# নানান বরণ মানুষ রে ভাই
৩৪ তম পর্ব
বড় গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা
এক সময় আম্মুর মৃত্যু কামনা করতাম, এখন দিন-রাত আল্লাহর কাছে তাঁর দীর্ঘ জীবন প্রার্থনা করি। আম্মু যাই করুক, আমাদের মারুক,কাটুক, আমরা জানপ্রাণ দিয়ে আম্মুকে ভালোবাসবো। আমার দুঃখিনী মায়ের মনের গভীরে কিছু ক্ষত এখনো কাঁচা আছে, পরম মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে সেই ক্ষতের চিকিৎসা করতে হবে।
এম.এস.সি পরীক্ষা শেষ। রেজাল্টের অপেক্ষা। আম্মু অফিস রওনা হওয়ার আগে জিজ্ঞেস করলেন,”বাসায় থাকবি নাকি বাইরে বেরোবি?”
বাবুনির জন্য বুক ভার হয়েছিল। আম্মুকে বললাম,”একটু বাইরে যাবো।আম্মু, তুমি কি আজ নানুর বাড়িতে যাবে অফিস শেষে?”
“হ্যাঁ। ”
“আব্বুও যাবেন?”
“হুম্।”
“অনেকক্ষণ থাকবে? আমি মাত্র গতকাল এলাম, তোমার কাছে কাছে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে আম্মু।”
“তাড়াতাড়ি চলে আসবো। ওখানে বেশিক্ষণ বসবো না। নার্স সব ঠিকঠাক করে কিনা দেখতে হবে তো। মিতুল আর তার বৌ ছোট মানুষ, সবকিছু গুছিয়ে করতে পারে না। ”
কি অদ্ভুত চরিত্র! আম্মুকে আমি বুঝতে পারি না।কেন যান আম্মু প্রায় প্রতিদিন ঐ বাড়িতে নানুকে দেখতে? এর কোন উত্তর জানা নেই আমার।আম্মু কি এই নানীকে অর্থাৎ তাঁর বিমাতাকে ভালোবেসে দেখতে যান?নিজের জীবনের চরম ক্রান্তিকালে রিয়া আপন মায়ের মতো আগলে রেখেছিলেন শিমুলকে, জানপ্রাণ দিয়ে সেবা করেছেন, পরবর্তীতে শিমুলের হাজার নিস্পৃহতা সত্ত্বেও রিয়া সৎ কন্যার সাথে ছায়ার মতো লেগেছিলেন বিছানায় পড়ার আগ পর্যন্ত, শিমুল -তার স্বামী আর মেয়েদের ভালোবেসেছেন আন্তরিক ও নিঃস্বার্থ ভাবে। তবে কি শিমুলের মনেও বিমাতার প্রতি ভালোবাসা আছে?সুপ্ত ভালোবাসা। প্রচন্ড জ্বরে ঘোরের মধ্যে শিমুল যখন “মা,মা” করে ডাকতেন, রিয়া শিমুলকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলতেন,”এই তো মা। এই যে আমি এখানে।” শিমুল শূন্য চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার ঘোরের মধ্যে চলে যেতেন। হতেই পারে, তখন থেকে স্নেহদায়িনী, মাতৃরূপি রিয়াকে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছেন শিমুল। তবে যে মহিলার জন্য নিজের, মায়ের ও ভাইএর জীবন তছনছ হয়ে গিয়েছিল, তাঁকে ভালোবাসা মোটেও স্বাভাবিক নয়। তাহলে অসুস্থ রিয়ার কাছে প্রায় প্রতিদিন কেন ছুটে যান শিমুল? কেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন রিয়ার ওষুধ -পথ্য-চিকিৎসায় সামান্যতম ত্রুটি হচ্ছে কি না?তাঁর বেডসোর হলো কিনা, ডায়াপার পাল্টাতে গেলে নার্সের চোখ মুখ কুঁচকে উঠছে কি না, কেন এগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খেয়াল করেন শিমুল? নিছক কর্তব্যবোধ? তাও তো মনে হয় না। আসলেই আম্মু খুব রহস্যময় চরিত্র।
আম্মুর কি তাঁর নিজের মা-ভাইয়ের কথা কিছুই মনে নেই? মনে হয়,মনে নেই। থাকলে তাঁর কোনো না কোনো আচরণে বা কথায় আমরা টের পেতাম।
যেদিন আম্মুর অতীত জানতে পারলাম মামা-খালাদের কাছ থেকে, এতো পরিচিত নানুবাড়ি আমার কাছে সম্পূর্ণ অন্যরকম মনে হচ্ছিল। নানুবাড়িকে চিরচেনা, নিরাপদ, অতি প্রিয় নানুবাড়ি মনে হচ্ছিল না, মনে হচ্ছিল প্রাচীন এক জমিদার বাড়ি, যে বাড়ির প্রতিটা ইঞ্চিতে লেখা আছে অত্যাচার, বঞ্চনা আর প্রতিহিংসার ইতিহাস, যে বাড়ির বাতাসে মিশে আছে হাহাকার,কান্না,বেদনায় ভরা দীর্ঘশ্বাস।
মেজ খালাকে জড়িয়ে ধরে শুয়েছিলাম সারারাত।
“খালা, তোমরা যাকে মা বলো, মানে আমার নিজের নানী, রেখা যার নাম,তিনি কোন ঘরে আত্মহত্যা করেন?”
