না_চাইলেও_তুমি_আমার
পর্বঃ ১১
জাহান আরা
খাওয়া দাওয়ার পর্ব চলছে,নিশান আর রাত্রি কে এক টেবিলে খেতে বসানো হয়েছে।একই প্লেটে ২জনের খাবার।
রাত্রি হাত গুটিয়ে বসে আছে।
কান্নায় গলা বুজে আছে,এই অবস্থায় খাবার গলা দিয়ে নামবে না।
বাবা,ভাইয়া কে এরকম অসহায়ভাবে কাঁদতে রাত্রি কখনো দেখে নি।বাবারা বুঝি এরকমই হয়?
মুখে গাম্ভীর্যের মিথ্যে মুখোশ পরে থাকে অথচ ভিতরটা কাদামাটির মতো নরম।
আর ভাইয়া!
সে তো আরেক পাগল,মাথার উপর ছাতার মতো ছায়া হয়ে ছিলো,রাত্রি সবসময় ভাবতো ভাইয়া খুব স্ট্রং,অথচ সেই ভাইয়ার মন ও কেমন বাচ্চাদের মতো!
নিশান অনেকক্ষণ ধরে দেখছে,রাত্রি চুপ হয়ে আছে।তারপর নিজেই খাবার নিজ হাতে নিয়ে রাত্রির মুখের সামনে ধরে,রাত্রি মুখ ফিরিয়ে নেয়।
নিশান বাম হাতে দিয়ে রাত্রির চোয়াল শক্ত করে ধরে মুখ সামনে এনে খাবারের লোকমা রাত্রির মুখে দেয়।
মুখে খাবার নিয়ে রাত্রি গাল ফুলিয়ে বসে থাকে।
নিশান বাম হাত দিয়ে গালে চাপ দিতেই রাত্রি তড়িঘড়ি করে খেয়ে নেয়,বিজয়ীর হাসি ফুটে উঠে নিশানের মুখে,রাগে রাত্রি লাল হয়ে যায়।
চন্দ্র তাকিয়ে দেখছে রাত্রিকে,আপাকে ছাড়া সে কিভাবে থাকবে আজ থেকে?
নিশান রাত্রিকে খাইয়ে দিচ্ছে দেখে চন্দ্র হেসে উঠে,মনে মনে আল্লাহকে বলে,এই ভালোবাসা যেনো ইহকাল-পরকাল ২ জীবনেই থাকে।
মারিয়া হা করে তাকিয়ে আছে নিষাদের দিকে। এই ছেলেটা এতো বেশী কিউট কেনো?
খাবার খাচ্ছে আর তাদের দিকে তাকাচ্ছে,মারিয়া খুব চেষ্টা করছে বুঝতে নিষাদ আসলে কাকে দেখছে।
নিষাদ যে খুব বুদ্ধিমান মারিয়া আবার সেই প্রমাণ পায়,চোখে সানগ্লাস দিয়ে খেতে বসেছে।
কি এমন সমস্যা হতো সানগ্লাস খুলে খেতে বসলে!
নিষাদের ভীষণ ইচ্ছে করছে চন্দ্রকে খাইয়ে দিতে,কিন্তু উপায় নেই।মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো নিষাদের,নিজের স্ত্রী,অথচ তাকে ছুঁতে ও ভয়।
একদিন সব বাঁধা দূর হয়ে যাবে এই আশায় বুক বাঁধে নিষাদ।
তুরাগ খাওয়া রেখে বসে বসে চন্দ্রর ছবি তুলছে,নিষাদ মুচকি হাসছে তা দেখে,মনে মনে প্ল্যান করে ফেলেছ তুরাগের কাছ থেকে সব ছবি সরাবার।
বিয়ের সমস্ত আচার অনুষ্ঠান পালন করা শেষ,কনে বিদায়ের পালা।চন্দ্র পণ করেছে কিছুতেই কাঁদবে না,কিন্তু কি আশ্চর্য,সবার আগে চন্দ্রই ভেউভেউ করে কেঁদে উঠে রাত্রিকে ধরে,কান্নাকাটির রোল পড়ে যায় হঠাৎ করেই।
বিষাদময় পরিবেশ,কান্নার শব্দে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
রাত্রি যেনো পাথরের মতো হয়ে গেছে,গেটের সামনে থেকে আর সামনে যাচ্ছে না।চন্দ্রর হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে।চন্দ্র অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে আমিরের দিকে,মনে মনে চাইতেছে ভাইয়া বলুক,চন্দ্র যাবে না আজ।
চন্দ্রর মনের কথা আমির বুঝলো না,চন্দ্রকে এসে বললো পরের গাড়িতে উঠে বসতে নিষাদের সাথে।
নিষাদের মুখে বিজয়ীর হাসি ফুটে উঠলো।
রাত্রির চোখের পানি অনবরত পড়ছে,নিশান একটার পর একটা টিস্যু দিয়ে যাচ্ছে রাত্রিকে।একপর্যায়ে হাল ছেড়ে দিয়ে নিশান জিজ্ঞেস করলো,”তোমার চোখের সব পানিই তো তুমি আজকেই শেষ করে ফেললে,আমি মারা গেলে তো কাঁদার জন্য কোনো পানি-ই থাকবে না রাত্রি”
নিশানের কথাতে রাত্রির মন আরো খারাপ হয়ে গেলো,আজকের শুভ দিনে নিশান মৃত্যুর কথা কেনো বললো!
