নানান বরণ মানুষ রে ভাই পর্ব-৩২

0
990

# নানান বরণ মানুষ রে ভাই
৩২ তম পর্ব
বড় গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা

দরজা খুললেন আম্মুই। আমাকে দেখে একটা বড়সড় ঝাঁকি খেলেন। কয়েক মুহূর্তের জন্য মুখের অভিব্যক্তি পাল্টালো।তারপরে আবার সেই নিস্পৃহ মুখ, শীতল দুটি চোখ।

আমার কিন্তু সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। একই শহরে থেকে পাঁচ বছর পরে জন্মদাত্রীর সাথে দেখা। কি রোগা হয়ে গেছেন আম্মু! কত্তোগুলো চুল পেকে গেছে। অনেক ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে আম্মুকে।

ভীষণ জড়তা আমাকে আড়স্ট করে রেখেছিল অল্পক্ষণ। তারপরে আবিস্কার করলাম আমি আম্মুকে জাপটে ধরে চিৎকার করে কাঁদছি।

” ভেতরে এসো।দরজার বাইরে সিন ক্রিয়েট কোরো না। রাস্তার লোকে দেখবে। ”

হায় আল্লাহ ! এতোকাল পরে দেখা! তাও আম্মু নির্বিকার।

নাহ্,আর অভিমান নয়। আমিতো সব সত্য জানি। আমার আম্মু অসুস্থ। অস্বাভাবিক। আর দশটা মানুষের মতো নয়।

ভেতরে ঢুকেও আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে থাকলাম। কান্নাটার দরকার ছিল। আমার বহু বছরের কষ্ট, অপমান,অভিমান,রাগ,ক্ষোভ সব কান্না দিয়ে ধুয়ে গেলো।

আব্বু ছুটে এসেছিলেন। আমাকে দেখে থমকে গেলেন। একটু ভয়ও পেলেন,আমি কোনো খারাপ সংবাদ বয়ে এনেছি কিনা।

একটু পরে আম্মু বললেন,”এবারে ছাড়ো। হাতমুখ ধুয়ে কিছু খাও।”

“তোমাকে ছাড়বো না আম্মু,সারাজীবন এভাবে ধরে থাকবো। ”

আম্মু থমকে গেলেন। তারপরে বললেন,”হঠাৎ আম্মুর প্রতি এতো দয়া?আম্মু খারাপ মানুষ। তাকে এতো দয়া করতে নেই। ”

“আম্মু,তুমি খুব ভালো,খুব, খুব। আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি আম্মু। ”

আম্মু এবারে ঘাবড়ে গেলেন। তাঁর সম্ভবত মনে হচ্ছে আমি খারাপ কিছু করে ফেলেছি, এখন উদ্ধার পাওয়ার জন্য আম্মুকে হাত করার চেষ্টা করছি।

“তোমার কি সমস্যা, স্থির হয়ে বসে আমাকে বলবে? এমনি তো আসো নি আমার কাছে। কি হয়েছে, সেটা দয়া করে বলো।”

আব্বু নরম গলায় বললেন, “বুবলি,ভেতরে যা। হাতমুখ ধুয়ে নাশতা করে নে। ময়না, বুবলি এসেছে।চটপট করে ওর পছন্দের কিছু করো।। ”

আমি আম্মুকে ছাড়লাম। তারপরে মাথা নিচু করে নিজের ঘরে ঢুকলাম। পিছনে আব্বু।

ওমা! ঘরটা ঠিক আগের মতো আছে। ঝকঝকে পরিষ্কার। সেই খাট,সেই পড়ার টেবিল, সেই চেষ্ট অব ড্রয়ার।শুধু একটা বড় ধরণের পরিবর্তন হয়েছে। সারা ঘরে আমার বিভিন্ন বয়সের ছবি। টেবিলে, দেওয়ালে। আমি নামাজ পড়ি, ঘরের এক কোণায় ছোট্ট টেবিলের উপরে লাল টুকটুকে সুন্দর একটা জায়নামাজ। ওয়াড্রবের উপরে কোরান শরীফ। পাশে একটা রেহেল। ঘরের পশ্চিম দেওয়ালটা ফাঁকা।