“এই ঘরে।”
হৃৎপিণ্ডটা এতো জোরে লাফিয়ে উঠেছিল ! ভয়ে নয়। এই ঘরে কতো এসেছি, শুয়েছি, লুকোচুরি খেলেছি। এই ঘরে আমার নানী থাকতেন। রেখা। ওই যে ফ্যান। ওখান থেকে নামানো হয়েছিল তাঁকে। এই পালংকে তিনি থাকতেন। এই জানালা দিয়ে তিনি বাইরে তাকিয়ে থাকতেন। এই আলনাতে তাঁর কাপড়চোপড় থাকতো। এই আলমারিতে তিনি টাকা-পয়সা,দরকারি কাগজপত্র তুলে রাখতেন। ঐ জায়গাটায় তিনি নামাজ পড়তেন।
“মায়ের জায়নামাজ আমার কাছে। ওটাতেই আমি নামাজ পড়ি।” মেজ খালা বলেছিলেন। “মায়ের তসবিটাও আমি ব্যবহার করি। আত্মহত্যার সময় মা যে শাড়িটা পরেছিলেন, সেটা আমি রেখে দিয়েছি যত্ন করে। মাঝেমধ্যে শাড়িটাকে বুকে জড়িয়ে ধরি, ঘ্রাণ নিই, মা মা গন্ধটা পাই।”
অন্ধকারেও আমি বুঝতে পারছিলাম, মেজ খালা কাঁদছেন।
” মায়ের মৃত্যুর পরে আমি এই ঘরে উঠে এসেছিলাম। আপা তখন হাসপাতালে। অলিখিত ভাবে আমার মায়ের ঘরটা আমি নিজের করে নিলাম।”
” আম্মু কোন্ ঘরে থাকতেন তোমাদের মায়ের মৃত্যুর আগে?”
“ওই যে, তোর ছোট মামা-মামী যেখানে থাকে। আগের ফার্নিচার অবশ্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ”
খালার কাছ থেকে জানলাম, যেখানে এখন ছোট মামার দুই ছেলে থাকে, সেখানে থাকতেন পলাশ মামা আর মুকুল মামা।
জানলাম কোথায় থাকতেন আম্মুর দাদী আর কোন্ ঘরে ঘুমাতেন গৃহপরিচারিকা মন্জু। দুটোই আমার অতি চেনা জানা ঘর,কিন্তু ইতিহাসটা অজানা ছিল। মেজ খালা ঘুমিয়ে যাওয়ার পরে আমি পা টিপে টিপে গিয়েছিলাম ঘর দুটায়। ওই দুটা ঘরে কেউ বাস করে না। দুটো ঘরেই আমার নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছিলো। আবারো বলছি,ভয়ে নয়। কল্পনার চোখে আমি দেখতে পাচ্ছিলাম সদ্য তরুণী শিমুল, সালোয়ার-কামিজ পরা, কোমর ছাপানো লম্বা ঘন চুল, ঝুঁকে বালিশ চেপে আছে তার শিকারের মুখে, তার চোখ ধকধক করছে প্রতিহিংসার আগুনে, মুখ বিকৃত হয়ে আছে রাগে-ঘৃণায়, শিকার ছটফট করছে,চোখ বড় বড় হয়ে গেছে কষ্টে আর শিকারীকে দেখে, একসময় ছটফটানি থেমে গেল, শিমুল নিঃশব্দে বের হয়ে গেলো।