নিশান বুঝতে পারে রাত্রি আরো মন খারাপ করেছে,রাত্রির দিকে এগিয়ে গিয়ে রাত্রিকে বুকে টেনে নিলো।হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে রাত্রি।
নিষাদ ড্রাইভ করছে,পাশের সিটে চন্দ্র বসে আছে কাঠ হয়ে,ভীষণ আনন্দ লাগছে নিষাদের আজ।চন্দ্রর বুক কাঁপছে,দুপুরের ঘটনা চন্দ্র এখনো ভুলতে পারে নি।ইচ্ছে করছে সাবান দিয়ে ঘষে নিষাদের স্পর্শ মুছে দিতে।
পাশে বসা এই লোকটি একসময় শ্রদ্ধার পাত্র ছিলো,অথচ আজ তাকে ভীষণ ঘৃণা করতে ইচ্ছে করছে।
চন্দ্র কে আরো বিব্রত করে দিতে নিষাদ জিজ্ঞেস করে,”দুপুরে ফিলিংস কেমন ছিলো তোমার?
তোমার এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করো চন্দ্র।ফার্স্ট টাইম নিজের আপন স্বামীর ঠোঁটের স্পর্শ কেমন লেগেছে?”
লজ্জায় রাঙা হয়ে যায় চন্দ্র নিষাদের প্রশ্ন শুনে,রাগ করতে গিয়েও হেসে উঠে আপন স্বামী শব্দটা শুনে।
নিষাদ মুচকি হেসে চন্দ্রকে দেখছে।চন্দ্রর হাসি দেখছে।
চন্দ্র হাসি থামিয়ে চন্দ্র বলে,”আমি যদি পারতাম তবে ঘষে ঘষে আপনার স্পর্শ মুছে দিতাম আমার শরীর থেকে”
“বৌ,যে স্পর্শ তোমার শরীর ভেদ করে হৃদয় ছুঁয়ে দিয়েছে,সেই স্পর্শ শরীর থেকে মুছে কি হবে বলো?
হৃদয় থেকে কি মুছতে পারবে জীবনে?”
বিরক্তিতে “চ” শব্দ উচ্চারণ করে চন্দ্র অন্যদিকে তাকিয়ে বসে থাকে।
★
রাত্রি ১ হাত লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে এক রুমে,তাকে ঘিরে আছে অনেক মানুষ,সবাই কথা বলছে,ছবি তুলছে,রাত্রির ভীষণ বিরক্ত লাগছে এতো কথা বলতে,কিন্তু উপায় নেই বলতেই হবে।ভীষণ ঘুম পাচ্ছে রাত্রির,এই ভারী শাড়ি,মেকাপ,গহনার ভারে রাত্রির ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে।
রাত সাড়ে ৮ টা বাজে,এখনো বাসর ঘর সাজানো হয় নি।নিষাদ,শুভ,পলাশ,ময়ুখ,লিমন মিলে বাসর সাজাচ্ছে।
চন্দ্র বসে আছে একটা রুমে কয়েকটা মেয়ের সাথে,সবাই মিলে চন্দ্রকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে,বেশিরভাগ প্রশ্ন চন্দ্রর মা’কে নিয়ে।চন্দ্রর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মা’র কথা বলতে,মানুষ কেনো কাঁটা ঘা’য়ে লবনের ছিটা দেয় চন্দ্র জানে না।
একজন জিজ্ঞেস করছে,”তোমার মা এতো তাড়াতাড়ি মারা গেলো কেনো?”