আব্বু বললেন,”তুই এসেছিস আম্মু,খুব খুব ভালো লাগছে। তোর মা তোদের তিন বোনের ঘর প্রতিদিন দিন নিপাট করে গুছিয়ে রাখে। আম্মুর উপরে আর রাগ রাখিস না মা।”

চোখ মুখ জ্বালা করছিলো খুব। হাতমুখ ধুয়ে আবার বাইরের ঘরে আসলাম। আম্মুু বড় সোফার এক পাশে চুপ করে বসে আছেন। আমি আম্মুর কোলে মাথা দিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লাম। দাদী,নানাভাই,নানু,মেজ আপা,খালাদের কোলে এই ভাবে বিস্তর শুয়েছি, কিন্তু বুদ্ধি হওয়ার পরে আব্বু-আম্মুর কোলে কখনো নয়।

আম্মু কাঠ হয়ে বসে আছেন বুঝতে পারছি। দুই হাতে আম্মুর কোমর জড়িয়ে ধরে বললাম,” আমি কোনো বিপদে পড়ে তোমার কাছে আসিনি আম্মু।তোমাকে দেখার জন্য বুক ফেটে যাচ্ছিলো। অনেক কষ্ট করে তোমাকে ছাড়া পাঁচ বছর কাটিয়েছি আম্মু। আর পারলাম না। তোমাকে আমি কতো ভালোবাসি,তা নিজেই জানতাম না।”

আম্মু নরম গলায় বললেন,”চল্, খেতে চল্।”
খাবার টেবিলে আব্বু-আম্মু -আমি। আনন্দের আতিশয্যে আব্বু ক্রমাগত নানা ধরণের কথা বলে যাচ্ছেন। আম্মু চুপচাপ। উদাস। কি ভাবছেন, কে জানে!

গতরাতে নানুর বাসায় সিদ্ধান্ত হয়েছে,আজ আমি বাসায় আসবো। আমারও খুব ইচ্ছা করছিল বাসায় আসতে, সেই সাথে দ্বিধা -সংকোচও কম ছিলো না। সাথে কাউকে আসতে বলেছিলাম। মেজ আপা, ছোট মামা বা খালাদের কেউ। সবাই না করে দিলেন। বললেন,”আগে একা যা। যেন তোর মা মনে করেন তুই নিজের থেকেই তাঁর কাছে গিয়েছিস। ”

“আম্মু যদি বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন?প্রবল সম্ভাবনা আছে এমন কথা বলার।”

“যেটাই বলুক, চড় থাপ্পড় মারুক,লাথি দিক, মাটি কামড়ে পড়ে থাকবি।”

ছোট মামার কথায় এতো দুঃখেও আমরা হেসে ফেলেছিলাম। ছোট খালা বলেছিলেন, “আমি বুড়ি হয়ে গেলাম,দুই বাচ্চার মা, বছর খানেক আগে আপার হাতে কষে এক চড় খেয়েছিলাম তুতুনকে তোর খালুর কাছে একা বাসায় রেখে আসার জন্য। ”

আজ ছুটির দিন। নাস্তা খাওয়ার পরে আম্মু নিজের বিছানায় যেয়ে শুলেন। আব্বু উদ্বিগ্ন গলায় জিজ্ঞেস করলেন, “শরীর খারাপ লাগছে? মাথা ব্যথা?”
আম্মু মাথা নাড়লেন। শরীর খারাপ লাগছে না। আব্বু আম্মুর পালস দেখলেন,ব্লাড প্রেশার মাপলেন। প্রেশারটা বেশ বাড়তি। নাস্তার আগে-পরে বেশ কটা ওষুধ আম্মুকে খেতে দেখেছি। আব্বু হাতে দিচ্ছিলেন, আম্মু খাচ্ছিলেন।

আব্বু বললেন,”একটু ঘুমাও। কাল রাতেও ঠিকঠাক ঘুমাও নি।”
আম্মু বললেন,”হ্যাঁ, একটু ঘুমাই। তুমি বুবলিকে টাইম দাও। বুবলি, আমি একটু ঘুমাই।তুই চলে যাস না যেন। তুমি ময়নাকে রান্নার কথা বলে দাও। বুবলি যেগুলো পছন্দ করে,সেগুলো যেনো রান্না করে। কি যে শুকিয়ে গেছে মেয়েটা।”