এই যে উঠানের এই কোণে শিমুলের দাদীকে,তার প্রায় ছয় বছর পরে মন্জুকে শেষ গোসল করানো হয়েছিল। আর বিরাট উঠানটার ওই কোণায় কামিনী গাছটার তলায় আমার পলাশ মামাকে।
নীচতলার এই ছোট্ট ঘরে এই খাটটাতেই একসময়ে থাকতেন রেখা,তার শিশু সন্তানদের নিয়ে।
আমি সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম নতুন করে। মনের চোখ দিয়ে অতীতের কতো ঘটনা যে দেখতে পাচ্ছিলাম। রাতের আঁধারে এ যেন এক
অন্য খান বাড়ি, বিশাল বড়,দোতলা, উপরের টানা বারান্দায় ইলেকট্রিক বাল্ব জ্বলছে, আবছা আলোয় চোখে পড়ছিল কলপাড়, লেবুগাছ, বরই গাছ, মাধবীলতার ঝাড়, খিড়কি দরজা। ঠান্ডা শিরশিরে বাতাস বয়ে যাচ্ছিল, কামিনীর সুগন্ধে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। কেবলই মনে হচ্ছিল, কয়েকজোড়া চোখ আমাকে দেখছে, কিন্তু নাহ্, ভয় লাগছিলো না। বরং কেমন এক বুক খালি করা কষ্ট।
আব্বু-আম্মু অফিস চলে গেছেন। মেজ আপা এখন ডিউটিতে। বাবুনি স্কুল শেষে বাড়ি ফিরবে বেলা সাড়ে বারোটায়।
আমিও রিকশা থেকে নামলাম, বাবুনির গাড়িও এসে গেটে দাঁড়ালো। ঝা চকচকে গাড়ি। বাবুনিকে পুতুলের মতো লাগছে। পিছনের সিটে বিষন্ন মুখে বসে আছে।আমাকে দেখে সোনামুখটা আলোয় ভরে গেলো।
ড্রাইভার সাহেবকে দেখলাম।কেন যেন এতোটুকু ভালো লাগলো না।
” টিফিন খেয়েছো বাবুনি?”
“খেয়েছি। ”
“কি খেয়েছো?”
“নুডুলস।”
“আজ টিফিনে নুডুলস খেয়েছো। ভেরি গুড। আর কি কি খাও টিফিনে?অন্যান্য দিনে?”
“নুডুলস।”
“প্রতিদিনই নুডুলস খাও?নুডুলস তোমার ফেভারিট? ”
বাবুনি চুপ করে রইলো।
ব্যাগ থেকে ওর টিফিন বক্স বের করলাম। নুডুলস প্রায় সবটাই রয়ে গেছে। এতো বড়লোক বাপের মেয়ে, নুডুলসটাতে শুধু সামান্য ডিম দেওয়া আছে। চিকেন বা সব্জির কোন বালাই নেই।
“বাবুনি, সকালে কি খেয়ে বের হয়েছিলে?”
