না_চাইলেও_তুমি_আমার
পর্বঃ ২১
জাহান আরা
হাসনাত সাহেব বসে বসে তার পান খাচ্ছেন আর পথের পাচালি উপন্যাস পড়ছেন।দূর্গার মৃত্যুর অংশটা পড়ে তার চোখ ভিজে যায়।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন তিনি,”একটা তাজা প্রাণ চলে গেলো পৃথিবী থেকে,ভেরি স্যাড।উফফ,কিছুতেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।”
মনোয়ারা বেগম একটু দূরে বসে চুলে তেল লাগাচ্ছেন।হাসনাত সাহেব কে এরকম দীর্ঘশ্বাস ফেলতে দেখে চমকে উঠেন তিনি।
কে মারা গেলো আবার!
ওখান থেকেই ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,”কি হয়েছে,কার কথা বলছো তুমি,কার আবার কি হলো?”
“একটা মেয়ে মারা গেলো বুঝলে মনু,সি ওয়াজ ভেরি এ প্রিটি গার্ল,আই লাভড হার ভেরি মাচ”
মনোয়ারা বেগম চোখ সরু করে জিজ্ঞেস করলেন,”কোন মেয়ে,তুমি কোন মেয়েরে এতো বেশি ভালোবাসতে?”
কিছুটা বিরক্ত হয়ে হাসনাত সাহেব বললেন,”বললাম না,দুর্গাকে।”
মনোয়ারা বেগম বিলাপ শুরু করলেন,”তুমি কি বলছো এসব,কোন দুর্গা,তার সাথে তোমার কি?”
হাসনাত সাহেব চুপ করে রইলেন।মনোয়ারা গিয়ে তার পাশে বসলেন।তারপর চোখ বড় করে জিজ্ঞেস করলেন,”বলো এবার,দুর্গা কে?কবে থেকে পরিচয়?কিভাবে সম্পর্ক?বয়স কতো?”
একদমে এতোগুলা প্রশ্ন করে বড় করে নিশ্বাস নিলেন তিনি।হাসনাত সাহেব কিছু না বলে উপন্যাস টা মনোয়ারা বেগমের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,”পড়ে দেখো কে দুর্গা”
মনোয়ারা বেগম পড়ে আরো বেশি রেগে গেলেন,চিৎকার করে বললেন,”বয়স হয়েছে,আক্কেল হয় নি তোমার এখনো,একটা উপন্যাস পড়ে এরকম হাপিত্যেশ করার কি আছে?
তোমার আর্মিতে না গিয়ে অভিনয়ে যাওয়া উচিৎ ছিলো।”
হাসনাত সাহেব হেসে উঠলেন শুনে।সেসময় তুরাগ আসে বাসায়।তুরাগ কে দেখে হাসনাত সাহেব সচকিত হয়ে তাকান।
তুরাগ এসেই সামনের সোফায় বসে,তারপর বলে,”বড় চাচা আপনার সাথে আমার কথা আছে কিছু।”
“কি কথা বল,৫মিনিটের মধ্যে কথা শেষ করে বিদায় হ তুই।”
তুরাগ খুব আয়েস করে বসলো,তারপর বললো,”সারাজীবন আমাদের শাসন করে আসলেন,আপনার ছেলে যে আকাম-কুকাম করে বেড়ায় সেই খবর কি রাখেন?”
“মনু,যাও তো,নিষাদের রুম থেকে হকিস্টিক নিয়ে আসো,তারপর ওর কথা শুনবো।”
মনোয়ারা বেগম উঠে যেতে নিতেই তুরাগ বললো,
“না চাচী যাবেন না,আপনার ও শোনা উচিৎ আপনার ছেলের কুকর্ম।”
মনোয়ারা বেগম আবার বসলেন,তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন তুরাগের দিকে।
“নিষাদ যে বিয়ে করে ফেলেছে সেই খবর কি রেখেছেন? ”
“নিশা বিয়ে করেছে সেটা তোকে কে বললো?”
“নিষাদ বলেছে আমাকে,নিজ মুখে,আমি আজ নিজ চোখে দেখেছি ওদের,আর কাকে বিয়ে করেছে জানেন?”
“কাকে করেছে?”