আম্মু ঘুমিয়ে পড়লেন। আব্বু ময়না খালাকে কি সব বলে আবার ফিরে আসলেন।
আমি ঘুমন্ত মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। পৃথিবীর সব ক্লান্তি জমা হয়েছে আম্মুর মুখে।

আব্বু নীচু গলায় বললেন,”তুমি রেস্ট নাও মা। চোখ দেখে মনে হচ্ছে তোমারও ঘুম পেয়েছে। ”

সত্যি ঘুম লাগছিল। কাল সারারাত ঘুমাতে পারিনি। শুধু মনে হচ্ছিল, আম্মু খুনী ! আম্মুকে দেখলে বুঝা যায়,আম্মু প্রচন্ড রাগী।কিন্তু তাই বলে খুন? আম্মু যে খুনী,সেটা কি জানে আম্মু?মনে আছে কিছু? মেজ আপা তার বাসায় চলে গিয়েছিল। আমি থেকে গিয়েছিলাম নানুর বাড়িতে। রাতে মেজ খালার সাথে ঘুমিয়েছিলাম।

“আচ্ছা খালা, দাদী আর আম্মু শুধু বাসায়, অন্য কেউ নেই, এমন তো অনেক ঘটেছে। আম্মু তো দাদীকেও মেরে ফেলতে পারতো! আব্বুকেও।”

“তোর মায়ের রোগ বেশির ভাগটাই ভালো হয়ে গেছে। তাছাড়া তার চিকিৎসা তো কখনো বন্ধ হয়নি। এখন পর্যন্ত নানা ওষুধ খেতে হয়। রেগুলার কাউন্সেল করা হয়। বিয়ের পর থেকে ডাক্তার-ওষুধ সবকিছুর দায়িত্ব তোর আব্বু নিয়ে নিলেন। এখন পর্যন্ত সেই দায়িত্ব একশো ভাগ নিষ্ঠার সাথে পালন করছেন। অসাধারণ একটা মানুষ। আপা তার ভালোবাসার মানুষদের মারেনি। কাজেই তোর আব্বুকে মারার প্রশ্নই উঠে না। তোর দাদীকে নিয়ে দুলাভাই আর আমরাও খুব টেনশনে থাকতাম, আমরা কেউ না কেউ আপার সাথে সেঁটে থাকতাম,রাতে দুলাভাই, দিনে আমরা। যদিও এই আশংকা অমূলক ছিল। ”

আব্বু-আম্মুর ঘর দিনের বেলাতেও অন্ধকার। আব্বু দরজা -জানালার সব পর্দা টেনে দিয়েছেন, আম্মু যেন শান্তিতে ঘুমাতে পারেন। দরজার পর্দা সামান্য ফাঁক করে দেখি,আম্মু অঘোরে ঘুমাচ্ছেন, আব্বু আম্মুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।

দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে আমার ঘুম ভাঙলো আম্মুর ডাকে। “কি রে বুবলি, হোষ্টেলে যেয়ে তুই দেখি অলস হয়ে গেছিস।এতো অল্প বয়সে দিনের বেলায় কেউ ঘুমায়?আয়,খেতে আয়।”

কি মায়া করে কথাগুলো বলা! আম্মুর ক্লান্ত মুখটা কি কোমল দেখাচ্ছে ! যে বাড়িকে নরক মনে হতো আগে, আজ সেই বাড়িকেই পরম নির্ভরতা, পরম শান্তির স্হান বলে মনে হচ্ছে।

আম্মুকে সুস্থ জীবন দিতে আমাকেই এগোতে হবে। আমাকে আর মেজ আপাকে। বড় আপাকে হিসাবের মধ্যে ধরি না। আচ্ছা, আম্মুর যেমন খুব কষ্টকর একটা অতীত আছে, বড় আপারও তেমন কোনো ইতিহাস নেই তো?