কোনো উত্তর পেলাম না।
দরজা খুলে দিল জোনাকি। বছর তিন ধরে এই বাসায় আছে। কোনো কথা না বলে মেয়েটা ভিতরে চলে গেলো।
আজ আমি কোনো সংকোচ করলাম না। বাবুনির হাত ধরে সোজা চলে গেলাম খালাম্মার ঘরে। তিথি ভাবীও আছেন ওখানে। দুই একদিন পরপর তিনি এসে শ্বশুর -শাশুড়ির ভালো মন্দ দেখে যান।
খালাম্মা অনেক অসুস্থ। বেশির ভাগ সময় শুয়ে থাকেন। খাওয়া-দাওয়াও নিজের ঘরে। গোসল পাখি করিয়ে দেয়। বাথরুমের কাজটা নিজেই করেন, অন্যের সাহায্য নেন না।
খালাম্মা আর ভাবীকে সালাম দিয়ে বললাম,” খালাম্মা, আমার বেয়াদবি ক্ষমা করবেন। এই বাচ্চাটা সকালে না খেয়ে স্কুলে যায়। টিফিনে প্রতিদিন নুডুলস দেওয়া হয়। শুধু ডিম দেওয়া নুডুলস। আমি মুখে দিয়ে দেখেছি, কোনো স্বাদ নেই। অতিরিক্ত লবণ। টিফিন খায় নি বললেই চলে। মোটামুটি সব দিনই একই ঘটনা ঘটে, যতোটুকু বুঝতে পারলাম। খালাম্মা, এমন চললে বাচ্চাটা খুব শিগগিরই অসুস্থ হয়ে পড়বে। ”
তিথি ভাবী বাবুনিকে কোলে টেনে নিলেন। ” ছোট আম্মু এসব কি বলছেন নাতাশা মনি? তুমি সকালে নাস্তা খেয়ে যাও নি কেন? কি দিয়েছিল সকালে?বলো আম্মু। ”
বাবুনি চুপ করে বসে আছে। নালিশ করার স্বভাব মেয়েটার একদমই নেই। আর নিজের দুর্গতির কথা বলতে ওর আত্মসম্মানে বাধে। শিশুদের আত্মসম্মানবোধ প্রবল হয়।
” এই পাখি, কি দিয়েছিলি বাবুকে আজ সকালে?”
“আজ সকালে নাতাশা মনিকে আমি নাস্তা দিতে পারি নি বড় চাচী। রেহান বাবুকে নিয়ে খেলা করছিলাম। ভোরে ছোট চাচী রেহান আর রাইয়ানকে নিয়ে খেলা করতে বলেন, তাই এখন সকালে নাতাশা মনিকে আমি দেখাশোনা করতে পারি না।”
খালাম্মা বললেন,”এগুলো আমাকে বলিস নি কেন? তোর কাজ নাতাশাকে দেখাশোনা করা। বাবুদের জন্য তো জোনাকি আছে।”
“দাদী,আমি হলাম হুকুমের দাস। আমাকে যদি ছোট চাচী বলেন সকাল সাতটার মধ্যে বাবুদের উনার ঘর থেকে বের করে আনতে, তাহলে আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা আমি না করি? জোনাকি সকাল আটটার আগে ঘুম থেকে ওঠে না। নয়টাও বাজায় ফেলে কোনো কোনো দিন। তারপর ঢোকে বাথরুমে।এক ঘন্টা লাগে কমসে কম। এরমধ্যে আমি বাবুদের পটি করাই, খেলি, ফিডারে দুধ বানিয়ে দিই। দুইটা বাচ্চাকে সামলানো চাট্টিখানি কথা?”
“বুঝলাম। কিন্তু এগুলো আগে বলিসনি কেন?আমি তোকে প্রতিদিন জিজ্ঞেস করি,নাতাশা ঠিকমতো খেয়েছে কিনা, টিফিন নিয়েছে কিনা, তুই জ্বী,জ্বী করিস। আমি উঠতে পারি না,দেখতে পারি না,তোর উপরে ভরসা করেছিলাম। তুই যে নাতাশার দেখাশোনা বাদ দিয়েছিস,আমিতো ভাবতেই পারি নি। তারমানে তুই নাতাশার কোনো বেলার খাওয়াটাই দেখিস না, গোসলও করিয়ে দিস না। আমার কথাগুলো ঠিক কি না বল্।”
পাখি নিরুত্তর রইলো।
“কতোদিন ধরে এমন চলছে?”
পাখি চুপ।
আমি বললাম,”খালাম্মা, এই পাখিকে কতো ভরসা করতাম। আজ জোনাকি দরজা খুলে দিলো। আমার সাথে কথা বলার দরকার নেই, কিন্তু বাবুনি স্কুল থেকে ফিরলো,তার সাথে একটা কথাও বলবে না?”