“নিশান ভাইয়ের শালী,চন্দ্র কে।”
“তুই কোথায় দেখলি ওদের?”
“নিষাদের অফিসে।”
“কিন্তু নিষাদ তো ঢাকায় নেই।”
শুনে তুরাগ হেসে উঠে হাহাহা করে।যেনো খুব মজার কৌতুক শুনেছে।
তারপর হাসি থামিয়ে বলে,”আপনারা নিজের ছেলের খবর রাখেন না অন্যর ছেলেকে শাসন করতে যান কিভাবে?
ও ওর বউ’কে নিয়ে ঢাকা তেই আছে,অথচ আপনাদের মিথ্যা বলেছে।”
“তুই বোস,আমি আসছি।”
বলেই হাসনাত সাহেব নিজের রুমে যান,মোটা একটা লাঠি নিয়ে এসে তুরাগের পিঠে দাম করে একটা বারি মারেন,তারপর বলেন,”আমার নিশা যদি বিয়ে করেই থাকে,তবে করেছে,আমাদের কাছে গোপন রাখতে চেয়েছে মানে কোনো একটা সমস্যা আছে নিশ্চয় সমস্যা গেলে জানাবে,আমরা তখন জানতে চাইতাম।
অথবা নিষাদ আমাদের সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছে তাই বলে নি,তুই হতচ্ছাড়া আগেই বলতে এলি কেনো?
আমার ছেলের সারপ্রাইজ নষ্ট করতে এলি?
মনু,জলদি যাও,ঝাঁটা নিয়ে আসো,এই হতচ্ছাড়া কে সেদিন আমি পেটাতে পারি নি,আজ ঝাঁটাপেটা করবো।
সাহস কতো বড় আমার ছেলের সারপ্রাইজ নষ্ট করতে চায়।
তোকে কে বলেছে স্পাইগিরি করতে আমার ছেলের পিছনে?
যে মুখে এই কথাগুলো বলেছিস আমাকে সেই মুখের দাঁত সব গুলো আজ আমি ভেঙে দিবো দাঁড়া।”
বলে লাঠি দিয়ে আরেক বারি মেরে হাসনাত সাহেব হাতুড়ি আনার জন্য নিজের রুমে গেলেন,তুরাগ সুযোগ পেয়ে এক দৌড়ে বের হয়ে গেলো বাসা থেকে।
হাতুড়ি নিয়ে এসে হাসনাত সাহেব দেখলেন তুরাগ নেই।মনোয়ারা বেগমের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালেন।
“কোন আক্কেলে তুমি ছেলেপেলের সামনে আমাকে মনু বলে ডাকো বলো তো?”
এই কথা বলে মুখ ঝামটা মেরে মনোয়ারা বেগম তেলের বাটি হাতে নিয়ে চলে গেলেন নিজ রুমের দিকে।
হতাশ হয়ে হাসনাত সাহেব নিশান কে কল দিলেন,আজ মন অত্যধিক খারাপ তার।
নিশান থানায় বসে একটা কেস ফাইল দেখছে,পাশে রাখা মোবাইল বেজে উঠতেই ফোনের দিকে তাকায়।বাবার কল দেখে রিসিভ করে জিজ্ঞেস করে,”হ্যাঁ বাবা বলো।”
“শুনেছিস আজকে কি হয়েছে?
একটা আসামি ধরেছি,ইন্টারোগেশন করার আগে আমি গিয়েছিলাম হাতুড়ি আনতে,ওর দাঁত ফেলে দিবো বলে।তোর মা’কে আমি দায়িত্ব দিয়েছিলাম আসামী কে দেখে রাখার,ইররেসপনসেবল মহিলা তাকে চলে যেতে দেখেও চুপ করে ছিলো,আমাকে ডাকার প্রয়োজন মনে করলো না একবার অথবা তাকে আটকানোর।সিকিউরিটি কে অন্তত এলার্ট করতে পারতো”
“বাবা,কাকে যেতে দিলো মা,কে তোমার আসামি ছিলো?”