টেবিলে আমার পছন্দের খাবারগুলো। আম্মুকে বললাম,”আমাকে খাইয়ে দাও না আম্মু? হোষ্টেলে আমি প্রায় স্বপ্ন দেখতাম,তুমি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছ। ”

আম্মু শান্ত গলায় বললেন,”এই কাজটা আমি পারি না বুবলি। কাউকে খাইয়ে দিতে পারি না,কারোর হাতে খেতেও পারি না।”

“তুমি প্রায়ই মামা-খালাদের মুখে তুলে খাইয়ে দিতে। মামা-খালারা প্রায় বলেন এ কথা।”

আম্মুর মুখটা পাল্টে গেলো। কেমন দিশেহারা চেহারা, অস্হির দৃষ্টি।
আব্বু তাড়াতাড়ি বললেন,” বুড়ি,তুই নিজে নিজে খা। কই,তুমি বসে পড়ো। খাওয়ার পরে নাতাশাকে নিয়ে আসবো। এমন টরটরি হয়েছে আমাদের নাতনি, তোর আম্মুর মহাভক্ত। পৃথিবীতে নানীই তার সবচেয়ে পছন্দের মানুষ। ”

নাতাশার কথা শুনে আম্মুর মুখ একটু স্বাভাবিক হলো।

সন্ধ্যায় আমাদের বাসা জমজমাট। নাতাশা বুড়ি, মেজ আপা, মেজ খালা,ছোট খালা সবাই মিলে জমজমাট অবস্থা। আম্মুকে কেউ বুঝতে দেয়নি গতকাল নানুর বাড়িতে আমাদের গোপন মিটিং হয়েছে।

নাতাশা দেখি আম্মুর ভালো ভক্ত। আম্মুর কাছ থেকে সহজে কারও কাছে যাচ্ছে না। বয়স সাড়ে পাঁচ প্রায়। স্কুলে যায়। বড় আপার ডুপ্লিকেট। বাবুনিকে আম্মু যে আহ্লাদ দিচ্ছেন, তার এক কণাও যদি ছোট বেলায় আমাদের দিতেন!

মনের কথাটা বলে ফেললাম।

আম্মু বললেন,” নিজের বোনঝিকে হিংসা করছিস! ছোটবেলায় তোদের কাছে মা ছিল, সেই মা যতোই খারাপ হোক না কেন,বাপ ছিলো,দাদী থাকতেন,তিন বোন মিলে থাকতিস, আর এই বাচ্চাটার কথা ভাবতো! মা কাছে নেই, বাপ থেকেও নেই, সৎ মা, আর নিজের মা কাছে না থাকলে যা হয়,তখন দাদা-দাদী, চাচা-চাচী কেউই ফিরে তাকায় না।”

মেজ খালা বললেন,” রীতুটা এমন একটা কাজ করলো। কেমন করে করলো? নাতাশার জন্য খুব খারাপ লাগে।”

আম্মু বললেন,” তোরা সবাই রীতুর সম্পর্কে এমন করে বলিস কেন?ও কি অন্যায় করেছে? ও নিজে যাতে শান্তি পায়,তাই করেছে। এটা কি তার অপরাধ? ”

মেজ আপা বললো, “এটাকে শান্তি বলে আম্মু?অন্যকে কষ্ট দিয়ে,বঞ্চিত করে,ঠকিয়ে নিজে সুখে থাকা যায়? আপা স্বামী -সন্তান নিয়ে শান্তিতে থাকার চেস্টা করেছে কখনো? চেষ্টা তো দূরের কথা, এমন ইচ্ছাটাই তার ছিলো না। তার যখন যা মনে চেয়েছে, তাই করেছে। অন্যের কথা ভাবে নি।এতে কি তার শান্তি হয়েছে আম্মু?তুমিই বলো,শান্তিতে আছে সে?”

“অবশ্য ই আছে।”

“মেয়েটাকে জন্ম দিলো কেন তাহলে? মেয়েতো ইচ্ছা করে দুনিয়ায় আসে নি। তাকে কষ্টের মধ্যে ফেললো কেন?”