এই প্রশ্নের উত্তর চন্দ্র কিভাবে দিবে?
চন্দ্র জানে না।
আরেকজন জিজ্ঞেস করছে,”তোমার মা’কি মারা গেছে না-কি আত্মহত্যা করেছে?”
কি ভয়ংকর প্রশ্ন,মানুষ হাসি মুখে এরকম প্রশ্ন করে কিভাবে!
চন্দ্রর আর এক মুহূর্ত ও এরকম অসুস্থ মহিলাদের সামনে বসতে ইচ্ছে করছে না।কান্না পাচ্ছে চন্দ্রর এসব শুনে।মানুষ এরকম বিকৃত মস্তিষ্কের ও হয়!
এতো প্রশ্ন শুনতে শুনতে চন্দ্রর ভীষণ মাথা ব্যথা শুরু হয়,ইচ্ছে করে রুম অন্ধকার করে কিছুক্ষণ ঘুমাতে। কিছুক্ষণ না ঘুমাতে পারলে মরেই যাবে।
তুরাগ সব জায়গায় চন্দ্রকে খুঁজে যাচ্ছে,২০ মিনিট ধরে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে চন্দ্রকে পেলো একদল মহিলার মাঝখানে। নিজের পকেটে হাত দিয়ে চেক করে দেখে ঔষধ আছে কি-না।কিছুক্ষণ আগেই তুরাগ ফার্মাসি থেকে একপাতা যৌন উত্তেজক ঔষধ নিয়ে এসেছে নিশানের জন্য পিল,প্রটেকশন কিনতে গিয়ে।নিষাদের হাবভাব সুবিধার লাগছে না তুরাগের,নিষাদ যদি চন্দ্রর দিকে ননর দেয় তবে তুরাগ আর পাবে না চন্দ্রকে।
তুরাগ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে চন্দ্রকে,চন্দ্রর পরনের শাড়ির উপর দিয়ে পুরো শরীর স্ক্যান করে ফেলেছে তুরাগ।শাড়ির ফাঁক দিয়ে চন্দ্রর পেটের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে,তুরাগ ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে তা।চন্দ্রর কাছাকাছি যেতে ইচ্ছে করছে তুরাগের,কোনো উছিলায় যদি চন্দ্রকে ছুঁতে পারে একটু।
চন্দ্র দরজার দিকে তাকিয়ে তুরাগ কে দেখতে পায়,এই বাজে পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হবে ভেবেই উঠে তুরাগের কাছে যায়।
তুরাগ কে জিজ্ঞেস করে গিয়ে,”এই বাসায় কি একটা খালি রুম ও নেই,আমার একটু একা থাকতে ইচ্ছে করছে।”
তুরাগের মনে লাড্ডু ফুটে চন্দ্রর কথা শুনে,এ যেনো মেঘ না চাইতে বৃষ্টি।
মনে মনে সবগুলো রুমের কথা মনে করে,তারপর খালি রুমের কথা মনে পড়তেই চন্দ্র কে বলে,”আসেন আমার সাথে।”
তারপর হাত বাড়ায় তুরাগ চন্দ্রর হাত ধরার জন্য,দুপুরের কথা মনে পড়ে যায় চন্দ্রর,একটু পিছিয়ে যায়।লাগেজটা শক্ত করে ধরে।
তুরাগ হাত সরিয়ে নেয়,তারপর আগে আগে হাটতে থাকে।
মনে মনে বলে,”আজ আর রক্ষা নাই বিয়াইন”
অনেকক্ষণ পরে একটা খালি রুম পেয়ে চন্দ্র যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। চন্দ্র বিছানায় উঠে বসে,তুরাগ পাশের সোফায়।রুমে ঢুকেই তুরাগ দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়েছে,চন্দ্রর কেমন ভয় ভয় লাগছে,নিষাদের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। নিষাদ যদি দেখে ফেলে এসে?