“তুরাগ এসেছিলো,কি বলেছে জানিস তুই? ও বলেছে নিষাদ না-কি বিয়ে করেছে,হা হা হা,তাও আবার কাকে জানিস?আমাদের চন্দ্রকে,হা হা হা,আরে ব্যাটা,আমার ছেলে যদি বিয়ে করেই থাকে তবে করেছে,বেশ করেছে,অন্যায় তো করে নি,ওর মতো মেয়েদের সেক্সুয়ালি হ্যারেস ও করে নি,কতোবড় স্পর্ধা ভেবেছিস,আমার ছেলের পিছনে স্পাইগিরি করে।”
“বাবা,বাকি কথা বাসায় এসে শুনবো।” বলে নিশান কল রেখে দেয়।তারপর নিষাদ ‘কে কল দেয়,সব শুনে নিষাদ জবাব দেয়,”যা করা প্রয়োজন তাই করো ভাইয়া,কোনোভাবেই যেনো চন্দ্রর বাসায় জানতে না পারে অথবা ভাবী জানতে না পারে। ”
★
ফ্লোরে বসে আছে চন্দ্র,হাতে এক পিরিচ আচার,নিষাদ চন্দ্রর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।কিছুক্ষণ পর পর চন্দ্র হাত থেকে আচারের তেল নিষাদের চুলে লাগিয়ে দিচ্ছে আর খিলখিল করে হাসছে।চন্দ্রর হাসি সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো নিষাদের বুকে আছড়ে পড়ছে,মুগ্ধ হয়ে শুনছে নিষাদ।নিষাদের কেমন আচ্ছন্নের মতো লাগে।
কিছুক্ষণ পর নিষাদ জিজ্ঞেস করে,”আচ্ছা তোমার হাসিতে কি আফিম মেশানো আছে?”
নিষাদের প্রশ্ন শুনে অবাক হয় চন্দ্র,তারপর জিজ্ঞেস করে,”কেনো?”
“কেমন নেশা নেশা লাগে আমার তোমার হাসি শুনে,মাতাল হয়ে যাচ্ছি।”
“হয়ে যান মাতাল,আমি কখনো মাতাল মানুষ দেখি নি জানেন।”
“আমি এখন মাতাল হওয়া মানে কি তুমি বুঝো?”
সন্দিহান গলায় জিজ্ঞেস করে চন্দ্র,”কি?”
“আমি মাতাল হওয়া মানে সে রাতের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করা।”
নিষাদের কথার মানে চন্দ্র বুঝতে পারে না,তাই জিজ্ঞেস করে আবার,”কোন কাজ,কোন রাতের?”
“ভাইয়ার বিয়ের রাতে যা তুমি দেখাতে চেয়েছিলে আর করতে চেয়েছিলে,সেই অসম্পূর্ণ কাজ।”
লজ্জায় লাল হয়ে যায় চন্দ্র,তারপর নিষাদের চুল টেনে ধরে বলে,”অসভ্য মানুষ একটা। ”
নিষাদ হাত বাড়িয়ে চন্দ্রর মাথার পিছনে হাত দিয়ে টান দিয়ে চন্দ্রর মাথা নিঁচু করে এনে চন্দ্রর ২ ঠোঁট টেনে নেয় নিজের ঠোঁটের মাঝে,অনেকক্ষণ চেষ্টা করে ও চন্দ্র নিজেকে মুক্ত করতে পারে না নিষাদের গভীর চুমুর থেকে।চন্দ্রের ঠোঁটে কামড় দিয়ে নিষাদ ছেড়ে দেয়।
অনেকক্ষণ পর ছাড়া পেয়ে চন্দ্র হাঁফাতে থাকে।
নিষাদ তাকিয়ে দেখে চন্দ্রকে,নিজেকে সামলে নিয়ে চন্দ্র বলে,”এরকম করলেন কেনো?”
“তুমি না বললে অসভ্য,তো একটু অসভ্যতা করলাম আর-কি।কেনো আরেকটু লাগবে না-কি?”
“কি বলেন এসব,দূর।”
“ও মা,আমার বউ লজ্জা পাচ্ছে আবার,এইটুকুতে হাঁফিয়ে গেলে চলবে?এখনো তো টুর্নামেন্ট বাকি আছে। ”
নিষাদের বুকে এক কিল বসায় চন্দ্র নিষাদের কথা শুনে।
“তুমি আমার যেখানে কিল দিয়েছো তোমার বুকের সেখানে যদি আমি একটা চুমু খাই কেমন হবে বলো তো? ”
“আপনি ভীষণ অ…”
“কি বলো?