বলা বাহুল্য, এসব আলোচনার সময় নাতাশা কাছে ছিলো না। আমাদের বাসার নতুন মেয়ে রাশির সাথে হাঁড়ি পাতিল খেলছিল আম্মুর ঘরে।

আমার মন দুইটা কারণে খারাপ লাগছিল। এতো অন্যায় করার পরেও আপার জন্য আম্মুর কতো টান। আপার সাথে নিয়মিত ফোনে কথা বলেন।আপার মেয়েকে মনে হয় পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ভালোবাসেন। অথচ পাঁচ বছরে আমাকে দেখতে গেলেন না,আসতে বললেন না, কারোর কাছে আমার খবরও জানতে চাইলেন না। আমি কি আম্মুর নিজের মেয়ে নই? যদিও সবাই আম্মুর আড়ালে এই কথা-ই বারবার বলে যে আম্মু সুস্থ-স্বাভাবিক নন, তাঁর চিন্তা ভাবনা-কাজকর্ম স্বাভাবিক মানুষের মতো নয়, নানা ধরনের মানসিক জটিলতা যথেষ্ট পরিমাণেই তাঁর মধ্যে আছে, কাজেই তাঁর কোনো কাজকর্মেই অবাক হওয়া যাবে না,দুঃখ পাওয়া যাবে না।

মন খারাপের দ্বিতীয় কারণ হলো, বাবুনি সত্যিই খুব একটা ভালো নেই। রিংকি আপার জমজ ছেলে হয়েছে। তাদের বয়স তিন বছর। যতোদিন যাচ্ছে, তিন ছেলেমেয়ের প্রতি দুলাভাই ও রিংকি আপার আদরের বৈষম্য প্রকট হয়ে উঠছে। দুলাভাই বলেছিলেন, আমাকে আর মেজ আপাকে চিরজীবন তিনি আপন বোনের মতো দেখবেন। বড় দুলাভাই কথা রাখতে পারেন নি। আমি আর মেজ আপা প্রায়ই যাই বাবুনিকে দেখতে। আব্বুও যান,তবে বাসায় ঢুকেন না। গেট থেকে বাবুনিকে এই বাসায় নিয়ে আসেন আম্মুকে দেখানোর জন্য। পরে আবার বাসায় রেখে আসেন।

আমরা যখনই যাই, দুলাভাই এর সাথে আগের মতো ব্যবহার করি। কিন্তু দুলাভাইএর মুখ গম্ভীর থাকে, কথাবার্তাও খুব একটা বলেন না, অবহেলাটা ভালোই প্রকট। রিংকি আপার মধ্যেও কেমন একটা উন্নাসিক ভাব। খালাম্মা-খালু আগের মতোই আছেন,তবে বয়স হয়েছে,নানারকম অসুখ -বিসুখ। চঞ্চল বাবুনিকে যত্ন করতে পারেন না। ভাইদের মধ্যে ব্যবসা নিয়ে ঠান্ডা লড়াই চলছে। দুলাভাইয়ের ব্যবসা রমরমা। কিন্তু ভাইয়ের ব্যবসায় লস যাচ্ছে। তিথি ভাবীরা আলাদা বাসায় থাকেন। কাজেই বাবুনি ভালো নেই মোটেও।

মেজ আপা ঠিক করেছে, খুব শীঘ্রই বড় দুলাভাইয়ের কাছে সে আর্জি পেশ করবে বাবুনিকে আমাদের কাছে দিয়ে দেওয়ার জন্য। মেজ আপার ধারণা, এতে দুলাভাই খুশিই হবেন, আপত্তি করাতো দূরের কথা।

এই ধরণের আশংকা আম্মু প্রথম থেকেই করেছিলেন। আমরা সেই আশংকা উড়িয়ে দিয়েছিলাম।

আম্মু বাবুনির মধ্যে ছোট্ট, হতভাগ্য, অত্যাচারিত শিমুলকে দেখতে পাচ্ছেন। তাই বাবুনিকে নিয়ে আম্মুর ভীষণ অস্হিরতা, প্রচন্ড দুশ্চিন্তা।বাবুনিকে পারলে বুকের মধ্যে লুকিয়ে ফেলেন। কিন্তু বাবুনির এই দুর্গতির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী যে বড় আপা, এটা যেন আম্মুর মাথাতেই নেই।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here