তুরাগ উঠছে না দেখে চন্দ্র বলে,”আপনি কি একটু বাহিরে যাবেন,আমার ভীষণ মাথা ধরেছে,একটু না ঘুমালে আমি মরেই যাবো,আপনি কিছুক্ষণ পর আসুন”
“আমি কি একটা ঔষধ এনে দিবো আপনাকে বিয়াইন,আফটার অল,আপনি আমাদের গেস্ট”
“না ধন্যবাদ,ঔষধ লাগবে না,একটু ঘুমালেই সেরে যাবে।”
“না বিয়াইন তা হবে না,ঔষধ না খেলে আমি যাচ্ছি না এখান থেকে।”
অগত্যা চন্দ্র রাজি হয় ঔষধ খেতে।চন্দ্র কে রুমে রেখেই তুরাগ বের হয়ে যায় পানির কথা বলে। তারপর পানি আর পিরিচে একটা ঔষধ এনে চন্দ্রকে দেয়।
ঔষধের দিকে তাকাতেই চন্দ্রর কেমন অদ্ভুত লাগে,ছোট একটা ঔষধ,মাথা ব্যথার জন্য এরকম ঔষধ কখনো খায় নি চন্দ্র প্যারাসিটামল ছাড়া। তুরাগকে সেই কথা জিজ্ঞেস করতেই তুরাগ হেসে জবাব দেয়,”কি বিয়াইন,আমাকে বিশ্বাস হয় না বুঝি?
এটা মাথাব্যথার ঔষধ-ই,খুব ইফেক্টিভ,খেয়েই দেখুন আপনি,মাথা ব্যথা যদি না সারে তো আমাকে বলবেন,আমি জামিনদার হলাম।”
চন্দ্র আর কথা বাড়ায় না,তুরাগ কে বিদায় করার জন্য খোসা থেকে ঔষধ ছাড়িয়ে নিয়ে খেয়ে নেয় ঔষধ।তারপর তুরাগকে বলে,”আপনি এখন যান,আমি জাগলে আপনাকে কল দিবো,তারপর সারারাত দুজন ছাদে বসে গল্প করবো।”
তুরাগের আশার আলো নিভে যায় সাথে সাথে,ইচ্ছে করে তার চন্দ্রকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় ফেলে দিতে,কিন্তু নিজেকে সামলায়।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে চলে যায়।তবু বিশ্বাস হারায় না,আজ রাতেই চন্দ্রকে শিকার করবে তুরাগ,চন্দ্র বেশিক্ষণ ঘুমিয়ে থাকতে পারবে না তুরাগ জানে।
পিছন থেকে চন্দ্র ডেকে বলে,”আপাকে একটু বলে যাবেন প্লিজ আমি ঘুমাচ্ছি যে”
মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বের হয়ে যায় তুরাগ,তারপর গিয়ে রাত্রিকে বলে।
চন্দ্রর মাথা ব্যথা হলে তাকে আর ঘুম থেকে উঠানো যায় না রাত্রি জানে,তাই আর কিছু না বলে চুপ হয়ে থাকে।
চন্দ্র কোনো কিছু না ভেবেই শুয়ে পড়ে চাদর মুড়ি দিয়ে,মাথা ব্যথায় কিছু ভালো লাগছে না।বিছানা টা ভীষণ আরামদায়ক লাগছে চন্দ্রর।
বাসর ঘর সাজানো শেষ হয় রাত ১০টায়,তাড়াতাড়ি সাজিয়ে ফেলে,যাতে নিশানকে বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে না হয়।এরইমধ্যে নিশান ৩ বার এসে ওয়ার্নিং দিয়ে গেছে যদি ওরা ইচ্ছে করে সাজাতে দেরি করে তবে ওদের বাসর রাতে নিশান সারারাত অপেক্ষা করাবে।
সবাই হেসেছিলো নিশানের কথা শুনে।
নিষাদের তাড়া ছিলো বেশি কাজ শেষ করার,কারণ চন্দ্রকে খুঁজে পাচ্ছে না সে।নিষাদ কিছুক্ষণ পর পর এসে চন্দ্রকে খুঁজে যাচ্ছে কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না।চিন্তা হচ্ছে নিষাদের চন্দ্রর জন্য।
