেও খুঁজে পাবে কোনো মনের মানুষ? আমরা জানি না।
আমরা শুধু অনুমান করতে পারি, আর আশা করতে পারি সব মঙ্গলময় হবে।
বিকেল ফুরিয়ে সন্ধ্যা নেমে আসছে, ডেকোরেটরের লাইটগুলো জ্বলে উঠতে শুরু করেছে একে একে। সারা বাড়ি জুড়ে জ্বলতে থাকা মরিচ বাতির ঝলমলানি সবাইকে মনে করিয়ে দিল আজকে এই বাড়ির একটি দুঃখী মেয়ের ঘর বাঁধবার স্বপ্ন পূরণের সূচনা হতে যাচ্ছে।
সবার হাতের হলুদ ছোঁয়ার আশির্বাদ নিতে নিতে পাশে বসে টুক টুক করে কেক পুডিং ফল মিষ্টি খেতে থাকা আহনাফের হাসি মুখ দেখে নাইমারও মনে হলো, তার জীবনের এই আলোকসজ্জা নিভবে না কোনো দিনও। এমনকি ফটোগ্রাফারেরও মনে হতে লাগল, এর চেয়ে চমৎকার ফ্রেম আর হতেই পারে না বুঝি।
যদিও ফটোগ্রাফার জানে, এই মনে হওয়াটাও আসলে বিভ্রম। প্রকৃতি মাঝে মাঝে এরকম কিছু কিছু বিভ্রান্তিকর দৃশ্য তৈরি করে, যেন মানুষ সুতো কেটে উড়ে যাওয়ার কথা কখনো না ভাবে।
যত দূরেই যাক না কেন, দিন শেষে যেন ফিরে আসে ভালোবাসার মায়াবী সুতোয় জড়িয়ে রাখা সংসারের নাটাইয়ে।
(সমাপ্ত)
(শেষ পর্বটা অনেক দিন আগেই লিখে রেখেছিলাম, লিখে কিছুক্ষণ কেঁদেছিলাম, কেন জানি না। আজকে পোস্ট করার সময় পড়ে আবার কাঁদলাম।
ধারাবাহিকটা শেষ, জানি আজকে অনেকেই পেইজ আর গ্রুপ আনফলো করে দেবেন, তাই কিছু কথা বলে যাই, জানি অনেকের ভালো লাগবে না।
কোনো গল্প অনলাইনে দেওয়া মানেই সেটার সর্বনাশ করা, সেটা আর বই করা যাবে না, করলেও আপনারা কিনবেন না। অথচ এমন না যে অনলাইনে দেব বলে আমি কোনোটা অবহেলা করে কিংবা কম যত্ন নিয়ে লিখেছি। শুধুমাত্র রূম্পা এবং তার বাসার বর্ণনাটুকু জীবন্ত করে লিখব বলে ঢাকা শহরের একটি এলাকায় আমি পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখেছি। এত কষ্টের, এত পরিশ্রমের লেখা পেইজে গ্রুপে দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল পেইজটা চালু রাখা, যেন আপনারা চলে না যান, অন্তত প্রি অর্ডার পোস্ট চলা পর্যন্ত সাথে থাকেন। মানুষের সবকিছু পরিকল্পনা মত হয় না, প্রি অর্ডার লিংক আসতে অনেক দেরি হয়ে গেল, নয়ত আমি পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম যে প্রি অর্ডার চলা পর্যন্ত গল্পও চলবে।
বইয়ের পোস্টে আপনাদের রেসপন্স থাকে না, অনলাইনে ফ্রি পড়তে চায় সবাই, কোনো কারণে পোস্ট করতে দুএকদিন দেরি হলে বিরক্তি প্রকাশ করেন, খোঁচা দিয়ে বলেন বই করব কিনা। যদি করিও, তাতেও কি সমস্যা? প্লট সাজাতে কষ্ট হয়নি? আবেগের লাইনগুলো লিখতে সময় যায়নি? পরিশ্রম হয়নি?
তাহলে কি আমরা আর লিখব না? অনলাইনে থাকবে সব? থেকে থেকে হারিয়ে যাবে?
“স্বপ্নচূড়া” যদি ভালো রেসপন্স না পাই, খুব সম্ভব অনলাইনে পোস্ট করা এটিই আমার শেষ ধারাবাহিক গল্প হবে, আর শেষ বইও। বার বার প্রকাশকের লস করানোর কোনো অর্থ হয় না।
মন খারাপ, বিষণ্ণতা, উদ্বেগ সব মিলিয়ে কথাগুলো লিখে ফেললাম, কেউ কিছু মনে করবেন না প্লিজ। সবাই ভালো থাকবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here