তিথি ভাবী বাবুনিকে নিয়ে উঠে গেলেন।ওর গোসল -খাওয়ার তদারকি করবেন। সাথে পাখিকে নিয়ে গেলেন।
খালাম্মা বললেন,” দেখো বুবলি,মা যাকে ফেলে চলে যায়, সেই কপালপোড়াকে কে দেখবে বলো? মা মরা বাচ্চা আর মায়ের পায়ে ঠেলা বাচ্চার মধ্যে পার্থক্য থাকে। আমি আর তোমার খালু যতোদিন পেরেছি, দেখেছি। কিন্তু এখন তো দুজনেই বিছানায় পড়া। তিথিরা আলাদা হয়ে গেলো।নইলে তিথিই নাতাশার ভালো দেখভাল করতে পারতো। নাতাশার এই অবস্থার জন্য তোমার বোন হান্ড্রেড পারসেন্ট দায়ী। তোমার বোনের উপরে রাগ,ঘেন্না আদিব মেয়ের উপরে ফলাচ্ছে। ওর হয়ে আমি সাফাই গাচ্ছি না, কিন্তু তোমার বোনের বেলেল্লাপনা, স্বার্থপরতা, অসভ্যতা আমার ছেলেটার
জীবনকেও ধ্বংস করে দিয়েছে। সে যে নতুন বৌ- বাচ্চা নিয়ে খুব সুখে আছে, তা না। সে সুখি থাকার অভিনয় করে। সবাইকে দেখায় সে মহা সুখে আছে। তোমার অতিরিক্ত লোভী বোনটার সব খায়েশ সে মেটাতে পারে নি বলে বদমায়েশ মেয়েটা আরও বড়লোক ধরে চলে গেলো। আদিবও এখন বড়লোক হওয়ার নেশায় মত্ত। আমার ছেলে এখন যে ভাবে হোক টাকা কামানোর মেশিন। মানুষ মেরে হলেও টাকা কামাতে হবে। আমাদের দেওয়া শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেলো ছেলেটা। মতে মিল না হওয়ায় ভাইদের মধ্যে গ্যান্জাম লেগে গেলো। ব্যবসা আলাদা হয়ে গেলো। নানা অশান্তির জন্য আমার বড় ছেলেটাও আলাদা হয়ে গেলো। সব তোমার বোনের জন্য। ”
“খালাম্মা, আপনার সব কথা মানছি। আমার বোন খুবই খারাপ। আমিও তাকে সহ্য করতে পারি না। কিন্তু একটা মানুষের জন্য আরেকটা মানুষ পুরো পাল্টে গেলো,গৃহযুদ্ধ বেধে গেলো, যৌথ সংসার ভেঙে গেলো, আমার বোনের এতো পাওয়ার? ”
” এক গামলা দুধ নষ্ট হওয়ার জন্য এক ফোঁটা চোনাই যথেষ্ট, বুবলি।”
“খালাম্মা,আপনি অনুমতি দেন, বাবুনিকে আমরা নিয়ে যাই?”
“আমি অনুমতি দেওয়ার কে, মা? তার বাপ কোথাও মেয়েকে দিবে না। আমার বড় মেয়ে নাতাশাকে ওর কাছে রাখতে চেয়েছিল, আদিব দেয় নি।তোমাদের কাছে তো দেবেই না। তোমার মা হলো সব নষ্টের মূলে। তোমার বাবাকেও ভালো বলতে পারি না। বৌএর তালে সারাক্ষণ তাল দিয়ে চলে। তোমার বোনকে মা-বাবা মিলে আরও নষ্ট করেছে। সপ্তাহে যে একবার তোমার বাপ-মায়ের কাছে নাতাশাকে পাঠানো হয় এটাইতো অনেক। আমি নিজেই তো চাই না,নাতাশা ওরকম নানা-নানীর টাচে থাকুক। নীতুর ভরসাতে দিই। তুমি বা নীতু না থাকলে তো আমি নাতাশাকে ওখানে পাঠাবো ই না।”
বিনা অপরাধ আর কতো লজ্জা পেতে হবে আমাকে?
“খালাম্মা, মেজ আপার কাছে দিয়ে দেন বাবুনিকে। ওকে তো আপনারা চেনেন খালাম্মা।ওর মতো ভালো মেয়ে পৃথিবীতে খুব কম আছে।”
“এটা কি হয় বুবলি? একই শহরে বাপ থাকতে, নিজের বাড়ি থাকতে মেয়ে খালা খালুর বাড়িতে থাকবে কেন? তাও খালার একার বাড়ি নয়,শ্বশুর বাড়ি।”
এই প্রশ্নের কি উত্তর দিবো আমি? খালাম্মার সব কথাই যৌক্তিক, কিন্তু কোনটার দাম বেশি? একটা শিশু প্রাণ নাকি অসংখ্য যুক্তি? কোনটা বেশি দামী?
চলবে