অসভ্য তো বলো আবার।”
“না অসভ্য না,ভীষণ সভ্য।”
হেসে উঠে নিষাদ।চন্দ্র জিজ্ঞেস করে,”আচ্ছা,আপনি কিভাবে জানলেন যে তুরাগের ফোনে অনলি মি প্রাইভেসি দিয়ে আমার ছবি আছে? ”
“ওর কল রেকর্ড থেকে জেনেছি,যেদিন ওকে সবাই মিলে পিটিয়েছি সেদিন হাসপাতালে নেওয়ার জন্য যখন গাড়িতে তুলছিলাম তখন ওর পকেট থেকে আমি ফোন বের করে নিই ও তোমার ছবি তুলেছে দেখে,তারপর সেম মডেলের একটা ফোন ওর হাসপাতালের বেডের পাশে রেখে আসি ওর সিম কার্ড দিয়ে। ওর ফোনের লক আমার জানা ছিলো,তাই ওর ফোনের সব কিছু দেখতে আমার সমস্যা হয় নি।
গতকাল সন্ধ্যায় বসে আমি ওর ফোনের সব কল রেকর্ড শুনেছি,ভাইয়ার গায়ে হলুদের দিন থেকে।তখনই শুনতে পাই ও ওর কোনো ফ্রেন্ড কে বলেছে তোমার ছবির কথা,ছেলেটা ছবিগুলো দেখতে চেয়েছে তখন তুরাগ বলেছে যে একসাথে এইচডি ভিডিও দেখাবে,কিছুদিন অপেক্ষা করতে।শুনে আমার মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিলো,তাই গতকাল সন্ধ্যা থেকে বসে বসে ক্লোন আইডি দিয়ে ওর আইডি নষ্ট করেছি।”
শুনতে শুনতে চন্দ্রর দুচোখ জলে ভরে গেলো,এতো ভালোবাসা তার জন্য নিষাদের!
কেনো সে বুঝে নি এতোদিন?
চন্দ্রর চোখ থেকে ২ফোটা জল নিষাদের কপালে পড়ে।নিষাদ উঠে বসে শোয়া থেকে।তারপর চন্দ্রকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলে,”তোমার উপর আমার কোনো রাগ নেই চন্দ্রাবতী,যেটুকু অভিমান ছিলো তা আজকে তুমি অফিসে গিয়ে আমাকে সারপ্রাইজ দিয়ে দূর করে দিয়েছো।”
“আমি হলে এতো তাড়াতাড়ি অভিমান শেষ করতাম না জানেন।”
“দেখো,তুমি আমার বউ,মানে আমার অস্তিত্বের পুরোটাই তুমি,এখন আমি চাইলেই পারি তোমার উপর রাগ করে থাকতে দিনের পর দিন,কিন্তু তাতে কি লাভ হতো বলো?
দুজনেই কষ্ট পেতাম,নিজেদের কষ্ট দিয়ে অভিমান পুষিয়ে রাখার মানুষ আমি না,যতোটুকু হলে বুঝানো যায় যে আমি তোমার উপর রাগ করেছি,ঠিক ততোটুকু রাগ ই করবো,তার চেয়ে বেশি করে থেকে কি লাভ!
অন্তর তো দুজনেরই পুড়ে,আমার কাছে আমার অন্তর পোড়া সহ্য হবে,মেনে নিতে পারবো,কিন্তু আমার বউয়ের টা না। ”
“আমার নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে আজ।”
চোখ মেরে নিষাদ বলে,”এতো খুশি হয়ে কাজ নেই বউ,শাস্তি তোমার আছে এখনও।”
“কি শাস্তি? ”
“রাতে বুঝবা সেটা। ”
বলেই নিষাদ হেসে উঠে,চন্দ্র নিষাদের বুকে মুখ গুঁজে।কি ভীষণ শান্তি লাগছে আজ তার।
এতো সুখী কেনো সে!
চলবে….???
পার্ট ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত।প্রাইভেটে ছিলাম তাই লিখার সময় পাই নি।