তুরাগ ‘কে ও দেখছে না কোথাও,নিষাদের কপালের রগ দপদপ করে উঠে রাগে।
বন্ধুরা সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করে নিষাদের রুমে ঢুকতেই দেখে বিছানায় কেউ একজন শুয়ে আছে।নিষাদের মেজাজ খারাপ হয়ে যায় তুরাগ ভেবে,বিছানায় গিয়ে চাদর সরাতেই দেখে চন্দ্র ঘুমিয়ে আছে।চন্দ্রর ঘুমন্ত,নিষ্পাপ মুখটি ভীষণ মায়াবী লাগে নিষাদের।
অপ্রস্তুত হয়ে বন্ধুদের দিকে তাকাতেই দেখে সবাই মুখ চেপে হাসছে।
“আচ্ছা আজ আমরা সবাই ছাদে টানা বিছানা করে ঘুমাই না হয়,নিষাদ থাকুক এখানে।”
“না,আমিও তোদের সাথে ঘুমাবো,ও থাকুক এখানে,চল।”
নিষাদের কথা শেষ হবার আগেই বন্ধুরা সবাই রুমের বাহিরে চলে যায়,দরজা বাহির থেকে আটকে দেয়।
ভিতর থেকে নিষাদ দরজা নেড়ে যাচ্ছে কিন্তু কেউ কোনো সাড়া দিচ্ছে না,চিৎকার করতে পারছে না অন্যকেউ চলে আসে যদি সেই ভয়ে।চন্দ্রর সাথে এক রুমে থাকবে ভাবতেই নিষাদের কেমন অদ্ভুত অনুভূতি জাগে।
মন চাইছে নিজের বৌয়ের সাথে থাকতে কিন্তু তবু কেনো যেনো ভয় করছে।
উপায় না পেয়ে নিষাদ নিশান কে কল দেয়।
রাত্রি বাসর ঘরে বসে আছে,নিশান রুমে ঢুকবে এমন সময় নিষাদের কল পায়।
নিষাদ সব বলে ভাইকে,তারপর বলে,”ভাইয়া,প্লিজ দরজা খোলার ব্যবস্থা করো,ওরা বাহির থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে গেছে,প্লিজ ভাইয়া।”
“তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো,নিজের স্ত্রীর কাছে থাকবি তাতে এতো ভয়ের কি আছে,শুন আমি তোকে একটা বুদ্ধি দিই।”
হতাশ হয়ে নিষাদ জিজ্ঞেস করে,”কি বুদ্ধি বলো?”
“নিজেদের মধ্যকার সব ভুল বুঝাবুঝি মিটিয়ে ফেলার একটা সুযোগ পেয়েছিস,গাঁধামি করে সুযোগ মিস করিস না,আর শুন,তোর বন্ধুরা তো বাহিরে থেকে ছিটকিনি দিয়ে গেছে,আমি আসছি তালা নিয়ে,আমি দরজায় তালা লাগিয়ে দিচ্ছি যাতে কেউ এসে ছিটকিনি ও খুলতে না পারে।”
নিষাদ কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিশান কল কেটে ফোন অফ করে দেয় তারপর এসে একটা তালা লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়।
নিষাদ একে একে ময়ুখ,পলাশ,লিমন,শুভ সবাইকে কল দেয়,কেউ কল রিসিভ করে না।
কিছুক্ষণ পর লিমন কল করে,নিষাদ কল রিসিভ করতেই সবাই চিৎকার করে বলতে থাকে,”দোস্ত,নিশান ভাই কিছু জিনিস দিয়ে গেছে আমাদের কাছে তোর জন্য ,দরজার নিচে দিয়ে একটা একটা করে রুমের ভিতর রেখে এসেছি দেখে নিস।”
নিষাদ আর কিছু বলার সুযোগ পায় না,ফোন অফ করে দেয় ওরা।উঠে গিয়ে জিনিস গুলো দেখতেই নিষাদের মাথা ঝিমঝিম করে উঠে।
নিষাদ উঠে গিয়ে দেখে দরজার সামনে ইমার্জেন্সি পিল,প্রটেকশন,চকোলেট রাখা আছে।
নিজের ভাই ও এরকম বিপক্ষে চলে যাবে ভাবনা তে ছিলো না নিষাদের।
চলবে…???